একজন যাজকের 'ডারউইন' হয়ে ওঠা (শেষ পর্ব)

বন্যা এর ছবি
লিখেছেন বন্যা (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/১০/২০০৭ - ৮:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পূর্ব্বতী পর্বের পর

ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মিল বা অমিলের কি কোন সম্পর্ক রয়েছে? পরবর্তীকালে ডারউইন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং তার সংগৃহীত অসংখ্য জীবিত এবং ফসিলের নমুনা থেকে উপলব্ধি করেন যে, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার সাথে বিভিন্ন প্রজাতির সাদৃশ্য বা অসাদৃশ্যের একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বললেন,

দুটি এলাকা যদি দীর্ঘকাল ধরে বিচ্ছিন্ন থাকে, তাদের মাঝে মহাসমুদ্র, খুব উচু পর্বতশ্রেনী বা এধরনের অন্য কোন প্রতিকুল বাঁধা থাকে যা অতিক্রম করে প্রাণীরা অন্য দিকে পৌঁছুতে পারবে না, তাহলে তাদের স্থানীয় জীবজন্তু, গাছপালাগুলো স্বতন্ত্রভাবে বিবর্তিত হতে শুরু করবে এবং এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ক্রমাগতভাবে চলতে চলতে দীর্ঘকাল পর দেখা যাবে যে, এই দুই অঞ্চলের প্রাণীদের অনেকেই অন্যরকম প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। আবার যে অঞ্চলগুলোর মধ্যে এ ধরনের কোন বাধার দেওয়াল নেই, সেখানে বিস্তীর্ণ অঞ্চল বা সমস্ত এলাকা জুড়েই একই ধরনের জীব দেখা যাবে ।

এ প্রসঙ্গে দু'টি মজার উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। আমরা সাধারণত মারসুপিয়াল (ক্যাঙ্গারু, কোয়ালা,ইত্যাদি প্রাণী) জাতীয় প্রাণীর বাসস্থান বলতে অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশকেই বুঝি। কিন্তু শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, দক্ষিণ আমেরিকায় আজও গুটিকয়েক মারসুপিয়াল জাতীয় প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। এর কারণ কি? কারণ আর কিছুই নয়, একসময় দক্ষিণ আমেরিকা আ্যন্টারটিকার মাধ্যমে অষ্ট্রেলিয়ার সাথে সংযুক্ত ছিলো, তখন সেখান থেকে মারসুপিয়াল জাতীয় প্রাণীগুলো আ্যন্টারটিকা হয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় পৌঁছায়। তারপর দক্ষিণ আমেরিকায় কয়েকটি ছাড়া প্রায় সবগুলো মারসুপিয়াল প্রাণী বিলুপ্তির পথ ধরলেও অষ্ট্রেলিয়ায় তারা আধিপত্য বিস্তার করে নেয়। আর ইতিমধ্যে অষ্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আ্যন্টারটিকা একে অপরের থেকে সম্পুর্নভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আর তার ফলে অষ্ট্রেলিয়ায় তাদের বিবর্তন ঘটতে থাকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে, নিজস্ব গতিতে, যার ফলশ্রুতিতেই আমরা আজকে অষ্ট্রেলিয়ায় এতো বিচিত্র প্রাণীর সমাবেশ দেখতে পাই, যার নমুনা অন্যান্য আঞ্চলে দেখা যায় না বললেই চলে। আর অন্যদিকে, বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে অ্যান্টারটিকা মহাদেশের পরিবেশ ক্রমাগতভাবে খুব বেশী ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় সেখানকার সব স্তন্যপায়ী প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়। আবার ঠিক এর বিপরীত ঘটনা ঘটতে দেখা যায় ঘোড়ার ইতিহাসের ক্ষেত্রে। আমরা ফসিল রেকর্ড থেকে আগেই দেখেছি যে, উত্তর আমেরিকায় প্রথম ঘোড়ার পুর্বপুরুষের উদ্ভব ঘটে। যখন উত্তর আমেরিকা, প্রায় ২০-৩০ লক্ষ বছর আগে, তার উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে রাশিয়ার মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশের সাথে সংযুক্ত ছিলো তখন আধুনিক ঘোড়ার একটা অংশ এশিয়া হয়ে ইউরোপ এবং আফ্রিকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এবং পরবর্তীতে এই মহাদেশগুলোর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। একসময়, উত্তর আমেরিকার সাথে এশিয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন কারণে ১০-১৫ হাজার বছর আগে উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ঘোড়াও সম্পুর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু পনেরশো শতাব্দীতে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের পর আবার নতুন করে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় ঘোড়ার আমদানী করা হয়। ডারউইন এপ্রসঙ্গে বলেছিলেন যে স্তন্যপায়ীদের ইতিহাসে নিশ্চয়ই এটি একটি চমৎকার ঘটনা, দক্ষিণ আমেরিকাতে তার নিজস্ব ঘোড়া ছিলো, তা বিলুপ্ত হয়ে গেলো, কিন্তু বহুকাল পরে স্পেনীয়দের আনা কয়েকটি ঘোড়ার বংশধর তাদের স্থান দখল করে নিলো । এই ভাবেই ভৌগলিকভাবে সংযুক্ত এলাকাগুলোর বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে একই প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদের অস্তিত্ব দেখা যায়। ঘোড়া যদি এশিয়া, ইউরোপে ছড়িয়ে না পড়তো, বা তারা ছড়িয়ে পড়ার আগেই যদি উত্তর আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো (যা পরবর্তীতে হয়েছে) তাহলে আজকে হয়তো পৃথিবীর বুকে আর ঘোড়ার অস্তিত্বই থাকতো না!

