১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলছে।
তখনকার মিরপুর এত ইট কাঠের জঙ্গল হয়ে ওঠেনি। পাশের বিল্ডিংয়ে কেউ জোরে কথা বললে অন্য বিল্ডিং থেকে শোনে যেতো। পাকিস্তানের প্রতিটি রানে এবং ওয়াসিম আকরামের উইকেট লাভে আশেপাশে অনেক বাসা থেকে আনন্দ ধ্বনি আসতো। অনেক বারান্দায় ছাদে উড়তো পাকিস্তানের পতাকা।
সেবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সে রাতে মিরপুরের মণিপুরে মিছিল বের হলো, পাকিস্তান পাকিস্তান জয়ধ্বনি, হাততালির তালে তালে পাকিস্তান পাকিস্তান চিৎকার। তারিখটা ছিল ২৫ শে মার্চ, ১৯৯২।
২১ বছর আগের ঠিক ঐ রাতেই পাকি হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর। বড়ভাইয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে এ কথাই স্মরণ করলেন তখন। সঙ্গে ছিল আফসোস আর দীর্ঘশ্বাস।
বয়স কম ছিল তখন, তাই ভাবতাম - বাংলাদেশ যেহেতু বিশ্বকাপে খেলে না তাই অন্য দলকে সমর্থন করাই যায়। (আরেকটু বড় হয়ে বুঝেছি, কোনো যুক্তিতেই পাকিস্তানকে সমর্থন করা যায় না।)
১৯৯২ সাল ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের ২১ বছর পরের সময়। ক্যালেন্ডারের পাতায় আরো ২২ বছর পার হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও বাংলাদেশের বিশাল অংশের দর্শক কেন পাকিস্তান সমর্থন করে সেটা এখন বুঝতে পারি না। গত আট বছর ধরে অনলাইন জগতে, বিশেষ করে বাংলা ব্লগে, পাকিস্তানপ্রেমীদের কাজকর্ম দেখে এত বেশি ত্যক্ত বিরক্ত হয়েছি যে - প্রায়ই এদের 'ছাগু', রাজাকারের ছানা পোনা, জামাত শিবির গালি দিয়ে ইগনোর করি। দিনদিন এদের সংখ্যা কী হারে বাড়ছেই বাড়ছে, সেটা জানার জন্য ফেসবুকে একটু চোখ বোলালেই হবে।
এসব পাকিস্তান সমর্থকদের একটা জনপ্রিয় যুক্তি হলো - 'খেলার সংগে রাজনীতি মেশাবেন না'।
এ যুক্তি কতটা তুচ্ছ সেটা আরো ছয় বছর আগেই সচলায়তনে লিখেছন অচ্ছ্যুৎ বলাই।
রাজনীতি ছাড়াও অন্য যে দুটি প্রসঙ্গ এ লেখায় ছিলো তা হলো - ১) পাকিস্তান ভালো খেলে ২) পাকিস্তান আমাদের মুসলমান ভাই।
অচ্ছ্যুৎ বলাই খুব অল্প কথায় প্রমাণ করে দেখিয়েছেন এ দুটি যুক্তি কতো ঠুনকো।
কারণ, পাকিস্তানের চেয়ে ভালো খেলে এমন অনেক দল আছে ক্রিকেটে, রেকর্ড বইই তা বলে। আর ধর্মের জন্য যদি ক্রিকেটে পাকিস্তানকে সমর্থন করতে হয়, সেটা ফুটবলে নয় কেন? ফুটবল বিশ্বকাপের মাসে এদের ক'জনকে সৌদি আরব কিংবা মরক্কোকে সমর্থন করতে দেখা যায়? ক'টা বাসার ছাদে মুসলমান ভাইদের দেশের পতাকা দেখা যায়? সব তো দেখা যায় ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ফ্রান্স আর জার্মানীর পতাকা।
অর্থ্যাৎ, পাকিস্তানকে সমর্থনের পেছনে ধর্মীয় কারণটা মুখ্য নয়। আছে অন্য কোনো কারণ।
সে কারণটা কি ১৯৭১ সালে এদেশে থেকে যাওয়া পাকিস্তানী চেতনার প্রেতাত্মা? ৪২ বছর পরেও এ প্রেতাত্মা এত শক্তিশালী কেন?
