বন্যা এবং সাইক্লোনকে অভিনন্দন

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: রবি, ১৮/১১/২০০৭ - ১:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অভিনন্দন বন্যা , অভিনন্দন সাইক্লোন !

খবরটা কতজনের নজরে এসেছে জানি না, তাই আবার বলি। ১৭ তারিখের জনকণ্ঠে ছাপা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ২ শিশুর জন্ম হয়েছে, এক জন পুত্র একজন কন্যা। পুত্রসন্তানের নাম রাখা হয়েছে সাইক্লোন, আর কন্যার বন্যা। অভিনন্দন তাদের ! গনহারে বিদায়ের এইবেলাতে, তারা সংখ্যাতে ক্ষুদ্র হলেও , জমার খাতাতে লেখা হয়েছে। কত সহস্র মা বাবার কোল যখন শূণ্য, তখন তারা অন্তত তাদের বাবা মার কোল আলো করে এসেছে।

অনেকেই হয়ত আমার এই উৎকট রসিকতাতে এতক্ষণে যারপরনাই বিরক্ত, ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন স্ক্রীনের দিকে, আর ভাবছেন “ছোড়া ডেপো হয়েছে ভারি ! ” । তাদের কাছে আমি করজোড়ে ক্ষমা চাইছি। আপনারা আপনাদের নিজ গুনে আমাকে ক্ষমা করে দিন। কিন্তু মিথ্যা শোকের অভিনয় আমাকে দিয়ে আগেও হয়নি, এখনো হবে না।

শোক কেন করবো ? এখন পর্যন্ত সরকারী হিসাবে ১৭২১ জন লোক মারা গিয়েছে বলে ? এতে যদি শোক করতেই হয়, তবে তো এই দেশে আমাদের বারোমাসই শোক দিবস পালন করা উচিত।
সত্যি করে বলি তো, এই লোকগুলো কবে মারা গিয়েছে। তারা কি এই ঘূর্ণিঝড়ে মারা গিয়েছে ?

আমার তো মনে হয় , এইসব সহায়হীন দরিদ্র মানুষগুলোকে আমরা খুন করেছি আরো অনেক দিন আগেই। যখন আমরা নিজের স্বার্থে মরিচের দাম তুলে দেই ২০০ টাকাতে, পিয়াজের দাম থাকে ১০০ টাকা, মোটা চাল কিনতে হয় ২১ টাকা কেজিতে,তখন কি এই লোকগুলোর বাঁচার কোন রাস্তা আমরা রাখি ? আমরা কি বাঁচার কোন রাস্তা রাখি যখন বিনাপুনর্বাসনে এদের উচ্ছেদ করি ? আমরা যখন বলি মঙ্গা কি ? এসব পত্রিকার বানানো খবর, তখন কি আমরা এদের কে লজ্জা দিয়েই মেরে ফেলি না ? যখন এদের ঘরের মেয়েকে আমরা ধর্ষণ করি আর তারা বিচার চেয়ে পায় প্রত্যাখান, তখন কি তারা আর জীবিত থাকে ?

এইদেশে জনসংখ্যা মানে কোন মানুষের সংখ্যা নয়, নেহায়েতই একটা সংখ্যা। যার ক্ষতি বৃদ্ধিতে আমাদের বিশেষ কিছু আসে যায় না। যদি আসতো যেতোই, তা হলে কেনো এতো লোক আরো একবার মারা গেলো ? জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি প্রলয়ংকারী ঝড়ে হাজার হাজার মৃত। আজ এত বছরেও যদি আমাদের অসহায়ত্ব এতটুকুই না কাটলো, তবে আমাদের উন্নতি হল কোথায় ? হয়ত ১৭০০ তেমন বড় সংখ্যা না অন্যবারের দুর্যোগের তুলনায়, কিন্তু আমরা সবাই জানি প্রকৃত সংখ্যা অনেক অনেক বেশী। কত দ্বীপে কত লোক আছে, তাদের খবরই কেঊ জানে না। আর ভাগ্যবিড়ম্বিত জেলে যারা ঐ সময় সমুদ্রে ছিল, তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। দিন যাবে, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে। আমরা গোল্ডফিশরা একুরিয়ামের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে যেতে ভুলে যাবো এদের কথা। আরো ঝড় আসবে আমাদের জীবনে, তারা আমাদের জনসংখ্যার সামঞ্জস্য বিধান করবে। আমরা নিশ্চুপ থাকবো, কারন এইতো আমাদের হওয়ার ছিলো। অপমৃত্যুকে আমরা আমাদের ভবিতব্য বলেই ধরে নিয়েছি।তাহলে আপনিই বলুন শোক কিসের জন্য ? অবশ্যম্ভাবীর জন্য শোক কি যুক্তিযুক্ত ?

তার চেয়ে আমরা চলুন বরং জীবনকে স্বাগত জানাই। স্বাগত জানাই বন্যা আর সাইক্লোনকে, ধ্বংসের মধ্য থেকে যারা ফিনিক্সের মত বেরিয়ে এলো ! হয়ত এই নতুন প্রজন্মই স্বার্থপরতার এই বৃত্ত থেকে বের হতে পারবে। আমরা তাই অভিনন্দন জানাই নতুন কে আর সেই সাথে অপেক্ষা করতে থাকি আমাদের অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ঠিক।

মুজিব মেহদী এর ছবি

এইসব সহায়হীন দরিদ্র মানুষগুলোকে আমরা খুন করেছি আরো অনেক দিন আগেই। যখন আমরা নিজের স্বার্থে মরিচের দাম তুলে দেই ২০০ টাকাতে, পিয়াজের দাম থাকে ১০০ টাকা, মোটা চাল কিনতে হয় ২১ টাকা কেজিতে,তখন কি এই লোকগুলোর বাঁচার কোন রাস্তা আমরা রাখি ? আমরা কি বাঁচার কোন রাস্তা রাখি যখন বিনাপুনর্বাসনে এদের উচ্ছেদ করি ? আমরা যখন বলি মঙ্গা কি ? এসব পত্রিকার বানানো খবর, তখন কি আমরা এদের কে লজ্জা দিয়েই মেরে ফেলি না ? যখন এদের ঘরের মেয়েকে আমরা ধর্ষণ করি আর তারা বিচার চেয়ে পায় প্রত্যাখান, তখন কি তারা আর জীবিত থাকে ?

সম্পূর্ণ একমত।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

দ্রোহী এর ছবি

অভিনন্দন বন্যা , অভিনন্দন সাইক্লোন !


কি মাঝি? ডরাইলা?

খেকশিয়াল এর ছবি

সবজান্তা বেড়ে লিখেছিস ! লাল সালাম !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।