পুনশ্চ অভিজিত: কার্ল পপারের মার্কস দর্শন কী মতে সঠিক?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: রবি, ০৭/০৯/২০০৮ - ১১:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার দৃষ্টিতে অভিজিত বাবু বারবার যে ফোক্করে পড়ে আলোচনার অথনেটিসিটি খর্ব করছেন, সেই ফোক্করের অপর নাম সামান্যের (স্পেসিফিক) মধ্যে অসামান্যকে (জেনারেল) দেখবার তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা! মার্কসবাদী দর্শনের একটি দুটি প্রত্যয় বা প্রতিমা দেখে তিনি সাধারণীকরণ করে ফেলছেন, আর তাতে উধোর পিণ্ডি শুধু বুধোর ঘাড়েই পড়ছে না, বেচারা মার্কসের চরিত্রনাশও ঘটছে। তাঁর যুক্তি পদ্ধতিটা অনেকটা এরকম:

১. মার্কসবাদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক উপাদান থাকার দাবিকে তিনি নিজেই মার্কসবাদ বিজ্ঞান এমন বলে আবার সেটাকেই খণ্ডন করতে লেগেছেন। এবং তা করতে গিয়ে ভিয়েনা সার্কেলের খ্যাতনামা বিজ্ঞানের দার্শনিক কার্ল পপারের বিতর্কিত পদ্ধতিরও আশ্রয় নিয়েছেন। ২. শ্রেণীকে নিজেই নিছক অর্থনৈতিক ক্যাটাগরি ধরে নিয়ে সেই ক্যাটাগরির সীমাবদ্ধতা আবিষ্কারে নেমেছেন, যদিও মার্কসের বিচারে শ্রেণী একটি রাজনৈতিক ও দার্শনিক ক্যাটাগরি ৩. মার্কসবাদের ঐতিহাসিক দান্দ্বিক বস্তুবাদী ব্যাখ্যাকে মোটা দাগে ঐতিহাসিক নির্ধারণবাদ (হিস্টরিসিজম) গণ্য করে তার বিরুদ্ধে তরোয়াল তুলেছেন। ৩. পুঁজিবাদের বাস্তব ইতিহাস ও গতিপ্রকৃতির মধ্যে না গিয়ে একে চিরন্তন, অপরিবর্তনীয় এবং সর্বরোগহর স্ট্যাটাস দিয়ে তার তুলনায় কমিউনিজমকে ঊনতর দেখাবার চেষ্টা করেছেন। ৪. মার্কসবাদকে চিহ্নিত করায় ‘যা ইচ্ছা তা’ পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়েছেন, মার্কসের অরজিনাল সাইটেশন না করেই। টেক্সুয়াল রেফারেন্সের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে গুলিয়ে দিয়ে বিদ্বেষের ঘোল বানিয়েছেন। আর এসবই করেছেন, কমিউনিজমের ঘোষিত বিরোধী সোলঝিনিৎসিনের মৃত্যুর একমাস পূর্তি উপলে (সেটা সোলঝিনিৎসিনের দোষ, তা বলছি না, তিনি বড় লেখক। এ নিয়ে আমি অন্যত্র বলেছি)। অর্থাত গোড়াতেই তিনি মার্কসবাদের একজন শত্র“র মৃত্যু উদযাপনের বলি করতে চাইছিলেন মার্কসবাদকে। এখানেই তাঁর সত অভিপ্রায় নিয়ে আমার সন্দেহ।

অভিজ্ঞাতাবাদী নমুনা দিয়ে খারিজ করতে গিয়ে একদিকে সকল মহাদেশে দেড়শ বছর যাবত বিভিন্ন বাস্তবতায় সৃষ্টি হওয়া বহমান বিপ্লবী চিন্তাগুচ্ছের ধারাবাহিকতা থেকে মার্কসকে আলাদা করে নিয়ে একদিকে মার্কসের চিন্তাকে স্ট্যাটিক ধরে নিয়েছেন, আবার দার্শনিক পদ্ধতিকে দার্শনিক পদ্ধতি দিয়ে মোকাবেলা না করে তার সঙ্গে নিজের রাজনৈতিক মতের জের টেনে গিয়েছেন।

আমি এখন একটি একটি করে আমার অভিযোগগুলো প্রমাণের চেষ্টা করবো।
মার্কসের চিন্তার মধ্যেকার ‘সায়েন্টিফিক নেচার’ থাকার দাবি করা আর তা নিজেই বিজ্ঞান এই দাবির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাতটি অভিজিৎ ধরতে পারেননি। বিশুদ্ধ বিজ্ঞান বলে কিছু কিছু বিষয়কে যেভাবে অন্য জ্ঞানশাখার তুলনায় ‘এলিট’ করা হয়, জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে তা বৈধ হয় না। এটাও বিজ্ঞানকে ধর্ম বানাবার সামিল। মানবীয় প্রগতি সকল শাস্ত্রের মিলিত ফসল। অতএব বিজ্ঞানকে অন্য সব কিছুর ওপরে মাপকাঠির মর্যদা বিজ্ঞান ও মানবপ্রগতি সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারণারই প্রতিফলন মাত্র। যে কোনো শাস্ত্রের মধ্যে কিছু কিছু ‘বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য’ থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞ ছাড়াও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মধ্যেও সায়েন্টিফিক নেচারের নিদর্শন থাকতে পারে। সুতরাং মার্কসের চিন্তার মধ্যে সায়েন্টিফিক নেচার রয়েছে বলে এঙ্গেলস কোনো ভুল করেননি। আর এ বলা থেকেই মার্কসবাদ বিজ্ঞান বা অবিজ্ঞান কোনোটাই প্রমাণিত হয় না। তবে কি এঙ্গেলস ‘ইউটোপিয়ান ভার্সাস সায়েন্টিফিক কমিউিনিজম’ নামের বই লেখেননি? লিখেছেন। সেসময়ের কাল্পনিক সমাজতন্ত্র থেকে নিজেদের মতবাদকে আলাদা করবার জন্য এঙ্গেলসকে যুক্তিতর্ক করার খাতিরে ওটা বলতে হয়েছিল। বলাটা সেসময়ের বিচারে খুবই সঙ্গত। ওর থেকে আমার চিন্তা বিজ্ঞানমনস্ক, এ বলা থেকেই আমি বা আমার চিন্তা নিজেই সায়েন্স হয়ে যায় না, কিন্তু আমার প্রবণতাটা বোঝায়Ñ এটা বোঝা উচিত।