জামাত-শিবির না করা কিশোর তরুণরা কেন পাকিস্তান সমর্থন করে?
আমি কৈশোরে যেমন ভাবতাম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলে না, যেমন খেলে না ফুটবল বিশ্বকাপেও, তাই যে কোনো দলকে সমর্থন করা যায়, সে ভাবনার দিনও তো বিগত হয়েছে; ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ।
১৯৯০ এবং পরবর্তী সময়ে যাদের জন্ম হয়েছে তারা ক্রিকেট যখন বুঝতে শিখেছে তখন থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঠের দল। তাহলে এই প্রজন্মের মনে কেন পাকিস্তান জায়গা করে নিলো বুকের অর্ধেক জুড়ে?
বিভিন্ন সামাজিক আড্ডায় এসব কিশোরকেই প্রশ্ন করতে শুনি, ক্রিকেটে কাকে সাপোর্ট করেন?
'বাংলাদেশ' জবাব শুনে বলে, ২য় দল কে?
আমি জিজ্ঞেস করি, ২য় কেন থাকতে হবে? টেস্ট ক্রিকেট খেলুড়ে অন্য কোনো জাতি কি এভাবে ২য় কোনো দলকে সমর্থনের চর্চা করে?
দুঃখজনক হচ্ছে, এ সমর্থনটা আর সমর্থনের জায়গায় নেই, চলে গেছে উন্মাদনা এবং অশ্লীলতার পর্যায়ে। "দ্বিতীয় দল সমর্থন করি" - এ তত্ত্বের বড় অংশ পাকিস্তানের সমর্থক। এরা গ্যালারিতে বসে যে দেশটির নাম উচ্চারণ করে, যে দেশের পতাকা ওড়ায় সে দেশটির থেকে আমরা আলাদা হয়েছিলাম ৪৩ বছর আগে! বিনামূল্যে নয়, সাগর রক্তের বিনিময়ে। সে দেশটির প্রতি খেলাচ্ছলে ভালোবাসা প্রকাশও আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ ৬৯ হাজার নিপীড়িতার প্রতি স্রেফ অপমান ছাড়া আর কিছু নয়।
রেকর্ড বুক বলে পাকিস্তান বিশ্বের সেরা ক্রিকেট টীম নয়, এ দলে এমন কোনো সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ছিল না গত এক দশকে যার প্রভাবে পাকিস্তান প্রেম ক্রিকেটে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়াবে (ফুটবলে যেমন ম্যারাডোনার স্মরণে এখনো অনেকে আর্জেন্টিনা সমর্থন করে)। ওরা মুসলমান ভাই (হায়!), এই যুক্তিও ধোপে টেকে না। বাকী থাকলো কি, রাজনীতি? যেটা শুধু রাজনীতি নয়, আমাদের রক্ত মাখা ইতিহাস - সেটা কি গত দুই দশকে জন্ম নেয়া প্রজন্মের মনে কিছু ছায়া ফেলে না? ২ বছর আগে, ২০১২ সালের ২৩ মার্চে পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলায় যে হাজার হাজার বাঙালি কিশোর-কিশোরী তরুণ-তরুণী পাকিস্তানকে সমর্থনে মিরপুর স্টেডিয়ামে মুখে পতাকা এঁকে, হাতে পাকি পতাকা নিয়ে উন্মাতাল নেচেছিল, জার্সি বদল করেছিল - তার পেছনের যুক্তি কী?
এবারের এশিয়া কাপ ফাইনালে বাংলাদেশের যে নতুন প্রজন্ম পাকিস্তানকে সমর্থন করে স্টেডিয়াম মাতাবে, তাদের মনের ভেতরকার যুক্তিটা আসলে কী?
পাকমন পেয়ারের এ অশ্লীল সময় কখনোই কি ফুরাবে না?
