রাইজ অফ দি ফিনিক্স

তারাপ কোয়াস এর ছবি
লিখেছেন তারাপ কোয়াস [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০৪/০৮/২০১২ - ৩:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নির্দিষ্ট সময়ের কিছুক্ষণ আগেই সেলফোনে টুংটুং শব্দ। ক্ষুদে বার্তার আগমন। ও জানে কি আছে সেখানে। তাই আর কষ্ট করে পকেট বন্ধী বার্তা দেখার কোন আগ্রহ দেখা যায় না ওর ভেতর। দেরী না করে বাইকের চাবি ঘুরিয়ে গন্তব্য স্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। অনেকদিন থেকেই অপেক্ষা করছে এই দিনটির জন্য।

সুরু গলি ধরে কিছুক্ষণ এগুতেই জায়গাটা চিনতে পারলো। অবশ্য ফোনে বিস্তারিত বলে দেওয়া হয়েছিলো। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই উজ্জ্বল আলোতে চোখ প্রায় ধাঁধিয়ে যায়। কোথা থেকে এক মাঝবয়সী লোক সহাস্যে বলে উঠলো আরে তোমার জন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম! লোকটিকে চেনে ও। আগে একবার সামনা সামনি কথা হয়েছে। আসলে ডিলটা হয়েছে তখনই। পুরো নাম ভিনিশাস ক্যালডাস। সংক্ষেপে ভিনি। চেহারা দেখে বোঝার কোন উপায় নেই লোকটি আসলে ঠাণ্ডা মাথার এক আততায়ী। নির্দয়, নিষ্ঠুরের মত, তীক্ষ্ণ আর সূক্ষ্ম ফলা সমৃদ্ধ অস্ত্র হাতে তার শিকারকে ক্ষতবিক্ষত করার সময় হাত এর এতটুকও কাঁপে না। বিরতিহীন টর্চার চালিয়ে যেতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অবশ্য এখন আর এসব ভেবে কোন লাভ নেই। অনেক ভেবে চিন্তেই এই পথে পা বাড়িয়েছে সে। সুতরাং পিছু হটার কোন পথ আর খোলা নেই।

ভিনি’র উষ্ণ অভ্যর্থনাতে সেও একটুকরো শুকনো হাসি ফিরেয়ে দিলো। চারিদিক এক পলক দেখে নেয়। অবশ্য দেখার মত বিশেষ কিছু নেইও। থাকার কথাও না সম্ভবত। বড় একটা হলঘরের মত। দেয়ালে কিছু পেইন্টিং ঝুলছে। এককোণয় মাঝারি সাইজের বিচিত্র এক টেবিলের উপর ম্যাক বুক খোলা রয়েছে, প্রিন্টার তার এর সাথে আরও বিবিধ কিছু তারের আনাগোণায় মোটামুটি দঙ্গল পাকানো। শেষ প্রান্তে আরেকটা রুমের প্রবেশ দরজা। পুরো ঘর জুড়েই এক অস্বস্তিকর নীরবতা ভর করে রয়েছে। কোন এক কোনা থেকে মৃদু স্বরে বেজে চলা র‍্যাগে নীরবতাটাকে যেন আর বাড়িয়ে তুলছে। ভিনি ওকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত কক্ষের দিকে এগোয়। ঘরটা ছোট তবে তকতকে ঝকঝকে। দেয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে বেশ কিছু ছবি। বিভিন্ন ভঙ্গিতে; সবই ভিনি’র ভিক্টিমদের। বিচিত্র ভাবে তাদের সকলের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে।