মার্কসবাদ নিজেকে বা জগতের কোনো কিছুকেই স্থির বিষয় হিসেবে দেখে নাই। নিজের নিরন্তর নবায়ন এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট বিশ্লেষণই তার দাবি। আর দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি অনুসরণের কারণে এখানে চিন্তাগত জড়তা আসবার কোনো সুযোগ থাকে না।

এবার আসি কার্ল পপার এবং তাঁর দাবি মার্কসবাদের বেলায় কতটা প্রযোজ্য, সে বিষয়ে। প্রথমত, পদার্থবিজ্ঞানে বা বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের কোনো পদ্ধতিকে মানবিক বিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞানে হুবহু বসাতে যাওয়া কেবল কপটতাই নয়, বিভ্রান্তিকর। এরকম চিন্তা থেকেই কিন্তু সামাজিক ডারউইনবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। রাসায়নিক গবেষণা বা গাণিতিক মডেল সবেেত্র মানবীয় বাস্তবতা ও তার চেতনার গড়নকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণই বৈজ্ঞানিক মানসিকতার লণ। এই সত্য অস্বীকার করা থেকেই অভিজিত বাবুর যাবতীয় ভুল বোঝার উৎপত্তি। এটা হলো পয়লা মামলা।

বিজ্ঞানের দার্শনিক কার্ল পপারের বরাতে মার্কসবাদকে ভুল প্রমাণের উৎসাহ এখান থেকেই তিনি পেয়েছেন। কার্ল পপারের অবদান বিজ্ঞানের যথাযথ মেথড কী তার পর্যালোচনার বেলায়। পপার দাবি করেছেন, বৈজ্ঞানিক থিওরির বেলায় ইনডাক্টিভ পদ্ধতি শ্রেয় নয়। কাক কালো এটা তাঁর কাছে সত্যবচন নয়, যে সকল কাক দেখা যায়, সেগুলো কালো এই-ই তাঁর পদ্ধতি। যদি দেখা যায় যে, একটি কাক সাদা, তাহলে আগের বলা সত্য বদলে যাবে। সংক্ষেপে এটাই তাঁর ফলসিফায়েবিলিটির তত্ত্ব। কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাসে দেখা যাবে, সকল আবিষ্কারই এই পদ্ধতিতে হয় নি। উল্টোভাবেও অর্থাৎ কাক কালো ধরে নিয়েও যাত্রা হয়েছে। অনেক আবিষ্কারই ঘটেছে একেবারে উল্টো জিনিষ ধরে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। আবার নিউটন যেভাবে গতিবিদ্যা বুঝেছেন, আইনস্টাইন এসে সেটাকে ভুল প্রমাণ করলেন। তার মানে কি নিউটন বাতিল হলেন? না, তা হলেন না, পার্থিব মাত্রায় তিনি তখনও ঠিকই থাকলেন, কিন্তু মহাবৈশ্বিকমাত্রায় তাঁর গতিবিদ্যা ও অভিকর্ষ তত্ত্ব বাতিল হয়ে গেল নিউটনের আপেকিতার তত্ত্বের কাছে। এরপর কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এসে আরেকটা প্যারাডাইম শিফট ঘটালো। এই তিনটি রদবদলই কি পরস্পরের ত্রে তৈরি করেনি? আবার একইসঙ্গে এদের মধ্যে দ্বান্দ্বিক বিরোধও পাওয়া যায় না কি? এদের জন্য অভিন্ন মেথড কীভাবে সম্ভব?

এরপর তিনি এসেছেন অবজেকটিভিটি তত্ত্বে। কিন্তু আসলেই কি জ্ঞান ও পর্যবেণ মানবীয় চেতনা ও ইন্দ্রিয়ের প্রভাব নিরপে হতে পারে? আমাদের জাগতিক অভিজ্ঞতা, সামাজিক পরিপার্শ্ব আমাদের বেড়ে ওঠার কোনো প্রভাবই যদি বিজ্ঞানের আবিষ্কারে না থাকে, তাহলে আজ যা আবিষ্কৃত হচ্ছে, তা কেন ৫০০ বছর আগে হলো না। কেন ঠিক মিসরেই ইউকিডের আবির্ভাব হলো আর পরমাণু তত্ত্ব ভারতবর্ষে জš§াল। এর অন্যথা হলো না কেন? এ বিষয়ে দারুণ কাজ করেছেন পল ফেয়েরাবেন্দ (চধঁষ ঋবুবৎধনবহফ)। তিনি কোনো অভিন্ন সার্বজনীন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিপক্ষে অবজেকটিভিটি নয় সাবজেক্টিভিটি, মেথড নয় অসম বিকাগের মাধ্যমে বিজ্ঞান এগিয়েছে। যেমন গ্যালিলিওর সময় অপটিক্যাল থিওরির সঙ্গে টেলিস্কোপে দেখা জিনিষের তেমন সম্পর্ক ছিল না। ওটাকে বিজ্ঞানীদের অ্যাড হক হিসেবে ধরে নিতে হয়, যতই না অপটিক্যাল থিওরি দিয়ে সেটাকে প্রমাণ করা গেছে। আরেকটি উদাহরণ দিই: লাভোয়েসিয়ের এবং প্রিয়েস্টলি দুজনই অক্সিজেনের সন্ধান করেন। কিন্তু প্রিয়েস্টলি পুরাতন প্যারাডাইম অনুসরণ করার কারণে অক্সিজেন দেখে ভেবেছিলেন একধরনের বাতাস। অন্যদিকে ল্যাভোয়েসিয়ের অক্সিজেনকে অক্সিজেন হিসেবেই চেনেন। কারণ তাঁর প্যারাডাইম তুলনায় আধুনিক ছিল। সুতরাং মানবীয় পর্যবেণ একটা ফ্যাক্টর বিশুদ্ধ নৈর্ব্যক্তিকতার বিপরীতে। এটা পপারের বিরুদ্ধে যায়।
আরেকটি চ্যালেঞ্জ দিই: মানুষ মরণশীল। এই বাক্যকে কি পপারের ফলসিফায়াবিলিটি দিয়ে অপ্রমাণ করা সম্ভব? কারণ আমরা তো জানি না, অজস্র বছর পরে অজস্র মানুষের মৃত্যুর পরে কোনো একজন মানুষ তো অমর হতে পারে! তাহলে তো ‘মানুষ মরণশীল’ কথাটা ভুল প্রমাণিত হবে। তারপরও পপারকে আমলে নিয়েও এ ব্যাপারে আমরা তাঁর দ্বারস্থ হব না, আমরা বিশ্বাস করব আমাদের ত্র“টিপূর্ণ পর্যবেণকে।
যাই হোক, থমাস কুন, জেডি বার্নাল প্রমুখ বাঘা বাঘা বিজ্ঞানের দার্শনিক তাঁদের ভুরি ভুরি পৃষ্ঠা ব্যয় করেছেন পপারের প্রপঞ্চকে পাতলা করে দিতে। সেগুলো দেখতে পারেন।
এখন পপারের মার্কসবাদ বিরোধিতার বাতিক নিয়ে কথা বলা যাক।

