তার কাটার সংস্কৃতি এবং আমরা

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/১১/২০০৭ - ৭:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


=================================
তার কাটা মানে “কাটিং দ্য ওয়্যার” কালচারের সাথে আমার পরিচয় বেশ ছোট বেলাতেই। ছোট বেলাতেই শুনতাম হেরোইনচিরা অমুকের ফোন লাইন কেটে নিয়ে গেছে। তারপর আরেকটু বড় হতেই, দেখলাম ডিশের লাইনের মারামারি। এলাকার মধ্যে ২-৩ মাস্তান গ্রুপ লাইন দেয়। কে কোথায় লাইন দিবে, কোথায় দিবে না , তা নিয়ে বিস্তর মারামারি। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ঘটণা ছিল, তার কেটে ফেলা। রাতের আধারে প্রায়ই এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের তার কেটে নিয়ে যেত। এই ঘটণার সবচেয়ে ভয়াবহ ফল একবার। এখনতো দেশে কত চ্যানেল, ২ ঈদেই কত প্রোগ্রাম। কিন্তু ডিশের প্রথম যুগে যখন বাংলাদেশী চ্যানেল কম ছিল, তখন ২ ঈদের মধ্যেও স্পেশাল ছিল কোরবানীর ঈদ কারন টিভি প্রোগ্রামগুলো একটু বেশি ভালো হত তুলনামূলক।তো যাই হোক, সেই কোন এক স্পেশাল কোরবানীর ঈদে আমরা সবাই নাটক দেখছি রাতের বেলা, হঠাৎ লাইন হাওয়া। ১ ঘণ্টা যায়, ২ ঘণ্টা যায় লাইনতো আর আসে না। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিরোধী ডিশ গ্রুপ ইচ্ছা করে লাইন কেটে, আম্পলিফায়ার চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। ঐ ঈদে আর আমাদের কিছু দেখা হলো না।

আর বড় হওয়ার পর দেখলাম, একই তার কাটার খেলা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইনেও চলছে। সেই সাথে হাব চুরি। অবশ্য আশার কথা এই যে, সমস্ত ২ নাম্বারি লোকের মধ্যেও দারুণ বোঝাপড়া ! তাই আপাতত ডিশ এবং ইন্টারনেট উভয়েই এলাকা ভাগ করে নিয়েছে, এবং আমরা উলু-খাগড়ারা সুখে শান্তিতে বাস করছি।


=================================
গরীবের কপালে সুখ সয় না। আমাদেরও ইদানীং তাই সইছে না। সব তার কাটা যখন বন্ধ হয়ে গেলো, তখন শুরু হল, আরেক তার কাটা। বিটিটিবির অপটিক্যাল ফাইবার কাটা। শুধু অপটিক্যাল ফাইবারই না , সাবমেরিন ক্যাবলও কাটা পড়ছে। এমনিতেই এত সাধের, এত জল্পনা কল্পনার সাবমেরিন ক্যাবল দেখে আমরা যার পরনাই হতাশ। না বাড়ল ব্যান্ডউইডথ, না কমলো মাসিক ভাড়া। তার উপর শুরু হল নতুন উৎপাত। রাত নাই দিন নাই, তার কাটা পড়ছে। বিটিটিবির মহান প্রকৌশলী ভাইয়েরা খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার মত করে, লাইনের কাটা বের করে, ফেভিকল দিয়ে জোড়া লাগাচ্ছে। আর চরম ফাঁপড়ে আছি আমরা, দেশের আপামর ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী মফিজ, কুদ্দুস এবং মোখলেসরা ! এই লেখা যখন লেখছি আমি, তখনও বিটিটিবির কোন এক সমস্যার কারনে লিঙ্ক বিচ্ছিন্ন। জানি না এইবারও তার কাটা পড়লো কিনা। ঠিক ৩ দিন আগেই একবার অবশ্য তার কাটা পড়েছিল। যদিও এইবারও কাটাই পড়ে, তাহলে অবশ্য স্বীকার করতেই হবে ঘটণার ফ্রিকোয়েন্সি চিন্তিত হবার মতই।

