হার না মানা 'জয়ের' গল্প

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: রবি, ২০/০১/২০০৮ - ১২:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


-------------------------------------------------------
সালটা ঠিক আমার খেয়াল নেই। ২০০৬ ই হবে খুব সম্ভবত। আমি বিরক্ত ভঙ্গিতে হেটে যাচ্ছি ক্লাস করার জন্য। এমনিতেই সকাল ৮টার ক্লাস করতে ভয়াবহ বিরক্ত লাগে। তার উপর দেরীও হয়ে গিয়েছে কিছুটা। ই এম ই বিল্ডিঙ্গের তিন তলায় উঠে, বামে মোচড় নিতে যাবো, এমন সময়ই একজনের সাথে ধাক্কা লাগতে নিলো। আমি কিছুটা বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকাতে যেয়ে দেখি, আমার সামনে নিতান্ত নিরীহ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে। জুনিয়র আমাদের। অবাক হলাম, ছেলেটার হাতে ক্রাচ দেখে। আর কিছু বললাম না। মনটা একটু খারাপ হল। এই পা নিয়ে আমরা কত লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি করি। যার পায়ে সমস্যা তার না জানি কত কষ্ট। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আমি ক্লাসে ঢুকে গেলাম। “প্রাত্যহিক ভ্যাজর ভ্যাজরে” ভুলে গেলাম সেই ছেলের কথা, যেমন ভাবে আমরা ভুলে যাই আর বাকি দশটা অপ্রয়োজনীয় কথা। তখনও আমি জানতাম না, ছেলেটির নাম ছিল জয়।

----------------------------------------------------
জয়। বাঁধন রায় জয়। নিখিল চন্দ্র রায় আর পুতুল রানী রায়ের আদরের ছেলে।ও তখন ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে, হঠাৎই গোড়ালিতে ব্যথা অনুভব করলো। অবশ্য তৎক্ষণাৎ চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে সে। ছাত্র হিসেবে জয় অসাধারন ছিলো। মাধ্যমিক পরীক্ষাতে দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে ৪.৮৮ নিয়ে পাস করে। উচ্চমাধ্যমিক পড়তে চলে আসে ঢাকাতে, নটরডেম কলেজে। এখানেও জয় অসাধারন প্রতিভার স্বাক্ষর রাখে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতে ওর জিপিএ হয় ৫.০০ । জয়ের জয়গাঁথা এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু, কারন সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দেখায় ও বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায়। মেধাতালিকায় ৫৩ তম। যাদের নূন্যতম ধারনা আছে, তারা অবশ্যই জানেন মেধাতালিকায় ৫৩ হওয়াটা কি দুর্দান্ত ব্যাপার !!
এই যে ক্লাস সিক্স থেকে বুয়েট ভর্তি, এই দীর্ঘ পথে ওর মেধার সাথে সাথে আরেকটা জিনিস ওর পিছু ছাড়েনি। সেটি হচ্ছে সেই ক্লাস সিক্সের গোড়ালির ব্যথা। ক্লাস সিক্সের সেই ব্যথার পর থেকেই ও কিছুটা খুঁড়িয়ে হাটতো। কিন্তু বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সমস্যা প্রচন্ড আকার ধারণ করে। এবার ওকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হল কলকাতাতে। সেখানে ওর চিকিৎসা শুরু করলেন ড. এইচ কে পাল এবং ড.এস কে ব্যানার্জী। সেখানে তখন ওকে আরথ্রাইটিসের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।তড়িৎ এবং ইলেক্ট্রনিক কৌশলে জয় তার প্রথম সেমিস্টার শেষ করার পর ব্যথা আরো ভয়াবহ রূপ ধারন করে। তখন ওকে রেমিকেড দেওয়া শুরু হল। ৬ ডোজ দেওয়া হয়। কিছুটা আয়ত্ত্বে এলেও, তিন চার মাস আগে সমস্যা জটিলতম আকার ধারন করে। আবার ডাক্তার পরামর্শ দেন রেমিকেড নেওয়ার। এবার নেওয়া হয় ৪ ডোজ। কিন্তু এবার আর কাজ হয়নি। জয় এখন নয়াদিল্লীতে আছে, অল ইন্ডিয়া ইন্সটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সে চিকিৎসা চলছে ওর। চিকিৎসকরা বলছেন, ওর এই রোগের নাম আনকোলাইসিং স্পন্ডিলাইটিস। ওর হিপে ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন ১০ লক্ষ টাকা।