পপারের সূত্র ধরেই আপনিও বলেছেন যে, কেন পশ্চিমে শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থা আরো খারাপ না হয়ে তারা বরং মধ্যবিত্তের কাছাকাছি চলে আসছে। কথাটা পূর্ণ সত্য নয়। পশ্চিমে ব্ল– কলার শ্রমিকরা তুলনায় ভাল আছে সত্য। মানলাম সেটাই আপনার বিচারে চাওয়ার শেষ দিগন্ত, কিন্তু কীসের বিনিময়ে সেটা হচ্ছে? সেটা হতে পারছে, তৃতীয় দুনিয়াকে নিঃস্বকরণ/সর্বহারাকরণের বিনিময়ে। মার্কস যেমন ম্যানিফেস্টোতে বলেছিলেন, পুঁজি গোটা দুনিয়াকে তার আপন আদলে সাজাবে, গোটা বিশ্বকেই এক আধারে নিয়ে আসবে। সেটা সত্য হয়েছে এবং পশ্চিমের শোষণ চালান হয়ে এসেছে তৃতীয় বিশ্বে। পশ্চিমের মাইগ্রান্ট ওয়ার্কারের সঙ্গে মিলেছে পশ্চিম থেকে চালান হয়ে আসা পুঁজির শোষণের শিকার তৃতীয় বিশ্বের অজস্র মানুষ। এখানকার মুনাফা দিয়েই তারা তাদের দেশের শ্রমিকদের ভাল রাখছে। এঙ্গেলস স্বয়ং এটা খেয়াল করেছিলেন যে, উপনিবেশিক শোষণের বরাতে ব্রিটিশ শ্রমিকের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আজকেও যদি ব্রিটিশ-আমেরিকান-জার্মান ইত্যাদি পুঁজি তৃতীয় বিশ্বে যা করছে তা হিসেবে ধরি, তাহলে শ্রমিক শ্রেণীর আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার শোষণের মাত্রাও বেড়েছে এবং তার বরাতে ‘উন্নত দুনিয়ায়’ আপনারা ভাল থাকছেন। এই দেশ-বৈরি অবস্থানের তারিফ করতে দেখে আপনার মানবদরদ নিয়ে সত্যিই সন্দেহ হলো অভিজিত।
পপার তাঁর ‘এনিমিজ অব ওপেন সোসাইটি’ বইয়ে এঙ্গেলস এর এই পর্যবেণের সত্যতা স্বীকার না করে উল্টো অভিযোগ করেছেন, এঙ্গেলস চান যে শ্রমিক শ্রেণী খারাপ থাকুক, তাহলে বিপ্লব হয়। পপারের মতো আপনিও শ্রমিক শ্রেণীর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার বিপ্লব তত্ত্ব আবিষ্কার করে মার্কসবাদের মূল সূত্রায়নকেই বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন। এটা নিয়ে আপনার পোস্টে বিস্তারিত আমি ও পি মুনশি বলেছি, ফলে আর এগোলাম না।

পপারের মতো আপনিও মার্কসবাদী ঐতিহাসিব বস্তুবাদকে ঐতিহাসিক নির্ধারণবাদ বানিয়ে ছেড়েছেন। (আপনাদের মুক্তমনায় বিপ্লব পালও তা-ই করেছেন, অথচ কিঞ্চিত পরিশ্রম করে মার্কসের ‘এইটিনথ ব্রুমেয়ার’ কিংবা ‘পভার্টি অব ফিলসফি’ ইত্যাদি পড়ে দেখতে পারতেন। পড়ে দেখতে পারতেন এ বিষয়ে ফ্রেডরিক জেমসনের লেখা) এবং দেখেন কীভাবে পপার নিজেকে ভুল প্রমাণ করছেন নিজেই:
Furthermore, although the misery imposed upon the natives through colonization is one of the darkest chapters in the history of civilization, it cannot be asserted that their misery has tended to increase since the days of Marx. The exact opposite is the case; things have greatly improved. And yet, increasing misery would have to be very noticeable there if the auxiliary hypothesis [about the effects of colonialism and imperialism] and the original theory [of Marx] were both correct.” (Popper, p. 189, emphasis added here)
আসলেই কি সাবেক কলোনিগুলোর অবস্থা ভাল হয়েছে? আপনি বলবেন কিছুটা তো ভালই। কিন্তু এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকা থেকে যে পরিমাণ সম্পদ চোষণ করা হয়েছে, যে পরিমাণ মূল্য তারা পুঁজির ভাণ্ডারে জমা করেছে তার তুলনায় তাদের অবস্থান আরো খারাপ হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কল্যাণে, কৃষিতে কর্পোরেটাইজেশন এবং ভর্তুকির শিকার হয়ে বিশ্বের তিনশ কোটি গ্রামীণ মজুর-কৃষকের বাঁচবার পথ বন্ধ করে ফেলা হয়েছে।

