গ্রাফগল্প : তামাবিল

ফকির ইলিয়াস এর ছবি
লিখেছেন ফকির ইলিয়াস (তারিখ: রবি, ২০/০৪/২০০৮ - ২:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তামাবিল
======
এই বিলে সবগুলো তামার বাসন রাগ করে ফেলে দিয়েছিলেন
এক রানী।
রাজার সাথে তার আড়ি ছিল , ঘোড়দৌড় করতে হবে
এই বিলের পাড়ে। এর আগে ক্ষমতাচ্যুত হন রাজা।তাই রাজা তা
করতে পারেন নি।দেশন্তরি হন রাজা ও রানী। যাবার আগে রাগ করে সবকিছু ফেলে দিয়েছিলেন ওই বিলে।
তার ভক্ত প্রজারা ই রানীর সম্মানে ঐ বিলের নমকরণ করেন তামাবিল !
গল্পটি নমিতার কাছ থেকে শুনেছিল রাজেশ।আজ বহুবছর পরও
তার তা মনে পড়ছে !
মানুষ না না কারণে দেশ ছেড়ে যায়। দেশ ছেড়ে যাবার মুহুর্তটি
কেমন হয় ? যেদিন রাজেশ দেশ ছেড়ে এসেছিলো সেই দিনটি
কেমন ছিল? তা পুনর্বার ভাবার চেষ্টা করে সে।
এন ট্রেনটি তখন কুইন্স বরো প্লাজা অতিক্রম করেছে।আর কিছুক্ষণ পরই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে। 'নিউইয়র্ক টাইমস'এর
বুক থেকে নজর তুলে তাকায় রাজেশ।
তার সামনেই বসা একজোড়া তরুণ-তরুণী। দুজনই শ্বেতাংগ।
সাথে একটি দু/তিন মাসের বাচ্চা।কৃষ্ণাংগ মেয়ে শিশুটিকে হালকা গোলাপি বসনে খুব চমৎকার লাগছে।
আজ ১৯ এপ্রিল। স্প্রিং এর মধ্যভাগ। ৭৯ ডিগ্রী ফারেনহাইট
আবহাওয়া। অনেকেই যাচ্ছে সমুদ্র সৈকতে। এই তরুণ-তরুনী ও সে দিকে যাচ্ছে , মনে হলো রাজেশের।
শিশুটির দিকে আবারও তাকায় সে। এই দুজনের সন্তান হবার কথা নয় । কিন্তু হতেও তো পারে। সায়েন্স অনেক কিছুই সম্ভব করেছে।
২২ থেকে ৩২ বছর বয়সী কোনো রমণী তার ডিম্বাণু অন্য কোনো দম্পতিকে দান করলে দশ/পনেরো হাজার ডলার পর্যন্ত
কমপেনশেসন পাওয়া যায় , সে তথ্যটিও নমিতা প্রথমে বলেছিলো রাজেশ কে। দুনিয়া এভাবেই ছোট হয়ে আসছে !


ট্রেনটি ইতিমধ্যে কনি আইল্যান্ড সমুদ্র সৈকতে এসে পড়েছে। নেমে পড়ে রাজেশ ও। ঘড়ির দিকে তাকায়।
হঠাৎ তার সেলুলার ফোনটা বেজে উঠে।
বাংলাদেশ থেকে ফোন করেছে কবি রাতিফ রামাদান।
একটা দু:সংবাদ। তরুণ কবি সুমন প্রবাহন সুইসাইড করেছে।
বিষাদে ছেয়ে যায় রাজেশের মন।এটা কি করে হতে পারে ?
তরুণ সুমন কেন এ পথ বেছে নিলো ?
তার চেয়ে বরং সে কেন দেশান্তর বেছে নিলো না ?
আটলান্টিকের পাড়ে বসে সবটুকু বালি ছিন্নবিছিন্ন করে ফেলতে ইচ্ছে করে রাজেশের।
নিজের হাতের তামার আংটি টির দিকে আবারও তাকায়।
আঙুল থেকে খুলে ফেলে। তারপর ছুড়ে মারে আটলান্টিক
মহাসাগরের দিকে।
মহাসাগরের এই বাঁকটাকে রাজেশের কাছে তখন খন্ড তামাবিলের মতোই মনে হয়।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তামাবিলের পেছনের গল্প তাহলে এই?
সুমন প্রবাহনকে চিনতাম না । সুমন তুরহান নামে এক ছোটভাই কবি আছে । এই নাম দেখে চমকে উঠেছিলাম ।

মানুষের মৃত্যুসংবাদ মাত্রই বেদনাবাহী ,সে মানুষ চেনা কিংবা অচেনা,কবি কিংবা অকবি হোক ।

xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

তামাবিলের শানে নুযুল এটাই কি না জানি না।
তবে সুমন প্রবাহনের মৃত্যু সংবাদ টি সত্য !
মর্মান্তিক !!!

অনিন্দিতা এর ছবি

আজকাল প্রায়ই একভাবনা আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কত মানুষ উচ্চ শিক্ষা বা জীবিকার তাগিদে দেশান্তরী হচ্ছে। কিন্তু এছাড়াও সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাওযার সংখ্যা ও কম নয়।
নিজের কাছ থেকে পালানোর জন্য ও কি মানুষ দেশান্তরী হয়?আর কোন উপায় না থাকলে আত্মহনন?
লেখা টা পড়ে আবার ও এ প্রশ্ন উকিঁ দিচ্ছে।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

ভার সইতে না পারলে পালানো যায় ,তবে আত্মহনন মেনে নেয়া
যায় না।

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

গল্পটি কি সমাপ্ত? ------- বর্ননা খুব ভাল ---- কিন্তু গল্পের কেন্দ্র যাকে নিয়ে তাকে নিতান্তই অপরিচিত মনে হয়েছে গল্পে------ দুঃখিত -- আমি আবেগের চাইতে গল্প নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি বেশী--------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

নামই তো গ্রাফগল্প ! খন্ডচিত্র বলা যায় ।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

এটা কি গল্প না সত্যি ?
কে সেই সাহসী সুমন প্রবাহন ?

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

তরুন কবি সুমন প্রবাহন ১৯ এপ্রিল আত্মহত্যা করেছে।
তার লেখা পড়েছি। দেখিনি কখনো ।

অনিন্দিতা এর ছবি

ভার সইতে না পারলে পালানো যায় ,তবে আত্মহনন মেনে নেয়া যায় না।

আপনার কথা ঠিক । তবে আত্মহনন তো চূড়ান্ত পলায়ন। এই পালানোটা কখনোই মানতে ইচ্ছে করে না।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

একমত আপনার সাথে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।