মন্তব্য
আমার মনে হয়না, পাকিস্তান ভারতের পতাকা ওড়ানো কালচার কখনো বন্ধ হবে। এটা তো শুধু এই প্রজন্মের সমস্যা না, এটা তারা তাদের আগের প্রজন্ম থেকে উত্তরাধীকারসুত্রে পেয়ে এসেছে। পিনাকি ভট্ট, উৎপল শুভ্র এদের মত খাঞ্চোতেরা সেই পালে আবার হাওয়াও দিচ্ছে। আমারা হাজার চিল্লালেও পাকিডান্ডু প্রেমিক-প্রেমিকারা হাতে, গালে এবং ইয়েতে পাকি পতাকা এঁকে গ্যালারীতে আসবেই। ফেসবুকে আগের স্ট্যাটাসে "সাব্বাস মুশি" লিখে পরের স্ট্যাটাসে "আফ্রিদী ইউ আর বেস্ট, আউউউউউউউউউ" চলতেই থাকবে।
----ইমরান ওয়াহিদ
আমি তেমন ক্রীড়াপ্রেমি না কিন্তু ১৯৯২ সালের ফাইনালের কথা এখনও মনে আছে। আমরা তখন বুয়েট পড়ি। গ্রুপ পর্যায়ে পাকিস্তান সম্ভবত সেই ইংল্যান্ডের সাথেই ৭৫ রানে অল আউট হয়েছিল। সেই খেলাটা বৃষ্টির জন্য ড্র হয়, ওটা না হলে পাকিস্তানের সম্ভবত ফাইনালে খেলা হতো না - স্মৃতি থেকে বলছি।
যাই হোক ফাইনাল খেলার দিন কয়েক বন্ধু মিলে এন্টি-পাকিস্তান সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করলাম, বুয়েটের হলে খেলা না দেখে এক বন্ধুর বাসায় দেখলাম। পাকিপ্রেমিদের ঠেলাতে বুয়েটের হল এক অগম্য জায়গা।
ফাইনাল খেলার দিন পাকিস্তানের সমর্থন তুঙ্গে। আমাদের সহপাঠি ছাত্র ও ছাত্রীরা প্রায় সবাই পাকিস্তানের সমর্থক - এদের মধ্যে বামপন্থী ছাত্র আছে আছে ছাত্রলীগ পর্যন্ত। আশির দশক থেকে পাকিস্তানের খেলাতে আমাদের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো - ১৯৯২ ফাইনালের আগে তাই কিছুটা অ্যাকাডেমিক কারনেই আপনার প্রশ্নগুলো জনে জনে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উত্তরগুলো ছিল...
১। উপমহাদেশের দেশ তা-ই
২। আমরা তো কোন দিন জিতবো না তা-ই
৩। মুসলিম দেশ তা-ই
৪। ক্রিকেট বিশ্বে দরিদ্র দেশের বিশ্বকাপ জেতা তাই।
আমার এর পরের প্রশ্নটা ছিল ১৯৭১ সাল নিয়ে। এই প্রশ্নের জবাবে প্রায় সবাই বিরক্ত হয়ে "খেলা ও রাজনীতি" এক না করে দেখার উপদেশ দিয়েছে আমাকে।
পাকিস্তান জেতার পরে শহরে তুলকালাম উৎসব হয়েছিল, বহু জায়গাতেই পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে মিছিল হয়েছে। মানসিকতার দিক থেকে নিজেকে সংখ্যালঘু মনে হয়েছে।
আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত...