বিবর্তন প্রক্রিয়া যদি সত্যিই প্রকৃতিতে কাজ করে থাকে তবে যে প্রাণী যত পরে অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে নতুন প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে, তার সাথে তার ঠিক আগের পুর্বপুরুষের শারীরিক পার্থক্য ততই কম হবে বলে আশা করা যায়। এ ক্ষেত্রে ঠিক তাই হয়েছে। বিভিন্ন প্রাণীর শারীরিক গঠনের মধ্যে এই সাদৃশ্য দেখেও ডারউইন বিস্মিত না হয়ে পারেন নি। বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীর সামনের হাত বা অগ্রপদের
মধ্যে কি অস্বাভাবিক মিলই না দেখা যায়! ব্যাঙ, কুমীর, পাখি, বাদুর, ঘোড়া, গরু, তিমি মাছ এবং মানুষের অগ্রপদের গঠন প্রায় একই রকম।


চিত্র : বিভিন্ন প্রাণীর অগ্রপদের হাড়ের মধ্যে সাদৃশ্য

এখন আমরা আধুনিক জেনেটিক্স-এর জ্ঞান থেকেও জানতে পারছি যে, এরকম বিভিন্ন প্রাণীর ডিএনএর মধ্যেও লক্ষ্যণীয় মিল দেখা যায়। ডারউইনের সময় বিজ্ঞানীদের ডিএনএ-এর গঠন বা জেনেটিক্স সম্পের্ক কোন ধারণা ছিলো না, তিনি প্রাণীদের মধ্যে শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য দেখে অবাক হয়ে লেখেন, 'হাত দিয়ে মানুষ কোন কিছু ধরে, আর ছুঁচো তা দিয়ে মাটি খুঁড়ে। ঘোড়ার পা, শুশুকের প্যাডেল ও বাদুরের পাখার কাজ ভিন্ন। অথচ এদের সবার হাত বা অগ্রপদের গঠন শুধু একই প্যাটর্নেরই নয়, তুলনামুলকভাবে একই জায়গায় আছে একই নামের অস্থিগুলো ....... এর থেকে অদ্ভুত আর কি হতে পারে?'

বিবর্তনের আরেকটি বেশ গুরুত্বপুর্ণ সাক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে এখনও বিদ্যমান বিলুপ্তপ্রায় (Vestigeal Organs) এবং অপ্রয়োজনীয় অংগগুলো। তিমি মাছের সমুদ্রে বাস করার জন্য পায়ের দরকার নেই, কিন্তু এখনও পিছনের পায়ের হাতগুলো কেনো রয়ে গেছে তার? সাপের পাঁচ পা হয়তো দেখা যায় না, কিন্তু কিছু সাপের শরীরে কেনো এখনও রয়ে গেছে পায়ের হাড়ের অংশগুলো? উড়তে পারে না এমন অনেক পাখি, পোকা বা আরশোলার পাখা রয়ে গেছে। মানুষের তো লেজ থাকার কথা নয়, তাহলে লেজের হাড়ের অংশগুলো কি করছে আমাদের শরীরে? এ্যপেনডিক্সের প্রয়োজন ঘাসসহ বিভিন্ন ধরনের সেলুলোজ-সমৃদ্ধ খাওয়া হজম করার জন্য, মানুষ তো ঘাস খায় না, তাহলে এ অংগটির কি প্রয়োজন ছিল আমাদের? তারপরে ধরুন, আক্কেল দাঁত বা ছেলেদের শরীরের স্তনবৃন্ত - এগুলোরই বা কি দরকার? প্রকৃতিতে এমন ধরনের উদাহরণের কোন শেষ নেই - বোঝাই যাচ্ছে যে, এই বিলুপ্তপ্রায় অংগগুলো একসময় পূর্বপুরুষদের কাজে লাগলেও, এখন বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তিত প্রাণীদের দেহে এরা আর কোন কাজে আসে না।

