জি আর এক্স-২৫ (পর্ব ১)

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: শনি, ১৮/০৮/২০০৭ - ১০:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার কাছে কোনো আইডেন্টিটি মডিউল না থাকায় মূল যোগাযোগ কেন্দ্রের উপপ্রধান খাটোমত লোকটি জিগগাসা করে,
-নাম?
-জিউল। মডেলও বলবো?
-বল।
-জিআরএক্স-২৫
-বল কি!
-হুম, ঠিকই বলছি।
লোকটা আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকায়। সে চোখে অবিশ্বাস।
অবিশ্বাস কি তা আমি বুঝতে পারি। আমার আগে কোনো মডেলের রোবোটেরই সেই ক্ষমতা ছিল না। তারা শুধু জানতো, কোনো তথ্য হয় সত্য অথবা সেটি মিথ্যা। শুধু বাইনারি ডিসিশন। হয় এক, না হয় শুন্য।
আমার বাইনারি তথ্যকে ভেঙ্গে ফেলার ক্ষমতা আছে। তাই আমি বুঝি অবিশ্বাস করা হচ্ছে সত্য এবং মিথ্যা এই দুইয়ের মাঝামাঝি এক অবস্থায় নিজেকে উদ্দীপ্ত করা।
লোকটি হয়তো আমার মডেলের নাম শুনেছে এবং কিছুটা হয়তো আইডিয়া আছে জিআরএক্স-২৫ মডেলের ক্ষমতা সম্পর্কে। তাই চোখে অবিশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
জিআরএক্স-২৫ মডেলের কোনো রোবোটকে আজ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ চোখে দেখেনি। অথচ এদের হাতেই এখন পৃথিবীর সব দায়িত্ব বর্তে দেয়া আছে বলা যায়। সেন্ট্রাল কনট্রোল হাবে যে কয়টা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র আছে তার সবগুলোর প্রধান হচ্ছে এক একটা জিআরএক্স-২৫ রোবোট, যাদেরকে আইন করে কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যা কেবল সমস্ত পৃথিবীতে পাঁচতারা যুক্ত মানুষেরই আছে।

পৃথিবীর গুটি কয় জিআরএক্স-২৫ রোবোটদের আমি একজন।

আমি লোকটাকে বললাম, আর কি কি বলতে হবে?
লোকটি আমার কথায় সম্ভিত্ ফিরে পায়। তাড়াতাড়ি বলে উঠে,
-কি যে বলেন স্যার! আগে বলবেন না স্যার যে আপনি আসছেন! কাউকে পাঠালেই হতো।
লোকটির তুমি থেকে আপনিতে উঠে আসায় আমি মজা পাই। আগের কোনো মডেলের রোবোটের মধ্যে মজা জিনিসটাও ছিল না। এটি হচ্ছে হঠাত করে মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কে সূক্ষ একধরনের স্পার্কিং যাতে সাম্প্রতিক নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু সার্কিট পুনরায় কর্মক্ষম হয়ে উঠে।
লোকটি নিশ্চই কোনো রোবোটকে স্যার ডেকে অভ্যস্ত নয়।
-কেন? আমি আসাতে কোনো সমস্যা?
আমার কথা শুনে লোকটি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বলে, 'না, না, কী যে বলেন স্যার, তা হবে কেন! তা হবে কেন! বলছিলাম যে'- এই পর্যায়ে লোকটি থতমত খায়। তারপর বলে উঠে, 'আসলে আমি যতদূর জানি আপনাদের কেউ খুব একটা বাইরে বের টের হন না। তাই বলছিলাম'
আমি একটু কেঁশে বলি,'একটু দরকারে এসেছিলাম। আমার গত সাতশো বছরের হিউম্যান পপুলেশনের ডাটা দরকার। আর জানেনিতো...' এই পর্যন্ত বলে আমি একটা ইঙ্গিতবহ চোখটিপ মারি।
হিউম্যান পপুলেশনের ডাটা কাউকে জানানোর নিয়ম নেই।
এই পর্যায়ে লোকটিকে বিভ্রান্ত দেখায়।
আমি তার কাধেঁ আস্তে হাত রাখি। হাতটা কাঁধের উপর রেখেই বলি,'রিল্যাক্স।'
এরপর আমার অনামিকা লোকটার কাধেঁ একটু জোড়ে চেপে ধরতেই লোকটি কাটা কলাগাছের মত আলগোছে তার চেয়ারে বসে পড়ে এবং জ্ঞান হারায়।
আমার হাতের তালুর চামড়ার নিচে একটা হাইভোল্টেজ ইলেকট্রোড আছে, তার শকেই লোকটির এই অবস্থা।

আমি আমার কাজ শুরু করি।
যাকে এইমাত্র অজ্ঞান করলাম তার নিজস্ব আইডি ব্যবহার করে মূল যোগাযোগ কেন্দ্রের তথ্যাগারের একটা বিশেষভাবে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে হবে আমাকে। বেচারাকে অজ্ঞান করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না। লোকটার জ্ঞান থাকলে আমাকে এমনি এমনি তথ্যাগারে ঢুকতে দিতও না।


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

প্রিয় পাঠক,
আমার একটা বড় দুর্বলতা হলো কোনো লেখাই পরিকল্পনা নিয়ে আর গুছিয়ে লিখতে পারি না। তার চেয়েও বড় দুর্বলতা যেটা তা হলো, আমি কখনই একটা বড় লেখা একেবারে লিখতে পারি না। সময়ের অভাব, তার চেয়েও বড় অভাব মনোযোগের। তাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে লেখা নামাতে হয়। পাঠকের ধৈর্য নিয়ে খেলা ঠিক না, জানি। কিন্তু আমারও যে ধৈর্য বড় কম! অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম সাইন্স ফিকশন জাতীয় কিছু ছাইপাশ লিখবো।
সেই চেষ্ঠা থেকেই 'জিআরএক্স-২৫'।অনিয়মিত বিরতিতে পর্ব নামানোর দোষটা পাঠক নিজগুনে ক্ষমা করবেন, এই আশাই করছি।

নজমুল আলবাব এর ছবি

জমবেরে জমবে... জলদি নামান, বিতঙ কইরেননা কইলাম হাসি

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সাইন্স ফিকশনে কেনো জানি আগ্রহ পাইনা ।
তবু আগরহ থাকলো । সব পর্ব নামুক । একসাথে পড়ে ফেলবো

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক হাসান এর ছবি

তাহলে বোধহয় একেবারে নামানোই ভালো।
তাই হোক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।