ক্রিকেটে টেকনোলজি

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: সোম, ০২/০৩/২০০৯ - ১২:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ওয়ার্লড ক্রিকেটের আম্পায়ারিং নিয়ে আমার একটা নিজস্ব অবজার্ভেশন আছে। আম্পায়াররা ভুল করেন, তারা মানুষ এবং ম্যান ইজ মর্টাল; তবে ভুলগুলো সাধারণত দিনশেষে ইভেনড আউট হয়ে যায় না; কোনো একটি দল বাড়তি সুবিধা পায়, কোনো একটি দল ব্যাড আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়ে ম্যাচ হারে। আম্পায়ারদের প্রায়োরিটি লিস্টটা হয়তো এমন - ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং তারপর জিম্বাবুয়ে। সব সময় হয়তো এই ইকুয়েশন ঠিক থাকে না; কিংবা আম্পায়াররা ইচ্ছাকৃতভাবে বায়াসড ডিসিশান দেন, তার সপক্ষেও কোনো গাণিতিক প্রমাণ নেই, তবে গত কয়েক বছরের নিজ চোখে দেখা সিদ্ধান্তগুলো থেকে এরকমই মনে হয়, ইংল্যান্ড ছাড়া আর কারো এগেইনস্টে খেলার সময় আম্পায়ারিং ডিসিশান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাথাব্যথা নেই, তেমনিভাবে জিম্বাবুয়ের সাথে খেলার সময় ছাড়া আমরা মোটামুটি ব্যাড ডিসিশানের রিসিভিং এন্ডেই থাকি।

ইদানিং খেলায় টেকনোলজির ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপারে কথা হচ্ছে, হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা, পাওয়ার প্লের পারমুটেশান কম্বিনেশানের সাথে সাথে থার্ড আম্পায়ারের হাতে আসছে হক আই, ক্রিকেটাররাও চ্যালেঞ্জ করতে পারছে আম্পায়ারিং ডিসিশানের, হাত প্রসারিত করে ওয়াইড দেখানো কিংবা দুই হাত উঁচু করে দেখানো ছক্কার সিগনালের সাথে যোগ হচ্ছে দুই হাতে T বানিয়ে ডিসিশান রেফারালের সংকেত।

বর্তমানে চলা অস্ট্রেলিয়া-সাউথ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা পাকিস্তান-শ্রীলংকার টেস্ট ম্যাচেও রেফারালের ছড়াছড়ি। প্রতি ইনিংসে প্রতি দলের জন্য আনসাকসেসফুল রেফারালের সুযোগ দুইবার। এরপরে অবশ্য পুরাটাই ফিলড আম্পায়ারের অধীনে, ওল্ড সিস্টেমের মতোই তিনি চাইলে থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য চাইবেন, না চাইলে না।

রেফারাল সিস্টেমটা যেভাবে কাজ করার কথা, তাহলো থার্ড আম্পায়ার শুধু দেখবেন যে, ফিলড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত যে ভুল, তা কনফার্ম কিনা। এখানে বেনিফিট অফ ডাউটটা পান ফিলড আম্পায়ার। মনে করেন, কোনো একটা ডিসিশান রেফার করা হলো। থার্ড আম্পায়ার হক আই ব্যবহার করে - অবশ্য বল যতোটা অ্যাকচুয়ালি ট্রাভেল করেছে, ততোটাই তিনি দেখতে পাবেন, বলের গতিবিধি এক্সট্রাপোলেট করতে হক আই তাকে সাহায্য করবে না - তিনি যদি পুরো নিশ্চিত না হোন যে আউট, না নট আউট, তাহলে ফিলড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বলবত থাকবে, অর্থাৎ ফিলড আম্পায়ার আগে আউট দিয়ে থাকলে আউট, নটআউট দিয়ে থাকলে নট আউট।

আপাত দৃষ্টিতে এটাকে অনেকটা গ্রহণযোগ্য সমাধান মনে হলেও গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ইংল্যান্ডের খেলায় চন্দরপল ও ন্যাশের আউট দুটির ক্ষেত্রে থার্ড আম্পায়ার ড্যারেল হার্পারের সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে, শুধু টেকনোলজি হাতে থাকলেই হয় না, তার ব্যবহারের পেছনের লোকটির ইনফ্লুয়েন্সই সবচেয়ে বেশি। চন্দরপলের ক্ষেত্রে আম্পায়ার এলবিডাব্লিউ দিয়েছিলেন; কিন্তু থার্ড আম্পায়ারের হক আইতে দেখা গেলো স্ট্যাম্পের আড়াই মিটার সামনেই বলের হাইট ছিলো স্ট্যাম্পের সমান এবং গতিপথ ছিলো তখনো উর্ধমুখি। অর্থাৎ বল নিশ্চিতভাবে স্ট্যাম্পের ওপর দিয়েই যাবে। তারপরেও হার্পার আউটের সিদ্ধান্ত বলবত রাখলেন। এক্ষেত্রে তিনি যদি বেনিফিট অব ডাউট আম্পায়ারকে দিতে চান, তাহলে ন্যাশের আউটের ক্ষেত্রে করেছেন তার উলটোটা। তার ক্ষেত্রেও বল স্ট্যাম্পের ওপর দিয়েই যাচ্ছিলো; ফিলড আম্পায়ার দিয়েছিলেন নটআউট; কিন্তু হার্পার সেটা পরিবর্তন করে দিলেন আউট!

ক্রিকেটের মাঠে হক আই, [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Hot_Spot_(cricket)]হট স্পট[/url], স্নিকো প্রভৃতির ব্যবহারকে স্বাগত জানাই। কিন্তু যথাসম্ভব নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তের জন্য এই টেকনোলজিগুলোর পুরো সামর্থ্যকে ব্যবহার করা হোক। যেমন, এলবিডাব্লিউ ডিসিশানের ক্ষেত্রে হক আই দ্বারাই নির্ধারিত হোক বলের সম্ভাব্য গতিপথ। ড্যারেল হার্পারদের ব্যক্তিগত 'ম্যান ইজ মরটাল' সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে যথাসম্ভব ফেয়ার ডিসিশান হোক। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেনরা স্বভাবতই এইসব টেকনোলজি ব্যবহারের বিপক্ষে। এতে নাকি খেলার সময় এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সমস্যা হয়। পুরো সিদ্ধান্তের ভারটা টেকনোজলির ওপর ছেড়ে দিলে অবশ্য সময় নষ্টের সমস্যাটা মিটে যায়। হক আই বলতে পারে বলটি লেগস্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করেছে কিনা, স্ট্যাম্পে হিট করতো কিনা; হট স্পট বলতে পারে বলটা কি ব্যাটে লেগেছে, নাকি প্যাডে আর হট স্পট বা স্নিকো মোটামুটি সঠিকভাবেই বলতে পারে কোনো সূক্ষ্ম এজের ব্যাপার আছে কিনা। ড্যারেল হার্পারদেরকে তখন আর বারবার ডজন খানেক রিপ্লে দেখেও ভুল সিদ্ধান্ত দিতে হয় না। যেখানে প্রশ্ন সঠিক/ভুল সিদ্ধান্তের, সেখানে টেকনোলজি প্রদত্ত সুযোগের পুরোটা নেই না কেন?


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শুধু টেকনোলজি হাতে থাকলেই হয় না, তার ব্যবহারের পেছনের লোকটির ইনফ্লুয়েন্সই সবচেয়ে বেশি।

চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এত প্রযুক্তির পরও এমন ভুল হয় কীভাবে বুঝতে পারছিলাম না। "ড্যারেল হার্পার" নামটা পড়েই সব ফকফকা।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমিও প্রথমে জানতাম না থার্ড আম্পায়ারটা কে। খেলা দেখতেছিলাম ছাড়াছাড়াভাবে। পরে দেখি হার্পু মিয়া। আল্লার দুনিয়ায় সব আইনের শেষকথা হলো, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এইসব টেকনোলজি ফেকনোলজি বাদ দিয়ে ক্রিকেটকে আবার সেই দাদার আমইল্যা সাদাকালো ফর্মে ফিরিয়ে নেয়ার জোর দাবী জানাই। এইসব রিপ্লে এ্যাকশন দেখতে এখন আর ভালো লাগে না, যতোটা লাগে ভিভ রিচার্ডস আমলের ব্ল্যাক এণ্ড হোয়াইট ক্ল্যাসিকস দেখতে।
হার্পুরে কইষ্যা মাইনাস।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

প্রথমেই ব্যাটসম্যানদের হেলমেট খুলে নেয়া হোক। চোখ টিপি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ক্লান্ত পথিক [অতিথি] এর ছবি

তবে গত কয়েক বছরের নিজ চোখে দেখা সিদ্ধান্তগুলো থেকে এরকমই মনে হয়, ইংল্যান্ড ছাড়া আর কারো এগেইনস্টে খেলার সময় আম্পায়ারিং ডিসিশান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাথাব্যথা নেই, তেমনিভাবে জিম্বাবুয়ের সাথে খেলার সময় ছাড়া আমরা মোটামুটি ব্যাড ডিসিশানের রিসিভিং এন্ডেই থাকি।

সহমত

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফারুক হাসান এর ছবি

শুধু টেকনোলজি হাতে থাকলেই হয় না, তার ব্যবহারের পেছনের লোকটির ইনফ্লুয়েন্সই সবচেয়ে বেশি।
আমার মনে আছে, খুব সম্ভবত ৯৭ সালে আমাদের আতহার আলী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন, ৮২ রানের। বেচারাকে সেন্চুরী বঞ্চিত করেছিলেন আমাদেরই থার্ড আম্পায়ার আজগর ভাই! আতহার সেদিন আউট ছিলেন না, কিন্তু টেকনোলজির সুবিধা থাকা সত্বেও আজগর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন স্টাম্পিংয়ের পক্ষে। বাংলাদেশ তখন ছোটো টীম, তাই...
বিপক্ষ টীমের কোনো ব্যাটসম্যানের এমন হলে তিনি কি পারতেন আউট দিতে? তখন উঠতো বেনিফিট অফ ডাউটের দোহাই। বাংলাদেশ সেদিন ৩০০ রানের টার্গেট টপকাতে পারতো না, কিন্তু বড়টীম তোষণ দেখতে বড়ই বাজে লাগে, চোখে লাগে, ১০ বছর পরেও তা ভোলা যায় না।

আর হার্পুদার কথা কিছু না বলি, উনি একটা মাল...

*********************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।