জেলার নাম লালকুপি - ৯

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৩/২০০৯ - ১০:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মন্দার হাওয়া যখন বইতে শুরু করল, আমাদের লন্ডন অফিসের ট্রেডরুমের ষন্ডারা হালকার উপর ঝাপসা মত এক আশায় বুক বাঁধলেন।

“তেলের চাহিদা ক্রমশ কমে আসছে ঠিকই, কিন্তউ তেলের উত্পাদন আর মজুদ তার চেয়েও দ্রুত গতিতে কমে আসছে। অর্থনৈতিক মন্দা কে লোকে যত দীর্ঘস্থায়ী ভাবছে আসলে তা অতটা না। এই আর কয়দিন মাত্র। কিছুদিন পরই অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে, আর তখনই চট করে লাফিয়ে উঠবে তেলের চাহিদা। অন্যদিকে উতপাদন আর মজুদ তাড়াতাড়ি কমিয়ে দেয়া গেলেও তাকে আবার আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে কিছু সময় লাগবে। এই ফাঁকেই আজকের যত মন্দা ফন্দা কেটে আবার যেই কে সেই... সুতরাং মাইঙ্কা চিপা...ইট ইস নট।“

নিয়তির সে কি নির্মম পরিহাস। তেলের দামের ঘুড্ডি সেই যে গোত্তা খেল, সে আর চাংগে ওঠে না। লন্ডন,হিউস্টন, সিঙ্গাপুর, দুবাই এর ট্রেডরুমগুলিতে আজকাল কোরবানীর পরদিনে গরুর হাটের ফিলিং। গত সপ্তায় শুনেছি আমাদের লন্ডনের ট্রেডরুমের কেউ চোখ শুকনো রাখতে পারেনি। যেখানে সবাই বলছিল যে এই কম কাটতির বাজারে আমেরিকার মজুদ দুই তিন মিলিয়্ন বারেল বাড়বে, সেখানে ফেব্রুয়ারির শেষে এসে আমেরিকান মজুদ এক লাফে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ব্যারেলে চলে গেছে। এতে যা হবার তাই হয়েছে ক্রুডের দাম চলে গেছে ৩৪ ডলারে। তাহলে ট্রেডারের জীবনে আর থাকলোটা আর কি?

আমেরিকার পেট্রলের মজুদটা অবশ্য আজকে একটু নেমে এসেছে, ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে হতে পারে। সবদিক ভাল থাকলে ট্রেডারের কাছে এটা ভাল খবর, মজুদ কম মানে নতুন অর্ডার সহ্সাই আসবে। কিন্তু আমেরিকায় তেল পরিশোধনের লাভ এতাটই কম যে তেনারা পারলে আরো কম পরিশোধন করেন। আমদানি না বাড়লে ট্রেডার খাবে কি? আমেরিকার এই মজুদের তথ্য বজারে আসার আগে আগে প্যারিস ভিত্তিক আই ই এ তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন ; কেস খারাপ, হাতে হারিকেন, কাটতি নাই। বিশ্ববাসী এবছর কমসে কম এক মিলিয়ন ব্যারেল তেল কম খাবে। আমেরিকার খবর শুনে মাথা ঘুরলে ইউরোপ আর এশিয়ার দিকে না তাঁকানোই ভাল।

---------

সিঙ্গাপুর থেকে আমার এক প্রাক্তন সহকর্মী, যিনি কেরোসিন নাড়াচাড়া করেন, এস এম এস করলেন "ইট্স লাইক এ হরর মুভি - লা; ভাজ্ঞিশ ভারতের জামনগরের ইয়াব্বড় রিফাইনারীটা এখনো চালু হয়নি।"