আর গণতান্ত্রিক ট্রনজিশন দিয়ে কি ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ও রিফর্মেশন, ভারতবর্ষ-আফ্রিকা দখল, আমেরিকা দখল ও দাসপ্রথা উচ্ছেদ, অস্ট্রেলিয়াকে শ্বেতাঙ্গকরণ ঘটেছিল? দু দুটি বিশ্বযুদ্ধ ছাড়া কেন পুঁজিবাদ চলতে পারছিল না, আজকে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের বিস্তার কেন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন দিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না?
বিশ্বয়ান নিয়ে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে মার্কস বলেছিলেন দেড়শ বছর আগে: National differences and antagonism between peoples are daily more and more vanishing, owing to the development of the bourgeoisie, to freedom of commerce, to the world market, to uniformity in the mode of production and in the conditions of life corresponding thereto.
বিশ্বের বৈষম্য কীভাবে বাড়ছে, মার্কসের কথা অনুযায়ী কীভাবে বিশ্ব পরিণত হচ্ছে দারিদ্র্য আর অমানবিকীকরণের এক দোজখে, তা দেখুন:
১৯৮০’র দশকে ব্রিটেনের তুলনায় ব্রিটেনের জিডিপি পার ক্যাপিটা ছিল ভারতের ৩৫ গুণ বেশি, ফ্রান্সের ছিল সেনেগালের তুলনায় ২৫ গুণ বেশি, হাইতির তুলনায় আমেরিকার ছিল ৪০ গুণ বেশি। আইএমএফের স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট কর্মসূচির পর এই ব্যবধান আরো বেড়েছে। তৃতীয় বিশ্বকে উদোম করে যতভাবে পারা যায় লুণ্ঠনেরই অপর নাম হয়েছে উন্নয়ন। পুঁজিবাদ এসব দেশে আসবার আগের থেকে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। মাইকেল ডেভিস তাঁর প্লানেট অব স্লামস-এ এই চিত্র কিছুটা বর্ণনা করেছেন।
তৃতীয় দুনিয়ায় তারা কারখানা বসিয়েছে। সেখানে কী হয় বর্ণনা করছেন নো লোগো বইয়ের লেখক নাওমি ক্লেইন: Regardless of where the EPZs are located, the workers stories have a certain mesmerizing sameness: the workday is long [up to 14 hours]. The vast majority of the workers are women, always young, always working for contractors or subcontractors from Korea, Taiwan or Hong Kong. The management is military style, the supervisors often abusive, the wages below subsistence and the work low-skill and tedious.
এর মাঝেই খেয়াল করতে হবে আপনাকে, মানুষ কীভাবে জানোয়ারের মতো বাঁচতে হয়, কীভাবে নারীদের বিরাট অংশকে মাংস বেচে চলতে হয়, শিশুদের চার ভাগের এক ভাগকেই মরে যেতে হয় ১০ পেরবার আগেই। এই জঘন্য অকহতব্য বাস্তবতায় মানবতার অলীক ফুল ফোটানোর গল্প শোনানো এক মাহীন নৃশংসতা। আশা করি আপনি তা শোনাতে বসবেন না। রাগ না হোক, আমার ঘুম পেয়ে যাবে যে!
অভিজিত, পপারের থিসিসের বিপ্লব পাল (মুক্তমনার পোস্ট) লিখিত নোটের হুবহু অনুকরণ করতে গিয়ে আপনি খেয়াল করেননি যে ১৯৪৫ সালে যেখানে বিশ্বের শীর্ষ ২০ শতাংশ মানুষের সঙ্গে তলানির ২০ শতাংশ মানুষের আয়বৈষম্য ছিল ৩০: ১, তা এখন দাঁড়িয়েছে ৮২: ১-এ। এবং এটা বাড়ছে কেবল জাতিতে জাতিতে নয়, একই জাতির ভেতরেও। যদি কোম্পানির সিইও-দের সঙ্গে তুলনায় মার্কিন শ্রমিকদেরও বেতন বাড়তো তাহলে তাদের বর্তমান ঘন্টাপ্রতি ৫.১৫ ডলারের জায়গায় দিতে হতো ২২ ডলার। আর বর্তমান বাৎসরিক ১০,৭০০ ডলারের জায়গায় তাদের পাওয়া উচিত হতো ১১০,০০০ ডলার। তারা তা পাচ্ছে কি?

