ইউরোর চাবিকাঠি জার্মানীর হাতে

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: রবি, ২৪/০৬/২০১২ - ৭:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইংল্যান্ডের উত্তরের গ্রামগুলোতে গবাদি পশু চরে বেড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকত - যা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত - অর্থাৎ কমন প্রপার্টি। নিজের স্বার্থের কথা ভেবে সব মালিকই চাইত আরও বেশী করে গবাদি পশু চারণ করে বেশী লাভের টাকা ঘরে তুলতে, স্বভাবতই নিজেদের জমি ব্যবহার না করে ওই কমন-প্রপার্টিই ব্যবহৃত হত চারণের জন্য। কিন্তু একসময় দেখা দিল বিপর্যয়, ঘাস গজানোর তুলনায় গবাদি পশুর খেয়ে ফেলার হার বেড়ে গেল, ফলে গবাদি পশুর খাওয়ার জায়গা ফুরোলো। এই থট-এক্সারসাইজ থেকেই একটা সুন্দর তত্ত্বের উদ্ভব। ট্র্যাজেডি অব কমনস শেক্সপিয়ারের লেখা আরেকটি উপন্যাস নয়, বরং একটি তত্ত্ব যার প্রভাব বর্তমান পৃথিবীতে হরহামেশাই চোখে পড়ে।

গ্যারেট হার্ডিন নামে এক বিজ্ঞানী সায়েন্স পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ করেন এই নামটা, কিন্তু এর প্রভাব চলে আসছে এর অনেক আগে থেকেই। মূল বক্তব্য হল, যে সম্পদ সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত, সকলেই তার সর্বাধিক ব্যবহারের চেষ্টা করে। আর এই ধরণের সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার খুব দ্রুত সামগ্রিক বিপদ ডেকে আনতে পারে। সেই "সম্পদ" কখনও বঙ্গোপসাগরের মাছ, কখনও রাস্তা (একটা কার্টুন দেখে বুঝতে পারেন), কখনো সামগ্রিক পরিবেশ। আরও উদাহরণ দিলে গণতান্ত্রিক দেশে সরকারী সম্পত্তি একইভাবে ট্র্যাজেডি অব কমনসের শিকার, রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পতনের পেছনে অনেকাংশেই একই তত্ত্ব কাজ করে। অর্থনীতিও ব্যতিক্রম নয়। আর সাম্প্রতিক ইউরোপীয় অর্থনীতির পতনে আমি এই ট্র্যাজেডি অব কমনসের ছায়া দেখতে পাই।

ষাটের দশকে ইউরোপের ছয়টি দেশ মিলেজুলে নিজেদের অর্থনীতি থেকে সীমারেখা মুছে দিতে চেয়েছিল। তাদের সেই প্রচেষ্টার সফল রূপায়ণ ঘটে ১৯৯৩ সালে, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৈরী হয়। আরো বছর দশেকের মধ্যেই ইউনিয়নের সদস্য বেড়ে দাঁড়ায় ২৭-এ। ইউনিয়ন গঠনের কেন্দ্রীয় চালক ছিল অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর প্রবর্তন - যার ফলে এক ছাতার তলায় আসতে পেরেছিল ইউরোপের ছোটো-বড় দেশগুলো। স্বাভাবিক ভাবেই এক ছাতার তলায় আসায় গ্রীসের মত দেশে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমে যায়, যার ফলে ঋণ-সংগ্রহে সুদের হারও কমে যায়। এইটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আপনি যদি কোনও ব্যক্তিকে ঋণ দিতে চান তাহলে যা ঝুঁকি, একটা গোষ্ঠীকে দিতে চাইলে স্বাভাবিকভাবেই তার চেয়ে কম ঝুঁকি - কারণ আপনি স্বাভাবিকভাবেই আশা করবেন গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু লোক থাকবেই যারা ঋণ ঠিকঠাক কাজে লাগাবে ও শেষমেষ আপনার টাকা শোধ করে দেবে। অর্থনীতির প্রথম ধাপে, এভাবেই গ্রীস, ইতালী, পর্তুগাল বা স্পেনের মত দেশ অনেক ঋণ নিয়ে দেশে বিনিয়োগ করল - স্থানীয় অর্থনীতিতে জোয়ার এল।

