মিসকল যখন বুমেরাং

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: মঙ্গল, ২০/০২/২০০৭ - ৩:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


(কনফুসিয়াস ও রাগ ইমনের মিসকল সংক্রান্ত পোস্ট পড়ে)

বান্ধবীকে মিসকল থেকে বাঁচানোর জন্য দেশী চ্যাটরুমগুলো খুব উপকারী। ওখানে বিজ্ঞাপন দিয়ে নাম্বার ছেড়ে দিলেই হয়!
কিন্তু এ লেখার প্রসংগ ভিন্ন।
আমার খুব কাছের বন্ধু হাসান। খুব ভালো ছাত্র, ভালো মানুষ। ভার্সিটি অ্যাডমিশনে অ্যাসিস্ট করে এরকম একটি কোচিংয়ে পড়াতো মাঝে মাঝে। প্রথমবার স্টুডেন্টদের ফোন নাম্বার দিয়ে সে মহা যন্ত্রণায় পড়ে। রাত নাই দিন নাই - 'ভাইয়্যা এটা কি হবে, ওটা কি হবে' এরকম নানান প্রশ্ন। কিছু কিছু বালিকা কিংবা কিশোরী মিসকলের পাশাপাশি - 'কেমন আছেন'/'কী করেন' টাইপ এসএমএস পাঠানো শুরু করলো। এটা ছিল প্রথম বছরের ঘটনা।

পরের বছর ও আর মোবাইল নম্বর দিলো না। তবুও টুকটাক মিসকল আসতো। ক্রমান্বয়ে ভার্সিটি অ্যাডমিশন শেষ হলো। কিন্তু ঐ মিসকল থামে না। হাসান ফোন করলে ওপাশে কেউ রিসিভ করে না। অন্য ফোন থেকে করলেও কথা বেশী বলে না, লাইন কেটে দেয়। মিষ্টি গলা হলে কথা ছিল। হাসানের ধারণা - ওটা কোন বাসার কাজের মেয়ে। অথবা গাঁইয়্যা ভূত। সমস্যা থেকে বাঁচতে ঐ নাম্বার ছড়ানোর পরিকল্পনা করা হলো। প্রথম দেয়া হলো আমাকে। আমার তখন নির্ভেজাল বেকার জীবন। দিন নাই, রাত নাই মিসকল দেয়া শুরু করলাম। সপ্তাহ খানেক পর - ভোর রাত সাড়ে চারটার দিকে ফোন। আমি ঘুমঘুম ভাব নিয়ে 'হ্যালো' বললাম।
ওপাশ থেকে বালিকা বলে - 'হে: হে:, মানুষরে মিসকল দিয়ে কী শান্তি পান?'
(আসলেই কাজের বুয়ার মতো কথার স্টাইল)
আমি বললাম - 'আপনি শান্তি পান?'
বালিকা বলে - 'আমি আপনারে কোনদিন মিসকল দিছি?'
- আমারে দেন নাই, অন্য কাউরে দিছেন তো
তখন লাইন কেটে গেলো। দেখলাম - লাস্ট কল ডিউরেশন 58 সেকেন্ড।
বুঝলাম - বালিকা হিসাবী আছে।

হাসানকে ফোন করে জানালাম। ও বলে - 'যতো পারো মিসকল দিয়ে যাও। আজকে সকালে একটানা 16টা মিসকল দিছে। 3টা ধরছি। এরপরও মিসকল থামে না।'

'আসুন আমরা বন্ধুর পাশে দাড়াই' - থিয়রী ফলো করে আমি রাত-বিরাতে মিসকল দিয়ে যাই। একদিন রাত বারোটার পর ফোন আসলো ঐ নাম্বার থেকে। কথা বলে না, খালি হাসে। তারপর বললো - আপনার নাম কি?
আমি বললাম - আমার নাম দিয়ে আপনার কী দরকার?
এরপর আমি নানান কথা জিজ্ঞেস করি। জানলাম - মহিলা কোন এক উইমেন কলেজে বাংলা সাহিত্যে পড়েন।
আমি পরামর্শ দিলাম - 'বাংলা কথা বলাটা আগে শিখে নেন। তারপর মিসকল দিয়েন'।
ম্যাডাম রাজী হলেন। আর কখনোই আমাকে বা আর কাউকে মিসকল দিবেন না। শর্ত - আমার নাম বলতে হবে।
আমি ভাবলাম, বাঁচা গেলো। নাম বললাম - 'ফয়সাল'।
'থ্যাংক ইউ ফয়সাল সাহেব' বলে ফোন রেখে দিলো।
তারপর কিছুদিন চুপ। হাসান খুশি। আমিও খুশি।
এরমধ্যে আমার নাম 'ফয়সাল' হলো বন্ধুমহলে!