আর এটা তারা করছে নতুন উপনিবেশনায়নের মাধ্যমেই কেবল নয়, নিজ দেশে নয়া লিবারেল ব্যবস্থাদির মাধ্যমে। সুসান জর্জ তাই ঠিকই বলেন, The US Treasury recognizes, quite correctly, that the combination of debt plus structural adjustment plus massive privatization is a far more efficient instrument than colonialism ever was for keeping countries in line.
পাশাপাশি কৃষকরাও পড়েছে নিঃস্বকরণের নিশানায়। বাংলাদেশের ১০০ জনে ৭০ জন কৃষিকাজে জড়িত। ব্রিটেন কিংবা আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় কৃষিকাজে জড়িত মানুষের হার জনসংখ্যার মাত্র .০১ শতাংশ (ওপেন ডেমোক্রেসি)। কিন্তু নিজ রাষ্ট্রের মদদে ওই বাণিজ্যায়িত কৃষির .০১ শতাংশ ধনী কৃষকরাই হয়ে উঠল বিশ্বের কৃষি বাণিজ্যের বিরাট অংশের চালক।

এসব প্রকাণ্ড খামারের যান্ত্রিক কৃষির উৎপাদনশীলতার ধারে-কাছেও আমাদের সনাতন কৃষকেরা যেতে পারে না। সেখানে একজন কৃষিমজুর বছরে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার কুইন্টাল শস্য ফলায়। আর আমাদের দেশের একজন কৃষক সবুজ বিপ্লবের পরও ফলায় মাত্র ১০০ থেকে ৫০০ কুইন্টাল। আর যে কৃষকের জীবনে সবুজ বিপ্লবও আসেনি তার উৎপাদন বছরে মাত্র ১০ কুইন্টাল। তাহলে অনুপাত দাঁড়াল ২০০০: ১। ১৯৪০ সালের আগে এ অনুপাত ছিল ১০ : ১ (সামির আমিন: দ্য লিবারেল ভাইরাস)। এর ফলে আগে যার আয় ছিল পাঁচ টাকা এখন সে পায় এক টাকা। অর্থাৎ ঐ কৃষকের আয় কমে গেছে পাঁচগুণ। এর সঙ্গে রয়েছে রাষ্ট্র, ব্যাংক, বাজার ও রাজনীতির নানান বাধা। কৃষকের নিঃস্বকরণের এ সময়ে, ১৯৭৪-২০০৫ পর্যন্ত খাদ্যের দাম কমেছে ৭৫ শতাংশ। আর বাণিজ্যিক কৃষির রমরমা সময়ে অর্থাৎ ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত খাদ্যের দাম বেড়েছে সেই ৭৫ শতাংশ। আমাদের উৎপাদন কম হওয়ার জন্য নিশ্চয়ই আমরা দায়ি। পুঁজিবাদের অসম বিকাশ দায়ি নয়, আমাদের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তর না করা দায়ি নয়, তাদের কৃষিপণ্যকে ডব্লিউটিও দিয়ে একচেটিয়া ছাড় দেয়া দায়ি নয়? প্রভুর প্রশস্তি গাওয়া আর নিজেদের নিরন্তর দোষী ভাবাও কিন্তু একটা কলোনিয়াল মানসিকতা। এটা আপনাকে বলিনি, ওরা আমার আপনার উভয়েরই প্রভু।
প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ অর্থাৎ মানবজাতির অর্ধেকই আজও গ্রামে থাকে। আধুনিক সমাজের আগের সব সমাজের ভিতও ছিল গ্রামে ও কৃষিতে। সেই সমাজের ধ্বংসের ওপরই আধুনিক পুঁজিবাদ দাঁড়িয়েছে। একদিকে এই ৩০০ কোটি পরিত্যক্ত মানুষ অন্যদিকে মাত্র কয়েক কোটি ধনী পরিবার। বর্তমান মুনাফাখোরি ব্যবস্থায় এই ৩০০ কোটি মানুষের বাঁচার কোনো সুযোগ তারা রাখেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ২০০ কোটি শহুরে শ্রমজীবী (সামির আমিন: দ্য লিবারেল ভাইরাস)।
এই হলো পুজিবাদের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের সহিংস ফল। পপারের মতোই মিথ্যে উন্নতির আশা রেখে একে আদর করে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকতে যদি কারো আরাম লাগে, তাহলে আর কী করবার আছে? কেবল এটা বলতে হয় যে, পপারের ভবিষ্যদ্বানী ফলেনি, মার্কসেরটাই ফলেছে। মার্কস তাঁর পুঁজিতে দেখিয়েছিলেন, কীভাবে একদিকে পুঁজিবাদ পর্বতসমান সম্পদ সৃষ্টি করে এবং একইসঙ্গে এর অপর পিঠে সৃষ্টি করে বিশাল মাত্রায় নিঃস্বকরণ। এ থেকে পুঁজিবাদের রেহাই নাই। এটা সম্পদ বন্টনের সমস্যা নয়, এটাই পুঁজিবাদের স্বভাব। আর এই দ্বন্দ্বের পিঠে জন্ম নেয় এক বিশ্বজনীন শ্রেণী, যার নাম প্রলেতারিয়েত। সে নিজেই হয়ে ওঠে জাতির মধ্যে জাতি, শ্রেণীগুলোর মধ্যে প্রধান শ্রেণী। সে তখনই জয়ী হতে পারে, যখন সে নিজেকে ধ্বংস করার মাধ্যমে অর্থাত তার সর্বহারাত্ব ঘুচানোর মাধ্যমে গোটা মানবজাতিকেই মুক্তি দেয়া বৈষম্য থেকে। নিজের স্বার্থের কারণেই প্রলেতারিয়েত সমগ্র মানবজাতির স্বার্থের প্রতিনিধত্ব না করে পারে না। কারণ, একদিকে সম্পদ আরেকদিকে নিঃস্বকরণ; এই বিকৃতি থেকেই তার জন্ম। তাই নিজেকে ধ্বংস না করে, অর্থাত শ্রেণী হিসেবে তার অগ্রণী ভূমিকার বিলোপ বিপ্লবের মাধ্যমে না করে, সে নিজেকেও মুক্ত করতে পারে না। সেকারণেই আজো মার্কস ও তাঁর প্রলেতারিয়েতের প্রাসঙ্গিকতা স্বমহিমায় বহাল। স্ট্যালিনিজম বা সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের পতনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নাই। যা নষ্ট তা গেছে, যা জায়মান তা প্রস্তুত হচ্ছে ইতিহাসের গর্ভে।