উল্টোদিকে, ফ্রান্স বা জার্মানীর মত দেশও লাভবান হল। তাদের রপ্তানী বাজার রাতারাতি বড় হয়ে গেল। এদের মধ্যে বিশেষত জার্মানীর জিডিপি সম্পূর্ণ রপ্তানীমুখী। রপ্তানী বাড়ায় উৎপাদন বাড়ল, তাছাড়া বিশেষত চিনে জার্মান মেশিনারীর বিশেষ চাহিদা দেখা দেওয়ায় জার্মানীর অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠল। জার্মানীর বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত বাড়তে থাকল। এই উদ্বৃত্ত টাকা ঋণের মাধ্যমে জমা হতে থাকল ওই দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে। জার্মানী ইউরোর পূর্ণ সদব্যবহার করল - একদিকে তাদের ঋণের টাকায় দক্ষিণ ইউরোপের ক্রেতারা জিনিস কিনতে থাকল, অন্যদিকে সময় গেলে তাদের অর্থনীতি আরও বেশী দক্ষ হয়ে উঠতে থাকল।

এদিকে ঋণের টাকা একেক-দেশ একেক-ভাবে ব্যবহার করেছে। স্পেনে আমেরিকার মত রিয়েল এস্টেট বুদবুদ তৈরী হয়েছে, গ্রীসে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। গ্রীসের ঋণ এতটাই বেড়ে গেল যে ইউরো শুরুর সময় মাস্ট্রিক্ট চুক্তিও (৩%-এর কম ঘাটতি) বছরের পর বছর অগ্রাহ্য করতে থাকল। গ্রীসের সাথে তুরস্কের দীর্ঘ-বিবাদের ফলে গ্রীস আয়ের বড় অংশ খরচা করেছে মারণাস্ত্রের পেছনেও। মজার কথা, এই আমদানীর বড় অংশই এসেছিল জার্মানী থেকেই। মূলধন হাতে পেয়ে দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোর লেবার-কস্ট বাড়তে থাকল, অর্থাৎ তাদের রপ্তানী বাড়ার সম্ভাবনা কমে যেতে থাকল।

যে আশা নিয়ে এক-ইউরোর যাত্রা শুরু হয়েছেল, বছর দশেকের মধ্যেই তার মধ্যে পরিষ্কার ফাটল দেখা দিল। যে কমন-পুল-অব-রিসোর্স ছিল, তার অদক্ষ ব্যবহার শুরু হল। জার্মানী যতই বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বাড়ালো গ্রীস, ইতালী ও স্পেনের ঘাটতি বাড়তে থাকল। এই অবস্থায় গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে এল আমেরিকায় অর্থনৈতিক দুর্যোগ - যার শুরু হল রিয়েল এস্টেট বাবলের হাত ধরে। দুর্যোগের মূল কারণ যেহেতু ছিল অত্যাধিক ও সহজলভ্য ঋণ, বিপর্যয়ের পরে সব ব্যাঙ্কই ঋণ দেওয়ার আগে দশবার ভাবতে শুরু করল। যে অর্থনীতিগুলোর অবস্থা ততটা ভাল ছিল না, অর্থাৎ যারা সামর্থ্যের বেশী ঋণ নিয়ে রেখেছিল - তাদের কপাল পুড়ল। তবে বলে রাখা ভাল, গ্রীসের ক্ষেত্রে অত্যধিক ঋণের জন্য দায়ী যেমন সরকার - স্পেনের ক্ষেত্রে কিন্তু মর্টগেজ আর রিয়েল এস্টেট বাবল মূল ঋণ-গ্রহীতা। অর্থাৎ স্পেন সরকার চুক্তি মেনে চলেও ঋণের বোঝায় ডুবে গেছে। এই অবস্থায় ব্যাঙ্ক সব জায়গায় ঋণে সুদের হার আর সমান রাখল না - দুর্বলতর অর্থনীতিতে ঝুঁকি যতই বাড়তে থাকল, সুদের হারও তেমন চড়চড় করে উঠতে শুরু করল। স্পেনে যারা বাড়ি কিনেছিল - তাদের ধার শোধ করা আরও শক্ত হয়ে গেল।

