!! অলস ডায়েরী - ২৬/১০/২০০৮ !!

দৃশা এর ছবি
লিখেছেন দৃশা (তারিখ: রবি, ২৬/১০/২০০৮ - ৫:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরণঃ একেবারেই এলোমেলো অলস কথন। ইহা পড়িয়া কারো বিরক্তি উদ্রেক হইলে লেখক এর জন্য দায়ী হইবেন না।]

আরো একটা বছর পার হয়ে গেল... কিভাবে কোনদিক দিয়ে হিসাব মেলাতে যাই না... কারন জটিল জিনিসে বড়াবড়ি আমার আগ্রহ কম। জীবন যদি একটা সাদা খাতা হয় তবে আমার কাজ হল প্রতিটা পাতায় কিছু হিজিবিজি কেটে পরের পাতায় অন্য কাহন লেখার পায়তারায় পৃষ্ঠা উলটে অপর পাতায় সরে যাওয়া... এই সহজ পন্থা ধরে জীবন খাতার অনেকগুলো পাতায় পেছনে ফেলে এসেছি নির্বিঘ্নে... প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির অংক কষাকষির ধার না ঘেষে। কখন কখন স্মৃতি নামক বোকা ঝুলিটা অযথাই অবাধ্য হতে চায়...কিছু কিছু ঘটনা সময়কে স্থবির করে দিতে চায়... কিন্তু নিউরোন নামক বুদ্ধিমান স্নায়ুকোষগুলো পরমুহুর্তে সংকেত পাঠাতে থাকে এই বলে যে এসবই ক্ষনিকের অনুভূতি... মানুষের অলস সময়ের ভাবুলতা... ভেব না মেয়ে... জীবনকে সহজ কর...লাইফ ইজ অল গুড

আমার জীবন সহজ... বেশ অনেকটাই সহজ... যেটুকু জটিলতা আছে তা ফল পাকানোর প্রক্রিয়ায় পাড়িয়ে মাড়িয়ে নরম করে গিলে ফেলি। সহজ বলেই হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠে মনটা ভাল হয়ে যায় এই ভেবে যে শীত এসে গেল...এলোই না হয় এই অনুভূতিটুকু প্রকৃতির অস্বাভিকতার কারনে...তাতে কি? চা'য়ের কাপ হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আমি আশপাশ থেকে পাই হরেকরকম পিঠার সুবাস... হোক না তা সহজ জীবনের সরল কল্পনা... তাতে কি? ওখান থেকেই আমি দাঁড়িয়ে দেখি দু'টো বালক-বালিকার মুগ্ধ দৃষ্টি বিনিময়... বৃষ্টির ফোঁটার কনকনে ঠান্ডাও যেন কোন বাধা নয় বরং তা যেন সুন্দর মুহুর্তটার ধারক... হয়তো এই মোহ ক্ষনিকের... তাতে কি? আজ হয়তো সমস্ত কাজগুলো একপাশে ঠেলে দিয়ে অলস একটা ঘুম ঘুম দিন কাটাবার মত বিলাসিতা দেখানই যায়... এর পরিণতি হয়তো সহজ নয়...কিন্তু তাতে কি? পরিণতির কথা ভেবে কত বিশাল কিছুই তো না পাওয়া রয়ে গেল... এই ছোটখাট সরল বিলাসিতাটুকুকেও যদি খানিকটা প্রশ্রয় না দেই তবে জীবনটাকে বস্তায় পুড়ে পিঠে বোঝা টেনে বেড়ানোর প্রবনতাটুকুও অর্থহীন। বদ্দার ভাষায় বলা যেতে পারে “বুঝতে হবে বুঝে ইজি থাকতে হবে” কারন অল ইন দ্যা গেইমহাসি

