বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আগ্রহ কবে হারিয়েছি মনে নেই। এখন বাংলাদেশ দলে কারা খেলেন, নামও জানি না। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়কের নামও আমার অজানা। অথচ, একটা সময় ছিল, সে সময় আরো বিশ পঁচিশ বছর আগে (হায়! প্রায় সিকি শতাব্দী আগে!) ফুটবলের দিন অন্যরকম ছিল। আবাহনী-মোহামেডান নিয়ে কী টানটান উত্তেজনা! তৃতীয় শক্তি ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন, আর একবার হঠাৎ করেই চমক দেখলো মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। আর ছিল ওয়ারী, আবাহনীর যম! ওয়ারী মানেই আবাহনীর ড্র নয় হার! রহমতগঞ্জকেও মনে পড়ছে।
ফুটবলের সব গরমাগরম সময়ের উত্তাপ পেয়েছি - উপজেলা মফস্বলের গ্রামে। স্কুলে আমরা তখন যে যেই দলের সমর্থক সে দলের ছবিওলা খাতা কিনতাম। দাদা একবার ভুলে মোহামেডানের প্লেয়ারদের ছবিওলা খাতা আনলে, রাগ করে সে খাতায় না লিখে রেখেছে দিয়েছিলাম অনেকদিন। শুধু খাতার ওপর ছবি নয়, ছবির ওপর প্রত্যেক খেলোয়াড়ের গায়ে নাম লিখতাম - মুন্না, আসলাম, জনি, মহসীন, গাউস। মোহামেডানের ছিল - কায়সার হামিদ, আবুল, শাব্বির, কানন, এমিলি। আরো কতো নাম ভুলে গেছি! বিদেশি খেলোয়াড়ও আসতো। আবাহনীর হয়ে খেলেছিলো - জিকো। আর দুই ভাই লাডি বাবা লোলা, বাডি বাবা লোলা, কী নাম! এদের একজন আবার ঢাকার মাঠের ইতিহাসে প্রথম গোল্ডেন গোলদাতা ছিল।
এসব তথ্য উপাত্ত পেতাম বাংলাদেশ বেতার, তখনকার রেডিও বাংলাদেশের ধারাবিবরণীর সুবাদে।
টিভিতে শুধু ফাইনাল ম্যাচগুলো দেখানো হতো, রেডিওতে সম্প্রচার হতো বেশি - বাংলাদেশ বেতার তখনকার রেডিও বাংলাদেশ। বছরে তিনটা টুর্ণামেন্ট হতো - প্রিমিয়ার লীগ, ফেডারেশন কাপ, আরেকটা মনে পড়ছে না। ধারাভাষ্যকার ছিলেন - আব্দুল হামিদ, যাঁকে সবাই শ্রদ্ধেয় হামিদ ভাই ডাকতেন, ছিলেন - মোহাম্মদ মূসা, খোদাবক্স মৃধা, মনজুর হাসান মিন্টু, শেষের দিকে জাফরুল্লাহ শরাফত চৌধুরী (পরে নাম পালটে চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত)। এদের মাঝে প্রথম তিনজন প্রয়াত। আরো একজনের নাম মনে পড়ছে না, কন্ঠ অনেকটা মোহাম্মদ মূসার কন্ঠের কাছাকাছি ছিল (সংযুক্তিঃ মনে পড়েছে, হান্নান খান)।
ফুটবল নিয়ে এতোএতো স্মৃতি হাতড়ালাম, মঙ্গলবার টিভিতে সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ বনাম ভারতের ম্যাচ দেখার পর। রোববার বাংলাদেশ - নেপাল ম্যাচও দেখেছিলাম টিভিতে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের করুণ অবস্থা ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে অনেক ভালো খেললেও ইনজুরি টাইমে গোল খেয়ে ড্রটা ছিল পরাজয়ের শোকসম।
ফুটবল নিয়ে স্মৃতিহাতড়ে যা কিছু আনতে যাই, দেখি মনে-না-পড়ার পৃষ্ঠাই বেশি। এখন জাতীয় দলের ফুটবল নিয়ে আগ্রহ নেই, আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই - এমনটাই ভাবি, কিন্তু ম্যাচ ড্রয়ের পর কয়েকজন ফুটবলার কান্নার দৃশ্য দেখে আবেগপ্রবণ হয়েছি, বিষন্ন হয়েছি। মনে পড়েছে গত এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ফাইনালে হারের স্মৃতি - সাকিব মুশফিকের কান্না। ভাবছিলাম, সমস্ত চেষ্টা দিয়ে ফুটবলাররা মাঠে খেলেন, দেশের জন্য, দেশের জার্সি গায়ে নিয়ে। কিন্তু, আমাদের দেশে শেষ পর্যন্ত ফুটবল বেঁচে থাকবে তো!
দালান-জঙ্গলের শহর ঢাকায় এখন মাঠ আর নেই বললেই চলে। যা আছে, ক্রিকেটময়।
টিভিতে এক ফুটবল কর্মকর্তা বলছিলেন, গ্রামে গ্রামে ফুটবলের প্রসারে সরকার কত হাজার ফুটবল নাকি বিতরণ করবে, কারণ একটা বল হলেই খেলা যায়, ক্রিকেটের মত এটা সেটা লাগে না। কিন্তু, মাঠ কই? ফসলি জমিতে ঘর উঠছে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানীগুলো ছুটছে গ্রামের দিকে।
ইচ্ছা ছিল - ঢাকামেট্রো সিরিজে ঢাকা শহরের কথা লিখবো কেবল।
নানান কাজের চাপে এবং কাজ শেষে আরামদায়ক আলস্যে - কিছুই লেখা হয় না। লিখতে বসেছিলাম ঢাকার বিলবোর্ড নিয়ে। সাফ ফুটবল আর স্মৃতিচারণ দখল করে নিলো 'মেট্রোপলিটন মন'।
আগের কোনো এক পর্বে কে জানি বলেছিলেন, ঢাকার কথা লিখলে যানজট অবধারিত। আসলেই তো! ঢাকা মানেই তো যানজটের গল্প, জ্যামে পড়ে ক্লান্ত মানুষ, পঙ্গু ভিখারী, বিলবোর্ড আর ঘোলাটে আকাশের গল্প।
তবে আজ শেষ করি, যানজট মুক্তির গল্প বলে।
মিরপুর থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আগে সকালে সাড়ে ছয়টায় রওনা দিয়ে যেতাম - ৪০ মিনিটেই। সাতটায় রওনা দিয়ে ৭০-৭৫ মিনিট লেগে যেতো। আর বিকেলে ফিরতে ২ ঘন্টা তো অবশ্যই, অনেকদিন তিন ঘন্টা এমনকি সাড়ে তিনঘন্টা সময়ও লেগেছে।
সুখের ব্যাপার হলো - এখন সকালে যেতে ২৫-৩০ মিনিট আর বিকেলে ফিরতে ৩৫-৪০ মিনিট সময় লাগে।
কুড়িল ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর এমন শান্তি পাচ্ছি, সাথে এয়ারপোর্ট রোড-মিরপুর ফ্লাইওভার পুরো আশীর্বাদ!
মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলাম, ইউটিউবেও দিলাম। টেলিটক থ্রিজি লাইন এ কয়েকদিন ধীর গতি হয়ে গেছে। দেশের বাইরে যারা আছেন, তারা হয়তো ভালো দেখতে পাবেন।
সম্মানিত বাংলাদেশ সরকার, আপনারা এ সামান্য নাগরিকের কৃতজ্ঞতা জানুন।
এ ফ্লাইওভার কোনো কাজে আসবে না, শেষে কোরিয়ার ফ্লাইওভারগুলোর মতো ভেঙে ফেলতে হবে - এমন অনেক আলোচনা শুনেছি এখানে ওখানে। কখন কী হবে জানি না, এটুকু বুঝি - ৩ ঘন্টার দূরত্ব - ৪০ মিনিটে নেমে এসেছে। তাই আবারও ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা।
নির্বাচন হবে কি হবে না সেটা নিয়ে সংশয় জেগেছে মানুষের মনে। সময়ও প্রায় শেষের দিকে। এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে শাহবাগে লক্ষ মানুষ যে দাবী নিয়ে সমবেত হয়েছিল, এখনো তরুণ প্রজন্ম যে আশায় আছে - যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যকর - তা হবে তো শেষ পর্যন্ত?
মন্তব্য
ফেডারেশন কাপ হবে নামটি। জিকো বাংলাদেশে খেলেছিল ??? এমেকা খেলেছিল যে কিনা ৯৪ সালে নাইজেরিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন আর একটা খেলায় কয়েক মিনিটের জন্য নেমেছিলেন।
ঠিক ঠিক, ফেডারেশন কাপ হবে। ঠিক করে দিচ্ছি, ধন্যবাদ।
আবাহনীতে জিকো নামের একজন এসেছিল বলে মনে পড়ে---। ভুলও হতে পারে।
বর্তমান বাংলাদেশের প্লেয়ারদের স্কিল লেভেল আগের প্লেয়ারদের মত না কিন্তু এরা সর্বস্ব উজাড় করে দেয়। আমাদের অনেক ভাল টিম সাফ গেমসে ভাল খেলত না কারণ ক্লাবে খেলার জন্য পা বাঁচাত। আহা নস্টালজিক হয়ে পড়লাম স্টেডিয়ামে কত মারপিটও করছি খাইছিও
জনি মোহামেডানের ছিল, আবাহনীর ছিল রূপু। আলমগীরের লম্বা থ্রো'র কথা মনে আছে। লোলা ভাইরা মোহামেডানের হয়ে খেলেছে। আবাহনীর এমনকি খুব সম্ভব বাংলাদেশে আনা সেরা বিদেশী খেলোয়াড় ছিল ঝুকভ! কমপ্লিট মিডফিল্ডার। সের্গেইয়ের কর্ণার বিখ্যাত ছিল। চিমা-এমেকা রা মোহামেডানে খেলেছে। রহিমভ ৪-৫ ম্যাচে ১৭ গোল দিয়েছিল মোহামেডানের হয়ে।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
লোলারা কি আসলেই ভাই ছিলেন? আমার মনে পরে কোন পেপারে পড়েছিলাম বাংলদেশে খেলতে আসা আফ্রিকান দুই খেলোয়ারের নামে মিল আছে কিন্তু তারা ভাই না, এমনকি তারা নাকি একজন আরেকজনকে চিনতেনও না এখানে আসার আগে। এটা অনেকটা জামাল চৌধুরী আর কামাল চৌধুরী নাম দেখে ভাই মনে করার মত। রিপোর্টটা ঠিক কাদের নিয়ে করা মনে পড়ছে না। এদের দুজনকে নিয়ে হতে পারে বা নাও হতে পারে।
ছোটবেলায় মনে আছে, আবাহনী-মোহামেডান খেলার দিন কি রকম টান টান উত্তেজনা।
তাই? রেডিও ধারাভাষ্যকাররা ভাইই বলতো!