তবে ডারউইন দীর্ঘকাল ধরে অব্যবহারের ফলে এই অংগগুলো একসময় ছোট এবং অকেজো হয়ে পড়ে বলে যে ধারণা করেছিলেন পরবর্তীতে বংশগতিবিদ্যার জ্ঞানের আলোকে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়। ডারউইনের সময় জেনেটিক্স বা বংশগতি সম্পর্কে তার নিজের এবং সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের কোন ধারণা ছিল না, তার ফলে তিনি কয়েকটি ব্যাপারে সঠিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় যে বিবর্তন সম্পর্কে তার মুল ধারণার সবগুলিই প্রায় সঠিক ছিলো। বিখ্যাত ফসিলবিদ Stephen Jay Gould এর ভাষায়,

"Odd arrangements and funny solutions are the proof of evolution-paths that a sensible God would never tread but that a natural process, constrained by history follows perforce" (Gould 1980; Gould in Pennock 2001, 670). "

এ ধরনের হাজারো উদাহরণ টেনে ডারউইন প্রমাণ করেন যে, এগুলো থেকে একদিকে যেমন বোঝা যায় আমাদের চারদিকের সৃষ্টিগুলোতে কি পরিমান খুঁত রয়ে গেছে, অন্যদিকে এটাও প্রমাণিত হয় যে আমাদেরকে আলাদা আলাদা করে কোন সৃষ্টিকর্তার হাতে যত্ন করে সৃষ্টি করা হয়নি, আমরা এসেছি কোন না কোন পুর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়ে। তিনি তার 'প্রজাতির উতপত্তি' বইটিতে এতো রকমের উদাহরণ দিয়ে তার বিবর্তনের তত্ত্ব প্রমাণ করেছিলেন যে আজও তা বিস্ময়কর বলেই মনে হয়। বিবর্তনের মাধ্যমেই জীবের পরিবর্তন হতে হতে একসময় নতুন প্রজাতির উৎপত্তি হচ্ছে, আর এই বিরামহীন পরিবর্তনই কাজ করে চলেছে আমাদের বেঁচে থাকার চাবিকাঠি হিসেবে। ডারউইন তার সময়ের থেকে এতখানিই অগ্রগামী ছিলেন যে, তার মতবাদকে সঠিক বলে প্রমাণ করতে আমাদের আরও অনেকগুলো দশক পার করে দিতে হয়েছিলো। বিজ্ঞান যতই এগিয়েছে ততই গভীরভাবে প্রমাণিত হয়েছে তার তত্ত্বের যথার্থতা।

আমরা আগেই দেখেছি যে, ডারউইন বীগল্‌জাহাজে ওঠার সময় জীবের স্থিতিশীলতার তত্ত্বে বিশ্বাসী একজন প্রকৃতিবিদ ছিলেন, পাঁচ বছর ধরে তিনি যতই বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরলেন, খুব কাছ থেকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি দিয়ে চারদিকের প্রকৃতিকে দেখলেন ততই তার সন্দেহ বাড়তে লাগলো। আর তারই ফলশ্রুতিই আমরা পরবর্তীতে পেলাম জীবের বিবর্তনের মতবাদ। বীগল্‌যাত্রা থেকে ফিরে আসার সময়ই তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করতে শুরু করেন যে, জীবজগৎ স্থির নয়, বিবর্তনের ফলে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির উৎপত্তি হয়ে আসছে অনাদিকাল থেকেই। কিন্তু তিনি খুব ভালো ভাবেই জানতেন যে, একথা আরও কয়েকজন প্রকৃতিবিদও বলেছেন তার আগে - তাদের সেই মতবাদ আদৌ ধোপে টেকেনি! তাই তিনি ১৮৩৬ সালে ইংল্যন্ডে ফিরে এসে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, বিবর্তনের ধারণাটি শুধু প্রকাশ করলেই হবে না, কিভাবে ঘটে তা পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে না পারলে তার মতবাদকেও অন্যদের মতই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে। ঠিক করলেন, গোপনে তার কাজ চালিয়ে যাবেন - আর তারপরই শুরু হলো সেই দীর্ঘ যাত্রা, প্রায় ২০ বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি যে সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন তা শুধু ১৮৫৮ সালেই পৃথিবী জুড়ে হইচই ফেলে দেইনি আজও তার জের চলছে পুরোদমেই। আর এই ২০ বছরের সাধনার ফল থেকেই আমরা পেলাম ডারউইনের সেই যুগান্তকারী প্রস্তাব - প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমেই ঘটে চলেছে প্রাণের বিবর্তন।

( এর পরের লেখায় বিবর্তনের এই মূল তত্ত্ব এবং গত প্রায় দেড়শ' বছরে তার বিকাশ নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে রইলো। )