১৯৭১ আমাদের সবাইকে সমভাবে স্পর্শ করে নি। সেটা হয়ত সব গণযুদ্ধের ক্ষেত্রেই সত্য - সবাই সমান ত্যাগ স্বীকার করে না। কিন্তু আসল কারন আমার মনে হয়েছে - জাতি হিসাবে আমাদের আত্মসম্মান অনেক কম। যেই জাতি সব চেয়ে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছে আমাদের উপর, মাত্র ২০ বছরের মধ্যে আমরা তাদের মাথায় তুলে নাচি। শহীদ বুদ্ধিজীবীর ছেলে পর্যন্ত আছে এই পাকিপ্রেমি গোষ্ঠির মধ্যে।
ইতিহাস বিকৃতি হয়ত কিছুটা প্রভাব ফেলেছে কিন্তু কাজটা এতো সহজ হতো না যদি মানুষ ভুলতে না-চাইতো। পৃথিবীর আর কোন দেশের মানুষ এই কাজ করে বলে জানি না।
স্বাধীন হলেও আমরা মানসিকভাবে পাকিস্তান থেকে দূরে যেতে পারি নি। সেটার জন্য আরও অনেক আত্মসম্মানের দরকার ছিল।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
পাকিস্তান সাপোর্ট করার মূল ভিত্তিটি হলো পরিবার। আমাদের বেশি ভাগ মানুষের রাজনৈতিক পছন্দ/ভালোলাগা থেকে শুরু করে খেলাধূলার প্রিয় দল হয় পারিবারিক ভাবে। সেখানে বাবাই মূল ভূমিকা পালন করে। আর খুব কম মানুষি শৈশব/যৌবনের ভালোলাগার মোহ থেকে বের হতে পারে না। বংশীয় বহমান সব ভালোলাগা খারাপ এমন নয়, কিন্তু পাপিস্থান সাপোর্ট করা কোন যুক্তিতেই গ্রহনযোগ্য নয়। ধর্ম, এশিয়া, ভালো খেলে এগুলো কোনটাই সঠিক নয়, পাপিস্থান একমাত্র তারাই সাপোর্ট করতে পারে যারা ৭১র মহান ইতিহাস সঠিক ভাবে জানে না, যারা মুক্তিযু্দ্ধকে হৃদয় থেকে অনুভব করে না।
(আমি নিজেও একসময় পাপিস্থান সাপোর্ট করতাম যখন আমি ৯ম-১০শ্রেনীতে পড়ি। কারন আমার বাবা কট্টর পাপিস্থান সাপোর্টার ছিলো। আর আমার উপর বাবার ভালোলাগাগুলোর একটা প্রভাব ছিলোই। তখন পর্যন্ত আমি মুক্তিযুদ্ধকে ভালোভাবে জানতে পারিনি, কিন্তু যখন আমি জেনেছি আমাদের ইতিহাসকে আমি ছুড়ে ফেলেছি আমার বংশীয় ভালোলাগা, বিশ্বাস। আর এখন পাপিস্থান এর চেয়ে জঘন্য কোন শব্দ আমি কোথাও খুঁজে পাইনা, পাকিস্থান আমি উচ্চারন করিনা কখনো ওটা পাপিস্থান। তাই ইতিহাস জানাটা সবচেয়ে জরুরি, এর জন্যে বাবা-মাকে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে)
মাসুদ সজীব
শুধু ইতিহাস জানলেই কি আর হয়, ইতিহাসকে মনে প্রাণে ধারণ তো করতে হবে তাইনা। তা নাহলে মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই'য়ের তোড়ে সব জানা ইতিহাস ভেসে যাবে। আমরা যদি ৭১'কে বুকের মাঝে ধারণ না করতে পারি তবে সুবহে সাদিকের মত প্ত্রিকা আমাদেরকে পাকিস্তান সমর্থকই বায়ানিয়ে রাখবে
----ইমরান ওয়াহিদ
আমার সন্দেহ, এই খবরটাকে দেশের মিডিয়ায় চেপে যাওয়া হবে।
এই খবর তো চেপে যেতেই হবে। পাগল নাকি? এখবর ছাপলে উটপোদ, পিনাকপাকি এদের কি হপে?
----ইমরান ওয়াহিদ
স্যালুট!
বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশ বাদে অন্য কোন দেশ কিভাবে সমর্থন দিতে পারে - এই জিনিসটাই আমার মাথায় ঢুকেনা। আর পাকিস্তান তো অনেক দূরের কথা।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে ছাগু এবং অসচেতন মানুষ পাকিস্তানকে সমর্থন করে। পাকিস্তান ভালো খেলে, পাকিস্তান মুসলমান - এগুলা ওই রাজনীতির শ্লোগানমাত্র।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়টায়; অর্থাৎ রকিবুল প্রজন্মে এই রাজনীতিটা বেশি চাঙ্গা হতে পারে নাই। ৭৫ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানকে ভালোবাসানোর রাজনীতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হাই প্রায়োরিটি দিয়ে করা হয়েছে। বর্তমানেও এ চর্চা অব্যাহত আছে। আমার দেশ, ইনকিলাবরা অনেকটা একতরফাভাবে এই রাজনীতির চর্চা করলেও প্রথম আলোজাতীয় মিডিয়া কাজটা আরো সূচারূভাবে ব্যালেন্স করে বুদ্ধিমত্তার সাথে করে।
জেনারেলাইজ করে বলা যায়, বাংলাদেশের মানুষ অপেশাদার। চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার চেয়ে অপরের চটকদারী সিদ্ধান্তে গা ভাসিয়ে দেয়ার প্রবণতাকেই 'স্বাভাবিক' ঘটনা হিসেবে আমরা গ্রহণ করি। এর ফলে পিনাকিদের অপযুক্তি আর আলুটাইপ মিডিয়ার পাকি রিকনসিলিয়েশনের অনবরত তথ্যপ্রবাহকে পেশাদারিত্বের সাথে মোকাবেলা করার চর্চা এমনকি প্রো-৭১ লোকজনের অধিকাংশেরই নেই।
আমি কিছু আলুপাঠক বন্ধুবান্ধব, যারা আসলে প্রো-৭১, পেয়েছি, যারা বাঁশের কেল্লা থেকে প্রোপাগান্ডা খুঁজে বের করে, তারপর জামায়াতের বা এইধরনের (যেমন, প্রিয় ডট কম) বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকার লিংক দিয়ে ধনুক ভাঙ্গা পণ করে তর্ক করে। স্বাধীনতার পক্ষের লোকদেরকে দেখেছি, 'পাকিস্তান সমর্থন করলে অসুবিধা কি?' এই টাইটেলে "বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা"র মানসে কেন পাকিস্তানকে সমর্থন করাও কোনো সমস্যা না, সেই লাইনে কুযুক্তি দেয়া শুরু করে। ২০০৬ এ যে আলোচনা শেষ করেছি, ২০১৪তে সেই আলোচনা আবার বিসমিল্লাহ করতে হয়।
এ অবস্থায় যার যতোটুকু সামর্থ্য আছে, সেটা দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগেই এই বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে হবে। যেমন, পাকিস্তানের পতাকা গায়ে স্টেডিয়ামে যাওয়া বাংলাদেশি পতাকা আইনেই অপরাধী। সরকারের এক ফোঁড়, আমাদের হাজার ফোঁড়ের সমান। পার্থক্য হলো, সরকারের চরিত্র অনুযায়ী প্রায়োরিটি বদলায়, সচেতন লোকজন হয়তো সেভাবে বদলায় না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাইদা, আপনার দ্বিতীয় স্বত্বা বের হয়ে আসছে। বলাই কিন্তু সব সময় ঠান্ডা মাথার চরিত্র। আসলে এই পাকি জারজগুলো ঠান্ডা মাথা থান্ডা রখতে দিচ্ছে না। কি নির্লজ্জতার সাথে এরা বাংলাদেশী হয়ে আজকে বাংলাদেশ সমর্থকদের গালাগালি দিয়েছে ভাবলেই মাথায় খুন চেপে যাচ্ছে
----ইমরান ওয়াহিদ
পাকি আর পারজদের জন্য বাণী একটাই----
পাখামাপোতোমাচু
শাকিল আরিত
আমি আরেকটা দেই, আত্মলিংগমস্বপোদেপুরম
----ইমরান ওয়াহিদ
আমার মনে হয় না অবস্থার পরিবর্তন হবে। বরং অবস্থা আরো খারাপ হবে। যেখানে মানুষ, বাংলাদেশের সঙ্গে খেলায় পাকিস্তান বলে গলা ফাটায়, সেখানে আমি কোনো স্বপ্ন দেখতে পারি না। হয়ত বলা যায়, এদের সংখ্যা কম কিন্তু এই কমটাই থাকবে কেন?