ভাই ছিলো না মনে হয়। নাম মনে আছে। লাডি বাবা লোলে, লোডা বাবা লোলা
আর বাংলাদেশের ক্লাবগুলা পারেও রে ভাই। এই দুই ব্যাটাকে (মোহামেডানই তো না-কি ?) প্রাপ্য টাকা নিয়ে গোলমাল করে শেষে জেলের ভাত খাওয়াইসিলো
মনে হয়- লাডি বাবা লোলা আর বোডি বাবা লোলা।
-------------------------------------------------
ভালবাসা কেবল নিজেকে দেয় এবং নিজ থেকে নেয়-
ভালবাসার যেমন নিজেরও কিছু নেই, তেমনি সেও কারো নয়;
কেননা, ভালবাসার জন্য শুধু ভালবাসাই যথেষ্ট।
লাডি বাবা লোলা শেষবার মৌলভীবাজারের একটি দল(মৌলভীবাজার ওয়ান্ডারার্স?) এ খেলেছে সম্ভবত কয়েকবছর আগে। না এটা অন্য আরেকজন। ছোট বেলায় শোনা নামটা মনে আছে। 'কী নামে!' এর প্রভাব।
ফুটবলের সময়ের শেষ বেলায় বেড়ে ওঠা। ছোট ছোট রেডিও হাতে নিয়ে অনেকেই ঘুরতে দেখতাম অনেককেই সে সময়। বিকেল বেলা খেলার মাঠে একদিকে খেলা চলছে অন্যদিকে রেডিও থেকেও ভেসে আসতো ধারাভাষ্য। আমাদের উৎসাহ বেড়ে যেত। নিজেরাই মাঠে চলমান খেলার ধারাবিবরণী দিতে শুরু করতাম। সেটা গিয়ে দাড়াতো প্রাত্যহিক চর্চায়। কেউ কেউ হয়ে যেত আমাদের লোকাল ধারাভাষ্যকার। সন্ধ্যা নেমে এলে বিষয় পাল্টে যেত- কে কীভাবে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে তা নিয়ে চলতো ব্যাঙ্গ- হাসি- ঠাট্টা। এখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে হয় কে কীভাবে বাড়ি ফিরতে যাচ্ছে। সে দৃশ্যগুলো আর ভালো লাগে না।
আরো, মনে পড়ে পারায় পাড়ায় দেয়ালে আঁকা মোহামেডানের পতাকায় লেখা থাকত: "মোহামেডান সমর্থক সংঘ"; আবাহনীর পতাকায় লেখা থাকত: "আবা সমর্থক গোষ্ঠী"।
অবিশ্বাস্য হলেও, এক সময় দুই গ্রুপ হাতাহাতিও করত।
আমার ঢাকা শহরে ফুটবল খেলা দেখার অভিজ্ঞতা সেই পাকিস্তানি আমল থেকে। তখন ছিল ঢাকা স্টেডিয়াম। আর কয়েকটি নামিদামি দল ছিল, ঢাকা মোহামেডান, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, ইপিআইডিসি, ওয়ারী ক্লাব ইত্যাদি। স্বাধীনতা পরবর্তীতে আবার মাঠে যাওয়া শুরু হলে তখন নতুন ও আধুনিক ধারার খেলা উপহার দেবার কারনে আবাহনী ধীরে ধীরে দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। আবাহনীর সালাউদ্দিন তখন ছিল দর্শকনন্দিত দারুণ এক স্ট্র্রইকার।
যাহোক, আপনার লেখাটা আমাকে আমার দুরন্ত যৌবনকে মনে করয়ে দিল।
ধন্যবাদ
ভিডিওর গানটা কাদের?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
চিরকুট। জাদুর শহর।
..................................................................
#Banshibir.
চিরকুট। ইউটিউবে ফাইল ডিটেইলসে লিখেছিলাম।
লেখা ভাল লেগেছে।
আমরা যারা ঢাকা যাইনি কোনদিন, ঢাকার অনেক প্রশংসা শুনি।
- একলহমা
কেম্নে?
শিমুল ভাই, আপনার এই সিরিজটা সবসময় পড়ি। কখনো মন্তব্য করিনি। আজ করলাম। দুর্দান্ত। আমরা যারা বাইরে থাকি তাদেরকে আপনি মুহুর্তের মধ্যে আমাদের প্রাণের শহরে নিয়ে যান, কখনো কখনো চোখের কোনা ভিজে যায় অজান্তেই। প্লিজ নিয়মিত লিখুন।
ফ্লাইওভার গুলো হওয়ার আগে কোন পজিটিভ কিছু শুনিনি। হওয়ার পরও যে ভালো কিছু শুনেছি তা না। আজ আপনি বললেন। শুনে খুবই ভাল লাগল। ঢাকার অন্য ফ্লাইওভারগুলির কি অবস্থা? যাত্রাবাড়ীর টা হলে কি অইদিকের জ্যাম কমবে?
আমার কথা বাউল লিখে দিল, যদিও দেশে থাকি এভাবে দেখা হয়নি - গান, লেখা সব মিলে অসাধারণ!
আবাহনী যে কী যন্ত্রনার কারণ ছিল কী বলব! বাসায় দুইজন আবাহনী সমর্থক কেবল, আমাদের মান-সমাণ নিয়ে টানাটানি! ফেডারেশন কাপ, ডামফা কাপ- আবাহনী গিয়ে টেয়াই ব্রেকারে হারত মোহামেডানের কাছে- সাডেন ডেথ শব্দটাও সে সময় শেখা!
হতচ্ছাড়া দলটার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যখন ড্র করা দরকার ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল বা ফরাসগঞ্জের কাছে- সে খেলাই অসাধারণ সামর্থ দেখিয়ে হেরে বসত ০-১ গোলে!
ক্রিকেটে তো আরো দাগাবাজি! আবাহনীর যম ছিল কলাবাগান আর বিমান! মাঝে মাঝে সাধ্যমত চেষ্টা করে হেরে বসত গুল্লু'র জিএমসিসি'র কাছে! কলাবাগানের সাইফুল ধস নামিয়ে দিত আর বিমানের ফ্লাইট নিশ্চিত করত বুলবুল আর দুই সুমন- হাবিবুল বাশার আর মোর্শেদ আলী খান! ইমরান হামিদ পার্থ একবার কোন এক ফাইনালে ১৫২ করল- ধারাভাষ্য শুনে মনে হয়েছিল বাংলাদেশের একজন 'জয়সুরিয়া' বুঝি হয়েই গেল!