আমি আমার পূর্বের অনেক লেখাতেই স্বীকার করেছি যে, আমার বোধ বুদ্ধি বেশ কম। সাধারণ ঘটণাও বুঝতে আমার বেশ সময় লেগে যায়। যেমন এখন বুঝছি না, কে বা কারা এই অপটিক্যাল ফাইবার কাটছে। এতে যে শুধু ইন্টারনেট যাচ্ছে তাই না, আই এস ডি এবং এন ডাব্লিউ ডি কল ও বিঘ্নিত হচ্ছে। কতৃপক্ষ অব্শ্য মাঝে মধ্যে এই জন্য বেসরকারী মোবাইল কোম্পানীগুলোকে দায়ী করে। কিন্তু এর সত্য মিথ্যা কোনটাই আমি জানি না। যতদূর মনে পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একবার এক বক্তৃতাতে বলেছিলেন, হাইওয়ে পুলিশ দেশের অপটিক্যাল ফাইবার পাহাড়া দিবে যাতে কেউ নাশকতা করতে না পারে। বেচারা পুলিশ, এত লম্বা লাইন পাহাড়া দেওয়ার জন্য না জানি কত দৌড় ঝাপ করতে হচ্ছে উনাদের !তবে আমি বিশ্বাস করি এই দেশের প্রত্যেকটা অপরাধ হয়, পুলিশের জ্ঞাতসারে নয়ত এমন ভাবে যেটা পুলিশ চাইলেই বের করে ফেলতে পারে। তাই পুলিশ তথা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে, কে ক্যাবল কাটছে বের করা অনেক কঠিণ হবে বলে মনে হয় না।

আরও যেই ব্যপারগুলি বুঝি না, সেইটা হচ্ছে একটা দেশের যাবৎ ইন্টারনেট ব্যাবস্থা কিভাবে শুধু মাত্র একটা রুটের কেবলের এর উপর নির্ভর করে। যেখানে এক সময় চাইলেই আমরা বিনা খরচে একটি বিকল্প লিঙ্কেও সংযুক্ত হতে পারতাম, সেটা আমরা করিনি। এখন যখন রোজ রোজ আমাদের লেজ কাটা পড়ছে, আমাদের হুঁশ হয়েছে। আমরা এখন বিপুল টাকার বিনিময়ে সংযুক্ত হব আরেকটি সাবমেরিন লিঙ্কের সাথে। সেই সাথে আরো একটি অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোনের সাথে। সেলুকাস শব্দটাও আর উচ্চারণ করতে মন চায় না, এত বার বলেছি, আর কত !


=================================

মাঝে আমি সবাইকে বলতাম, আমি একটা কারনেই বিদেশ যাবো, আর তা হচ্ছে একটা ১০ এম বি পি এস এর লাইন ব্যাবহারের জন্য। কিছুদিন পড়েই দেশে এলো সাবমেরিন ক্যাবল। ভাবলাম বিদেশ যাত্রায় ইস্তফা। কিন্তু এ কি সেই লাইন যা আমরা চেয়েছিলাম! এখনো অধিকাংশ গ্রাহকই 40 kbps এর বেশি পান না ডাউনলিঙ্কে। এর থেকে আসলে আমাদের মুক্তি দরকার। মুক্তি দরকার বার বার এই তার কাটার সংস্কৃতি থেকে। আমাদের মনে হয় এই ব্যাপারে এখনি ভাবা উচিত যে ঠিক কি পদক্ষেপ নিলে আমাদের সবার জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত হবে।

তবে আপাতত দরকার তার কাটা থেকে মুক্তি। অবশ্য এই ব্যাপারে আমার একটাই আশা যে, আমার পাড়ার ছিচকে চোররা যদি নিজেদের মধ্যে একটা আপোসে আসতে পারে, এই বড় চোররা কি পারবে না, একটা আপোস রফাতে আসতে ? নিশ্চয়ই পারবে !


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

বুঝলাম না, আরেকটা সাবমেরিন লিঙ্কের সাথে যুক্ত হতে হবে কেন? সাবমেরিন কেবল তো আর কাটা পড়ছে না, পড়ছে অ্যাপ্রোচ লিঙ্ক, যেটা দেশের ভেতর মাটির নিচ দিয়ে গেছে।

বিকল্প লিঙ্কের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করানোর জন্যেই হয়তো এই আয়োজন। ব্যাক আপ ব্যাকবোন ইনস্টলেশনের কাজ তো চাট্টিখানি কথা না। কনট্রাক্ট পেলে লাল হয়ে যাবে যে কেউ। কে জানে?

