ফরগিভ আস, মি জর্জ হ্যারিসন

ফকির ইলিয়াস এর ছবি
লিখেছেন ফকির ইলিয়াস (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৩/২০০৯ - ৯:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফরগিভ আস, মি. জর্জ হ্যারিসন
ফকির ইলিয়াস
=========================================
স্বাধীন স্বদেশ অর্জনে আমাদের অনন্ত গৌরব, মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অজস্র ঘটনাবলী।
BANGLADESH, BANGLADESH
WHERE SO MANY PEOPLE ARE DYING FAST AND IT SURE LOOKS LIKE A MESS
I’VE NEVER SEEN SUCH DISTRESS
NOW WON’T YOU LEND YOUR HAND AND UNDERSTAND
RELIVE THE PEOPLE OF BANGLADESH.

১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের প্রখ্যাত ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর উপরোক্ত গানের বাণীগুলো জাগিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। আর এই গানের অমর শিল্পী ছিলেন জর্জ হ্যারিসন। যাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সেদিন দাঁড়াতে হয়েছিল অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে।
জর্জ হ্যারিসন তার বিবেকী শিল্পী সত্তাকে মানবতার কল্যাণে, মুক্তিসংগ্রামের স্বপক্ষে নিবেদিত করেছিলেন সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে।
স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিপক্ষে ছিল, সেখানে বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিত রবি শংকরের পৃষ্ঠপোষকতায় জর্জ হ্যারিসন এগিয়ে এসেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সাহায্যার্থে। শুধু তাই নয়, মার্কিনী জনমতও সেদিন এই কনসার্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছিল সে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা।
একটি দেশকে না দেখেই সে দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার যে হাত প্রশস্ত করেছিলেন জর্জ হ্যারিসন- তা একটি বিরল ঘটনা।
সেই গণশিল্পী জর্জ হ্যারিসন ২৯ নভেম্বর ২০০১ চলে যান পরপারে। তিনি মিশে গেছেন পরম সত্তার সঙ্গে। তার মৃত্যু সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বারবার এসেছিল ‘বাংলাদেশ’-এর কথা। টিভির সংবাদ পাঠকরা সেই ঐতিহাসিক ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর কথা উল্লেখ করেছেন। আবারো মার্কিনী টিভির পর্দায় দেখানো হয়েছে কনসার্টের অংশ বিশেষ।
মর্মান্তিক কথা হচ্ছে, যে জর্জ হ্যারিসন একটি দেশ, একটি জাতির অভ্যুদ্বয়ের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ছিলেন, সেই জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ সফরের সৌভাগ্যটুকু হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকার ’৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বিজয়ের রজতজয়ন্তী যাপন করেছিল। এর ঠিক আগে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ নিউইয়র্ক সফরে এসেছিলেন। এস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড ম্যানরে তার সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন বৃহত্তর সিলেটবাসীরা। আমি সেখানে সামাদ আজাদের কাছে প্রস্তাব করেছিলাম রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে জর্জ হ্যারিসন এবং প-িত রবি শংকরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হোক। সামাদ আজাদ আমার প্রস্তাবকে ‘চমৎকার’ বর্ণনা করে কথা দিয়েছিলেন, উদ্যোগ নেবেন।
একই প্রস্তাব আমি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও করেছিলাম নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের একটি অনুষ্ঠানে। তিনি তাৎক্ষণিক তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে নোট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। রজতজয়ন্তী পালন অনুষ্ঠানে বরেণ্য কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
আমরা জানি এবং দেখেছি, বাংলাদেশে অনেক রাজাকার, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, মৌলবাদী দালালরা স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক পেয়েছে। কিন্তু আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও জর্জ হ্যারিসন কিংবা রবি শংকরের মতো ব্যক্তিত্ব, যারা বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন- তাদের সম্মানিত করতে না পারার দুঃখ এবং ক্ষোভ ঢাকবো কিভাবে?
জর্জ হ্যারিসনকে রাষ্ট্রীয় খরচে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে কত খরচ হতো? বড়জোর দশ হাজার ডলার। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি কেন এই বদান্যতাটুকু দেখাতে পারলো না? বাঙালিরা কি শুধু পেতে জানে-দিতে জানে না?
-------------------------------------------------------------------
দৈনিক ডেসটিনি । ঢাকা । ২৬ মার্চ ২০০৯ বৃহস্পতিবার


মন্তব্য

সুজন চৌধুরী এর ছবি

ফকির দা' আপনার লেখা পড়ে পুরাণো কথা মনে পড়লো.......
জর্জ সাহেব কে নিয়ে বেম্পি আমলের শেষের দিকে ১বার কিছু লোক মুভ করছিলো.......... ঘটনাচক্রে আমিও তাদের ১জন ছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হলোনা মনে হলে খুবি রাগ লাগে, দেখি পরে ১সময় পোস্টাবোনে।


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা [অতিথি] এর ছবি

যতটুকু জানি, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ রবি শংকরের উদ্দ্যোগে আয়োজিত হয় আর জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ কে তুলে ধরেন । এনাদের অন্তত বাংলাদেশের সম্মানজনক নাগরিকত্ব দেয়া উচিত ছিলো, জর্জ হ্যারিসনকে মরণোত্তর নাগরিকত্ব দেয়া যেতে পারে ।

তবে ইতিহাসের স্বার্থে মনে রাখা উচিত, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’এ যে টাকা সংগ্রহ হয়েছিলো তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি, জর্জ হ্যারিসন এর জন্য দায়ী বলে শুনেছি ।

তবুও রবি শংকর ও জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশের সম্মানজনক নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত বলে মনে করি ।

~
(স্বপ্নের ফেরিওয়ালা - )

রানা মেহের এর ছবি

তবে ইতিহাসের স্বার্থে মনে রাখা উচিত, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’এ যে টাকা সংগ্রহ হয়েছিলো তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি, জর্জ হ্যারিসন এর জন্য দায়ী বলে শুনেছি ।

একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন কি?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

তবে ইতিহাসের স্বার্থে মনে রাখা উচিত, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’এ যে টাকা সংগ্রহ হয়েছিলো তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি, জর্জ হ্যারিসন এর জন্য দায়ী বলে শুনেছি

কোথায়? কার কাছে?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নদী এর ছবি

pbs television-এ পুরো অনুষ্ঠানই দেখেছি ২০০৬ সালে। অনুষ্ঠানটা দেখার সময় ভাবছিলাম বিটিভি তো কনসার্টটা দেখাতে পারে। স্যালুট টু অল দোজ আর্টিস্টস।

দেরীতে হলেও, সরকার তো এখনও মরণোত্ত সম্মান দিতে পারে। এটা দায়বদ্ধতার ব্যাপার।

নদী

হিমু এর ছবি

ডুয়াল পোস্টিঙের কারণে পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা [অতিথি] এর ছবি

বছর ২/৩ আগে প্রথম আলোতে এই ব্যাপারে একটা লেখা পড়েছিলাম, যার ভিত্তিতে আমার আগের মন্তব্যটি করা । wiki তে জর্জ হ্যারিসনের পাতায় এই সংক্রান্ত তথ্য হলো “Tax troubles and questionable expenses tied up many of the concert's proceeds.” এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন ১৯৭২ সালে একটা রিপোর্ট ছাপায়, পরে এর প্রতিবাদে মামলা হয় ।

‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ আলী আকবর খান, আল্লারাখ্খা, এরিক ক্ল্যাপটন, বব ডিলান এর মত দিকপালরা একসাথে হন, মুলতঃ জর্জ হ্যারিসনের কারনেই । সর্বকালের অন্যতম সেরা এই কনসার্টটি প্রথম বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে কে তুলে ধরে ।

~
(স্বপ্নের ফেরিওয়ালা – )

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

বুঝলাম। কিন্তু

জর্জ হ্যারিসন এর জন্য দায়ী বলে শুনেছি

এই কথার ভিত্তি বা তথ্যসূত্র পাওয়া গেল না। এতো বড়ো একটা অভিযোগ "শুনেছি" বলে প্রচার করাটা কতোটা নৈতিক, ভেবে দেখতে অনুরোধ করি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।