এনিওয়ে, যন্ত্রণা শেষ হলো না।
এবার দুইটা নাম্বার থেকে মিসকল। পুরনোটার সাথে নতুন একটা।
একসাথে 15-20 বার। রিসিভ করলেও ওদের গায়ে লাগে না।
এবার আমি ফোন করলাম। ফোন করে বললাম - মিসকল দিচ্ছেন কেনো?
সেই বাংলা সাহিত্যে পড়া বালিকা বলে - 'আপনি কেডা?'
ভাবলাম - এ-ই সুযোগ, গলার টোন পালটে বললাম - 'আমি এই সীমটা গত সপ্তাহে কিনলাম'।
বালিকা বলে - 'ফয়সাল কই?'
আমি বললাম- 'আমি ক্যামনে বলি ফয়সাল কই? তবে আপনি আর মিসকল দিবেন তো, আপনার খবর আছে'।
ধমকে কাজ হলো। মিসকল বন্ধ।
কিন্তু, ক'দিন পর আবার ফোন - 'প্লিজ ফয়সালের নাম্বারটা দেন না।'
আমি বললাম - দেখি কী করা যায়। 5/7 দিন পরে ফোন করেন।
এর মাঝে বরিশালের এক ফয়সালের খবর পাওয়া গেল। ওর নাম্বার জানিয়ে দিলাম। কিন্তু ঐ ফয়সালের সাথে তার বনাবনি হয় না। বালিকা নাকি ফয়সালকে বলেছিল - 'আমি যেই ফয়সালরে চাই, আপনে হেই ফয়সাল না'।

তারপর দিলো - আমার নম্বরে ফোন। ভীষণ ক্ষ্যাপা, বলে - আপনার মতো ফালতু মানুষ আমি দেখি নাই। আপনার মতো মানুষরে আমি ভিক্ষা দিই।
আমি মজা পেয়ে গেলাম। বললাম - 'ভিক্ষা প্রসংগ কোত্থেকে আসলো'?
বালিকা বলে - ' হ আপনেরে আমি 50টাকা ভিক্ষা দেমু'।
লাইন কেটে যায়।
একটু পর দেখি - আমার নাম্বারে কোন একজন 50 টাকা ফ্লেক্সিলোড করেছে!
হা হা হা

এর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই আমি দেশ ছাড়ি।
শুনেছি, পরে হাসানের কাছে ফোন করেছিল - 'ফয়সাল সাহেবের সাথে আমার জরূরী কথা আছে। উনার নম্বরটা কতো?'
হাসান জিজ্ঞেস করেছিল - 'ফয়সাল কে? আপনি কে?'
****
গত জুনে দেশে গিয়েছিলাম এক সপ্তার জন্য।
একদিন দেখি - আননোন নাম্বার থেকে ফোন। (জিপি ততদিনে আরো এক ডিজিট যোগ করেছে)
আমি হ্যালো বলার পর শুনলাম - 'কীরে পাখি, তুই এতদিন কই ছিলি?'
আমি জিজ্ঞেস করি -'কে বলছেন?' কিন্তু বুঝলাম - ইনি সেই বাংলা সাহিত্যে পড়া বালিকা অথবা মহিলা।
আবার বলে - ' তোরে আমি প্রত্যেকদিন ফোন করি, তোর মোবাইল বন্ধ কেন?'
এবার দিলাম ঝাড়ি। ভদ্্রভাবে কথা বলেন, কে বলছেন? কাকে চান?
তখন লাইন কেটে গেল।
কল ডিউরেশন 28 সেকেন্ড। জিপিতে তখন 30 সেকেন্ড পালস্। বুঝলাম - বালিকা আরো হিসাবী হয়েছে।
এরপর চললো মিসকল। অল্প সময়ের জন্য দেশে গিয়ে আমি থাকি দৌড়ের উপর। কিন্তু মিসকল থামে না। একটানা 30/40টা মিসকল। বিব্রতকর অবস্থা কাটাতে - মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখি।
শেষে ফোন করে খুব ভদ্্রভাবে বললাম - 'দেখুন এরকম মিসকল দিবেন না, আপনি নিশ্চয় 'গুড গার্ল'। 'কলগার্ল' না। কী বলেন?
এর পাঁচ মিনিট পর এসএমএস পেলাম - 'ফয়সাল, তুই নিজেকে কি মনে করিস্? তুই মোটকা, তুই ভোটকা, তুই জাম্বু' । আরো হাবিজাবি।
মজাই লাগে।

এরপর ছুটি কাটিয়ে আবার পাতায়া চলে আসি।
দু'সপ্তাহ আগে নাকি হাসানের মোবাইলে বালিকা ফোন করেছিল - 'ফয়সাল সাহেব কই থাকে আপনে জানেন?'
হাসান বলেছিল - 'আরে আপনি জানেন না? ফয়সল তো সৌদী আরব থাকে, ওখানে এক শেখের মেয়েকে বিয়ে করেছে, বাচ্চাও আছে। আপনি কে বলছিলেন?'
শুনে বালিকা নাকি আস্তে করে লাইন কেটে দিয়েছিল।

হাসানের মেইল পড়ে আমি হাসি।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।