হারিয়ে যাওয়া সুতোয় আবার রোদ্দুর জ্বলজ্বল। একটা বিকেল। অদ্ভুত এক লালকমলাগোলাপী রঙ সে বিকেলের। সুরকি ফেলা পুব-পশ্চিম বরাবর রাস্তাটা অস্তসূর্যের আভায় রাঙা হয়ে আছে, দু'পাশের সবুজ মাঠেও চলকে পড়েছে সেই রঙ, নানাবয়সী ছেলেরা ফুটবল খেলছে। তাদের গায়েও জড়িয়ে গেছে সেই বেলাশেষের আলো।
সেসব দিন চলে গেছে, হয়তো যাবারই ছিলো। সময় তো থাকে না, সে কেবলই বয়ে যায়, কোথায় য...
১।
সবুজঘরের ছাদভর্তি হলুদ রোদ্দুরে আচার শুকোতে দিয়ে ঘুরে বেড়ায় রচনা। ভেজা চুল মেলে দিয়েছে পিঠে, ছাদে আচার শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে মাথার চুলও শুকায়। লালশাড়ীর আঁচলের প্রান্তটি হাওয়া লেগে ওড়ে, কার্ণিশে চিবুক রেখে দূরের মাঠের দিকে চেয়ে থাকে রচনা। কবেকার ভুলে যাওয়া গানের কলি তার মনে মনে গুণ্গুণ্ করে ওঠে পথভোলা ভোমরার মত।
শীতের দুপুর হালকা আলস্যে গড়িয়ে যেতে থাকে ফ্যাকাশে বিকালে...
কতকাল সময় আর খেলেনা আমায় নিয়ে! সেই লুকোচুরি, দৌড় দৌড়, টুকি টুকি টুকি! সেইসব অরূপগন্ধী সকাল, সেইসব শিরশিরে হাওয়া, সেই মরিচগন্ধের গ্রীষ্মদুপুর, ক্লান্ত মধুর বুকলফুল বিকাল, মনকেমন করা হেমন্তগোধূলির ম্লান রাঙামাটি আলো, আনন্দের শরতের দ্রুতচ্ছন্দ প্রহর- সবকিছুর ভিতর দিয়ে টুকি টুকি টুকি করে দৌড়!
বৃদ্ধ কাল হাসিমুখ দাদামশায়ের মতন, একমুখ সাদা দাড়ি শরতের মেঘের মতন--সবকিছু নিয়ে ঐ আলোছায়া ...
১।
নীলমেঘ ভেঙে নীল বৃষ্টিকণারা নেমে আসছিল, একের পর এক। টুপ টাপ টুপ টাপ করে ঝরে পড়ছিল রাধাশ্যামের মন্দিরের বাগানের গভীর দিঘির কালো জলে। মস্ত মস্ত নীল মুক্তোর মতন জলবিন্দু। কালো জলে ডুবে যাচ্ছিলো। ওরা কোথায় যায়?
ওই দিঘি কত গভীর কেউ জানে না, ঘাট থেকে জলে নেমে একটু এগোলেই আর থই পাওয়া যায় না, তখন সাঁতার দিতে হয়। আমি সাঁতার জানি না, তাই পাথরের ঘাটের কাছ থেকে বেশী দূরে যাই নি। লোকে গল্...
সীমান্ত জোর করে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উঠে দাঁড়ায়। বলে, "বেশ তো, চলো না কোথাও ঘুরেই আসি। সমুদ্র তো মাত্র দুইঘন্টার দূরত্বে। যাবে?"
নিরালীর আইসক্রীমমাখা মুখ খুশীতে আলো-আলো হয়ে ওঠে, বিশ্বাস করতে পারছে না যেন এমন গলায় বলে, "সত্যি যাবে ?"
" হ্যাঁ, সত্যিই তো। চলো বেরিয়ে পড়ি এখনই। কোনো গোছগাছের কিছু নেই, সন্ধ্যেবেলায় ফিরে আসবো। দুপুরে ওখানেই কোথাও খেয়ে নেও...
