যখন আমি শিশির ভাদুড়ী

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: সোম, ১৫/১০/২০০৭ - ১২:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রত্যেকটা সকাল শুরু হয় একরাশ বিরক্তি আর ক্লান্তি নিয়ে।যখন আমি ভাবি, সারা দিন কি পরিমান অভিনয় আমাকে করতে হবে,তখন ক্লান্তিতে আমার দু চোখ বুঁজে আসতে চায়।কিন্তু পাশেই শুয়ে থাকা শয্যাসঙ্গিনী মুঠোফোনের অবিরত "শ্যামের বাঁশির" শব্দে ঘুম আর হয়ে উঠে না।অগত্যা উঠে পড়া,দাঁতে ব্রাশ লাগিয়ে যুদ্ধ করা,প্রকৃতির উদার আহবানে সাড়া দেওয়া। ব্যাস, দিনের এতোটুকুই আমার স্বাভাবিক ভাবে অভিনয় ছাড়া চলে।

এরপর ই শুরু হয় অভিনয়. সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মা যখন বলে, "বাবা, ভাল থাকিস, মন দিয়ে ক্লাস করিস" তখন "রাম-অতি সুবোধ বালকের" চরিত্রে আমি ফাটাফাটি অভিনয় করি, একদম অস্কার পাওয়ার মত। হায়, আমার মা যদি দেখত তার সুবোধ ছেলে কয়টা ক্লাস করে, আর তার মধ্যে কয়টায় মনযোগ দেয় !

এরপর সারা দিন কাটে বন্ধুদের সাথে, অন্তহীন আনন্দে। ঐখানেও মনের আনন্দে অভিনয় করে যাই। তবে এবার চরিত্র ভিন্ন। এইবার আমি মহান বিপ্লবী চে এর চেয়ে কোন অংশে কম না। দেশ এর গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আমার কন্ঠ সবসময়ই সচল।ধর্মের অসারতা থেকে শুরু করে নারী স্বাধীনতা , ঘুষ খাওয়া থেকে জলপাই শাসনের বিরোধীতা, সব কিছুতেই আমার একটা পজিটিভ বক্তব্য থাকে। কিন্তু এর কত টুকু আমি অন্তঃকরণ থেকে মানি ? নিজের ক্ষেত্রে কতটুকু মানতে পারবো? সন্দেহ মনে থেকেই যায়।

আমি এখনো কেন কোন বালিকাকে আমার হৃদি-মন সমপর্ণ করিনি,সেটা নিয়ে লেজ কাটা বন্ধুদের চিন্তার অন্ত নেই। তারা ব্যগ্রভাবে জানতে চায় আমি লেজ কাটছি কবে? উত্তরে আমি তাদের মুক্ত জীবনের উপকারিতা বোঝাই, আর সদম্ভে বলি আমি কাউকে ভালবাসিনা। যখন বলি তখন কি আমার চিত্ত এত টুকু কাঁপে না , আমি কি এত টুকু বিচলিত হই না ? উত্তর জানা নেই।

অভিনয়ে ক্লান্ত আমি যখন বাসায় ফিরি তখন অনেক রাত। বিছানায় শুয়ে ভাবি আর কত এই হিপোক্রাসি ! তখনই মনে হয়, চলছে চলুক না ! শুধু আমি কেন, আমার চারপাশে সবাইতো নিরন্তর অভিনয়ে ব্যাস্ত। কি লাভ সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হয়ে !

পরদিন আরেকটা সার্থক নাটক মঞ্চায়নের সপ্নে আমি গভীর ঘুমে ঢলে পড়ি।


মন্তব্য

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

কি লাভ সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হয়ে !

কলিতে আর যুধিষ্ঠির দিয়ে কি হবে। চালায়ে যান, সবাইতো চালাচ্ছে। এখন যে যত ভাল অভিনেতা সে তত সফল।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হযরত সেক্সপিয়র এ বিষয়ে একটি চাল্লু হাদিস দিয়েছিলেন ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দ্রোহী এর ছবি

ভালাইতো আছেন। আপনি যে জীবনের অভিনয় করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছেন আমি সেই একই জীবনটা ফিরে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে আছি।


কি মাঝি? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।