ডেড পোয়েটস সোসাইটি : স্বপ্ন দেখবো বলে, আমি দু চোখ মেলেছি

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: শুক্র, ২১/১২/২০০৭ - ৯:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

সাহিত্য, শিল্প কিংবা চলচ্চিত্রের মূল লক্ষ্য কি তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বিস্তর। প্রাথমিক ভাবে , অবশ্যই আনন্দ দান করা। যে শিল্পে, যে চলচ্চিত্রে আপনি আনন্দ পাবেন না, তা কখনোই আপনার প্রিয় হতে পারবে না। তাই আমাদের সবার প্রিয় চলচ্চিত্র তালিকাতে যত নামই থাক, তারা আপনাকে কোন না কোন ভাবে আনন্দ দিয়েছে।

কিন্তু ঠিক কতগুলো চলচ্চিত্র আপনাকে অণুপ্রানিত করেছে ? কতগুলো চলচ্চিত্র আপনাকে শুধু আবেগে আপ্লুত করেই থেমে থাকেনি , সেই সাথে উদ্বুদ্ধ করেছে কিছু করতে ?

ব্যক্তিগতভাবে আমার উত্তর হচ্ছে এমন সংখ্যা খুব বেশি না। লর্ড অফ দ্য রিংগস দেখে আপনি হয়ত ফ্যান্টাসিতে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছেন, টার্মিনাল দেখে প্রশংসা করেছেন প্লটের কিংবা ৩০০ দেখে আপনি উচ্চকন্ঠে প্রশস্তি গেয়েছেন সিনেমাটোগ্রাফির। কিন্তু খুব কম চলচ্চিত্রই আপনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, কিছু একটা করতে। আর এই বিরল সংখ্যক চলচ্চিত্রের মধ্যে ডেড পোয়েটস সোসাইটির স্থান নিঃসন্দেহে অনেক উপরে।

ডেড পোয়েটস সোসাইটির মুক্তিকাল ১৯৮৯ সাল। প্রায় ২০ বছর আগের ছবি। অথচ বিষয় বৈচিত্রে এটি সবসময় আধুনিকই হয়ে থাকবে। অস্কার প্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রের পরিচালক পিটার উইয়ার। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র আলো করে আছেন, অভিনয় গুরু রবিন উইলিয়ামস।

ঘটণাটি একদল কলেজ ছাত্র ( খুব সম্ভবত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনী) এবং তাদের সাহিত্য শিক্ষককে নিয়ে। শুধু মাত্র আমাদের দেশেই নয়, বিশ্ব জোড়াই সমস্ত ছাত্রের জীবনের লক্ষ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা এ ধরণেরই কোন অর্থকরী পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করা। এ সবই সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা। কিন্তু সাহিত্য? মানুষের জীবনের সাহিত্য, কিংবা আরো নির্দিষ্ট করে বললে কবিতার স্থান কোথায় ? সাহিত্য মানুষের জৈবিক বিবেচনায় অপরিহার্য কিছু না। কিন্তু যখন আমাদের বিবেচ্য হয়, মানুষের মন, তার সংবেদনশীলতা, তার মননশীলতা -- সেখানে সাহিত্যই সর্বেসর্বা।

সাহিত্যের স্থান কোথায়, তাই ছাত্রদের বুঝিয়েছেন, রবিন উইলিয়ামস। তার ব্যাতিক্রমধর্মী পঠণ ভংগিমার মাধ্যমে ছাত্রদের বার বার শিখিয়েছেন, কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয় , কিভাবে নিজের মত করে চিন্তা করতে হয়।

এভাবেই একদল প্রাণউচ্ছল তরুণকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন তিনি। ঘুরে ফিরে তাই, স্বপ্নপূরণের কথাই এসেছে এই চলচ্চিত্রে।

এ চলচ্চিত্রে প্রত্যেকের অভিনয়ই অসাধারণ।রবিন উইলিয়ামসের কথা নতুন করে কিছুই বলবার নেই। আর তার ছাত্ররা যারা ডেড পোয়েটস সোসাইটির সদস্য তারা প্রত্যেকেই অভিনয়ে মাতিয়ে দিয়েছেন। ছবিটির একটি মূহুর্তও বিরক্তিকর কিংবা আধিক্য নয়। প্রতি মূহুর্তেই দর্শকের মনে হবে, ভিড়ে যেতে সেই স্বপ্নবিলাসি তরুণদের দলে, কবিতা কে পাগলের মত ভালোবাসতে, যেমনটা হয়ত তিনি ভালোবাসতেন, তার যৌবনের দিনগুলিতে।

চলচ্চিত্রটি শেষ হয়েছে দারুন এক অনুপ্রেরণার মধ্য দিয়ে। শেষ হবার পর হয়ত মনে হবে, কিভাবে জীবনের যূপকাষ্ঠে আপনি বলি দিয়েছেন, আপনার স্বপ্নগুলি কে। হয়ত মনে হবে, আবার কি আমরা পারি না, নিজের স্বপ্নের জন্য বাচঁতে ?

অসাধারণ একটি অবশ্য-দর্শন চলচ্চিত্র। খুবই সামান্য কিছু যৌনতা এবং নগ্নতা ছাড়া তেমন কিছু নেই। তাই প্রাপ্ত বয়স্ক যে কারো সাথেই দেখতে পারেন এটি।

হয়ত এ চলচ্চিত্রই স্বপ্ন দেখার জন্য আপনার দু চোখ মেলে দিবে, কে জানে !!


মন্তব্য

জি.এম.তানিম এর ছবি

অসম্ভব রকমের প্রিয় এই মুভিটি।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমারো। ছবিটার কথা মনে করানোর জন্য লেখককে ধন্যবাদ।

s-s এর ছবি

ইশশ্! আমার সবসময়ের ভালো লাগা ছবিগুলোর শীর্ষে এটি! আমি লিখছিলাম এটা নিয়ে, এখন ভাবছি লিখবো কি'না আর। কি বলেন সুহৃদ লেখক, আমি আপনার এই লেখার পর কখনো কি আর আমার লেখা দিতে পারি? আপনার কি মত?
আমার জীবনকে ভীষণভাবে বদলে দিয়েছে এই ছবিটি এবং দ্য পিয়ানিস্ট।
আমার প্রথম কেনা ডিভিডি ডেড পোয়েট'স সোসাইটির।অনেক অনেক বার, হাজার বার দেখা, ভালো লাগা মনের ভেতরে গেঁথে যাওয়া দৃশ্য। সুহৃদ লেখক, লোভ জাগিয়ে দিলেন মন খারাপ!!!
(o captain, my captain !)

s-s এর ছবি

carpe diem........ cease the day!!

s-s এর ছবি

oops বানানটা ভুল এলো কেন?

carpe diem - SEIZE the day

সবজান্তা এর ছবি

s-s কেন নয় ? অবশ্যই পারেন।

আমিতো মনে করি প্রত্যেকটি লোকেরই এই ছবিটি দেখা উচিত।

স্বপ্ন দেখতে আমরা যারা ভুলে গিয়েছি, তাদের সবার জন্য খুব জরুরী এটি দেখা।

--------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

পুরুজিত এর ছবি

আপনারা কেউ কি 'মোহাব্বতে' সিনেমার সাথে এর মিল খূঁজে পান?
বলিউডের আর কিছু থাক আর না থাক, সাহস আছে বলতে হবে। যদিও আর কিছু না থাকার কারণে সেই সাহস কেবল নকল করাতেই শেষ হয়ে যায়।

s-s এর ছবি

প্রিয় পুরুজিত:ওই যে বলে না বাংলায় একটি কথন: কোথায় আগরতলা আর কোথায় চৌকির তলা। রীতিমতো যণ্ত্রনা হয় এইরকম বুদ্ধিহীন,ফাঁপা নিপোশাক বলিউডিকরণে। শুধু আধাখ্যঁচড়া স্ট্রাকচার ছাড়া, আর কোনো কিছুই নকলে পারদর্শী হয়নি বম্বে ভার্সনটি। আমি জানতামও না, পরে এক বন্ধু জানালো এটি নকল। খুব, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম এই নির্লজ্জ বুদ্ধিহীন আচরণে।

সবজান্তা এর ছবি

পুরুজিতদা, একবারে মনের কথা বলে ফেলসেন। আমি তো ১৫-২০ মিনিট যাওয়ার পরই ধরে ফেলতে পারসিলাম এটা। এমন হাসি পাচ্ছিলো।

রবিন উইলিয়ামস আর শাহরুখ খান ?

আর শাহরুখ খান মনে হয় সাহিত্যের শিক্ষক ছিলো না। বোধহয় প্রেম এর শিক্ষক ছিল দেঁতো হাসি

বাই দ্য ওয়ে, পুরুজিতদা, আমি বনিক, ইইই - ০৩ চোখ টিপি
----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

কনফুসিয়াস এর ছবি

দেখি নাই মুভিটা। অবশ্যই খুঁজে দেখবো।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।