ঘরোয়া ক্রিকেট আর ফুটবল- সে দিন আর নাই!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ইমরান হামিদ পার্থর ইনিংস দুটা ২৮-৩০ নভেম্বর ১৯৯৬।
দানবীর মারকুটে ইনিংস ছিল সেমি ফাইনাল আর ফাইনালে।
শরাফত চৌধুরী বলেছিল, পার্থর ঘাঁড়ের ওপরে ফেরেশতা ভর করেছে, নইলে এমন ছক্কা সম্ভব না।
পরদিন পত্রিকার খেলায় পাতায় শিরোনাম ছিল - "আবাহনীর বিজয় রথের সারথী পার্থ"
ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল অনেক বেশী আনন্দদায়ক খেলা হবার পরও হেরে গেল। যুগের উপর দোষ দিয়ে লাভ নেই। একথা সত্যি যে আমাদের ছেলেদের হাতের জোর পায়ের চেয়ে বেশী। এই কারণ ছাড়াও জায়গার অভাব, মিডিয়ার লোড শেডিং ইত্যাদি কারণেও ফুটবল হারিয়ে যাচ্ছে তারুণ্যের আগ্রহ থেকে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেকদিন পরে লিখলেন। ফুটবলের স্বর্ণালী সময়টা পাইনি। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছি ব্যাট বলের জয়জয়কার।
ফুটবল হারিয়ে যাবার প্রধান কারন বোধ হয় মাঠের অভাব নয়। এখনও দেশের অনেক স্কুল কলেজেই বেশ বড়সড় মাঠ আছে, কিন্তু মাঠগুলো ফাঁকাই পড়ে থাকে, ফুটবল কেউ খেলে না। যখন ফুটবলের ক্রেজ ছিল, তখন এ দেশের তরুনদের শরীরি বিনোদনের প্রধানতম উপকরন ছিল ফুটবল, এখন অন্য অনেক উপকরনের উদ্ভব ঘটেছে। আর ক্রিকেটের ক্রেজ আসার পর ফুটবল গৌন হয়ে গেছে। ক্রিকেটের ক্রেজ আসার কারন এই খেলাটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিশ্ব সভায় একটি অবস্থান অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে, ফুটবলে যা সুদূর পরাহত।
আব্দুল্লাহ এ এম
আমরা স্কুলে থাকতে ধারাবিবরনী দিতাম, "বল নিয়ে যাচ্ছে মোহামেডানের বোরহানজাদে, তাকে বাধা দিতে আসছে আবাহনীর হারামজাদে'। হাহা।
ধারাভাষ্যকার আরেকজন ছিলেন বিখ্যাত, তৌফিক আজিজ খান।
জনি মোটামুটি মোহামেডানেই খেলেছে।
আমি যে নামটা মনে করতে পারিনি - "হান্নান খান"।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বন্ধু ছিলো স্বপন। ও তখন আবাহনী ফুটবল ক্লাবের ষ্টার।
খুব লাজুক, স্বল্পভাষী ছেলেটা আমার পরিচিত এটা অন্য বন্ধুমহলে আমার ইজ্জত বাড়িয়েছিলো।
দৈনিক পত্রিকার ফটোগ্রাফার বন্ধুর সাথে একদিন গেলাম আবাহনীর ক্যাম্পে। মোনেম মুন্নার সাথে হাত মেলানোর সুযোগ হলো।
সেকি উচ্ছাস আমার তার পরের ক'দিন!
আমার মনে হয় বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে মাঝে মাঝে যে আমাদের মনে ঢেউ আসে এর প্রধান কারণ হলো বাফুফে পরিচালনার দায়িত্বে কাজী সালাহ্উদ্দীন, সালাম মূর্শেদী নামগুলো যুক্ত আছে বলে।
ভিডিওর জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন শিমুল। আপনার জন্য শুভকামনা।
-------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
আপনাকেও ধন্যবাদ!
আহাহাহা, কত কত স্মৃতি! ফুটবল ঘিরে, আহা
facebook
মোহামেডান-আবাহনী-ব্রাদার্স ত্রয়ীর আগে এই ত্রয়ীতে কখনো বিজেএমসি, কখনো ওয়ান্ডার্স ছিল। ইস্টএন্ড, ফরাশগঞ্জ, আজাদ বয়েজ, দিলকুশা, পুলিশ, আরামবাগ এই ক্লাবগুলোও আলোচনায় থাকতো। আরো পরে চলন্তিকা, অগ্রনী ব্যাংক, বিআরটিসি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এসেছে। এক কালে লোকে প্রিমিয়ার ডিভিশনের বাইরে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এমনকি পাইওনিয়ার ডিভিশনের দল-খেলোয়ারদের চিনতো। লীগ, ফেডারেশন কাপ ছাড়া একবার ডামফা কাপ নামেও একটা টুর্নামেন্ট চলেছিল। হতো প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ, আগা খান গোল্ডকাপ। ১৯৭৮ সালের এশীয় যুব ফুটবলের আসর বসেছিল ঢাকায়। এশিয়ার হেন দেশ নেই সেই টুর্নামেন্টে খেলেনি। সেমি ফাইনালে ইরান-ইরাক আর উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া উঠেছিল। পরে কুয়েতের মারপ্যাঁচে ইরান বাদ পড়ে যায়। ঐ টুর্নামেন্টের পর বহু বছর ইরান-ইরাক আর খেলার মাঠে মুখোমুখি হবার সুযোগ পায়নি। ঐ টুর্নামেন্টে খেলা করিম মোহাম্মদ, সামির শাকিররা পরে বিশ্বকাপে খেলেছিল। আরও পরে আবাহনীতেও। আবাহনীর পিরিচ আর পাকির আলী যে শ্রীলঙ্কান সে কথা সবাই ভুলেই গিয়েছিল। মোহামেডানের ভিজেন তাহেরী ছিল গোল মেশিন। কিন্তু সে যেন সালাম মুর্শেদীর করা ২৭ গোলের রেকর্ড ভাঙতে না পারে তাই তৎকালীন ক্লাব কর্মকর্তা তাহেরীকে শেষের দিকে খেলতে নামতে দিত না। আবাহনীর হ্যাট্ট্রিক চ্যাম্পিয়নশীপ, মোহামেডানের অপরাজেয় হ্যাট্ট্রিক চ্যাম্পিয়নশীপ, ব্রাদার্সের আগা খান গোল্ডকাপ জেতা কিছুই ভুলিনি। ভুলিনি রেডিওতে আতাউল হক মল্লিক বা টিভিতে তওফিক আজিজ খানের কণ্ঠ। শুধু নোংরা রাজনীতি আর সরকারী বরাদ্দ মেরে খাবার দৌড়ে পড়ে বাংলাদেশ ফুটবল ভুলে গেছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ষষ্ঠ পান্ডব, আপনার ঝোলায় যে কত গল্প আছে! শুনতে ভালো লাগে খুব।
আমার পোস্টে আপনার মন্তব্যগুলো মাঝে মাঝে পোস্টের চেয়েও সুন্দর আর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে!