তাহলে আমরা শুরু করি। বলে ওর দিকে একটি কাগজ এগিয়ে দেয়, আমি সর্বসম্মতিক্রমে ব্লা ব্লা ব্লা..। পুরোটা পড়ার ধৈর্য নেই। চটপট সাক্ষর করে দেয় নীচে। তুমি যা চাইছও এর জন্য কিন্তু বেশ কষ্ট করতে হবে। আশাকরি তোমাকে তা আগেই জানানো হয়েছে। আর বিনিময়ে আমরা কি চাই তা তোমার অজানা না বলে ভিনি আবার জোরে হেসে উঠে। যেন বড় কোন রসিকতা করে ফেলেছে! ও হাসে। পকেট থেকে ছোট্ট একটা পেন ড্রাইভ বের করে লোকটির হাতে তুলে দেয়। ওকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে অন্য ঘরে চলে যায়। মিনিট পাঁচ দশ পরে আবার ফিরে আসে হাতে একটি কাগজ নিয়ে। খানিকটা চিন্তিত মুখে ওকে বলে, আমি যা ভেবেছিলাম কাজটা তার থেকেও অনেক জটিল! দেখা যাক। এবার ওকে ইশারার একটি হাতলওয়ালা চেয়ারে উল্টোদিকে বসতে বলে। অবশ্য বসার আগেই তার টিশার্টটি খুলে রাখতে হয়েছে একপাশে । ঘরের ভেতর আরও কিছু বাতি জ্বলে উঠে। তাহলে আসলেই ঘটতে চলেছে এটা! কোনো কল্পনা নয়! এরপরের স্মৃতিগুলা খানিকটা ঝাপসা মত। ভিনির উল্টোদিকে বসে ছিল বলে দেখতে পায়নি যে কখন সে তার গান লোড করে নীরবে ওর দিকে এগিয়ে এসেছে। বুঝতে পারে যখন হাতে ধরা মেশিনটা ক্যাট ক্যাট শব্দে জীবন্ত হয়ে উঠে, মনে হয় কেউ যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে পিঠের উপর। ধারালো কোনো ছুড়ি দিয়ে ক্রমাগত পিঠ চিড়ে ফেলছে। ‘ব্যথার স্কেলে’ কখনো কখনো ৯+ স্কোর করছিলো। তবে এ ধরনের ব্যথা সহ্য করার মত ক্ষমতা ওর আছে, বিশ্রী ধরনের কিছু অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিলো। এখন মনে হয় সেই ভয়াবহ ‘ট্রেনিং’ এর গুণেই কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া ছাড়াই দাঁতে দাঁত চেপে সময় পার করে দেয়টা সহজ হয়েছে ওর কাছে। কত শত শতাব্দী কেটে যায় এরপর। সময়ের কোনো হিসাব থাকে না। যেন এক সময় হীন মহাবিশ্বের ভেতর দিয়ে চলছে সবকিছু। তারপরও কোন এক সময় ভিনির কথায় বাস্তবে ফেরে: ইটস্‌ অল ডান, সালাসিয়া! হ্যাভ আ লুক। আয়নায় তাকিয়ে দেখে অগ্নি গোলকের ভেতর এক ফিনিক্স পাখি দু পায়ের তীক্ষ্ন নখে একটি খুলি আটিকয়ে উড়ে যাচ্ছে, চোখে তার কড়া চাহনি, যেন অন্য কাউকে ভাগ বসাতে দেবে না এর উপর। উপরে অনেক মেঘ জমেছে। চারিদিকে কিছু নাম না জানা রং বেরং এর ফুল। এত জীবন্ত যেন মনে হয় আসলেই বাস্তব!

পকেট থেকে চুক্তি মোতাবেক বারোশো ডলার ভিনির হাতে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে পড়ে। চমৎকার রোদ উঠেছে আজ। বাইকের দিকে এগুতে যেয়ে সদ্য করা উল্কিটার একটা ফেসবুক ক্যাপশন মাথায় ঘোরে। রাইজ অফ দি ফিনিক্স!


মন্তব্য

আশরাফুল কবীর এর ছবি

রাইজ অফ দি ফিনিক্স!
___________

#এক্কেবারে দারুন রাইজিং, সুন্দর লিখেছেন, ভাল থাকুন।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আশরাফুল।


love the life you live. live the life you love.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্পের বর্ণনা যতো ভালো হয়েছে শেষের ট্যুইস্টটা ততোটা জমেনি। ভাষা সাবলীল, তরতর করে পড়ে ফেলা যায়।

অটঃ অনেকদিন পর আপনার দেখা মিলল। আছেন কেমন? এখনো কি আটলান্টিকের দ্বীপটাতে আছেন? আপনার বাজনা খুব মিস্‌ করি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

চমৎকার ফিডব্যাকটির জন্য অনেক ধন্যবাদ পাণ্ডব'দা।
(অট: আমার চলছে একই রকম! আপনি কেমন আছেন পাণ্ডব'দা? সেই ট্রায়াঙ্গালেই আটকা পড়ে আছি এখনো হাসি কম্পু খানিকটা বিকলাঙ্গ বেশ কিছুদিন ধরে, ঠিক করা হয়ে উঠছে না, এ অজুহাতে আর নতুন কোন ট্র্যাক রেকর্ড করা হয়নি।


love the life you live. live the life you love.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি আছি কোন রকম। মাঝে মাঝে আপনার কথা মনে হলে, আপনার জীবনের এই পর্বটার জন্য তীব্র ঈর্ষা অনুভব করি। অথচ সারা দুনিয়া টো টো করা তারেক অণু'র প্রতিও এই ঈর্ষা অনুভব করি না। একটা বাঙালী ছেলে বারমুদা'তে বাস করছে - ভাবতেও কেমন অদ্ভুত লাগে। কম্পু ঠিক থাকুক আর না থাকুক, গান চালিয়ে যান। বারমুদা'র মানুষদের নিয়ে লিখবেন বলেছিলেন। এই ফাঁকে সেটাও লেখা শুরু করে দিন।

ভালো থাকবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

এমন চমৎকার আর আর্দ্র মন্তব্যের জন্য আরেকবার ধন্যবাদ পাণ্ডব'দা।


love the life you live. live the life you love.

শাব্দিক এর ছবি

মজা পেলাম পড়ে। হাসি
নামকরন এবং গল্পটাও ব্যতিক্রম ধর্মী।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ শাব্দিক।


love the life you live. live the life you love.

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

পড়তে পড়তে কেন যেন হোষ্টেল মুভিটার কথা মনে পড়ল!

তারাপ কোয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ লাবণ্যপ্রভা। মুভিটা দেখা হয়নি, সুযোগ পেলে দেখতে হবে!


love the life you live. live the life you love.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।