পুনশ্চ: আমি মার্কসের শ্রেণী তত্ত্ব, ইতিহাস বীক্ষা ইত্যাদিতে আজ গেলাম না, কারণ উচ্চতর বিতর্কের আগে আমাদের বাস্তব অবস্থা এবং সংজ্ঞা নিয়ে একমত হওয়া দরকার। কোনটা মার্কসবাদ আর কোনটা মার্কসবাদ নয়, সেটা পরের পর্বে দেখানো যাবে আশা করি। দেখানো যাবে, কীভাবে মার্কসবাদ একটা কর্মকাণ্ডের দর্শন হয়ে উঠেছে, আর তা দেখিয়েছে মানুষের অনন্ত সম্ভাবনা। সেকারণেই মার্কসবাদ মানুষের মুক্তির ও সম্ভাবনার তত্ত্ব হিসেবে আজো জায়মান ও সৃষ্টিশীল গ্রহণ বর্জনের ধারায় টিকে থাকতে সক্ষম। ধন্যবাদ।


মন্তব্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ডাবল পোস্টিং যাতে না হয় সেজন্য গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ড. খলিকুজ্জামানের গবেষণার সারসংক্ষেপটি প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সরিয়ে আমার নিজের ব্লগে নিয়ে গেলাম। আগ্রহীরা সেটা পাবেন এখানে

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ধ্রুব হাসান এর ছবি

একদিকে পুঁজিবাদ পর্বতসমান সম্পদ সৃষ্টি করে এবং একইসঙ্গে এর অপর পিঠে সৃষ্টি করে বিশাল মাত্রায় নিঃস্বকরণ। এ থেকে পুঁজিবাদের রেহাই নাই। এটা সম্পদ বন্টনের সমস্যা নয়, এটাই পুঁজিবাদের স্বভাব। আর এই দ্বন্দ্বের পিঠে জন্ম নেয় এক বিশ্বজনীন শ্রেণী, যার নাম প্রলেতারিয়েত। সে নিজেই হয়ে ওঠে জাতির মধ্যে জাতি, শ্রেণীগুলোর মধ্যে প্রধান শ্রেণী। সে তখনই জয়ী হতে পারে, যখন সে নিজেকে ধ্বংস করার মাধ্যমে অর্থাত তার সর্বহারাত্ব ঘুচানোর মাধ্যমে গোটা মানবজাতিকেই মুক্তি দেয়া বৈষম্য থেকে। নিজের স্বার্থের কারণেই প্রলেতারিয়েত সমগ্র মানবজাতির স্বার্থের প্রতিনিধত্ব না করে পারে না। কারণ, একদিকে সম্পদ আরেকদিকে নিঃস্বকরণ; এই বিকৃতি থেকেই তার জন্ম। তাই নিজেকে ধ্বংস না করে, অর্থাত শ্রেণী হিসেবে তার অগ্রণী ভূমিকার বিলোপ বিপ্লবের মাধ্যমে না করে, সে নিজেকেও মুক্ত করতে পারে না। সেকারণেই আজো মার্কস ও তাঁর প্রলেতারিয়েতের প্রাসঙ্গিকতা স্বমহিমায় বহাল।

বোল্ড করা অংশে নেয়া সিদ্ধান্তটাই এই মতবাদের মনে হয় সবচেয়ে বড় দুর্বলতা; বাকী যেসব শোসনের কথা বলেছেন তা আজকের রিয়ালিটি বলে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে প্রলেতারিয়েতদের যে সমগ্র মানবজাতির পজিটিভ প্রতিনিধি হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে গোলমালটা ঐ জায়গায়! এমন কি 'মানবজতি' শব্দের মধ্যেও যে পজিটিবিটির বীজ বপনের ঐতিহাসিক কসরত তাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ! সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদের অবকাঠামোগত দুর্বলতাও ঐ জায়গায়। মানুষকে শুধু সমষ্টি বা ব্যক্তি হিসেবে ধরে আগালে সমস্যা বাড়ে বৈ কমতে দেখিনি এখনো! আর পুজিঁবাদের বিকৃতি থেকে জন্ম নেয়া জনগোষ্টি কতখানি পজিটিভিটির ধারক-বাহক হতে পারে তাও একটা বিরাট প্রশ্ন! তবুও একটা ব্যাল্যান্সড পরিস্থিতি আসুক গোটা বিশ্বে এই কামনাই করি।

(যা লিখলাম তা একান্তই ব্যক্তিগত মতামত এবং পোষ্টটি পড়ার পর একধরনের তাতক্ষনিক প্রতিক্রিয়া। কোন রকম আতঁলামীর ইচ্ছে নাই এতে। এমন কি ইচ্ছে থাকলেও বাস্তবতার কারনে উপায় নেই।)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সময়াভাবে বিস্তারিত আমিও বলতে পারছি না। তবে আপনার চিহ্নিত ওই বক্তব্যের অপর পিঠের দিকে আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেটা হচ্ছে: শ্রমিক শ্রেণী কেবল নিজের মুক্তির জন্যই লড়ে না, পুঁজিবাদের অ্যান্টিথিসিস হিসেবে সেই পুঁজির '‌তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে' ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম। এর মাধ্যমে সে গোটা মানবজাতিরই প্রতিনিধিত্ব অর্জনের দায়ে পড়ে। ফলে অন্য শ্রেণীর আন্দোলনগুলি কেবল নিজ শ্রেণীস্বার্থে হলেও, প্রলেতারিয়েত দাঁড়ায় সভ্যতার পক্ষে, মানুষের পক্ষে। সবচে বঞ্চিত মুক্তি পেলে অর্ধবঞ্চিতদের মুক্তিও নিশ্চিত হয়ে যায়, তাই না? আর সমস্যা যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সেখানে যে সর্বহারা সেই এই ব্যবস্থার প্রতি সবচে মোহহীন।
এ নিয়ে পরে আরো কিছু বলবার আশা রাখি। আপনাকে ধন্যবাদ, দারুণ একটি পয়েন্টে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

কঠিত বাৎচিৎ বুঝিনা বইলা কমেন্টও করতে পারি না।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

কঠিন বাৎচিৎ বুঝিনা বইলা কমেন্টও করতে পারি না।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

তানবীরা এর ছবি

এতো জ্ঞান যাদের তারা কি মাথা বালিশের উপড়ে দেয় না বালিশ তাদের মাথার উপড়ে থাকে বড্ড জানতে ইচ্ছে করে। জবাব দিবেন কি???

