ছাদের কার্ণিশে কাক - ০৬

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: সোম, ১৪/০৫/২০০৭ - ১০:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাইবাংলামিউজিক থেকে গান ডাউনলোড চলছে। আজকাল গানের অ্যালবাম কেনা লাগে না। রিলিজড হওয়ার কয়েকদিন পরেই অনলাইনে পাওয়া যায়। ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে লগইন করে বেলা অনেকক্ষণ বসে আছে। অনলাইনে কেউ নেই। বেলার ফ্রেন্ড সার্কেলে ইদানিং সমস্যা হয়ে গেছে। চৈতি আর সোনিয়া সিরিয়াস প্রেমে পড়ে গেছে। শুধু প্রেমে পড়া নয়, প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। প্রেম-পড়ুনি শীলা এবার রোমেলের সাথে ফেভিকনের মতো লেগে আছে। সেদিন বেলাও সাথে ছিল, স্পট কলাবাগানের আল-বাইক। কোণার টেবিলে শীলা-বেলা আর সুমাইয়া বসেছিল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই ডান পাশের টেবিলে একটি ছেলে একা একা চিকেন উইংয়ে কামড় দিচ্ছে। মোটামুটি পাঁচ-দশ মিনিটের মাঝে শীলা প্রেমে পড়ে গেলো। ভীষণ দু:সাহস, সরাসরি ঐ ছেলের টেবিলে। তারপর দু'জনে কীসব কথা হলো। কয়েক মিনিট পর শীলা ফিরে এলো, মোবাইলে ঐ ছেলের ফোন নাম্বার। পরের কয়েকদিন ঘন ঘন মোবাইল ব্যালেন্স রিলোড, প্রি-পেইড কার্ড অথবা ফ্লেক্সিলোড। সপ্তাহ খানেক পর শীলা আর ক্লাসে আসে না। ডিপার্টমেন্টের ধারে কাছেও দেখা যায় না। চৈতি এসে খবর দিলো - শীলাকে দেখা গেছে বুয়েটের আর্কি-চিপায়! চৈতি ওখানে গেলো কেনো? সুমাইয়ার চাপাচাপিতে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসে। চৈতি তখন হিস্ট্রির তমালের সাথে 'আমি ভাসবো যে স্রোতে তোমায়, তোমায় ভাসাবো সে স্রোতে'।

এভাবে সবাই যখন প্রেমে পড়ে গেলো, তখন ইয়াহুর কনফারেন্স রূম খাঁ খাঁ করে। শীলার গান নেই, চৈতির কাশি নাই, অহনার ভেংচি কাটা নেই। কেবল মাঝে মাঝে বেলা একা বসে থাকে। উইন্যাম্পে সামিনা চৌধুরী - 'সময় যেন কাটে না, বড় একা একা লাগে এ মুখর জনারণ্যে'। সরণও ম্যাসেঞ্জারে আসে না। আচ্ছা, বেলা কি ইদানিং সরণের কথা বেশী ভাবছে? সরণের কোথায় যেন একটা দূর্বোধ্যতার ব্যাপার আছে। বেলা ঐ বোধের এলাকায় যেতে পারে না। সরণের মেইল, চ্যাটের লাইনগুলো মিলিয়ে বেলার চারপাশে এক ধরণের রহস্য সৃষ্টি হয় । বেলা বারবার এ রহস্যের কাছে পরাজিত হয়। সরণ কখনো বেলার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি, নিজ থেকে জানতে ইচ্ছে করেনি কিছু। এতোদিন মেইলে যোগাযোগ হয়, মাঝে মাঝে ম্যাসেঞ্জারে কথা হয়। সরণকে মনে হয়েছে অনেক ম্যাচিউরড মানুষ, যার আশেপাশে যাবার ক্ষমতা বেলার নেই।

বেলা ভাবে - জিমেইলে গিয়ে দেখলে কেমন হয়, সরণ হয়তো অনলাইনে আছে। কিছুক্ষণ কথা বলা যেতে পারে। জিমেইলে সরণকে চ্যাট ইনভাইটেশন পাঠাতেই কুইক কন্টাক্টসে সরণের নাম ভেসে উঠে - পাশে সবুজ বাতি। সরণ অনলাইনে। নিচে স্ট্যাটাস লেখা - 'বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম'।
বেলা নক করে -
বেলা: হাই, বিজি?
সরণ: আরে আপনি যে, জিমেইলে!
বেলা: হুম, দেখলাম আপনি আছেন, তাই নক করলাম।
সরণ: গুড
বেলা: কি করেন?
সরণ: বিডি জবসে চাকরী খুঁজি
বেলা: প্রেম করেন কার সাথে?
সরণ: মানে?
বেলা: মানে কার সাথে প্রেম করছেন?
সরণ: কেন বলুন তো!
বেলা: স্ট্যাটস দেখছি - 'বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম', তাই জিজ্ঞেস করছি।
সরণ: ওপস! ওটা একটা উপন্যাসের নাম, আনিসুল হকের লেখা
বেলা: প্রেম করেন?
সরণ: হা হা, খুব পার্সোনাল প্রশ্ন হয়ে গেলো না?
বেলা: না বললে বলবেন না। ওকে!
সরণ: আচ্ছা পরে বলছি। দেখি আপনার স্মৃতি শক্তি কেমন। টেস্ট করবো?
বেলা: কীভাবে?
সরণ: আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দেন দেখি!
বেলা: কী প্রশ্ন?
সরণ: বলুন তো - একটা ফ্রিজের মধ্যে একটা হাতি কীভাবে ঢুকাবেন?

(চলবে...)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।