কোথায় বিশাল একটা গলদ রয়ে গেছে, আমাদের বড় হওয়ায়, আমাদের শিক্ষায়।
জানি না, ফাইনালে আরো কত শীৎকার দেখতে হবে। টিভি খুলব না। একদম ইচ্ছে নেই আর
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
আমিও পাকি সাপোর্ট করতাম, '৯২- এর আগে-পরে। সচেতন ছিলাম না? ভালই ছিলাম, খুব ভাল করেই ইতিহাস জানতাম, পাকি হানাদার আর রাজাকারদের প্রতি ঘৃণারও কমতি ছিল না কোন। তাহলেও কেন সাপোর্ট করতাম? সত্যি কথা বলতে কি, ঐ সময় এ দুটো ব্যাপার একসাথে কেন জানি মাথায়ও আসেনি। হ্যা, বাপ-চাচাকে দেখছি সাপোর্ট করতে, তাই বলে যে ফ্যানাটিক সাপোর্ট করত, তাও না। খুব সম্ভবত ভারত বিরোধী একটা ব্যাপার ছিল। নিজের কথা বলতে পারি, সেটার একটা প্রভাব তো ছিলই, সেই সাথে পাকিদের আনপ্রেডিক্টেবল খেলার প্রতিও একটা আকর্ষণ ছিল। মিয়াদাদ, ইমরান খান, আকরাম, সাঈদ আনোয়ার, ওয়াকার - এদের খেলা দেখার একটা থ্রিল ছিল, সেই সাথে মিডিয়ার ভূমিকাটাও কম ছিল না। পত্রিকায় এদের হিরোইজমের কথা যেভাবে আসত, অন্যদের কথা কিন্তু ঐভাবে কখনো আসত না। মনে আছে, মিয়াদাদের প্রতি আকর্ষণ জন্মায় ওর লাস্ট বলে ছক্কার কথা পড়ে। ধর্ম ব্যাপারটা কিছুটা ছিল, কিন্তু মনে হয় না ততটা প্রবলভাবে ছিল। নিজের অভিজ্ঞতায় আমার মত সাধারণ সমর্থকদের পাকি সাপোর্ট করার নিচের কারণগুলোই প্রধাণ মনে হয়:
১। বাপ-চাচাকে দেখে (তাদেরও সাপোর্টের একটা কারণ ছিল ভারত বিরোধিতা, আর ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বি বলে পাকিস্তান সাপোর্ট)
২। মিডিয়ায় পাকি প্লেয়ারদের হিরোইজম (সেই আমলে '৯০-এর দশকে পাকি প্লেয়ারদের যেমন বন্দনা দেখেছি, মনে হয়না অন্য কারো এতটা ছিল)
৩। পাকিদের আনপ্রেডিক্টিবিলিটি (ওদের খেলা ফলো করার এটা একটা বড় কারণ ছিল, কখন কি হয় - সেটা নিয়ে একটা উত্তেজনা, এই হাইপের পিছনেও মিডিয়ার বোধ হয় একটা বড় অবদান ছিল)
৪। ধর্ম (এটা অবশ্যই একটা ব্যাপার ছিল, তবে মনে হয় না খুব বড় কিছু ছিল)
পাকিদের প্রতি এই সাপোর্ট ৯৯ পর্যন্ত ছিল, যখন বাংলাদেশ খেলা শুরু করল। তবে এর আগে থেকেই আকর্ষণ কমা শুরু করল ক্রিকেট আরেকটু ভালভাবে বুঝার পর থেকে, বুঝলাম এদের যতটা স্পেশাল মনে করতাম, এরা মোটেই ততটা স্পেশাল না, এদের চেয়ে অনেক ভাল, অনেক এক্সাইটিং প্লেয়ার আছে, ততদিনে আমি লারা-এ্যামব্রোস-ওয়ালসের ভক্ত।
আগেই বলছি, ফ্যানাটিক সাপোর্টার ছিলাম না, কঠিন একটা ধাক্কা খেলাম ৯৮-এর স্বাধীনতা কাপে। দেশের মাটিতে স্বাধীনতা উদযাপনে কেউ যে পাকিস্তান সাপোর্ট করতে পারে - এটা মাথায় আসে নাই, মনে আছে ঐ সময় স্টেডিয়ামে পাকি সাপোর্ট দেখে হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। ঐ সময়ই মনে হয় 'ম্যারি মি আফ্রিদী' প্ল্যাকার্ডটা দেখি। আমার মত অনেক পাকি সাপোর্টারই তব্দা খেয়ে গেছিল, আমার বাসার পাকি সাপোর্টার বাপ-চাচা পর্যন্ত। সুতরাং আমার মনে হয় না, যারা শুধু ধর্মের জন্য- ভারত বিরোধীতার জন্য বা হিরো ওয়ারশিপের জন্য পাকি সাপোর্ট করে বা করত - তারা ঐ লেভেলে পাকি সাপোর্ট করে। বিশেষ করে বাংলাদেশ খেলা শুরু করার পর থেকে এই টাইপের প্রায় সব পাকি সাপোর্টারকেই ঝরে পড়তে দেখছি।
