শিক্ষক সবিশেষ - ০১

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/১০/২০০৬ - ১২:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


সেই পুরনো কথাগুলো আমাকে আবারো বলতে হয়। একঘেঁয়ে মুখস্ত কথা, ইতিহাস জ্ঞান পরীক্ষার মতো - আনোয়ার সাদাত মিশরের প্রেসিডেন্ট ছিল।এবার তিনি আমার দিকে আরো একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেন - মারা গিয়েছিল কিভাবে জানো?- জ্বী স্যার, 6 অক্টোবর 1981 সালে - ন্যাশনাল ডে-র প্যারেডে।- রাইট! হি ওয়াজ গান শু্যটেড। এনিওয়ে, য়্যূ আর মাই নিউ টিচিং অ্যাসিস্টেন্ট।এটা ছিল স্যারের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। ড. আবুল কাশেম বায়েজিদ স্যারের কথা বলছি। সময়টা জানুয়ারী 2003। স্যারের কাজে টুকটাক সাহায্য করি। সাথে চলে মজার সব আলোচনা। ঐ সেমিস্টারে এম.বি.এ ক্লাসে স্যার "ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস" কোর্স পড়াচ্ছিলেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৈষম্যের ব্যাপারে স্যার ছিলেন শোচ্চার। ধনী দেশগুলোর অন্যায্য আচরণের তীব্র সমালোচনা করতেন দারূণ দারূণ সব ধারালো বিশেষণ দিয়ে। বাণিজ্যের পাশাপাশি গ্লোবালাইজেশনের নামে তাদের কালচারাল আগ্রাসনেরও বিপক্ষে ছিলেন তিনি। মনে পড়ে - একদিন কথার মাঝখানে আমি মাসকাওয়াথ আহসানের একটা বই থেকে কোট করে বলছিলাম - সভ্যতার চিমনীর কালো ধোঁয়া আমাদের শরতের আকাশটুকু কেড়ে নিবে। সাথে সাথে স্যার চমকে উঠলেন - চমৎকার কথা, অসাধারণ। বইটার দাম কতো?সাথে সাথে আমাকে টাকা দিলেন বইটি কেনার জন্য।পরদিন কিনে আনলাম।শুনেছি অ্যামেরিকায় যখন ছিলেন তখন তাঁর গাড়িতে একটা ছোটখাটো লাইব্রেরী ছিল।এরপর ঈদের ছুটি ছিল। ঈদের পর ক্যাম্পাসে এসে শুনি স্যার অসুস্থ। একদিন খবর পেলাম বাংলাদেশ মেডিক্যালে আছেন। অথচ বেড নাম্বার কেউ জানে না। তবুও গেলাম বাংলাদেশ মেডিক্যালে। রোস্টার চেক করে দেখি - এই নামে কোন রোগী নেই। একজন পরামর্শ দিলো - 'সবগুলো ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। রোস্টারে সব থাকে না'। এরপর শুরু হয় আমার হসপিটাল চক্কর। 50/60জন রোগীর চেহারা চেক করি, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সবাই, কিন্তু স্যার নেই। ঘন্টা তিনেক ঘুরেও বায়েজিদ স্যারকে পেলাম না। পরের সপ্তায় জানলাম - স্যার নাকি পিজি হসপিটালে আছেন। এবার বেড নাম্বার কালেক্ট করি। গিয়ে দেখি - ঐ বেডে অন্য মানুষ শোয়া। কথা না বলে চলে এলাম। আবার সেই একই চক্র। রোস্টার চেক করা। অনেক অনুনয় বিনয়। শেষে দেখা গেলো - বেড নাম্বার ঠিক আছে। কাছে গিয়ে ভালো করে খেয়াল করলাম - এ তো বায়েজিদ স্যারই! শরীর সাংঘাতিক ভেঙে গেছে। শেভ না করায় মুখে লম্বা দাড়ি। চেনার উপায় নেই। কিছুক্ষণ কথা বললাম। স্যারের 'বোন ক্যান্সার' ধরা পড়েছে। নিজের বয়স ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সত্বেও বললাম - 'মনে সাহস রাখেন স্যার, আপনি ভালো হয়ে যাবেন'।স্যার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন - 'তুমি আমাকে সান্তনা দিচ্ছো? '(অসমাপ্ত)শিক্ষক সবিশেষ - 02


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।