তবে অপটিক্যাল ফাইবার পাহারা দিয়ে রক্ষা করা খুব মুশকিল। ইনস্টলেশনের নিয়ম হচ্ছে ফাইবারের ওপর কংক্রীটের বা ইঁটের একটা লেয়ার থাকতে হবে, কিন্তু তাতে খরচ একেবারে হাইউয়ের মতো ছুটবে ওপরের দিকে। দূরযোগাযোগের ব্যাপারে কর্মসূত্রে সামান্য অভিজ্ঞতা আছে বলে জানি, কেউ যদি ইচ্ছে করে এমন কিছু করে, তাহলে তাকে ঠেকানো বেশ মুশকিল। তবে একবার ধরে ফেলে প্যাঁদানি দিয়ে বার করতে পারলে ভালো, কে বা কাহারা এমনটা ঘটাচ্ছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি

বুঝলাম না, আরেকটা সাবমেরিন লিঙ্কের সাথে যুক্ত হতে হবে কেন? সাবমেরিন কেবল তো আর কাটা পড়ছে না, পড়ছে অ্যাপ্রোচ লিঙ্ক, যেটা দেশের ভেতর মাটির নিচ দিয়ে গেছে।

আমার যতদূর মনে পড়ে একবার সাবমেরিন ক্যাবলও কাটা পড়েছিল কক্সবাজারের কাছে ঝিলংঝাতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিল সেই জায়গায় পানির নিচে কেবলের অংশবিশেষ দেখা যেত।

অবশ্য বিকল্প সাবমেরিন ক্যাবেল রুটের দরকার বোঝা গিয়েছিল, যখন পানির নিচে সৃষ্ট সুনামিতে, সি মী উই ফোর লিঙ্ক ( আমরা যেটা ব্যাবহার করি আর কি ) বিচ্ছিন্ন হল। তখনই আমি জানতে পারলাম যে পৃথিবীর কোন দেশই একটা মাত্র লিঙ্কের ভরসায় চলে না। সবারই ব্যাকাপ লিঙ্ক থাকে, যার কারণে আমাদের মত কোন দেশি সমস্যাতে পড়েনি। আমরা তো ফ্রী ব্যাকাপ লিঙ্কের অফার পেয়েও রাজি হইনি।

আর অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকাপ তো আমার মতে আরো আগেই ভাবা উচিত ছিল, কারণ সারাদেশ এর কমুনিকেশন নির্ভর করে এর উপর। এই তার কাটাতে যত ক্ষতি হচ্ছে আর্থিকভাবে , তার সমান কিংবা কমেই আমরা হয়ত এই ব্যাক আপ পেতাম।

এই ক্ষেত্রে বিটিটিবির উদাসীনতাও আছে যা জানি।

আজকের বিডি নিউজ দেখলাম, এর জন্য সবদোষ দেওয়া হচ্ছে বিটিটিবির উদাসীনতাকেই।
=====================================
অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ইন্টারনেট না থাকাই কি ভালো নয়? পোলাপাইন কিসব আজেবাজে ছবিটবি দেখে নষ্ট হয়ে যাবে। এটা অবশ্য একটা সময়ে বুয়েট অথোরিটির তত্ত্ব ছিলো হলগুলোতে ইন্টারনেট না দেয়ার (কু)যুক্তি হিসেবে। ইন্টারনেট বর্তমান সরকারের কাজকর্মকেও ব্যাহত করছে। কিছু একটা হলেই সব গুজব মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অতএব, দেশের শান্তি এবং তারচেয়েও বড় জিনিস 'শৃঙ্খলা' রক্ষায় ইন্টারনেটের নির্বাসন চাই।

চুরি প্রথমবার হলে হয়তো চোরের কিছুটা দোষ; কিন্তু দ্বিতীয়বার হলে দোষটা পুরোপুরিই পাহারাদারের। কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সবজান্তা এর ছবি

ইন্টারনেট না থাকাই কি ভালো নয়? পোলাপাইন কিসব আজেবাজে ছবিটবি দেখে নষ্ট হয়ে যাবে। এটা অবশ্য একটা সময়ে বুয়েট অথোরিটির তত্ত্ব ছিলো হলগুলোতে ইন্টারনেট না দেয়ার (কু)যুক্তি হিসেবে।

আমি ঠিক জানি না আপনি কোন ব্যাচের ছাত্র। তাই একটা তথ্য দেই যেটা জানতেও পারেন আপনি, এখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ আছে।

আর এই যুক্তি যিনি দিয়েছিলেন, তিনি আমার বিভাগের শিক্ষক। এবং অত্যন্ত কোয়ালিফাইড একজন ব্যাক্তি যার মেধা এবং অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তিনি কেন এমনটা বলেছেন আমি জানি না, তিনি এই সেমিস্টারেও আমাদের ক্লাস নিতে এসে তার সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে আত্নপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং তার যৌক্তিকতা ব্যাখা করেছেন।

সেলুকাস !
===================================
অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

তাঁর যুক্তিগুলি নিয়ে একটু শোনা যেতে পারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

কনফুসিয়াস এর ছবি

শিক্ষক মহাশয়ের বাসায় নেট এর লাইন আছে? ওনার ব্রাউজার হিস্ট্রি খুঁজলে হয়তো উত্তর পেতে পারেন।
হো হো হো
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।