এই অবস্থায় সোজাসাপটা পথ দুটো - প্রথমটা হল খরচা কমিয়ে দেওয়া। খরচা কমানোর মানে বাজার কমে যাওয়া, মানে মন্দা - এদিকে মন্দা তো ২০০৮ থেকেই চলছে। যার মানে মন্দা আরো জাঁকিয়ে বসবে। এর মানে স্পেন, ইতালী, পর্তুগাল বা গ্রীসে আরো বেশী লোকে ধার শোধ করতে পারবে না। মন্দার মানে রাজনৈতিক অশান্তি - মানে বাজার থেকে আরও বিনিয়োগ বেরিয়ে যাবে, অর্থাৎ আরও মন্দা। অন্য পথটা হল খরচা না কমানো। কিন্তু এর মানে হল আরো বড় সমস্যার দিকে এগিয়ে যাওয়া। সব দেশেরই ঋণভার বেড়ে চলেছে - এভাবে চললে আরও ঋণভার বাড়বে, কারণ ঋণ কমানোর কোনও দায় থাকবে না। আস্তে আস্তে সবাই মিলে ডুববে একই সমুদ্রে। অনেকেরই মনে হতে পারে, জার্মানীই সবথেকে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে। কথাটা সত্যি হলেও তাদেরও হাত-পা বাঁধা। হঠাৎ করে তাদের মুখ্য বাজারে মন্দা দেখা দিলে তাদের অর্থনীতিতে আরও বড় ধাক্কা দেখা দেবে - তা নিয়ে কারও দ্বিমত থাকার কারণ নেই। তাছাড়া, এককালীন ঋণ-ডিফল্টে তাদের দুই ট্রিলিয়ন ডলার গচ্চা যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে। তাই চাইলেও জার্মানী ডিভোর্স পাচ্ছে না - নিজের লাভের কথা ভেবেই শুধু বুলি আউড়েই শান্ত থাকতে হচ্ছে। অবশ্য তারা সুযোগ বুঝে তর্জন-গর্জন করা কমাচ্ছে না। তাদের বক্তব্য - গ্রীসসহ দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনীতির রাশ আরও কড়া হাতে ধরতে হবে। বিশেষত গ্রীসের ওপর সকলেই বিশেষভাবে খাপ্পা - কারণ গ্রীসের ঋণগ্রহীতা সরকার। তাই সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শর্ত, যার মধ্যে আছে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-হ্রাস বা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-খাতে টাকা কমানোর শর্তও। সম্প্রতি গ্রীসের ভোটের ফলাফলে মনে হয়েছে - গ্রীসের জনগণও সেটা মেনে নিয়েছে। আপাতত মনে হয় আগামী বছর কয়েক ইউরোপ খরচ কমানোর পথেই হাঁটবে। আর ইউরোপের ওপর জার্মানীর কর্তৃত্ব আরও জোরদার হবে।

ইউরোপের এই দুর্যোগের মধ্যে একটা কথা কেউ বলছে না - সেটা হল এশিয়ার কথা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৈরীর সময় বলা হয়েছিল গাড়ি-শিল্পের কথা। জার্মান গাড়ি শিল্পের জন্য যন্ত্রপাতি তৈরীর শিল্প ইতালি বা স্পেনে তৈরী হবার কথা ছিল। তার জায়গায় সেই যন্ত্রপাতি এখন আসছে চিন, জাপান বা থাইল্যান্ড থেকে। অর্থাৎ, ইউরোপের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের নিচের দিকটা (Low value added parts) নিয়ে নিয়েছে এশিয়া। জার্মানী থেকে আসা ঋণের টাকায় ইতালী বা স্পেন শিল্পের পরিকাঠামো বানায় নি - বিনিয়োগ করে গেছে রিয়েল এস্টেট বাবলে। খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের।

পর্তুগালের অর্থনীতির সমস্যার একটা দিক বেশ মজার। বছরের পর বছর যেই অ্যাঙ্গোলাকে শোষণ করে পর্তুগালের সম্পদ এসেছিল, আজকে সেই অ্যাঙ্গোলাই পর্তুগালের অর্থনীতির ভরসা। উপনিবেশিকতার সূত্রে অ্যাঙ্গোলার সরকারী ভাষা পর্তুগীজ। আর তাদের অর্থনীতিতে এখন বুম চলছে - তেলের আবিষ্কারের হাত ধরে। স্বভাবতই দলে দলে পর্তুগীজ ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার দেশের ২৫% বেকারী এড়িয়ে চাকরি জোটাতে পাড়ি দিচ্ছে অ্যাঙ্গোলার দিকে। না - এবারে আর রাইফেল হাতে নয় - হাতে রেসিউমে - লক্ষ্য ভালো চাকরি, ক্ষমতা দখল নয়। পর্তুগাল এখন অ্যাঙ্গোলা থেকে যা রেমিট্যান্স আনে, তার থেকে কম আনে ব্রিটেন থেকে। নিয়তির পরিহাসে অ্যাঙ্গোলা এখন আর পর্তুগাল থেকে বিশেষ একটা রেমিট্যান্স পায় না।

