বিষণ্নতার শহরের কথা

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: রবি, ১৯/১১/২০০৬ - ৭:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


"নাগরিক জীবন প্রতিবন্ধীত্বের জীবন। মানুষ তার শেঁকড় থেকে বিচ্যুত হয়ে পরিণত হয় বনসাই মানুষে। তাই শহর এত বিষণ্ন। "বিষণ্নতার শহর"-এ সেইসব মানুষের জীবনের টানাপোড়েন চিত্রিত হয়েছে নতুন এক ধারায়। বিনয় ঘোষের মেট্রোপলিটন মনকে আরো গভীরে গিয়ে চর্চা করেছেন লেখক। নাগরিক বিচ্ছিন্নতাকে দেখতে চেয়েছেন নিজের জীবনের ব্যাখার মাঝ দিয়ে। আমরা সবাই আছি বিষণ্নতার শহরে। কিন্তু সেই আমি বড় নি:সঙ্গ। নি:সঙ্গতা আর বিচ্ছিন্নতার প্রেক্ষাপটে নিজেকে চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। সত্যের মুখোমুখি হতে গিয়ে নিজেকে উপায়হীন মনে হয়। ক্ষয়ে যাওয়া গ্রামীণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস আক্রান্ত করে আধুনিক শহরকে। শহরের খেলনা মানুষদের ভিড়ে এখনো যারা নিজেকে আলাদা করে রাখতে চান, তাদের জন্য অন্যধারার এ গ্রন্থটি আশা জাগানিয়া হয়ে উঠার সম্ভবনা ধারণ করে।" বইয়ের ফ্ল্যাপে এভাবেই বর্ণনা পেয়েছে মাসকাওয়াথ আহসানের দ্্বিতীয় প্রকাশিত বই "বিষণ্নতার শহর"; নাগরিক জীবনের স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে আরেকটি দূর্দান্ত সৃষ্টি। গ্লোবালাইজেশন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতির সবুজ ঘাসফুল মাড়িয়ে হাইওয়ে হলো, মাটি পুড়িয়ে ইট হলো, এলোমেলো বিক্ষিপ্ত শহর হলো - কিন্তুতৈরি হলো কিছু শুন্যতা, না পাওয়ার বেদনা। শহরের একদল মানুষ যখন অ্যাফ্লুয়েন্ট কনজু্যমারিস্ট সোসাইটির গোলাপী মাছির পেছনে হনহন করে ছুটছে, আরেকদল মানুষ তখন অতীতচারী হয়ে কেবলই সোনালী কিছু স্বপ্নকে লালন করে চলছে। শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি আর প্রতিদিনকার সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা যখন স্ট্যাটাস সিম্বল সর্বস্ব হয়ে উঠে, আসল চেহারা লুকিয়ে ছদ্মবেশী মানুষ যখন শহরে রাজত্ব করে যায়, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের শৈথিল্য যখন সামাজিক বিচ্ছিন্নতাকে প্রকট করে তুলে - তখন নিয়ন আলোর ঝলমলে শহরের শিরা-উপশিরায় কিছু 'মানুষ' নিজেদের একাকীত্বকে বিষণ্নতার মোড়কে ঢাকার চেষ্টা করে। এলিয়েনেশনের শিকার সেই সব মানুষদের কথা 'বিষণ্নতার শহর'-এ এক ব্যতিক্রমী অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তুলে ধরেছেন লেখক মাসকাওয়াথ আহসান । একই সাথে আধুনিকতার মুখোশ পরা ফাঁপা শুন্য মানুষদের হাস্যকর সব আচরণকে লেখনীর সুঁচ দিয়ে ক্ষত-বিক্ষতও করেছেন । চবি্বশটি অণূগল্পের পাশাপাশি প্রথম 34 পৃষ্ঠার 'প্রারম্ভ' পড়ে বারবার চমকে উঠবেন আপনি। মনে হবে এ যেন আপনারই কথা, আপনার আশেপাশের মানুষদেরই কথা। ...খোঁচাগুলো নিজের গায়ে লাগলে মাঝে মাঝে মনে হবে - বড় নিষ্ঠুর, বড় নির্দয় এ লেখনী! আসলে মাসকাওয়াথ আহসানের লেখার স্টাইলটাই এমন। নির্মোহ-নির্লোভ জীবনাকাঙ্খার ছবি আঁকার পাশাপাশি অনায়াসে তুলে ধরেন স্থুল জীবনাচরণের ভুল প্রয়াসগুলো; যেখানে আমরা খুঁজে পাই আমাদেরই অন্য সত্ত্বাকে। চোখের সামনে তখন খুলে যায় ভাবনার এক নতুন দুয়ার! আপাত: হতাশার ছায়া থাকলেও বইটি পড়ে আপনার মনে হবে - 'জীবনের পুরোটাই নৈরাশ্যের নয়', আশাবাদী হওয়ার অনেকগুলো সূত্রও হয়তো আপনি পেয়ে যাবেন...।ব্লগার ধুসর গোধূলী ইতোমধ্যে বইটি পড়ার আহবান জানিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট দিয়েছেন। পিডিএফ ফরম্যাটে আপলোডও করেছেন, তাকে অশেষ ধন্যবাদ। পিডিএফ ফরম্যাটে পড়তে পারেন এখান থেকে। আর সংগ্রহে রাখার মতো অসাধারণ বইটি পাবেন শাহবাগের আজিজ মার্কেটে, জনান্তিক-এর প্রকাশনায়।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।