শেরালী-চার (স্বপ্ন! মরূচারিণী)

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: শনি, ২৪/০৫/২০০৮ - ৯:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জল্লাদ দড়িতে দুধ কলা মাখাচ্ছে, মাথায় যমটুপি পরাচ্ছে। আমি কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে। চিৎকার করে বলছি: বাঁচতে চাই। ঘুম ভেঙ্গে গেলে স্বপ্নের যন্ত্রনা শেষ হয় বটে কিন্তু শুরু হয় বাস্তবের নরক যন্ত্রনা। ঘামে ভিজে, গায়ের গেন্জী দ্বিতীয় চামড়ার মত, শরীরের সাথে লেপ্ট আছে।
এরই মধ্যে চারদিক থেকে প্রায় একই সাথে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি। মধুর আযান গলিত শিশার মত কর্ণ কুহরে প্রবেশ করলে, ঘুমায় সে সাধ্য কার? অবশ্য অভ্যস্ততারও একটা ব্যাপার আছে। চেষ্টা করলে মানুষ পারেনা পৃথিবীতে এমন কিইবা আছে!
অকারনেই শরীরের ব্যাথাটা একটু কমলো। অথবা স্নায়ূবিক দূর্বলতার কারণে অনুভব ক্ষমতা কমেছে। তিন বার পুলিশ রিমান্ডে ছিলাম। তাতে অনুভব ক্ষমতা বাড়ার তো কথা নয়!
কথাতো একটাই। সেটা হল সত্য কথা। সত্যের মত অলংকারহীন কথা কার ভাললাগে! পুলিশেরও লাগে না। কিন্তু তাদের উপর করা নির্দেশ আছে। কোন বড় নেতার নাম নথিভুক্ত করা যাবে না। ছোট- খাট নেতা যেমন ওয়ার্ড কমিশনার, এদের নামও ক্ষেত্র বিশেষে বিপদ জনক। কারণ দলের সঙ্গে ঘনিষ্ট সর্ম্পক না থাকলে কমিশনার হবে কি করে? কাজেই সাবধান! তাছাড়া, আমাদের মত গুন্ডারা ধরা পরার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কোন নেতার ফোন না এলে পুলিশ ধরে নেয় আমরা বেওয়ারিশ লাশ।
জ্বালা হয়েছে আমাদের মত ভোট চোরদের।

আমি কইলাম: আরে কমিশনার সব দায়িত্ব নিল। কইল খুন-জখম, আমি দেহুম। আজকাল পাবলিকে ছুরি, দাও, কুড়াল এই সব ডরায় না। তাই পাইপ গান। কিন্তু পাইপ গানের গুলি সব সময় বের হয় না। নিজে পাবলিকের হাতে মরুম। হেডা কোন ব্যাপার না। কিন্তু একবার চিন্তা কইরা দেহেন। আমারে টেকা বেশী দিতে অইব না। কয়ডা টেকা বেশী খরচা কইরা এক নম্বর মাল জোগাড় কইরা দেন। এত টেকা খরচা কইরা অহন মালের লাইগা ইলেকশনে আরবেন?

কথায় কাম অইল। কমিশনার জ্ঞানী মানুষ। রাইতের ভিতরে মাল হাজির।
এই সত্য কথাটা পুলিশ কিছুতেই শুনতে চায়না। মাইরের উপড়ে ওষুধ নাই! হেল্যাইগ্যা দেয় মাইর।

ভোর থেকে সকাল বেলাটা এত দ্রুত হয়, যে খুব মনোযোগ না দিলে, এর মধ্যে যে একটা পার্থক্য আছে সেটা বুঝাই যায় না। সকাল হলেই সূর্য্যটা এমন ভাবে দাহন শুরু করে, মনে হয় সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আজই (কিয়া)মৎ করে দেবে।
প্রাতঃক্রিয়া শেষে নাস্তা হবে। টিনের থালায় আলু ভাজি আর দুটো রুটি। প্রথম প্রথম খেতে একটু কষ্ট হয়েছে, কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। কত মানুষ কিছুই খেতে পায় না। এখানে অন্তত না খেতে পেয়ে মরার ভয় নেই।
কিন্তু খাওয়ার পর শুরু হল বুকের ব্যাথা। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। নতুন কিছু নয়, প্রায়ই হয়। তৃতীয় বার পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার পর থেকে ফুসফুসটা ফেটে গেছে।
নড়াচড়া করবেন না। এমন মেয়েলী কন্ঠ জীবনে এই প্রথম শুনলাম। মায়া, মমতা, শাষন, ভয়, আদর, মিনতি কিছুই নেই, এ কন্ঠে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখি নার্স, যেন মাদার তেরেসা! নাইট ডিউটি মহিলার। লাল পেরে সাদা শাড়ী। উপজাতি কোন মহিলা। বুকের নেম প্লেটে লেখা কিরণময়ী বড়ুয়া। নামের সাথে গায়ের রং-এর কোন মিল নেই। কিন্তু আমার খুব ভাল লাগল। ফাঁসীর আসামীদের সাথে মানুষ সাধারনত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে না। হয় ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে তো-তো করে কোন রকমে কাজের কথা সেরেই, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। আবার কেউ এমন ভাব দেখায় যে, তোমার মুন্ডুপাত আমিই করতে পারতাম।
কিন্তু এই মহিলার কন্ঠ খুব সহজ সাবলীল। এই স্বাভাবিকতার কারণে তার প্রতি শ্রদ্ধা হল। দেখতে দেখতে হাসপাতালের আরামের দিন খুব দ্রুত ফুরিয়ে গেল।
ফাঁসির আসামীদের এক রকম সুবিধা আছে। পুলিশরা পর্যন্ত সমীহ করে। ভাবে আর তো বেশী দিন বাঁচবে না। দিন কয়েকের মধ্যেই...। মৃত্যু পরোয়ানা ছাড়াই ভাল। তা ছাড়া ফাঁসি হবে কি হবে না, সেটাও নিশ্চিৎ হয়নি। ফাঁসির রায়ে আপিল করার অধিকার থাকাই উচিৎ নয়। আপিলের সময়টা আসামী শূণ্যে কাটায়। আশায় থাকে হয়ত মুক্তি পাবে কিন্তু যদি না পায়! এই দোটানায় কিছুই করতে পারে না। কিন্তু যদি নিশ্চিৎ জানে অমুক দিন ফাঁসি হবে, তাহলে মানুষ মুক্তির স্বপ্ন দেখতে পারে।
ক্রমশ...


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

হুম কাহিনী শুরু হতে যাচ্ছে! পরের পর্বের আশায় রইলাম ! হাসি
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ। কালকে পাবেন।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

গল্প জমে জমে ঘনীভূত হচ্ছে। সেই সাথে আগ্রহ বাড়ছে পরের পর্বের জন্যে। ব্যতিক্রমধর্মী বর্ণনা।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ তীরুদা।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।