এই বেড়ানোটা একেবারেই হঠাৎ করে ঠিক হয়। পরদিন বেরিয়ে পড়া। উফ কি গরম সেদিন! ঝকঝকে দুপুর একেবারে তপতপ করছে। প্রথমে সংরক্ষিত অরণ্যে গিয়ে এক পদ্মপুকুরের পাড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে জঙ্গলে ঢুকে মাকড়সাবুড়ীর বাড়ী দেখা হলো, নীল একটা মস্ত প্রজাপতি কিছুতেই পোজ দিতে রাজি হলো না, উড়ে পালালো। একেবারে ইয়ে।
তারপরে সমুদ্র, সীগাল। বালি থেকে শাঁখ কুড়াতে কুড়াতে জলের দিকে চলে যায় ছেলেমেয়েরা, বালিতে প...
ইমার কথা
১।
"মনে হয় কোনো বিলুপ্ত নগরীর কথা
সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে"
-জীবনানন্দ দাশ
নদীর পশ্চিমে, নীল আকাশে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঋজু উদ্ধত কঠিন শিলাময় বৃক্ষবিরল পাহাড়, সকালের আলোয় গোলাপী থেকে সোনালী হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় বেগুনী থেকে কালো হয়ে রাত্রির অন্ধকারে মিলিয়ে যায়৷ দুপুরবেলার রোদে মরুভূমির তপ্ত আবহাওয়ায় ভাজা ভাজা হতে হতে ...
রঙধনুর শিকড়ের কাছে নাকি থাকে সোনার মোহরভরা সোনার কলস? ঝড়বৃষ্টির পরে রঙধনুটির একটুখানি দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল, হায় সোনার কলস আর খোঁজা হলো না।
সেই সোনাই কি ছড়িয়ে গেলো মেঘে মেঘে? ঐ অস্তদিগন্ত ছেয়ে ছড়িয়ে গেলো আলোর আঁচলে আঁচলে?
যে তরণী দিনেরাতে সকালে সাঁঝে কেবল ভেসে চলে,তারই উপরে বসে আকুল হৃদয় কবি তার পরাণপ্রিয়কে বলেছিলো না," আছে কি সেথায় আলয় তোমার /মেঘচুম্বিত অস্তগিরির চরণমূলে?"
সে...
ছুটি নিয়ে দূরে পালাতে গেলেও পারি না। কীসে যেন টানে! এ কী গন্ডগোলের মধ্যে পড়লাম রে বাবা! চিরকাল আমি বেড়া ভাঙা, পাঁচিল টপকানো, দরজা খুলে দৌড় দেওয়া এইসব ভালোবেসে এসেছি, করে এসেছি। আরে কবি বলে গেছেন, বন্ধ খুঁজিয়া ফিরিছে আপন মুক্তি! আমি তো সামান্য মনুষ্য!
অথচ সেই অন্তরবাসী মুক্তিবিলাসী এ কোন "বাঁধনের মাঝে বাসা" বেঁধে ফেললো যে ক'খানা ছবি তুললেও এসে সেগুলো ঘাড়ে ধরে আপলোড করায় আর সচলে দে সচ...
৬।
পাশাপাশি ঘুমিয়ে যাই আমরা, আমাদের দুটো হাত পরস্পরকে ধরে থাকে, একে অপরকে সাহস দেয় স্পর্শের বৈদ্যুতি-ভাষায়, আস্তে আস্তে হাত দুখানাও ঘুমিয়ে পড়ে৷ ঘুমের মধ্যেও কিন্তু আমার সেই তীক্ষ্ণ অস্বস্তিটা থেকে যায়, যেন কেউ লক্ষ্য করছে আমাকে৷ যেন আমার হৃদয় মস্তিষ্ক মন বুদ্ধি সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কারা দেখছে, আঁতিপাতি করে কিছু খুঁজছে, যেন কিছু লুকিয়ে রেখেছি আমি কারুর কাছ থেকে৷ ধোঁয়...