সুঁচ ফুটানো অসুখ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: বুধ, ২৯/১১/২০০৬ - ৩:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


একটু একটু করে খবরটা ছড়ালো। প্রথমে একজন দুইজন জানলো - তারপর আশেপাশের কয়েক গ্রাম। খবরের চমকে যতটা না শংকা ছিল তারচেয়ে বেশী ছিল গোপনীয়তার চেষ্টা। কেউ কেউ না বুঝে এড়িয়ে গেলেও মোটামুটি সবাই জানলো মুন্সী বাড়ীর বড় ছেলে মাসুদ মুন্সীর খারাপ অসুখ হয়েছে। এই খারাপ অসুখটা ঐ তল্লাটের কারো কোন দিন হয়নি। একবার যখন হলো - তখন ভয়টা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না, তাই আগেরদিনের মুরুবি্বদের কথামতো অসুখটার নাম মুখে নেয়া থেকেও বিরত থাকলো কেউ কেউ। তবে সবাই দু:খ পেলো এমন পরিণতিতে - "আহারে - কী জোয়ান সামর্থ্য পোলা, জাহাজে চাকরী করতো, দেশ বিদেশ ঘুরে ঘুরে বছর ফিরলে বাড়ী আসতো, আদব লেহাজেরও কমতি ছিল না। আহারে, খোদা কার মউত ক্যামনে রাখছে..."মাসুদের বাবা মকসুদ মুন্সী একদম চুপ মেরে আছে। খোদার কাছে সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। মাসুদের মা মাঝে মাঝে হাউমাউ করে উঠে। খোদার দরবারে দুহাত তুলে অভিশাপ দেয় অই সর্বনাশকারীকে যে নিউমার্কেটে ভীড়ের মধ্যে মাসুদের জীবনটা শেষ করে দিলো। নামাজ শেষ করে মাসুদের খাটে বসে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফুঁ দিয়ে দেয় মা। মাথায় হাত বুলায়, ছেলের হাড়-জিরজিরে শরীর স্পর্শ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আবার চিৎকার করে অভিশাপ দেয়। ...আর মাসুদ চোখ বুঁজে ভাবে অন্যকিছু। দেশান্তরী হয়ে দেশ বিদেশে তরী ভিড়িয়ে খেয়ালে বেখেয়ালে জীবনের অন্য পিঠের শখ গুলো উলটে পালটে নেয়া...। তারপর একদিন কোম্পানীর অ্যানুয়াল হেলথ চেক আপে এইচআইভি পজিটিভ রিপোর্ট পেয়ে টার্মিনেশন লেটার নিয়ে দেশে ফেরা। ইচ্ছে ছিল দেশে ফিরে কাউকে কিছু বলবে না। নীরবে চলে যাবে ওপারে। কিন্তু একদিন ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়া গুজবটিকে পুঁজি করে গ্রামে ফিরে মাসুদ -"নিউ মার্কেট গেছিলাম - মা'র জন্য শাড়ী আর বাবার জন্য পাঞ্জাবী কিনতে। ঈদের বাজার। মানুষের ভীড়ে হাঁটা মুশকিল। হঠাৎ মনে হইলো কে যেন পেছন থেকে আমার পিঠে সুঁচ ফুটায়ে দিলো। আশে পাশে আরো কয়েকজন চিককর দিলো, ওরাও গুতা খাইছে। তারপর শুনলাম একটা দল বাইর হইছে - অরা এইডসের রোগী। রোগটা আরো ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এই বদ মতলব...।"এতটুকু বলেই মাসুদের চোখ দুটো ভিজে উঠে। মনে মনে পরম করূণাময়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় - ইয়া মাবুদ, তুমি দয়ার সাগর, আমারে তুমি মাফ করে দিও। মাসুদের মা আবার আহাজারি করে উঠে। দোজখের আগুনে জ্বলার অভিশাপ দিয়ে যায়...।মাসুদের বলা ঘটনাই এলাকার সহজ-সরল মানুষগুলোর মুখে মুখে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহআলম চৌধুরী তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের কাছে চিঠি লিখে - "খবর পাইলাম - ঢাকা শহরে সুঁচের মাধ্যমে খারাপ খারাপ সব অসুখ ছড়ানো হইতেছে। আমাদের এলাকার মকসুদ মুন্সীর বড় ছেলে মাসুদ এখন মৃতু্য শয্যায়। তুমি সাবধানে থাকিও। বিনা প্রয়োজনে বাইরে ঘুরাঘুরি করিও না। এই মুসিবত থেকে আল্লাহ্ তোমাকে হেফাজত করুক..."


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।