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তারা মনে হয় বালিশে ঘুমায় না, দাঁড়িয়ে ঘুমায় ঘোড়ার মতো। কিংবা পাহাড়ের মতো আকাশে হেলান দিয়ে থাকে। তাদের বড্ড কষ্ট। নজরুল তো এদের নিয়াই কইছে, ‌'আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই।'

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তানবীরা এর ছবি

তুমি কোনটা, পাহাড় না ঘোড়া?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

পাহাড়ে চড়তে গিয়ে ঠ্যাঙ ভাঙ্গা ঘোড়া।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অভিজিৎ এর ছবি

আমার দৃষ্টিতে অভিজিত বাবু বারবার যে ফোক্করে পড়ে আলোচনার অথনেটিসিটি খর্ব করছেন, সেই ফোক্করের অপর নাম সামান্যের (স্পেসিফিক) মধ্যে অসামান্যকে (জেনারেল) দেখবার তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা! মার্কসবাদী দর্শনের একটি দুটি প্রত্যয় বা প্রতিমা দেখে তিনি সাধারণীকরণ করে ফেলছেন, আর তাতে উধোর পিণ্ডি শুধু বুধোর ঘাড়েই পড়ছে না, বেচারা মার্কসের চরিত্রনাশও ঘটছে।

ভুল। মার্ক্সের চরিত্রনাশ করে আমি কিছু লিখিনি। বরং আমার লেখা খন্ডন করতে গিয়েই অনেকে আমার লেখায় 'লোভ' দেখেছেন, কেউ আমার 'উদ্দেশ্য' নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কেউবা আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে 'ছাগল' বলেছেন। আমি মুলতঃ বিষয়ভিত্তিক লেখা লিখেছি - সমাজবিবর্তনের ব্যাখ্যায় মার্ক্সের অসঙ্গতি দেখিয়েছি। খুব ভাল ভাবেই দেখিয়েছি পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি মার্ক্সের দেখানো পথে যায়নি। পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্র আর তা থেকে সাম্যবাদে উত্তোরিত হয়নি। বরং পুর্বতন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোই ফিরে গেছে পুঁজিবাদের পথে। সমাজ বিবর্তন হয় সত্য, কিন্তু তা মার্ক্সের দেখানো পথে হয়নি। এইটাই ছিলো আমার বক্তব্য।

. মার্কসবাদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক উপাদান থাকার দাবিকে তিনি নিজেই মার্কসবাদ বিজ্ঞান এমন বলে আবার সেটাকেই খণ্ডন করতে লেগেছেন। এবং তা করতে গিয়ে ভিয়েনা সার্কেলের খ্যাতনামা বিজ্ঞানের দার্শনিক কার্ল পপারের বিতর্কিত পদ্ধতিরও আশ্রয় নিয়েছেন।

আমি আমার বক্তব্যে স্থির আছি। মার্ক্সের তত্ত্বে ফলসিফায়াবিলিটির অভাব তো আছেই। তবে ফলসিফায়াবিলিটিই একমাত্র কথা নয়, আমি সেই সাথে আরো অন্ততঃ ৯ টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছি যেগুলোকে যথার্থ ভাবে খন্ডন করতে দেখিনি।

২. শ্রেণীকে নিজেই নিছক অর্থনৈতিক ক্যাটাগরি ধরে নিয়ে সেই ক্যাটাগরির সীমাবদ্ধতা আবিষ্কারে নেমেছেন, যদিও মার্কসের বিচারে শ্রেণী একটি রাজনৈতিক ও দার্শনিক ক্যাটাগরি

শ্রেনীকে আমি কিন্তু অস্বীকার করিনি। শ্রেনী সচেতনার গুরুত্ব অবশ্যই আছে। তবে, মার্ক্স যেভাবে তার নিজস্ব ছাঁচে ফেলেএ কে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন, এখন সেভাবে আর করা হয় না।

Attemts to explain things in terms of class are many times reductionist and wrong. There are significant sources of identity and conflict such as gender, ethnicity, sexual preference etc.

৩. পুঁজিবাদের বাস্তব ইতিহাস ও গতিপ্রকৃতির মধ্যে না গিয়ে একে চিরন্তন, অপরিবর্তনীয় এবং সর্বরোগহর স্ট্যাটাস দিয়ে তার তুলনায় কমিউনিজমকে ঊনতর দেখাবার চেষ্টা করেছেন।

এটাও আপনার ভুল ধারনা। আমি কোন কিছুই 'চিরন্তন, অপরিবর্তনীয় এবং সর্বরোগহর' দেখানোর চেষ্টা করি নি। ক্যাপিটালিজমের সাফাই গাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। এ ধরনের ফোরামে বিতর্কে এটা একটা সমস্যা। আওয়ামিলীগের সমালোচনা করলেই হয়ে যায় বিএনপির দালাল, বিএনপির সমালোচনা করলেই হয়ে যায় আওয়ামী-বাকশালী, ইসলামের সমালোচনা করলেই হয়ে যায় হিন্দুত্ববাদি, বিজেপির সমালোচনা করলেই হয়ে যায় 'সুডো-সেক্যুলার'। কমিউনিজমের সমালোচনা করলেই হয়ে যায় পুঁজিবাদের দালাল। এ ধরনের উদাহরণ দেয়া যায় বহু। এ ধরনের 'simplistic bipolar frame of mind ' বিতর্কের জন্য সুস্থ নয়। এটা আসলে 'ফ্যালাসি অব বাইফারকেশন'। মার্ক্সের তত্ত্বের কিছু অংশ যদি আমার কাছে 'বৈজ্ঞানিক' না মনে হয়, যদি আমি সমালোচনা করি তাহলেই আমি পুঁজিবাদকে চিরন্তন, অপরিবর্তনীয় এবং সর্বরোগহর স্ট্যাটাস দিয়ে দিলাম - এ ধারনা ভুল।