----------------------------------------------------
সুপ্রিয় পাঠক, আপনি হয়ত ভাবছেন, ১০ লক্ষ টাকা। এ আর এমন কী ! আসলেই হয়ত এখনকার দিনে ১০ লক্ষ টাকা কিছুই না। কিন্তু অসহায় এই তরুনের পিতা পেশায় পোস্টাল অপারেটর। এখন পর্যন্ত ৭-৮ লক্ষ টাকা ওর চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়ে গিয়েছে। তার পক্ষে এই ১০ লক্ষ টাকা যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমরা কি কিছু করতে পারি না ? আমাদের চোখে এখনো লেগে আছে নিরীহ স্বভাবের সেই তরুনের দুঃখী চোখজোড়া। জয়ের কি অস্বাভাবিক মনের জোর। বুয়েটে ঢুকে, এই প্রচন্ড সমস্যা নিয়েও সে পড়াশোনা করে গিয়েছে। এমন কি তার রেজাল্টও যথেষ্টই ভালো, এত সমস্যা সত্ত্বেও। আমরা বিচলিত বোধ করি, যখন দেখি এমন একটা মেধাবী তরুনের জীবন নিভে যাবে পঙ্গুত্বের অভিশাপে।
বছর কয়েক আগে আমরা আমাদেরই এক সহপাঠীর জন্য, এর থেকে অনেক বেশী টাকা তুলেছিলাম ২ মাসেরও কম সময়ে।আমাদের তাই বিশ্বাস আমরা পারবো। কিন্তু এবার সমস্যা অন্য জায়গায়। ওর হাতে সময় বড্ড কম, আর ১২ দিনের মধ্যে যদি ওর অপারেশন না করা যায়, তবে আজীবন পঙ্গুত্ব গ্রাস করে ফেলবে ওকে।
আমরা সবাই হঠাৎ করে খুব অসহায় বোধ করছি। ১০ লাখ টাকা কি এখনকার বাংলাদেশে খুব বেশি টাকা ? আমরা জানি বেশি না। কিন্ত সময়টা অনেক অনেক কম। এই অন্ধকার সময়ে, আমাদের শেষ আশা আপনারা। আপনাদের দ্রুততম সাহায্যই এক মাত্র আশা ওকে সুস্থ জীবন দেবার ক্ষেত্রে। আমরা করজোড়ে সবার কাছে প্রার্থনা করছি, প্লীজ আপনারা আমাদের এই ভাইকে বাঁচতে সাহায্য করুন। এমন সম্ভাবনাময় তরুণকে চোখের সামনে শেষ হয়ে আমরা যেতে দিতে পারি না, নিশ্চয়ই আপনিও চান না।
আমরা তাই তাকিয়ে আছি আপনাদের দিকে। হয়তো জয়ও তাকিয়ে আছে সে দিকেই।

অ্যাকাউন্টঃ "Director, Directorate of Students Welfare", Sonali Bank, BUET Branch

Account No. 34223635

Swift code: BSONBDDHLOD

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এর তথ্যঃ

A.B.M. Harun-ur Rashid

email:

Address : Bangladesh University of Engineering & Technology
Dhaka-1000
Bangladesh

আপনারা যে কেউ এই নামে টাকা পাঠিয়ে, গোপন পিন কোডটি এই ইমেইল ঠিকানাতে মেইল করে দিবেন।

প্রসংগত উল্লেখ্য, ড. এ.বি.এম. হারুন-উর রশিদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ এবং ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক, এবং সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ছাত্র কল্যান পরিচালক। জয়ের সাহায্যকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক গঠিত কমিটিরও একজন সদস্য তিনি।

সঙ্গে প্রদত্ত ইমেইল ঠিকানাটিও সুরক্ষিত একটি ঠিকানা।


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমেরিকা থেকে টাকা পাঠানোর দ্রুততম ব্যবস্থা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের। ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে যাবে। খরচ অত্যন্ত কম। ব্যাংকের হরেক রকমের ঝামেলাও এড়ানো যায়।