সো, এখন মাঠে বা ফেসবুকে যেসব পাকি ফ্যানাটিকদের দেখি, তাদের সম্পর্কে আমার ধারণা পরিষ্কার। এরা রাজনীতি (বি এন পি/আওয়ামী লীগ বা ভারত বিরোধিতা) কিংবা ধর্মের জন্য পাকি সাপোর্ট করে না। এদের পাকি সাপোর্টের পিছনে ইতিহাস জানা-না জানার কোন সম্পর্ক নাই, বরং এরা ইতিহাস খুব ভাল মতই জানে। এরা ৭১-এর সেই প্রজন্মের প্রতিনিধি, যাদের আমরা রাজাকার বলি, এরা সজ্ঞানে এবং সচেতনভাবে বাংলা বিরোধী- সেভাবেই এদের বেড়ে ওঠা। এই ব্যাপারে কোন সন্দেঃ থাকা উচিত না, এর সাথে রাজনীতি বা ধর্মের কোনই সম্পর্ক নাই, পিরিয়ড।
এদের চিন্তাধারা বুঝতে হলে একটা মন্তব্য দেখুন।
এগো বাপ-চাচাই ৭১-এ মুসলমানগো কাফের বানাইছে, একটা কিছু যুক্তি তো খাড়া করা লাগে আসল চেহারা ঢাকতে।
আজকে ফেসবুকে আরেকটা জিনিস দেখলাম, এক পাবলিক পাকিগো লগে ঝগড়া করতাছে, সেইটা আবার হিন্দী/উর্দুতে। কি আর কমু, বেচারার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না, কিন্তু আমাদের আত্মসম্মানবোধের এতটাই অভাব যে হিন্দী/উর্দুতে কথা কইতে এতটুকু বাধল না! এই বোধ আনাটাও খুব খুব জরুরী।
মফিজ (আগের কমেন্টে নাম দিতে ভুইলা গেসিলাম)
পারজদের জন্য কালকের রাতটা আসলেই বিভ্রমের ছিল।
সেই!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমার বড় বোনের কাছে শুনা-
ভার্সিটিতে তার পাশের রুমের একটা মেয়ে ছিল যার বিছানার পাশের দেয়ালময় 'আফ্রিদিদি'র পোস্টার। আদর করে সে নাকি বলত-"সোনা পাখি আফ্রিদি।" কোন দল করত বলা বাহুল্য, তবুও বলি-"ছাত্রী সংঘ"
সুবোধ অবোধ
পাকিস্তানকে কোন অবস্থায়ই সমর্থন করা যায় না -
facebook
আমি একটা ঘটনা বলি-
আমার ছোট খালার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের কিছু আগে। যুদ্ধের সময় আমার নানার পরিবার বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল আর স্বাধীনতার পরে নানি একা দশ সন্তান নিয়ে বাস্তবতা আর অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে করতে তার জীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধ হয়ত কিছুটা দূরে সরে গেছিল। আমার ছোট মামাও তখন বেশ ছোট ছিল কিন্তু তবুও যুদ্ধের ভয়াবহতা বুঝতে তার অসুবিধা হয়নি কোন। মোট কথা আমার ছোট খালা তার ছোটবেলায় না যুদ্ধের ভয়বহতা দেখেছিলেন আর না কারো কাছ থেকে তার গল্প শুনেছিলেন।
আশির দশকের শেষ ভাগে কোন একদিন আশে পাশের মানুষের দেখে তখনকার হার্ট থ্রব(?!) ইমরান খানের একটা পোস্টার কিনে আনেন উনি, পোস্টার দেখা মাত্র আমার মামা তার আদরের ছোট বোনকে জীবনে প্রথম বারের মত চড় মেরেছিলেন আর সাথে সাথে টান দিয়ে পোস্টার ছিড়ে ফেলেছিলেন।
সেই প্রথম আর সেই শেষবার ছিল আমার খালার ইমরান খান প্রীতি!!