-----

ব্রাসেলসের এক ক্যাফেতে বসে তেলের দুনিয়ার পাকাচুলো এক পুরানো ঘুঘু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছিলেন। তেলের খোজে সারা দুনিয়া চষে বেড়িয়েছেন এক সময়। ট্রেডরুম আর বোর্ড্রুমের এই হাহাকার তিনি ঠিক শাইন করতে পারেন না। তিনি বললেন যে ১৯৮৪ এর আগে ক্রুডের দাম আজলের ডলারে এরকমই মানে ৩৪-৩৫ ডলারের সমকক্ষেই ছিল। তখন তেল কম্পানী গুলোর মার্কেটিং ডিপার্ট্মেন্টগুলির কাজ ছিল পেট্রল পাম্পে লোগো ঝোলানো আর উজানওয়ালাদের (যারা মাটির তলা থেকে তেল তোলার কাজ করেন) ফুট ফরমাস খাটা। উজানওয়ালারা হিউস্টন, এবার্ডিন বা বাহামার কোন এক ডিনার পার্টিতে বসে তাদের জমা খরচ দেখে ক্রুডের দাম কি হবে এটার একটা বিহিত করে নিতেন, তিন চার মাসের জন্য নিশ্চিন্দি। যুদ্ধ লাগলে দাম বাড়াও, আরবরা দাম নিয়ে হাউকাউ করলে দাম কমাও। ১৯৮৪ সালে ফট করে নাইমেক্স-এর আগামন হল। জীবনে এক আজলা ক্রড চোখে না দেখেও চ্যাংরা চ্যাংরা পোলাপান তেলের ধান্দায় নেমে গেল। উজানওয়ালারা তাদের মাতবরি হারালেন আর তেলের বাজার দরের কলকাঠিটা চলে গেল বাইরের লোকের হাতে। এখন সেই আশির দশক থেকে এই ট্রেডারেরা তেজী ঘোড়ার মত টগবগিয়ে ছুটে চলেছেন আর গাদা গাদা ইস্পতের পাজা পিঠে নিয়ে উজানওআলা আর রিফাইনারেরা সেই পাগলা ঘোড়ার পেছ্ন পেছন ঝুড়ি হাতে হেঁটে চলেছেন, সে ঘোড়ার ফেলে যাওয়া গোবর তুলতে তুলতে।

---------

এইসব আর ভাল লাগে না। কাজে মন বসে না। ইদানিং সন্ধ্যায় বাচ্চারা ঘুমাতে গেলে রুটিন করে আমরা টোনাটুনি দুইটা আংরেজি ফিলিম দেখি। এর মধ্য উডি এলেনের নতুন কাজ ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা মনে ধরল। উডিকে আমাদের দুজনেরই ভাল লাগে। এই ছবির কাহিনিবিন্যাসে বিশেষ করে জোহান্সনের বাচনভংগির চিপাচাপায় এলেনের হাতের ছাপ।

এটা একটু পুরানো ফিলিম। ক্লোজার। কাস্টিং আর চিত্রনাট্যকারের নাম দেখে মনে হল দেখি। শুধু ডায়ালগ দিয়ে কিভাবে একটি কাহিনীকে 'বড়দের' করে ফেলা যায়, এটি তার নমুনা।

এবারে হাল্কা কিছু। নকড আপ দেখলাম আবার। এই অংশটি নিতান্তই হাসির। প্রেগ্নান্ট এলিসনকে নিয়ে বেন ডাক্তারের কাছে গেছেন। এলিসনের অবস্থা নাজুক হলেও এক্ষুনি কিছু হবে না। যে ডাক্তার সচরাচর ডেবিকে দেখেন, তিনি নেই। বেনের ডাক্তারো লাপাত্তা। কিন্তু হাস্পাতালের ট্রেইনী দাক্তার বেনের চাপে পড়ে অন-কল ডাক্তারকে এক বিশেষ অবস্থা থেকে টেনে এনেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই অন কলে থাকা এশিয়ান ডাক্তার মেজাজ ঠিক রাখতে পারছেন না।


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় দুর্দান্ত, আগে আপনার ব্লগ ২/৩টি পড়েছি, কখনো মন্তব্য করিনি। কারণ আপনার বেশিরভাগ পোস্টের সাথে গান বা মুভি জুড়ে দেয়া থাকে। আর ঢাকার কচ্ছপ গতির ইন্টারনেটে সেসব দেখা সম্ভব না। আজ আপনার সবগুলো ব্লগ পড়লাম। আফসোস হল আগে কেন পড়িনি। জটিল বা গুরুত্বপূর্ন বিষয় সহজভাবে আলোচনার সাথে গান বা মুভিকে আপনি যে অনায়াস ভাবে জুড়ে দেন তা সত্যি অসাধারণ। আপনি এত কম লেখেন কেন?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার লেখারও আমি নিয়মিত পাঠক, কিন্তু সবসময় মন্তব্য করা হয়ে ওঠে না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই সিরিজটার নামটাই এতো সুন্দর... অনেকদিন পর পেলাম..
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ক্লোজার... অনেক দিন পর.. লেখা ভাল্লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।