ঘুমের ফিলোসফি

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/১১/২০০৭ - ৫:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'অলস মানে ঘুমবিলাসী নয়' তত্ত্বের সংজ্ঞাসহ উদাহরণ আমি। স্কুললাইফে হোস্টেল জীবনের স্টীম রোলারের মইধ্যেও রেগুলার ৯ টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ঘুমায়া যাইতাম। রেজালট ভালো প্লাস ভদ্র ছেলের তকমা অনেক সময়ই অনেক আকাম-কুকামে বুজুম ফ্রেন্ডের লাহান কামে দেয়। অন্য পোলাপইনরে যহন বিছানায় পানি ঢাইলা ঘুম থাইকা জাগায়া হাতে বই ধরাইয়া দেওয়া হইতো; আমার ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ দেইখা ৯ টার আগেও স্যার নিজেই ঘুমাইতে যাওয়ার ছাড়পত্র দিতেন।

কলেজে গিয়া আমূল পরিবর্তন ঘটে এ অভ্যাসের। পড়াশুনাকে চাপ হিসাবে নেওয়া হয় নাই কখনোই। মাগার একপক্ষীয় প্রেমে পইড়াই বাঁধে যত গন্ডগোল। আমি হালায় তারে পাইলে চান্দে যাইতেও রাজি আর হেয় কেবলই পিছলায়। রাতের ঘুম বরবাদ দিয়া দিস্তায় দিস্তায় ছেকার কবিতা লিখি, আকাশের কবিতা লিখি, চাঁদ-তারা-সূর্যের বিশ্লেষণ কইরা কইরা গ্যালিলিওরেও হার মানাইয়া দেই। তার সাথে যোগ হয় রাত জেগে তাস খেলা। ঘুম হারামজাদারে পাকড়াও করতে ওষুধ ধরি, ওষুধটা একসময় নেশার পর্যায়ে চলে যায়। নেশার মজায় মাত্রা ছাড়ায়ে মরো মরো অবস্থায় পৌঁছেই ছেড়ে দেই। ঘুমায়া ঘুমায়া ক্লাস মিস কইরা নন-কলেজিয়েট ফাইন দিয়া আত্মবিশ্বাসের লগে নকল কইরা কইরা অবশেষে কলেজের বৈতরণী ফার্স্ট চান্সেই পার হইতে সক্ষম হই।

ইউনিভার্সিটিতে গিয়া পড়ি বিপদে। হালায় অ্যাটেন্ড্যান্স মিস করলে ফাও নাম্বার হাতছাড়া, হের লগে আছে ক্লাস নোট তুলনের চাপ। সব পোলাপাইন সামনের বেঞ্চে জায়গা রাইখা দিত, সেমিস্টার শেষে তাগোরে ক্লাসনোট সাপলাই দিতে হইবো। এই কামে ছিলাম গাধাটাইপ এফিসিয়েন্ট। স্যার কোনো কথা মুখ দিয়া কইবো আর হেইডা আমার ক্লাসনোটে থাকবো না, তা অসম্ভব ব্যাপার। ফলাফল, সকাল সাড়ে ৭ টায় উইঠা নাকেমুখে পানি দিয়া ৮টার ক্লাস ধরতে রেগুলার দৌড়াদৌড়ি। ভোরে উঠার লাইগা ভোরেই বিছানায় যাইতে হইবো, এই নীতিরে আমি তখন কলা দেখাইয়া রেগুলার ৩টা, ৪টা পর্যন্ত রাত জাগতাম। না জাইগাও উপায় নাই। ডেইলি রুটিন ছিলো, রাত ৯টায় টিউশনি থাইকা ফিরা রাইতের ভাত খাইয়া হল কেন্টিনে বা হলের বাইরে আড্ডা মারা। এই কামে রুমে ফিরতে ফিরতে রাইত ১২ টা। পরদিন ক্লাসটেস্টজাতীয় পুলসেরাত নিজে পার হওয়া এবং অন্যকে পার হইতে জিনিসপাতি সাপলাই দেওয়ার প্রিপারেশন নিতে নিতে ভোর রাইত। দুপুরের পর যেদিন ক্লাস থাকতো না, সেদিন ছিলো বড়ই আনন্দের। লাঞ্চ খাইয়াই বিছানায় পড়ে যাওয়া যেত। বড়ই সুখের বিষয় ছিলো সেইটা।

দ্যাশের বাইরে আইসা পুরাপুরি স্বাধীন। ভোরবেলা ক্লাস হইবো, এমুন সব সাবজেক্টই ফিলটার কইরা বাদ দিতাম। দুপুরের পরে যে ক্লাসগুলা হইতো, তাতে সারাপৃথিবীরে থোড়াই কেয়ার কইরা সামনের বেঞ্চিতে বইসাই ঘুমাইয়া যাইতাম। তয় বৈদেশে কেমনে কেমনে জানি টাইম চইলা যায়। হালায় কামের কাম তেমুন কিছুই করতাম না, মাগার ঘুমাইতে যাইতে যাইতে ঠিকই ৪টা বাজায়া ফেলতাম। তয় এই সময় ঘুম লইয়া এক বিরাট ফিলোসফি আবিষ্কার করি। ফিলোসফি হইলো, ঘুম লইয়া আসলে টেনশনের কিছু নাই। যখন দরকার হইবো, তখন আপনেই ঘুম চইলা আইবো। ঘুম না আইলে বুঝতে হইবো, অখন হের দরকার নাই। ডাক্তারী শাস্ত্রে ইনসোমনিয়ার লাইগা যত বড় ফিলোসফিই থাক না কেন, আমার এই ফিলোসফির লগে শ্রেষ্ঠত্ব লইয়া তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হইবো, এইডা কনফিডেন্সের লগে বলতে পারি।

অহন তাই 'দরকার হইলে'ই দুই মিনিটের মইধ্যে নাক ডাকা শুরু করতে পারি, আবার দরকার না হইলেই ঘুমহীন ম্যারাথন আড্ডায়ও সময় পার করে দেওন যায়। ট্রেন হউক আর প্লেন হউক একা একা লং জার্নি আর বোরিং নয়। ব্যাগপত্তর যায়গামতো রাইখাই দে ঘুম। ডাক্তারের চেম্বারে ওয়েট করতে করতে নাক ডাইকা ঘুম; কিংবা বৈদেশ যাওনের লাইগা রাইত ৪ টার সময় গিয়া ভিসার লাইনে খাড়াইয়া খাড়াইয়া দে ঘুম। নেপোলিয়ন অহন আর ঘোড়ার পিঠে বইসা ঘুমানোর কাহিনী কইয়া ভাব লইতে পারবো না!


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হাসি

মজাদার।

সৌরভ এর ছবি

ভোরবেলা ক্লাস হইবো, এমুন সব সাবজেক্টই ফিলটার কইরা বাদ দিতাম।

হেহহে, এই কৈরাই তো এতোদূর আইলাম। সকালবেলার ঘুম হৈলো সেইরম জিনিষ।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হেব্বি ঘুম পাইতেছে। তার মধ্যে আবার বৃষ্টি। মাগার সেই রামও নাই, অযোধ্যাও নাই। অফিসে বইসা সেইরম আর ঘুমানো যাইবো না। কাজ করতে হইবো। মন খারাপ

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঠিকাছে।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।