আমার সহজ জীবন কনসেপ্ট দেখে অনেকেই ভ্রু কুচকে বলে “আছো তো সুখে তাই ফুঁ দিলেই বাজে”। অনেকেই বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে “ভাই এতো তেল তোর কই থিকা আসে”। অনেকে আড়ালে বলে “অভাব কি জিনিস বুঝে না তো তাই এমন আদিখ্যিল্লা কথাবার্তা কইতে পারে”। এই আড়ালপাপীদের আমার জিজ্ঞেস করা আর হয়ে উঠে না যে তোমাদের তো প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশী আছে... দিনভর পেটপুরে আমার মতই যা খুশি খেয়ে বেড়াও... তোমরাও তো আমার মতই নরম গদিতে দিন শেষে নিজেদের সপে দাও নিরাপদ ঠিকানায়... তবে কেন অস্থির নির্ঘুম রাত্রির কাছে তোমরা জিম্মি? যে ছোট ছেলেটা সারাদিনে হয়তো ২ বেলা খেয়ে না খেয়ে... খালি গায়ে শুধু একটা ছেড়া প্যান্ট পড়ে... ফুটপাথকে বিছানা বানিয়ে ইটের বালিশে মাথা রেখে অরক্ষিত অবস্থায় শান্তির ঘুম ঘুমায়... তার জীবনটা সহজ না কি তোমার জীবনটা সহজ? তারা অস্তিত্বের লড়াই লড়তে গিয়ে জীবনের প্রতিটা মুহুর্তকে বেঁচে যাচ্ছে... আর আমরা কালকের নিরাপত্তার কথা ভেবে আজকের মুহুর্তগুলোও হারিয়ে ফেলছি। সামনা সামনি হয়তো তোমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি...ধমক দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করি... কিন্তু মনে মনে ঠিকই তোমাদের নির্ভিক সাহসিকতাকে হিংসা করি একই সাথে শ্রদ্ধাও করি। কেন করি জানো? কারন তোমরা বারে বারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দাও যে “দেখ এতো প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের জীবন তোমাদের জীবন থেকে ঢের সহজ”।

অলস ডায়েরী।
২৬।১০।২০০৮

অফটপিকঃ একখান গান শেয়ার করলাম এখানে।

দেহতরী দিলাম ছাড়িয়া গুরু
তোমারও নামে।
আমি যদি ডুবে মরি
কলংক তোমার নামে।

বাজারীরা বাজার করে
কত রঙের বাত্তি জ্বলে গুরু
দোকানের সামনে।
তারা জ্বালাইয়া বাত্তি
করে ডাকাতি ও
সদর মকামে।

গুরু তোমারও নামে......
দেহতরী দিলাম ছাড়িয়া গুরু
তোমারও নামে।

বাজার দেখে লাগে ধন্দ্ব
বুঝি আমারি এ কপাল মন্দ
পইড়াছি ফেরে।
আমি নারায়নগঞ্জ ছাইড়া আইলাম
মদনগঞ্জের মকামে।

দেহতরী দিলাম ছাড়িয়া গুরু
তোমারও নামে।

মদনগঞ্জে গেলে পরে
কাম কুম্ভীরে ধরবই তোরে
পড়বিরে ফেরে।
আগে সিদ্ধিরগঞ্জ যাইয়া শেষে
যাও নিত্যধামে।

দেহতরী দিলাম ছাড়িয়া গুরু
তোমারও নামে।


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এতোদিন বাদে লিখলেন... তাও এইরকম মন খারাপ করা পোস্ট... তেবরো পেরতিবাদ জানাই... তবে ধুগো'দা'র ক্লোন (মতান্তরে উল্টোটা) আপুটার এইরকম চেহারা দেখে কিছুটা টেনশিত ইয়ে, মানে...

দাঁড়ান, গানগুলা শুইনা নেই... পরে জানাবোনে কেমন লাগলো...

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

বাহ্‌, দৃশাপু তো ম্যালাদিন পর লেখা দিলেন। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। মাথায় কতটুকু ঢুকেছে জানিনা। তবে ভাল লাগল। ভাল থাকাটা আসলেই আপেক্ষিক তাইনা ? আর ভাল থেকেও না ভাল থাকার অভিনয় করতে করতেও কি ক্লান্তি আসেনা আমাদের ? হয়তো আসে হয়তোবা না, বেশিকিছু নিয়ে ভাবতেও আলসেমি লাগে আজকাল। ইজি থাকি ভাল থাকি।
আজকাল কম কম লেখা দেবার কারন কি ? আলসেমি নাকি অন্য ব্যস্ততা ?

