বিজ্ঞান ও প্রমাণ

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: শনি, ২৮/০৭/২০০৭ - ১২:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার আগের ব্লগে বিবর্তনবাদ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একটা কথা বারবার উঠে এল – যে বিবর্তনবাদের পক্ষে নাকি কোনও প্রমাণ নেই। আর আমি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করি – সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। সন্দেহ নেই যুক্তি অদ্ভূত।
সব মানুষের মত আমিও কিছু বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছি। কিন্তু কেন বিশ্বাস করেছি – কেন বই পড়ে বিশ্বাস করেছি সূর্য একটা বড় জ্বলন্ত অগ্নিবলয়? কেন বিশ্বাস করেছি আমাদের পৃথিবী গোল বা তা সূর্যের চারদিকে ঘোরে? তার কারণ হোলো প্রমাণ। মহাকাশ্চারীরা আকাশে গিয়ে দেখেছেন পৃথিবী গোল। আবার কখনো যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয়। সূর্য যে একটা জ্বলন্ত অগ্নিবলয় তা দূরবীন দিয়ে দেখা সম্ভব।

প্রমাণ যে সবসময় সরাসরি পর্যবেক্ষণলব্ধ হবে, তার কোনো মানে নেই। খুনের কেসে অনেক সময়েই খুনী আর খুন হওয়া ব্যক্তি ছাড়া প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকে না। কিন্তু গোয়েন্দারা অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ একত্র করেন কোনো বিশেষ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে। কোনও ব্যক্তির হাতের ছাপ যদি ছুরিতে পাওয়া যায় তাহলে বলা যায় সেটা সে ধরেছিল, যদিও তাতে প্রমাণ হয়না যে সেই খুনী। তবে এর সাথে আরো সাক্ষ্য-প্রমাণ একত্র করে, তা বিশ্লেশণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে যে সেই খুনী।

বিজ্ঞানীরা অনেকটা এই গোয়েন্দাদের মতই কাজ করেন। প্রথমে তারা প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কিছু ধারণা বা অনুকল্প তৈরী করেন, পরে প্রাপ্ত প্রমাণের সাথে তা মিলিয়ে দেখতে থাকেন। বিজ্ঞানে কোনো অনুকল্পই চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তাই বর্তমান প্রমাণের সাথে সংগতিপূর্ণ অনুকল্প বিজ্ঞান মেনে নেয়। নতুন কোনো প্রমাণ যা বর্তমান অনুকল্প দিয়ে প্রমাণ করা যায় না, তাকে খাপ খাওয়ানর জন্য কখনও অনুকল্পে পরিবর্তন আনতে হয় – যেমন শব্দ বিষয়ক নিউটনের সূত্রে ল্যাপ্লাসের সংশধোনী। আবার কখনো পুরনো তত্ত্ব ফেলে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুনভাবে অনুকল্প তৈরী করতে হয় – যেমন কোয়ান্টাম তত্ত্ব, বা আলেক্ষিকতা তত্ত্ব। সেক্ষেত্রে নতুন অনুকল্পকে পুরোনো সব প্রমাণ সহ নতুন প্রমাণ গুলোর ব্যাখ্যা দিতে হয়।

ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও প্রাকৃতিক নির্বাচন অনুকল্প পেশ করা হয়েছিল প্রায় ১৫০ বছর আগে। তার পর থেকে জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে তার প্রমাণ এসেছে। নৃতত্ত্ববিদ্যা (কার্বন-ডেটিং ব্যবহার করে), মনস্তত্ত্ববিদ্যা, নিউরোলজি, জেনেটিক্স সহ সব শাখাই কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করেছে এর স্বপক্ষে। সুতরাং আজকের জগতে বিজ্ঞানীরা যে তার সত্যতা নিয়ে একমত, তা স্পষ্টবোধ্য। পরবর্তী কোনো তত্ত্ব এসে এর জায়গায় নিজের স্থান করে নিতে চাইলে তাকে বিদ্যমান সব প্রমাণ ব্যাখ্যা করতে হবে, তাই সে নতুন তত্ত্ব বর্তমান তত্ত্বের থেকে খুব বেশী আলাদা হবার সম্ভাবনা কম।

তাই আমার মতে অহেতুক তর্ক না করে বিবর্তনবাদ মেনে নেওয়াই ভালো। মানুষ তো অনেককাল নষ্ট করেছে পৃথিবীকে চ্যাপ্টা ভাবতে গিয়ে, লাভ কি কিছু হয়েছে তাতে?


মন্তব্য

সো এর ছবি

২০০৭!
এরপর হেফাজত-ছাগু আন্দোলন, চাদে সাইদি, রাজিব-অভিজিত খুন, এমন হাজারো ঘটনার পর মনে হয়, আমরা কত পা এগিয়ে কত পা পিছিয়েছি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।