জেলার নাম লালকুপি - ১১

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৮/২০০৯ - ৫:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto জার্মানীর উত্তরপুর্বে পোল্যন্ড এর সীমানা ঘেঁষে একটা বড় মাপের পরিশোধনাগার। সরীকের কারখানার যৌথ পরিচালনায় চলে। তিন মাস অন্তর পরিচালনা পর্ষদের সভা বসে, প্রতিনিধিরা জমা খরচ বখরার খোঁজখবর নেয়। এদিকে ব্রান্ডেনবুর্গ ও বার্লিন এলাকার সাময়িক অর্থনৈতিক মন্দা, ওদিকে প্রধান সরবরাহক রুশ ভালুকের গরর গরর গুরুক, কারখানার শ্রমিকদের গড় বয়স এবছর ৫০ পেরিয়ে গেছে - এইবেলা তরুনদের কাজে না ঢোকালে আখেরে পস্তাতে হবে - এইসব গুলতানি চলল তিন দিন দুই রাত।

শেষদিনে একে গরম তাতে শুক্রবার, তাই পরিচালনা পর্ষদের কেউ আর স্যুটকোটের ঝক্কি নেয়নি। পোলোর সাথে ডকার্স নয়তো চিনো। সাড়ে চারটা বাজতেই সবাই একে একে চলে গেল। আমার ফ্লাইট সেই রাত দশটায়। কারখানার বড়বাবুটিও পাঁচটার দিকে তার ঘরটি আমার হাতে তুলে দিয়ে চলে গেলেন। ট্যাক্সি আসা অব্দি সেখানে বসেই সপ্তাহের শেষ মেইলগুলো ঝেড়ে নেব । এসময় হাতের কাছে একটা কফি থাকলে ভাল জমে। বেরুলাম কফির খোঁজে।

কর্মচারিরা কেউ নেই। ঘোঁঘোঁ শব্দে কোথাও কেউ একটা ড্রিল চালাচ্ছে। অফিস ছুটির সময়ই টুকটাক সারাইয়ের কাজ হয়। চকচকে মেঝের লম্বা করিডোরের শেষ মাথায় কফি মেশিন। কফি মেশিনটাকে আড়ল করে হাতে ক্লিপবোর্ড আর একটা কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়ে দশাসই চেহারার নীল চোখ আর সাদাটে সোনালী চুলের এক প্রৌড়, পরনে সবুজ স্যুট।

করিডোরে আমার ঠিক পিছনে থেকে হেঁটে আসছে অল্পবয়সের আরেকটি ছেলে। সেও সফেদ, তবে তার চুল গাড় রংএর। আমরা দুজনে একই সময়ে কফি মেশিনের সামনে উপস্থিত হলাম। সোনালী চুলের প্রৌড় এক মুহুর্ত সময় নিল আমাদের দুজনকে দেখতে। এরপর আমার দিকে ফিরে তার হাতের কাপড়টি এগিয়ে দিয়ে বল্ল

'পি সি কে এর পক্ষ থেকে স্বাগতম, তোমার প্রথম কর্মসন্ধাটি সুন্দর হোক এই কামনা করি।'

কিছু না বুঝে যন্ত্রচালিতের মত এগিয়ে দেয়া গাঢ় সবুজ কাপড়টি হাতে নিয়ে লক্ষ করে দেখি সেটা একটা এপ্রন।


মন্তব্য

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হা হতোস্মি...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দুর্দান্ত এর ছবি

হ রে দোস্ত। শেষমেশ সবই গায়ের চামড়ায় গিয়ে ঠেকে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পড়ছি।
আপনার এই সিরিজের নামকরন নিয়ে কৌতুহল ছিলো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

লালকুপি -> রেড লাইট -> আমস্টারডাম ... নাকি? চিন্তিত
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

একই আগ্রহ আমারও ছিলো যখন ২০০৮ সালের সচল রিভিউ করছিলাম। তখন এ সিরিজের ১ম পর্বের শেষ লাইনে পড়েছিলাম -

জানালার ঊপর লাল বাতি মানেই দোকান খোলা। যার যেরকম দরকার দরদাম করে মিটিয়ে নিচ্ছে চাহিদা।

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

মজা পাইলাম হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্যবাদ কিংকু।
তবে ভাইরে এইসব ঘটনার কারনে মাঝে মধ্যে আর ভক্তি আসে না।

হিমু এর ছবি
দুর্দান্ত এর ছবি

কি বল? আমি তো ভেবে বসে আছি একদিন শুনবো হিমুর আশ্চর্য বায়ুকল দিগ্বদিক আলোকিত করে দিচ্ছে। দেদারসে একের পর এক উইন্ড ফার্ম চালু করে চলেছ - এইসব। আমার তো ধারনা (আমি জানি না) ঐদিকটায় সনাতন মনের লোক কম, সবাই প্রগতিশীল। সেই দুনিয়ায় কি আর আলাদা করে ক্লিনার বলে কেউ থাকে নাকি?

শাহেনশাহ সিমন  [অতিথি] এর ছবি

চলুক

দুর্দান্ত এর ছবি

চোখ টিপি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভাল্লাগসে লেখাটা হাসি

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্যবাদ।

সিরাত এর ছবি

ঠিক বুঝলাম না - এটা কি শুধুই গায়ের রং-এর কারণে?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।