আমরা বড় হয়ে এই গল্প অনেক শুনেছি। কেন বললাম গল্পটা কারন আমারও মনে হয় মানুষ এই পাকি প্রেমের শিক্ষার শুরুটা পরিবার থেকেই পায়। একইসাথে দেশের প্রতি ভালবাসা, মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারন সব শিক্ষার শুরুটা হয় পরিবার থেকে।
তাসনীম ভাইয়ের সাথে একমত আমাদের আত্মসম্মানের বড্ডও অভাব আর তার সাথে সাথে আমাদের দেশপ্রেমের ও খুব অভাব। কোন ইস্যুতেই আমরা দেশের স্বার্থে একমত হতে পারিনা। দেশকে ভালবাসলে কোন যুক্তিতেই পাকিস্তানের সমর্থন করা কারো পক্ষে সম্ভব হতনা।
দেশের বাইরে এসে দেখেছি এখানকার অধিকাংশ বাঙ্গালীদের প্রধান কাজ দেশের বদনাম করা। এরা নিজের দেশকে ভালবাসতে পারেনা অন্য কেউ ভালো কিছু করতে গেলে তার পিছন টানে। যদি আমাদের দেশপ্রেম থাকত তাহলে শুধুমাত্র একজন রাজাকারের বিচার হতে ৪২ বছর লেগে যেত না।
নতুন প্রজন্ম বড় হয়েছে ইতিহাস বিমুখ, স্বার্থপর, সুবিধাবাদী হয়ে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
এই পারিবারিক সচেতনতাটাই খুব দরকার।
আমাদের সব কিছুর শুরু আসলে পরিবার থেকেই - ভালোটাও, খারাপটাও।
____________________________
কিছু মানুষকে বলতে শুনছি স্বাধীনতার মাসে কেন পাকিদের সমর্থন করা হবে?
ভাবখানা এমন যে অন্য যে কোনো মাসে করলে সেটা তেমন অপরাধ না! এটা সব সময়ের জন্য চরমতম অপরাধ!
এক্ষেত্রে সুমনের গানটার মত শেষ পর্যন্ত পছন্দের/ভালোবাসার গুনতির সংখ্যায় একটাই নাম থাকার কথা, যে দেশটাতে আমি/আমরা জন্মেছি। সেদেশের 'পতাকাটা অযথাই লাল নয়' এটা যে বা যারা ভুলে যায় তারা আমাদের কেউ নয়, কেউ না!
কিভাবে পারে মানুষ বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে আরেকটি দেশকে সমর্থন করতে, যেখানে সেই অন্য দেশটার নাম আবার পাকিস্তান?
কোন ভারতীয়কে/ পাকিকে তো কোনদিন দেখলাম না স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকার পতাকা নিয়ে নাচানাচি করতে।
শুভেচ্ছা
আফ্রিদির ক্যাচ ড্রপ হওয়ার পর সেদিন স্টেডিয়ামে ওই বাচ্চামেয়েগুলোর ওভাবে কান্না করাটা বিরাট একটা সারপ্রাইজ হয়ে এসেছে। এমন দেখিনি আগে কখনো!
(আলপাইনিস্ট দেবাশীষ)
বাংলাদেশ চায়নি এমন পূর্বপাকিস্তানিদের সংখ্যা বাংলাদেশ-এর জন্মের সময় কম ছিল না। পাকিস্তানের নৃশংসতা তাদের একদল নিজেরাই চেয়েছিল আর একদল 'আহা রে করে ফেলেছে'-র বেশী কিছু মনে করে না। এরা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের জন্ম মেনে নিয়েছিল। কিন্তু, তাদের অন্তর আজো পাকিস্তানের স্বপ্নে বিভোর। তারা সেই আকাঙ্ক্ষা তাদের পরবর্ত্তী প্রজন্মের মধ্য দিয়ে লালন করে চলে। ফল যা হওয়ার তাই হয়, ওই শিক্ষায় বেড়ে ওঠা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাকিস্তানের নামে জয়ধ্বনি দিতে পারার সুযোগের খোঁজে থাকে, দিতে পারলে ধন্য হয়ে যায়। হয়ত আস্তে আস্তে এদের আনুপাতিক সংখ্যা কমে আসবে - অন্ততঃ ২০১৩-র শাহবাগ এই আশার খোঁজ দিয়েছে আমাদের।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন