শিক্ষক সবিশেষ - ০২

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/১০/২০০৬ - ১২:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


শিক্ষক সবিশেষ - 01সে সন্ধ্যায় খুব মন খারাপ নিয়ে পিজি হসপিটালের বাইরে এলাম। দিনটা মনে থাকবে অন্য আরেকটা কারণে - সেদিনই বুশ ইরাক আক্রমণ শুরু করে। সপ্তাহ খানেক পর আবার পিজি হসপিটালে গিয়েছিলাম - স্যারকে দেখতে। সেদিন দেখলাম স্যার খুব আশাবাদী, সুস্থ হয়ে উঠবেন। বললেন - তুমি যে বইটা কিনেছিলে ওখানে একটা শব্দ আছে - 'লোলিতলোভনকান্তি'। আমরা সবাই এখানেই আঁটকে আছি...। স্যারের চিকিৎসা সাহায্যার্থে ছাত্রেরা একটি কনসার্টও আয়োজন করেছিল। সবাই কামনা করছিলেন - স্যার ফিরে আসুক!পরের সেমিস্টারে সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্যার ক্যাম্পাসে ফিরলেন। ভীষণ দূর্বল। ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটেন। বসে বসে ক্লাস নেন। শুনেছি - যাদুকরী কথাবার্তার কমতি ছিল না তখনো। স্যারের রুমে টেবিলে তখন বইয়ের পাশাপাশি 15/16 রকম অসুদ থাকতো। ক্লাস রুটিনের পাশাপাশি অসুদ খাবারও একটা রুটিন ছিল। আমি দেখা করতে গেলাম। আবার সেই আলোচনা। পশ্চিমা আগ্রাসন - গ্লোবালাইজেনশন থ্রেট...। মনেই হচ্ছিলো না - নিজের ভেতরে কী অসুখ নিয়ে তিনি কথা বলছেন!বায়েজিদ স্যার জীবনের একটা গুরূত্বপূর্ণ সময় দেশের বাইরে কাটিয়েছেন। ওয়েস্টার্ণ লাইফের জৌলুসের মোহ কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। মীরপুরের পল্লবীর ছোটখাটো বাসায় থেকে তাঁর প্রিয় শহর ঢাকাকে ভালোবেসে কাছে থাকতে চেয়েছেন। অবসর সময়টুকু ছাত্রদের মাঝে কাটিয়ে টুকরো টুকরো ভাবনাগুলো শেয়ার করতে চেয়েছেন। মরণব্যাধি নিয়ে বারবার হসপিটালে ভর্তি হয়েও প্রচন্ড মানসিক শক্তির জোরে ফিরে এসেছেন ক্যাম্পাসে। ...ঈশ্বরের নিষ্ঠুর নিয়মকে এবার আর এড়াতে পারলেন না। জুলাই 2006। স্যার আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমরা রয়ে গেলাম অসাধারণ এক মানুষের অপূরণীয় ঋণ ও ভালোবাসা নিয়ে!::: আজ 5 অক্টোবর। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ড. বায়েজিদ স্যারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।