এ ক্ষেত্রে যা দরকার ও করণীয়:

১) ঢাকায় একজন ব্যক্তির নাম দরকার যার নামে টাকাটি যাবে।

২) প্রেরক ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন সরবরাহকৃত ১০ ডিজিটের একটি কোড প্রাপককে জানিয়ে দেবেন নিজের নাম ও প্রেরিত অর্থের পরিমাণসহ

৩) প্রাপক নিকটস্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে নিজের পরিচয় প্রমাণ সাপেক্ষে কোড নম্বর, টাকার পরিমাণ প্রেরকের নাম জানিয়ে টাকাটি সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।

অবিলম্বে একটি ইমেল ঠিকানাসহ একজন প্রাপকের নাম দরকার।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বাম প্যানেলে ঝুলিয়ে দিলাম। আর কিছু করতে পারলে জানাবেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দিগন্ত এর ছবি

আমার ধারণা ভারতে চিকিতসা হলে ভারতীয় মুদ্রায় নিশ্চয় টাকা পাঠানো যাবে। দুবার কনভারসন না করে যারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাচ্ছেন, তারা পারলে সোজা ভারতীয় কোনো অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। আমি আমার সাধ্যমত টাকা পাঠাব। কিন্তু একটা ভারতীয় অ্যাকাউন্ট দরকার তার জন্য। দয়া করে আমাকে এখানের কোনো অ্যাকাউন্টের নাম্বার দিন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সবজান্তা এর ছবি

খুবই দুঃখিত। ব্যাঙ্কের সুইফট কোডটি জানতে গিয়ে, একটু দেরী হয়ে গেলো ( বুঝতেই পারছেন, প্রশাসনিক জটিলতা )।

এখন এখানে সম্পূর্ন তথ্য দেওয়া আছে। কেউ টাকা পাঠাতে চাইলে এখানে পাঠাতে পারেন।

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার এর ক্ষেত্রে কি শুধুই একজন ব্যক্তি হলেই হবে ? তার কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা কি জরুরী ? যদি জরুরী না হয়, আমাকে জানাবেন, আমি একজন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তির( আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যিনি এই টাকা তোলার ব্যপারে মূল সমন্বয়কারীদের একজন ) দিয়ে দিবো।

আপনাদের আশু সাহায্য কামনা করছি।

------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের জন্যে ঠিকানাসহ একজন ব্যক্তির নামই যথেষ্ট, কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই। শুধু টাকা সংগ্রহ করার সময় সেই ব্যক্তিকে পরিচয়টি প্রমাণ করতে হবে।

টাকা সংগ্রহ করার সময় প্রাপককে প্রেরকের নাম, কোড নম্বর ও প্রেরিত ডলারের পরিমাণ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নকে সরবরাহ করতে হবে। এই তথ্যগুলি যাতে অবিলম্বে প্রাপককে জানানো যায় সেজন্যে একটি ইমেল ঠিকানা জরুরি।

আপনি অনুগ্রহ করে প্রাপকের নাম ও ইমেল ঠিকানাটি এখানেই দিয়ে দিন যাতে আগ্রহী যে কেউ তা ব্যবহার করতে পারেন।

প্রেরকদের জন্যে করণীয়:

ঢাকায় নির্ধারিত প্রাপকের নামে টাকা পাঠিয়ে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের দেওয়া ১০ ডিজিটের কোড নম্বর, প্রেরিত ডলারের পরিমাণ ইমেলে জানিয়ে দিন।

ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে খরচ বেশি, সময়ও লাগে ৩-৪ দিন, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে আমার জানামতে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর খরচ খুবই কম। ৫০০ ডলার পাঠাতে লাগে ১০ ডলার। পৌঁছে যাবে ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সবজান্তা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ জুবায়ের ভাই। আমি কালকেই স্যারের সাথে কথা বলে, তথ্যগুলি যোগ করে দেবো।
-----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

একজন এর ছবি

আমরা শাবি র আরেক ছাত্রের জন্য কিছু টাকা যোগাড় করেছি । কত টাকা সট আছে জানিয়ে পোস্ট দেন ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।