--------------------------------------------------------

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমার সহজ জীবন কনসেপ্ট দেখে অনেকেই ভ্রু কুচকে বলে “আছো তো সুখে তাই ফুঁ দিলেই বাজে”।
কথাটা আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মন খারাপ
লেখা একটু দুস্কু দুস্কু হয়েছে।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

গানগুলা খুবই পছন্দ হইলো। সিরিয়াল করলে... দেহতরী দিলাম ছাড়িয়া গুরু, ইটস অল ইন দ্য গেম, লাইফ ইজ গুড... আপনার পোস্টে দারুন দারুন সব গান পাওয়া যায়... এর পরের পোস্টে আরো কিছু লিন্ক দিয়েন, তবে ওইটা কিন্তু মন ভালো করা পোস্ট হইতে হবে... হাসি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

সহজ জীবনের কথা এত্ত জটিল কইরা মানুষ লিখে?

চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হু, জীবন ব্যাপারটা ভালো না ।

ঝরাপাতা এর ছবি

দু:খ আমাকে দু:খী করেনি করেছে রাজার রাজা . . .

সহজ জীবন কনসেপ্ট !


যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

It's All In The Game নামের মূল গানটি Cliff Richard-এর হলেও হতে পারে। আগে শুনিনি। তবে লিংকের গানটি Cliff Richard যে গাননি - এটা নিশ্চিত।

আচ্ছা, "দেহতরী দিলাম ছাড়িয়া গুরু" কে গেয়েছে, বলুন তো? এই একই গায়কের আরও দুটো অসাধারণ গান ("সোনা বন্ধু রে" এবং "ফান্দে পড়িয়া বগা") আমার সংগ্রহে আছে, কিন্তু নাম তাঁর জানি না মন খারাপ

সুনীলের কোনও এক গল্পে এরকম একটা কথা পড়েছিলাম, "এক ভিখিরি ছাতু খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ঘুমোতে গেল। আর এক ধনী ব্যক্তি দামি খাবার খেয়ে অম্ল-ঢেঁকুর তুললো। কে বেশি সুখি?"

লেখা খুব সুস্বাদু হয়েছে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
Life is what happens to you
While you're busy making other plans...
- JOHN LENNON

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নিঘাত তিথি এর ছবি

সন্ন্যাসী'দা,
যদি ভুল করে না থাকি তাহলে এটা স্বাগত'র কন্ঠ।
তার আরো অনেক অনেক অসাধারণ গান আছে। তার গাওয়া "আমায় রাঙ দিলো কি সোনা দিলো" কি শুনেছেন? বা "হবিগঞ্জের জালালী কইতর"? "ময়না ছলাৎ ছলাৎ"?
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

কীর্তিনাশা এর ছবি

অনেক দিন পর আপনার লেখা পেলাম।

ভালো লেগেছে।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নজমুল আলবাব এর ছবি

ঘুরায়া ফিরায়া সবারই একরকম গল্প। বিষন্নতা আর বিষন্নতা।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নিঘাত তিথি এর ছবি

হ্যাল্লো, কি খবর?

লেখাটা আমার দুঃখ দুঃখ লাগলো না...অন্য রকম ভালো লাগলো। "life is good" গানটা দারুণ ইন্সপায়ারিং, আগে শুনি নি।

অফ-টপিকঃ জন্মদিন গিয়েছে, না? ওই পোস্টে শুভেচ্ছা জানানো হয় নি, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো বলে। এবার বলি? ভালো থাকুন, সুখে থাকুন...অনেক অনেক।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

দৃশা এর ছবি

একমাত্র নিঘাত বেহেন এই পোস্টের মাজেজা ধরতে পারলো, বাকী সবাই ফেইল, তাগো লগে আমিও ফেইল। মন খারাপ
তবে প্রত্যেকটা সচলকে ধৈর্য্য নিয়ে পড়ে কমেন্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।