এশীয় যুব ফুটবল কি ৭৮এ না ৭৯তে? ওইসময়ের দলটার খেলোয়াড়দের অনেকের নামই মনে আছে- সুহাস, মইন, পিন্টু, মজিদ, স্বপন, আবুল, টুটুল, মহসিন (অধিনায়ক), হেলাল, বাসু, বাদল, কাওসার আলী, আশীষ, সালাম, আনোয়ার, কোহিনুর, সালাম, আসলাম, হাসান। (২/৩ জনের নাম ভুলে গেছি)। কুয়েতের সাথে হারলেও, বাহরাইন আর ইয়েমেনের সাথে ড্র করে আর সিংগাপুরের সাথে জিতে। বাংলাদেশের গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে কুয়েত আর বাহরাইন। ইরাক, দঃ কোরিয়া, কুয়েত (টেকনিক্যালি) আর উঃ কোরিয়া সেমি ফাইনাল খেলে। বাহারাইন, সৌদি আরব, ইরান (টেকনিক্যালি) আর মনে হয় জাপান কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যায়।
এশীয় যুব ফুটবল '৭৮-এ হয়েছিল। এইখানে দেখুন। তবে ডিটেইলসে ভুল আছে মনে হয়। ইয়েমেনের বিপক্ষে বাংলাদেশ ১-০ গোলে জিতেছিল বলে মনে আছে। গোল দিয়েছিলেন মোহসীন। সিঙ্গাপুরের সাথে ড্র করেছিল সেটা ঠিক আছে। কুয়েতের সাথে হারার ক্ষেত্রে ম্যাচ ফিক্সিং-এর ব্যাপার ছিল। খেলার দিন দর্শকরা মাঠে প্রতিবাদমূলক পোস্টারও দেখিয়েছিল। ঐ টুর্নামেন্টের পর আমাদের মহল্লার ফুটবলে গোলকিপাররা পিঠে "১" আর "মঈন" লিখতো।
দুই কোরিয়ার সেমিফাইনালে উত্তর কোরিয়ার লো বঙ জো লাল কার্ড খাওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সুবিধা হয়ে গিয়েছিল। ইরান-ইরাক সেমিফাইনাল থেকে ইরান ছিটকে পড়ার পর আমরা চেয়েছিলাম কুয়েত হারুক। কুয়েতের ওপর আমাদের মেজাজ কেন বিলা ছিল সেটা আগেই বলেছি। খেলা শেষে হারু পার্টি কুয়েতের খেলোয়ারদের কান্নাকাটি আমাদের আনন্দ দিয়েছিল।
ফাইনালের তারিখটা আমার জীবনের বিশেষ দিন বলে সেদিনের কথা বেশ মনে আছে। আমরা তখন হারিস মোহাম্মদ, করিম মোহাম্মদদের সাপোর্টার। কিন্তু ফ্লুতে আক্রান্ত ইরাকীরা ঠিকভাবে পারফর্ম করতে পারেনি। তবে সবাই টের পাচ্ছিল দক্ষিণ কোরিয়া বড় শক্তি হিসাবে এশীয় ফুটবলে স্থান করে নিচ্ছে। ঐবারই প্রথম 'যুগ্মচ্যাম্পিয়ন' শব্দটা শিখি।
অটঃ কে, রাসেল নাকি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই টুর্নামেন্টে ইরাক-বনাম-ইরানের খেলাটা স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখেছিলাম মনে হয়। অবশ্য এই টুর্নামেন্টই কিনা এদ্দিন বাদে নিশ্চিত করে মনে পড়ছে না। আপনি হয়তো নিশ্চিত করতে পারেন।
তখন নেহাতই পিচ্চি। গুরুজনদের সাথে গিয়েছিলাম খেলা দেখতে। ৯০ মিনিট পরেও যখন খেলাটা টাই অবস্থায়, বিরক্ত হয়ে সাথের গুরুজন আমাকে নিয়ে নিয়ে ততক্ষণে স্টেডিয়ামের বাইরে। যেতে যেতে স্টেডিয়ামের বাইরে থেকেই শুনছিলাম টাইব্রেকারে একেকটা শুট আউট আর সাথে সাথে স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষের সোল্লাস গর্জন। আর আমি তখন খেলার শেষটা দেখতে না পারায় ছটফট করছি আর মনে মনে সাথের গুরুজনের চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছি। এখন আর মনে নেই কে জিতেছিল, তবে মনে আছে বাইরে থেকেই মানুষের গর্জন শুনে জয়-পরাজয় এনালাইজ করার চেষ্টা করছিলাম।
টাইব্রেকারে শেষ হওয়া ইরান-ইরাকের খেলাটা কি এই টুর্নামেন্টেই ছিল?
****************************************
না, এই টুর্নামেন্টে ইরান-ইরাক খেলা হয়নি, হবার কথা ছিল। শেষে সেটা ইরাক-কুয়েত খেলা হয়। এই টুর্নামেন্টের বাইরে বাংলাদেশে কখনো কোন টুর্নামেন্টে ইরান-ইরাক খেলা হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বুড়া মানুষের গল্পই সম্বল। গল্প শুনতে চাইলে আড্ডার আয়োজন করলেই হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রেমলাল, নালজেগার এরাও ছিল। আচ্ছা একটা দল ছিল না পিডব্লিওডিবি। আদমজির সাথে এমেকার ৩০ সেকেন্ডের গোল।
সেইসব দিনগুলো!
সবাই সব কথা বলে দিলো... গণেশ থাপার কথা কেউ কইলো না...
কিন্তু আপনে যে সরকারের প্রশংসা করতেছেন, আপনি নিশ্চয়ই আম্বালীগ করেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ, আওয়ামীলিগের দালাল।।।
পড়ার জন্য আর দারুণ সব তথ্যবহুল মন্তব্যের সবাইকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা!
৭০র দশকে ছিলো আগাখান গোল্ড কাপ। ৮০র দশকে শুরু হলো প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ। দুটোতেই অন্য দেশের দল আসতো। ১মটা ক্লাব টুর্নামেন্ট। পরেরটায় ক্লাবের চেয়ে অনুর্ধ ২৩, বিশ্ববিদ্যালয় একাদশ এসবই বেশী আসতো। কখনো অন্য দেশের জাতীয় দলই আসতো।
জনির জীবন শুরু হয় বোধ হয় রহমতগঞ্জ দিয়ে। তারপর আবাহনীতে ৩/৪ বছর খেলে মোহামেডান পাড়ি জমান। মূলত মুন্না আসলে দলে ঠাই হবেনা এই আশংকায়।
চাচা, মামাদের দেখাদেখি মোহামেডানের সমর্থক ছিলাম। খেলা নিয়ে সে কী উত্তেজনা, র্তক-বিতর্ক। আর সমর্থক হয়ে দলের ১১ জন খেলোয়াড়ের নাম না জানলে তো জীবনটাই বৃথা। কতো মনোযোগ দিয়ে নামগুলো মুখস্ত করতাম পোষ্টার দেখে দেখে।
এখনো মনে আছে-
কায়সার, কানন, গিয়াস, ইলিয়াস, বাদল, রনজিৎ, আবুল, কামাল, মনু, এমিলি, এমেকা
আহ্, সেই সব দিন!
সাব্বির ছাড়া মোহামেডান দল কল্পনাই করা যায় না।
বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্ণ যুগের স্মৃতিচারণ - আহা! আমার মত 'নস্টালজিয়া প্রেমিক' হার্ডকোর ফুটবল সাইকোর জন্য এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে। ৫-৬ বছর ধরে শুধু সচল এর পাঠক হিসেবেই সুখে আছি আজকে মনে হয় আর পারা গেল না মন্তব্য না করে। বিশেষ করে আজকে যখন পাকিদের কাছে ২-১ গোলে হারলাম আর লেখক ভ্রাতা দিলেন স্মৃতির জানালায় এক বড়সড় টোকা
জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি পরিবার আর আসে পাশে আবাহনী মোহামেডান নিয়ে মানুষের আবেগের তীব্রতা। আমার পরম সৌভাগ্য মারা মারি , কাটা কাটি, 'ইলিশ মাছের ত্রিশ কাটা বোয়াল মাছের দাড়ি, কান্দেরে কান্দেরে ...... কান্দেরে ' আশির দশকের এইরকম একটা দুর্দান্ত সময়ে বড় হয়েছি।
স্মৃতি হাতড়ালে ঝাপসা মনে পড়ে ঢাকা সাফ গেমস ১৯৮৫ –এর কথা। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। আরও একটি ব্যাপার সারাজীবন মনে থাকবে সেসময় সার্ক সম্মেলন উপলক্ষ্যে বিটিভি দেখিয়েছিল ৭ দেশের দুর্দান্ত সব ছবি। তবে আমার বাবা মা চাচা খালা ফুফুরা বুঁদ হয়ে ছিল উত্তম সুচিত্রার কালজয়ী ছবি গুলোতে – সেসময় বিকাল বেলা ছবি শুরুর আগে কার্যত রাস্তা ঘাট সব ফাঁকা হয়ে যেত। যাই হোক ফিরে আসি পুরানো প্রসঙ্গে। সেই সাফ গেমস-এ বাংলাদেশ অবধারিত ভাবেই ফেভারিট। আসলাম, কায়সার, আবুল, খোরশেদ বাবুল, রেহান, ইউসুফ, লিটন,ইলিয়াস, আশীষ ভদ্র, রঞ্জিত, মনু, জসিমুদ্দিন যোসী, মহসিন এদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশ তখন দেশের মাটিতে আত্ন বিশ্বাসী এক দল। শুনতে আশ্চর্য লাগবে বিশেষ করে যখন আধুনা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা স্ট্রাইকার মালদ্বীপের আলী আশফাকের নৈপুণ্য দেখি তখন মনে পড়ে এই মালদ্বীপকে বাংলাদেশ সাফে ৮-০ গোলে হারিয়েছিল। ৮৭-এর এশিয়ান ক্লাব কাপে ঢাকা মোহামেডান-এর হয়ে খোরশেদ বাবুল নেপালের মানাং মারসিয়াংদি ক্লাবের ৫/৬ জন কাটিয়ে একক প্রচেষ্টায় একটা গোল দিছিল – শালা আজতক এইরকম খেলা দেশের কেউ খেলতে পারলনা। ৮৫ সাফ এর স্বপ্নভঙ্গ হয় ফাইনালে ভারতরে কাছে টাইব্রেকার-এ হেরে। পুরা খেলায় কি দুর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী-ই না দেখিয়েছিল আমাদের দেশ, ১-০ গোলে অনেকক্ষণ লিড নিয়ে ছিল। খেলার থেকে বেশী মনে আছে আমার বাবা চাচাদের আক্ষেপ-এর কথা । সে এক উত্তাল সময় - পরের বছর ১৯৮৬-তে হল ম্যারাডোনাময় বিশ্বকাপ । আবাহনী হ্যাট্রিক চাম্পিয়ন হয়েছে ১৯৮৩,৮৪, ৮৫ এবার মোহামেডান এর পালা। শুরু হল ৮৬-তে অপরাজিত চাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে বাদল রায়ের একমাত্র গোলে সেই আবাহনী কে হারিয়ে । ৮৭-এর ঢাকা লীগ উত্তেজনায় ঠাসা এক সময়। মোহামেডানে যোগ দিল ছোট খাট ম্যারাডোনা সাইজের এক তরুন – বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফরওয়ার্ড আমার সারা জীবনের ফুটবল আইকন সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির । ঢাকা স্টেডিয়ামে তখন ইরান-ইরাক যুদ্ধ। আবাহনীতে ইরাকের শামির সাকির, করিম মোহাম্মাদ , মোহামেডান নিয়ে এল ইরানি গুলাম রেজা নালজেগার, গুলাম রেজা বুরহানজাদে আর কোচ হিসাবে নাসির হেজাজী। সেসময় আবাহনী মোহামেডানের কোন একটা ফাইনালে কলকাতা থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল ইস্টবেংগল-এর নাইজেরিয়ান চিমা ওকেরি , গোলরক্ষক মনোরঞ্জন ভট্রাচারয –কে কিন্তু মনুর গোলে মোহামেডান কাপ জিতল। সেই বছর এমেগা ইউজিগো যোগ দিল মোহামেডানে আর হয়ে গেল ঘরের ছেলে। শ্রীলংকান পাকির আলি আর প্রেমলাল শোনা যায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করেছিল। ঢাকার ঘরোয়া লীগ তখন গুনে মানে দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ তার পরেও বাংলাদেশ ব্যর্থ ১৯৮৭-এর কলকাতা সাফ গেমসে-এ। ১৯৮৮-তে ৩য় বারের মত হ্যাট্রিক অপারাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে মোহামেডান গড়ল এক অনন্য রেকর্ড। ১৯৮৯-তে ইসলামাবাদ সাফ গেমসেও ফাইনালে বাংলাদেশ ভাল খেলেও হেরে গেল পাকিদের কাছে। তবে এসময় ক্লাব পর্যায়ের আন্তর্জাতিক ম্যাচ গুলোতে মোহামেডানের সাফল্য ছিল রীতিমত ঈরষনীয়। ৯০-এর দশকে মোহামেডান হারিয়েছে ইরানের পিরুজী ক্লাব-কে (২-১) , এমনকি উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল-২৫ ক্লাব-কেও।
পুরান দর্শক, আপনাদের কি মনে আছে জোসীর কথা – নাহ মনে নাই। টাচ লাইনের উপর দিয়ে বুলেট ক্ষিপ্রতায় বল টানতে পারত এইরকম আর কেউ বাংলাদেশে আসবে কিনা সন্দেহ ! অকাল ইনজুরি (বিপক্ষ ডিফেন্ডার-এর লাথি) শেষ করে দিয়েছিল তার হাটুর বাটি।
মনে পড়ে কি লম্বা থ্রয়িং এর জন্য বিখ্যাত আবাহনীর আলমগীরের কথা ? আবাহনী- মোহামেডানের খেলায় দুই দলের জানবাজ সাপোর্টাররা স্টেডিয়াম-এ নিয়ে আসত ঢোল-তবলা…বিশাল জনসমুদ্র আওয়াজ তুলত বাদ্যের তালে তালে… ঢুম ঢুম আলমগীর…ঢুম ঢুম আলমগীর ।
ইদানীং বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের দেখলে মায়া লাগে…করুন সব চেহারা…অথচ কি দানবীয় অবয়ব ছিল ঝাকড়া চুলের কায়সার হামিদের, মন্টু রেহান এরা নাকি বাস্তব জীবনেও ছিল মাস্তান। মহসিন, ব্রাদারসের ওয়াসিম এরা তো ছিল পুরাই নায়ক। কিছুদিন আগে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একসময়ের তুখোড় ফরওয়ার্ড মামুন জোয়ারদার এর কথাটা কানে বাজে – ফুটবলের স্বর্ণ যুগে বাংলাদেশ দুর্ভাগ্যক্রমে একটা ভালো কোন টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি – পারলে দেশের ফুটবলের চেহারাই হয়ত বদলে যেত। সবেধন নীলমণি ১৯৮৯-এর প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপে বাংলাদেশ লাল দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া। ফাইনালে দঃ কোরিয়া ইউনিভার্সিটি একাদশকে হারিয়েছিল বদলী কিপার মোঃ সেলিমের একক নৈপুন্যে। হাইব্রিড বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মউদুদ তখন এরশাদ সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধান অথিতির পুরস্কার দিতে যেয়ে সবাইলেই জড়িয়ে ধরছিল আনন্দে।
তবে আমার স্মৃতিতে বাংলাদেশ তার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ম্যাচ খেলেছিল ১৯৮৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে থাইল্যান্ড -এর সাথে ঢাকা স্টেডিয়ামে। এর আগে ব্যাংককে প্রথম লেগে ১-০ তে হেরে আসছে । আমার স্পষ্ঠ মনে আছে ১৯৮৯ এর ঐ দিনের কথা ক্লাস ফাইভে পড়ি আমি। বাংলাদেশের খেলা নিয়ে সারাদিন কি টেনশন। খেলা শুরু হতেই সাব্বির-ওয়াসীম জুটি ঝাপিয়ে পড়ল থাইদের উপর। কি সব পাসিং কি শব ড্রিবলিং আমাদের মারাদোনা সাব্বির-এর। থাই স্ট্রাইকার ভিট্টুন কিজমংকোলাক কয়েকবার শট নিয়েছিল আমাদের গোলে কিন্তু মহসীন ছিল বারের নিচে অতন্দ্র প্রহরী । ৩-১ গোলে জেতা ঐ ম্যাচে সাব্বিরের করা গোল আমি সারা জীবনেও ভুলবোনা । আমাদের বরতমান বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ত কোনদিন –ই জানবে না বাংলাদেশের ফুটবল ক্রেজ একসময় কেমন ছিল – কিন্তু আমি গরব করে বলতে পারি আমি সাব্বির খোরশেদ বাবুল এদের গোল দেখেছি।
আমরা কতটা ফুটবলের কাঙ্গাল ছিলাম তার প্রমান কোথাকার কোন বালের অখ্যাত ডানা আর গোথিয়া কাপ জেতা বুইড়া দামড়া বখতিয়ার গ্রুপ-রে সারা বাংলাদেশ কি সন্মান টাই না দিছিল। অন্যান্য দেশের কচি স্কুলের পুলাপাইনরে চামে চিকনে গন্ডা গন্ডা গোল দিয়া দুইটা কাপ নিয়া বিমান বন্দরে নামলে তৎকালীন ফার্স্ট লেডী রওশন এরশাদ সবাইরে নিজ হাতে মিষ্টি মুখ করাইছিল ... লোলজ
ভারতীয় টীমে বাইচুং ভূটিয়া আসার পর আর কোন দিন ওদের সাথে পেরে উঠা হয় নি, কিন্তু আপনারা কি জানেন ১৯৯১ এর কলম্বো সাফে আমাদের রুমি রিজভী করিম এই ভারতের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ে কি অসামান্য দক্ষতায় দুর্দান্ত ভলিতে গোল করেছিল ? গত ২ দিন আগে ভারতের সঙ্গে ড্র হওয়া ম্যাচে ঐ ১৯৯১-এর কথা মনে পড়ছিল বার বার।
মোহামেডানের হয়ে ইরানি ভিজেন তাহিড়ির লীগে ২৪ গোলের কথা একজন মনে করিয়ে দিলেন উপরের কমেন্ট-এ। উজবেক আজমত আব্দুর রহিমভ বা রাশিয়ান ঝুকভ-এর মত কোয়ালিটি প্লেয়ার রা কিন্তু এক সময় খেলে গেছে আমাদের লীগে।
ধুর ছাই , একজন লেখকের লেখায় কমেন্ট করতে এসে বিরাট কাহানি ফেদে বসলাম । আসলে বাংলাদেশের স্বর্ণ যুগের ফুটবল নিয়ে পুরান স্মৃতি আর সম্প্রতি কাঠমুন্ডু সাফে বাংলাদেশের চরম ভরাডুবি এই দুই ফিলিংসের মাইঙ্কা চিপায় পইড়া মাথাটা একটু আউলা হইয়া গেসছিল।
মুল পোস্টের লেখকের কাছে বিনীত ক্ষমা চেয়ে গেলাম।
..................................................................
#Banshibir.
লিখেন না আরও।
৮৫র সাফ গেমসের ফাইনালে ১ম গোল ভারত দেয় (মনে হয় শিশির ঘোষ)। কয়েক মিনিট পরেই পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে আসলামের আচমকা শটে গোল পরিশোধ। ভারতের গোলকিপার (মনে হয় অতনু) পুরাই বেকুব।
৮০ দশকে একবার ইরানের সাথে আসলাম বিচিত্র কায়দায় মাথার পিছন দিয়ে হেড করে গোল দেন। দারুণ গোল।
রোবট, আপনি ঠিকই বলছেন আমারই মনে ছিল না বহুকাল আগের ছোট বেলার স্মৃতি কিনা।
ইস্টবেঙ্গলের শিশির ঘোষ এর পরে কোন এক ক্লাব কাপে (সম্ভবত ১৯৮৮-এ) ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা ঢাকা মোহামেডানের জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল একাই ২ গোল করে সমতা এনে।
১৯৮৫ সাফে ভারতের কিপার ছিল অতনু ভট্রাচারয। ঢাকা সাফ গেমসে-এ খেলতে এসে কোন একদিন সে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিতে গিয়েছিল - পেপারে সে খবরও এসেছিল ।
সে সময় ভারতীয় ফুটবল দল ছিল বাঙ্গালী প্লেয়ার নির্ভর । ওদের ডিফেন্সে খেলত লম্বা একটা প্লেয়ার সুদীপ চাটারজি ।
১৯৯১-৯২ - কলকাতা মাতিয়ে এসেছিল আমাদের মোনেম মুন্না , রুমি আর কায়সার হামিদ (ভারতীয় মিডিয়া আজীবন তার নাম লিখেছে কাইজার) ...
অনেক পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।
যখন আবাহনী-মোহামেডানের খেলা হতো পুরো বাংলাদেশ দুই দলের পতাকায় সয়ল্যাব হয়ে যেতো। আমি স্কুল থেকে খেলা দেখতে মাঠে চলে যেতাম- জায়গাই পাওয়া যেতো না! একবারতো আবাহনী-মোহামেডানের খেলা দেখতে গিয়ে মারামারির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।
আবাহনী কোনো খেলায় হেরে গেলে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকতাম। মোহামেডানের বিরুদ্ধে জিতলে তো পরেরদিন অনেকগুলো পত্রিকা কিনতাম রসিয়ে রসিয়ে বিজয়ের কাহিনী পড়ার জন্য। আর আজ--------
ভারতের বিরুদ্ধে খেলাটা আমিও দেখেছিলাম। লাস্ট মিনিটে গোলটি খাওয়ার পর এতোটাই হতাশ হয়েছিলাম- টিভি বন্ধ করে দিয়ে অনেকক্ষন ঝিম মেরে বসে ছিলাম। গিন্নি অবাক হয়েছিলো খুব।
ফ্লাই ওভারটা হওয়াতে আসলে খুব সুবিধা হয়েছে, সেটা কেউ স্বীকার করুক বা না করুক। মনে করি, ধীরে ধীরে ঢাকার চেহারা চেইঞ্জ হবেই। আমি খুব আশাবাদী।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
ঢাকা মেট্রো বরাবরই প্রিয় একটা সিরিজ। নাম দেখেই লাফ দিয়ে এসে পড়লাম। অন্যান্যগুলোর ধারাবাহিকতায় একটু অন্যরকম বলেই কিনা জানি না, বেশী ভালো লাগলো।
অট: আমি বসুন্ধরাতেই থাকি, অফিসও এখানেই। সুতরাং আপনি সময় করতে পারলে দেখা হতে পারে- অন্যতম প্রিয় লেখককের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়া যাবে।
____________________________
নতুন মন্তব্য করুন