তথ্যসূত্র:
১. আখতারজ্জামান,ম, ২০০২, বিবর্তনবাদ, হাসান বুক হাউস, ঢাকা, বাংলাদেশ, পৃঃ ১৩-১৬।
2. Russel B, 1946, History of Western Philospphy, George Allen and Unwin Ltd, London, p 157.
3.Carl Linnaeus, The University of California Museum of Paleontology,
http://www.ucmp.berkeley.edu/history/linnaeus.html
4. Charles Lyell: Principles of Geology, PBS,
http://www.pbs.org/wgbh/evolution/library/02/4/l_024_01.html
5. Was Darwin, 2004, Wrong, National Geographic Magzine, Nov. ed.
6. Berra M, T, 1990, Evolution and the Myth of Creationism. Stanford
University Press, Stanford, California
7.http://www.guardian.co.uk/life/feature/story/0,13026,1559743,00.html
8. সুশান্ত মজুমদার, ২০০৩, চার্লস ডারউইন এবং বিবর্তনবাদ, প্রকাশকঃ সোমনাথ বল, কোলকাতা, ইন্ডিয়া।


মন্তব্য

অমিত আহমেদ এর ছবি

ভাল্লাগলো... পরের সিরিজের অপেক্ষায়...


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অতিথি লেখক এর ছবি

সবগুলো পর্ব একসাথেই পড়লাম। দারুন হচ্ছে।

আমরা যারা ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়ার মিউটেশন নিয়ে কাজ করি তাদের কাছে মিউটেশন ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং। একটা ব্যাকটেরিয়াকে যদি আমরা নিরস্ত্র করতে মানে কম রোগ উৎপাদনক্ষম ব্যাকটেরিয়ায় পরিনত করতে চাই, তাহলে সব থেকে সহজ হচ্ছে তাকে দিনের পর দিন কালচার (ব্যাকটেরিয়াকে আর্টিফিশিয়াল মিডিয়া বা খাবারে জন্মানো) করা আমরা যেটাকে বলি সাব-কালচার। এতে করে এই ব্যাকটারিয়া যেটা কিনা প্রথন ব্যাচে খুবই মারাত্বক ছিল, ২০তম ব্যাচে (উদাহরণ স্বরুপ) গিয়ে সেটার আর রোগ তৈরী করার মত ক্ষমতা থাকে না, কিন্তু অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ তার মিউটেশন বা বিবর্তন ঘটে।

আবার একই রকম ভাবে যখন একটা ব্যাকটেরিয়া যেটা কিনা পেনিসিলিন এন্টিবায়োটিক দ্বারা নির্মুল করা সম্ভব, তাকে যদি আমরা কম মাত্রার পেনিসিলিনের উপস্থিতিতে কালচার করি এবং ধীরে ধীরে এন্টিবায়োটিকের মাত্রা বাড়াই তাহলেও, যেই ব্যাকটারিয়াকে (প্রথম ব্যাচ) পানিসিলিনে নির্মুল করা যেত ২০তম ব্যাচের ব্যাকটেরিয়াকে আর পানিসিলিন দিয়ে নির্মুল করা যাবে না। অর্থাৎ আবারও সেই মিউটেশন বা বিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াটা জেনে গেছে কিভাবে পেনিসিলিনের বিরুদ্ধে
লড়াই করে বাচতে হয়। যেদুটো উদাহরণ দিলাম এটাকে বলে ফোর্সড মিউটেশন। কিন্তু নেচারে এই জাতীয় বিষয় আমাদের চারদিকে অহরহ ঘটছে, আর সেভাবেই একটা প্রাণী নিজেকে ক্ষাপ খাইয়ে নিচ্ছে সেটা এককোষী একটা ব্যাকটেরিয়া হোক আর মানুষই হোক।

এই বিষয়টাই ডারউইন বলে গেছেন ফেনোটাইপিক বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যর উপরে ভিত্তি করে কয়েকশ বছর আগে। যা কিনা এখনকার বিজ্ঞানীরা জেনেটিকস এর মাধ্যমে প্রমাণ করছেন।

আপনাকে আবারও ধন্যবাদ এই বিষয়ে সুন্দর একটা লেখার জন্য। পরের পর্বের অপক্ষায় রইলাম।

বাপ্পী
ওকাইয়ামা, জাপান

বন্যা এর ছবি

ধন্যবাদ, মিউটেশনের ব্যাপারটা উল্লেখ করার জন্য। আসলে মিউটেশন বিবর্তনের জন্য অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ন শর্ত। ডারউইন এর সময় জেনেটিক্স সম্পর্কে ধারণা না থাকায় উনি বিবর্তনের বেশ কিছু ব্যাপার নিয়ে রীতিমত হাবুডুবু খেয়েছিলেন এমনকি কিছু ভুল ধারণা করতেও বাধ্য হয়েছিলেন। এর পরের অধ্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে রইল।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

মন দিয়ে পড়ছি। ভালো লাগছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়--


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।