ইউরোর সমস্যা দেখে ট্র্যাজেডি অব কমনসের কথাই বারবার মনে হয়। মৌলিক-ভাবে ভিন্ন ধারার কয়েকটি অর্থনীতি যদি একসাথে চলতে চায় তাহলে তাদের মধ্যে "কমন-পুল-অব-মানি" সবাই নিজের দিকে টেনে নিতে চাইবে। সবাই বেশী বেশী করে ধার করবে, কারণ পতন ঠেকানোর দায় তাদের একার নয় - বাকিদেরও। উলটোপথে হেঁটে বরং জার্মানী এখন দুই ট্রিলিয়ন ডলার গচ্চা দেওয়ার মুখে। তাই প্রথম থেকেই রেগুলেশন ব্যাপারটা জোরেসোরে না কাজে লাগালে এইরকম অর্থনৈতিক গাঁটছড়া টিকবে না - ভবিষ্যতেও না। তবে এটাও জেনে রাখা ভাল - জাপান, চিন বা জার্মানীর মত রপ্তানী-নির্ভর দেশ সব দেশের পক্ষে হওয়া সম্ভব না - পুরোনো পাটিগণিতের নিয়মেই সম্ভব না। বিক্রেতা বা উৎপাদক আছে বলেই ভোক্তা আছে - এটাও যেমন ঠিক, এর উল্টো-টাও তেমনভাবেই সত্য। তাই জার্মানীর মত দেশকেও নিজের উৎপাদন যাতে ভোগের তুলনায় খুব বেশী না হয়ে যায় - তার দিকে নজর রাখতে হবে।

জার্মানী এর আগে দু-বার ইউরোপের কর্তৃত্ব নিতে চেয়েছিল। দুবারেই যুদ্ধের হাত ধরে। আর দুবারেই পরিণতি হয়েছিল করুণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমস্ত অর্থনৈতিক দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল জার্মানীর ওপর - যার পরিণতিতে জার্মান মুদ্রায় এতটা মুদ্রাস্ফীতি হয়েছিল যে ১৯২৩ সালে এক মার্কিণ ডলারের বিরুদ্ধে ৪ ট্রিলিয়ণ জার্মান মার্ক পাওয়া যেত (১৯১৪ সালে ১ ডলার ছিল ৪ মার্ক)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পরে ভেঙে তাদের দু-টুকরো করে দেওয়া হল, যা জোড়া লাগতে দীর্ঘ ৪৫ বছর সময় লাগল। যদি গ্রীসের মত ইতালী, স্পেন আর পর্তুগালকেও জার্মানী নিজের "প্যাকেজে" রাজী করিয়ে ফেলতে পারে - তাহলে দীর্ঘদিনের জন্য অর্ধেক ইউরোপ জার্মানীর কার্যত উপনিবেশে পরিণত হবে। ঋণের বোঝা থেকে চট করে মুক্তি মিলবে না, অথচ জার্মান পণ্য তাদের কিনে যেতে হবে - মানে দেশে শিল্প সম্ভাবনা কম। হিটলার যে কাজটা সমরাস্ত্র দিয়ে করে দেখাতে পারেননি, কর্মঠ জার্মানরা অর্থনীতির হাত ধরে তাই করে দেখিয়ে দিচ্ছে - এভাবেও ফিরে আসা যায়।

আরো কিছু সহজপাঠ্য -
১) তিন ধাপে ইউরোপের ক্রাইসিস
২) বিবিসি থেকে
৩) গ্যারেট হার্ডিনের পেপার
৪) বিবিসির ডকুমেন্টরি

প্রথম ছবিটি এন-পি-আর ব্লগ থেকে, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি উইকি থেকে ও চতুর্থটি নিউ-ইয়র্ক টাইমস ব্লগ থেকে নেওয়া।


মন্তব্য

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

গতকালই আমার প্রফেসরের সাথে ট্র্যাজেডি অব কমন্স নিয়ে আলাপ করছিলাম। কীভাবে কোনো সম্পদে কারও স্বত্ত্ব না থাকলে যথেচ্ছা ব্যবহারের সুযোগ থাকলে তার অপব্যবহার হয়। এর জন্যে একটা কথা প্রচলিত আছে -

সরকারি মাল, দরিয়া মে ঢাল।

এ নিয়ে পশ্চিমা ভাষায় তো অনেক চিন্তাভাবনা হয়ে গেছে। একটা সমাধান মনে হয় সরকারি নিয়ম কানুন ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ। আরেকটা হলো প্রাইভেটাইজেশান, মানে যারা জড়িত, যাদের দ্বারা ব্যবহার্য তাদের সবাইকে স্বত্ত্বের শেয়ার দেয়া, যাতে ব্যবহারের সাথে দায়িত্ববোধও থাকে।

উইকিপিডিয়ায় পেলাম Ludwig von Mises বলছেন -

"If land is not owned by anybody, although legal formalism may call it public property, it is used without any regard to the disadvantages resulting. Those who are in a position to appropriate to themselves the returns — lumber and game of the forests, fish of the water areas, and mineral deposits of the subsoil — do not bother about the later effects of their mode of exploitation. For them, erosion of the soil, depletion of the exhaustible resources and other impairments of the future utilization are external costs not entering into their calculation of input and output. They cut down trees without any regard for fresh shoots or reforestation. In hunting and fishing, they do not shrink from methods preventing the repopulation of the hunting and fishing grounds."

পশ্চিমা ভাষাতেই এই সমস্যা এখনো মীমাংসিত না। বাংলা ভাষাতেও এ িনয়ে কিছু আলোচনা কিছু হয়েছে কি?

মাহবুব রানা এর ছবি

হার্ডিনের দেয়া তত্বের বিপরীত তত্বও আছে।

এলিনর অস্ট্রমের কথা জেনে থাকবেন হয়তো, সম্প্রতি (১২ জুন) মত্যুবরণ করেন ২০০৯ সালের নোবেল লরিয়েট ইন্ডিয়ানা বিশ্ববদ্যালয়ের এই ভদ্রমহিলা। বছর দুয়েক আগে সরাসরি তাঁর বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। হার্ডিনের commons নিয়ে লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে ভিন্ন পথে গবেষনা করে যাচ্ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাজ নিয়ে গবেষনা গ্রন্থ Governing The Commons।
তো, সবাই যখন Commons এর ট্র্যাজেডি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, সরকারী নিয়ন্ত্রন আরোপ অথবা বেসরকারীকরনই (যেমনটা আপনি বললেন) একমাত্র সমাধান বলে চিন্তা করছেন, লিন (সহকর্মীরা তাকে এ নামেই ডাকেন) তখন ভাবছিলেন বরং উল্টোটাই। তিনি হার্ডিনের এই তত্ত্বে আংশিক দ্বিমত পোষন করে বলেন এই `ট্র্র্যাজেডি` বাস্তবে সবসময় ঘটবে সেটা জোর দিয়ে বলা যায়না। তাঁর মতে হার্ডিনের সমাধান দুটো (অর্থাত্ সরকারী নিয়ন্ত্রন ও বেসরকারীকরন) বরং কাউন্টারপ্রডাক্টিভ হতে পারে। আল্পসের তৃণভূমি যুগযুগ ধরে সুইস গবাদিপশু মালিকরা যৌথভাবে ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা করে আসছে কোনো ধরনের tragedy ছাড়াই। অস্ট্রম বরং যুক্তি দেখান উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া কোনো সমাধানের চেয়ে বা বাইরের কোনো এজেন্টের চেয়ে commons এর সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থাপনা বরং ব্যবহারকারীদের নিজেদের হাতেই হতে পারে আর এজন্য তিনি কিছু Design Principle ও প্রস্তাব করে গেছেন।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা ভালো লাগলো।

অস্ট্রম বরং যুক্তি দেখান উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া কোনো সমাধানের চেয়ে বা বাইরের কোনো এজেন্টের চেয়ে commons এর সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থাপনা বরং ব্যবহারকারীদের নিজেদের হাতেই হতে পারে

এই আইডিয়াটাও খুবই ভালো লাগলো। তবে এটাকে কিন্তু ট্র্যাজেডি অব কমন্সেরই একটা সমাধান ভাবতে পারেন।

এখন ধরুন আল্পসের তৃণভূমি সর্বজন ব্যবহার্য হলেও ঠিক সরকার নিয়ন্ত্রিত সম্পদ নয়। ব্যবহারকারীরা নিজ উদ্যোগেই এর রক্ষণাবেক্ষণ করেন কোনো সরকারি তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। এখন সরকার এসে যদি বলে এটা পাবলিক তথা সরকারি প্রপার্টি এবং ফলে তারা এতোকাল চলে আসা ব্যবস্থাপনাটা ভেঙে নতুন ব্যবস্থা আরোপ করে, কিংবা ধরুন কর্পোরেটদেরকে এর সম্পূর্ণ বা আংশিক স্বত্ত্ব বা একচেটিয়া ব্যবহারের অধিকার দিয়ে দেয়, তাতে আল্পসের ভবিষ্যতটা কী দাঁড়াবে ভাবছি। চিন্তিত

দিগন্ত ভাই, এখানে তিন রকমের সমাধান দেখা যাচ্ছে। এগুলোর প্রত্যেকটার প্রায়োগিক উদাহরণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ক্রাইসিসে কীরকম হতে পারে একটু আলোকপাত করতে পারবেন? আপনি মনে হয় সরকারি নিয়ন্ত্রণের সমাধানটার দিকেই কেবল আলোকপাত করলেন। ভুল বললাম?

দিগন্ত এর ছবি

উত্তরটা কিভাবে যেন নিচে দেখাচ্ছে। ২৪ নং কমেন্ট দেখুন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

অস্ট্রমের তত্ত্ব একটু অন্যরকম বলে আমার মনে হয়েছে। ট্র্যাজেডি অব কমনসের একটা পূর্বশর্ত হল কমন-প্রপার্টির সব ব্যবহারকারীকেই স্বার্থপরভাবে চিন্তা করতে হবে। কিন্তু মানব-সমাজ ঠিক অতটা স্বার্থপর আর দূরদৃষ্টিহীন নয়। তাই ট্র্যাজেডি ঘটার আগেই কিছু মানুষ দলবদ্ধ-ভাবে সমস্যাটা বুঝে কোনো না কোনো মোকাবিলার পথ দেখেন। কিন্তু অস্ট্রম এটা বলেননি যে কমন-প্রপার্টির ওভার-এক্সপ্লয়েটেশন ঘটে না - ওনার বক্তব্য অবস্থা চরমে যাওয়ার পূর্বে কোনো ভাবে মতের মিল হয়ে কোনো একটা সমাধানে পৌঁছন যায়, এবং ব্যক্তি-মালিকানা বা সরকারী রেগুলেশনের ফলে এতটা ভাল সমাধান নাও পাওয়া যেতে পারে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

এ ইউসুফ

আশফাক আহমেদ এর ছবি

আমেরিকার বুমের কথা জানতাম। ইউরোপেরটাও জেনে মজা লাগলো

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সারা গায়ের রক্ত মুখে উঠে আসা যেমন ভয়াবহ অসুখের লক্ষণ, জার্মানীর ফুলে-ফেঁপে ওঠাটাও ইউরোপের বড় বিপদের লক্ষণ। ইতিহাসও অমনটা সাক্ষ্য দেয়। পুঁজি তার ক্রিটিক্যাল মাসের সীমা অতিক্রম করলে তার স্থিরতার জন্য একটা দুর্যোগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে যাবে।

হয় চুক্তিতে বড় বড় ফাঁক ছিল, নয়তো চুক্তির শর্ত মোতাবেক জোটের সদস্যদের মধ্যে আমদানী উৎস, রফতানী ক্ষেত্র, ব্যয়ের খাত, সুদের হার, ঋণের শর্ত এসব ব্যাপারে চুক্তি না মানার প্রবণতা ছিল। অথবা উভয়টাই। জার্মানী যখন এশিয়া থেকে আউটসোর্সিং করেছে দক্ষিণ ইউরোপও তখন একই কাজ করেছে। তারা জার্মানীকে কিছু বলেনি, কারণ বলার মুখটা তাদেরও ছিল না। আমাদের এক ইতালীয় সরবরাহকারীকে দেখেছি তাদের পরিবারের দেড়শ' বছরের পুরনো ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে। কারণ, বিকল্প পণ্য গণচীন থেকে সমানে আমদানী করা হচ্ছে। ঋণ করে যারা ঘি খেয়েছে তাদেরকে ঘটি-বাটি বন্ধক দিয়ে ঘি-এর দাম শোধ করতে হবে। ঘটি-বাটি না থাকলে নিজেকে বন্ধক দিতে হবে।

এশিয়া এখান থেকে কিছু সুযোগ নিতে পারে। সস্তা দামে নিজের শ্রমকে ইউরোপে না বেচে নিজের পণ্যকে ইউরোপে বেশি দামে বেচতে পারে। তবে এশিয়ার কারো মাথায় যদি ইউরোপে টাকা বিক্রি করার ধান্দা থাকে তাহলে তাকে পস্তাতে হবে। এক সময় কিস্তি বা সুদের টাকা বোমা হয়ে উড়ে ফেরত আসবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

এখন বোঝার উপায় নেই আপনার ক্রেতা ঋণের টাকায় জিনিস কিনছে না নিজের টাকায়। যদি সাচ্চা নিজের টাকায় কিনছে বলেও মনে করেন, তাহলেও দেখবেন হয়ত সে যেখান থেকে টাকা পাচ্ছে সেই টাকা ঋণ থেকে এসেছে। এইবারে জিনিস কিনে টাকা দেবার ক্ষমতা নেই বললে আপনি কি করতে পারেন? এশিয়া ম্যানুফ্যাকচারিং-বেসড অর্থনীতিগুলো এই সমস্যায় পড়ে গেছে। চিনে-মালয়েশিয়ায় গুদাম ভর্তি হচ্ছে, কেউ কিনবে কিনা ঠিক নেই। আমেরিকা কোনো ভাবে চাঙ্গা না হলে সমস্যা চট করে যাবে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মরুদ্যান এর ছবি

ভাবতেসি জার্মানি আরেকখান তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা করলে কি হবে? চিন্তিত

অচল এর ছবি

জার্মানীর প্যাকেজ মানা ছাড়া তো ইউরোপের সামনে আর কোন পথও খোলা নাই। "ইউরো" কে একহাত দেখার সুযোগ নিতে USA-Canada কোন পয়সা IMF এর bailout ফান্ডে দিবেনা বলে দিসে ইতিমধ্যেই। আর জার্মানী এই রিস্ক নিয়া যদি জিতে যাই, তাইলে সারা বিশ্ব আর একবার "Rise of Germany" দেখবে, তবে সেটা মনে হয় না আবার সামরিক দিক থেকে হবে আর।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চমৎকার লেখা হাততালি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তানিম এহসান এর ছবি

চমৎকার লাগলো।

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

Md. Rashidul Hasan এর ছবি

জার্মান ইকোনোমিকে বাঁচানোর জন্যই জার্মানি ইউরো ভাঙতে দেবে না, আর দেশগুলোর এমনই অবস্থা ইউরো থেকে বের হলে অথৈ সাগরে পড়বে। খুবই ইন্টারেস্টিং সিচুয়েশন! ৪/৫ বছর পর হয়তো আমরা বুঝে যাবো পানি গড়িয়ে কোথায় গেলো!

লেখাটি চমৎকার হয়েছে।
ধন্যবাদ।

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

-লেখা চমৎকার লাগলো (গুড়)
- পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে জারেড ডায়মন্ডের কলাপ্সেও চমৎকার বর্ণনা আছে হাসি

---------------------
আমার ফ্লিকার

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

বন্দনা এর ছবি

খুব গোছানো লিখা। চমৎকার লাগলো পড়তে।

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

দারুন !! অর্থনৈতিক মন্দা আসলেই অদ্ভুত একটা বিষয়। জার্মানি যে হারে উন্নতি করছে এখন দেখার বিষয় তাদের ভবিষ্যত পন্থা কি হবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
ভালো লাগলো। bloomberg এর আর্টিকেলে পড়ছিলাম, ইউরোপের সব দেশ কালচারালি এক রকম এটা ভেবে নেয়াই বড় ভুল-
Germans are bossy and severe. Italians are idle. Greeks are corrupt. Brits are arrogant. The French are vain.
আর তাই ফলাফল এই।

তারেক অণু এর ছবি

সবই বুঝলাম, কিন্তু করাপ্ট হলেই মুশকিল, যেটা গ্রীকরা করেছে ! আর ব্রিটিশ শালারা আসলেই বেনিয়ার জাত, সব সুবিধে নিবে কিন্তু আমাদের কিছু দিবে না।

দিগন্ত এর ছবি

কিন্তু গ্রীকরা যে এই প্রথম দুর্নীতি করছে তা কিন্তু নয়। ২০০৪ সালেই গ্রীসে অডিটে ধরা পরে গ্রীস ঘাটতি কম দেখানোর জন্য কারচুপি করেছে। সেই সময়েই যদি শক্ত হাতে ব্যাপারটা মোকাবিলা করা যেত অবস্থা এতটা খারাপে পৌঁছত না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ইয়াসির এর ছবি

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি জেনারালাইজেশন মেনে নেন দেখা যাচ্ছে চোখ টিপি

চরম উদাস এর ছবি

ওটা আমার কথা নারে ভাই বুলুমবেরাগ এর কথা।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

পথিক পরাণ

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কৌস্তুভ এর ছবি

বেশ সহজবোধ্য হাসি

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ। পরিসংখ্যানের ভাষায় আর কিছু বলবে না?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যাপারটা জার্মানীর চাপিয়ে দেওয়া একটা সিদ্ধান্ত যে দিকে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এগিয়ে চলেছে। এই কারণে আমি শুধু এই নিয়েই আলোকপাত করেছি। অবশ্যই এটা সর্বোত্তম সমাধান নয়।

আল্পসের ব্যাপারে আসা যাক। এইখানে রেগুলেশনের কথা বলা হয়েছিল সমাধানের জন্য - সরকারীকরণের কথা নয়। অর্থাৎ আল্পসের তৃণভূমি সর্বজন ব্যবহার্য হলেও , যদি ধরা যাক এরকম দুটো রেগুলেশন করা থাকে, যে -
১) কোনো খামার থেকে ১০টির বেশী গরু একই সময়ে চরতে পারবে না।
২) যার যার গরু তার খামার থেকে ৫ মাইল ব্যাসার্ধের অঞ্চলেই চরতে বাধ্য থাকবে।
তাহলে অবস্থা চরমে যাওয়া থেকে আটকানো যায়। এই ধরণের রেগুলেশনের কথাই হার্ডিন বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু এই ব্যবস্থার দুর্বলতা হল এরকম রেগুলেশন কে কিভাবে এনফোর্স করবে সেই নিয়ে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য এরকম রেগুলেশনের ব্যবস্থা ছিল - যা লিপিবদ্ধ আছে মাশট্রিখট চুক্তিতে। কোনো দেশের বাজেট ঘাটতি ৩%-এর বেশী যাতে না যায় এরকম রেগুলেশনও তাতে ছিল। গ্রীস বরাবরই এটা অমান্য করে এসেছে "জাল তথ্য" সরবরাহ করে। স্পেন সীমার মধ্যেই ছিল, কিন্তু রিয়েল এস্টেট বাবলের চাপে পড়ে ২০০৮ এর পরে আর পারে নি। স্পেনের ক্ষেতে সরকারী ঋণের চেয়ে ব্যক্তি-ঋণের অবস্থা আরও খারাপ - বেশ কিছু ব্যাঙ্ক পড়ে যাওয়ার মুখে। আমেরিকায় ফ্রেডি ম্যাক আর ফেনি মে কে সরকারের দেওয়া লাইফলাইনে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। স্পেনে সেরকম করতে গেলে স্পেনের ঘাটতি আরও বাড়বে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

তথ্য বহুল লেখা।অনেক কিছু জান্তে পারলাম।সামনে এ রকম আরও লেখা দেখতে চাই

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ। আমি আরও কিছু লেখা প্রস্তুত করছি। আশাকরি সামনেই পেয়ে যাবেন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

দিগন্ত দা,

আমি আপনার এই আর্টিকেলটা এই ওয়েবসাইট এ দিতে চাই যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে।
Bangladeshi Student and Alumni Association in Germany

আপনার আপত্তি থাকলে বলতে পারেন। আর কিছু না বললে নিজ দায়িত্বে করে নিব। হাসি
তবে অবশ্যই আপনার রেফ. থাকবে।
ধন্যবাদ।

Md. Rashidul Hasan

দিগন্ত এর ছবি

সচলায়াতনের নিয়মানুসারে লেখা প্রকাশিত হবার ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত কোনো পাবলিক সাইটে লেখা দেওয়া যায় না। আপনি যদি পুনঃপ্রকাশের কথা ভাবেন, তাহলে অপেক্ষা করে ২৮ তারিখে দিন। আর এই লেখার লিঙ্ক অবশ্যই সবাইকে দিতে পারেন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ।
আপনি কি আমাদের Alumni Association ওয়েবসাইট এর জন্য লেখাটার একটা কপি ২৮ তারিখে দিতে পারবেন? যদি আপত্তি না থাকে।

ধন্যবাদ।

Md. Rashidul hasan

দিগন্ত এর ছবি

আমার ই-মেল আছে আমার সচল অ্যাকাউন্টে, আপনি মেল পাঠান, আমি লেখা পাঠিয়ে দেব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

guest_writer এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখজনকভাবে আমি আপনার ইমেল আইডিটা খুঁজে পেলাম না।
আমার ইমেল আইডিঃ

এখানে লেখাটি পাঠালে খুব ভালো হয়।
ধন্যবাদ।

Md. Rashidul Hasan

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন পোস্ট। অনেক কিছুই লিখেছেন সহজ ভাষায়। এরকম সহজ করে লিখলে আমার মতন নাদানদের জন্য বেশ ভালো হয়।

দেব মুখার্জি
[db.dev.m@gmail.com]
--------------------------------------------------------------
দেব এর উঠোন  ॥   ফেইসবুক   ॥   গুগলপ্লাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।