মার্কসবাদকে চিহ্নিত করায় ‘যা ইচ্ছা তা’ পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়েছেন, মার্কসের অরজিনাল সাইটেশন না করেই। টেক্সুয়াল রেফারেন্সের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে গুলিয়ে দিয়ে বিদ্বেষের ঘোল বানিয়েছেন।

এটাও ভুল। আমি মার্ক্সের অরিজিনাল সাইটেশন দিয়েছি। কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো থেকে, জার্মান আইডিওলজি থেকে। আপনি আমার লেখার পদ্ধতিকে '‘যা ইচ্ছা তা' ভাবতে পারেন, কিন্তু তাতে আমার কিছু করার নেই অবশ্য। আর 'বিদ্বেষের ঘোল' শব্দ নিচয়ের ব্যবহারও তাৎপর্যময়, বলতেই হবে।

আমি তো দেখি এই ধরনের 'বিদ্বেষের ঘোল' আপনাদের লেখাতেই সবসময় থাকে। ক্যাপিটালিস্ট সমাজের বিরুদ্ধে - তার রক্ত শোসন করতেছে, লুটপাট করতেছে, শ্রমিকদের মাইরা কাইটা সাফ করতেছে , 'পুঁজির মুত্রস্রোত' দিয়া ভাসায় দিতাছে। আপ্নেরা এই ধরনের 'বিদ্বেষের ঘোল' ঘুটাইতেই পারেন, কারন আপ্নেরা আদর্শের কথা কন, শ্রমিকদের লইয়া বিপ্লবের কথা অহর্নিশি চিন্তা করেন, তাগো লাইগ্যা আপ্নেগো পরাণ পুড়ে। কাজেই আওপ্নেরা 'পুঁজির মুত্রস্রোত' লইয়া লিখলেও 'যা ইচ্ছা তা' হয় না, বিপ্লবের নামে লক্ষ লক্ষ মানুষ মাইরা ফেলাইলেও কোন 'বিদ্বষ'ও প্রকাশিত হয় না। কি করুম। দোষ খালি পড়ে ঘাউরা মাছের।

অর্থাত গোড়াতেই তিনি মার্কসবাদের একজন শত্র“র মৃত্যু উদযাপনের বলি করতে চাইছিলেন মার্কসবাদকে। এখানেই তাঁর সত অভিপ্রায় নিয়ে আমার সন্দেহ।

আপ্নের এই 'সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা' নিয়া আমার কোন বক্তব্য নাই হাসি

আমি এখন একটি একটি করে আমার অভিযোগগুলো প্রমাণের চেষ্টা করবো।

করুন। অপেক্ষায় রইলাম।

মার্কসের চিন্তার মধ্যেকার ‘সায়েন্টিফিক নেচার’ থাকার দাবি করা আর তা নিজেই বিজ্ঞান এই দাবির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাতটি অভিজিৎ ধরতে পারেননি।

আসলে আমি লিখতে চাইছিলাম - 'Is Marxism Scientific?' শুরুতে এর বাংলা করেছিলাম - 'মার্ক্সবাদ কি বৈজ্ঞানিক'। কিন্তু বাংলায় বৈজ্ঞানিক শব্দটা অনেক সময় 'বিজ্ঞানী' অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই বদলে শিরোনাম করেছি - 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?' আসলে শিরোনামে আটকে না থেকে আমার প্রবন্ধে ঢুকলেই বোঝা যাবে আমি কি বলতে চেয়েছি। আমি মনে করিনা মার্ক্সের সমস্ত এনালাইসিস সাইন্টিফিক। আমি সেটাই বলেছি।

কার্ল পপারের অবদান বিজ্ঞানের যথাযথ মেথড কী তার পর্যালোচনার বেলায়। পপার দাবি করেছেন, বৈজ্ঞানিক থিওরির বেলায় ইনডাক্টিভ পদ্ধতি শ্রেয় নয়। ...আবার নিউটন যেভাবে গতিবিদ্যা বুঝেছেন, আইনস্টাইন এসে সেটাকে ভুল প্রমাণ করলেন। তার মানে কি নিউটন বাতিল হলেন? না, তা হলেন না, পার্থিব মাত্রায় তিনি তখনও ঠিকই থাকলেন, কিন্তু মহাবৈশ্বিকমাত্রায় তাঁর গতিবিদ্যা ও অভিকর্ষ তত্ত্ব বাতিল হয়ে গেল নিউটনের আপেকিতার তত্ত্বের কাছে।

আপনার লেখার উপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আপনি কার্ল পপারের তত্ত্বের নির্যাসটুকু ধরতে পারেন নি। 'নিউটন বাতিল হলেন' -এইটি মূল কথা নয় পপারের থিসিসে। 'বাতিলযোগ্যতা' আর 'বাতিল হয়ে যাওয়া' এক নয়। বিজ্ঞানের মুল আবেদন হচ্ছে - 'বাতিলযোগ্যতা'। বাতিল হল কি না হল সেটা নয়। যেমন, টলেমির ভূকেন্দ্রক তত্ত্ব - এটা বাতিল হয়ে গেছে - কিন্তু তারপও এটা ছিল একটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব । কারণ এই তত্ত্বের বাতিলযোগ্যতা একটি গুন হিসেবেই বলবৎ ছিলো। কিন্তু কেউ যদি বলে 'যুধিষ্ঠির স্বশরীরে স্বর্গে গেছেন' - এটা বাতিলযোগ্যতা বা ফলসিফায়াবিলিটির মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয় না। যেমনি একই ভাবে আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্বের পেছনে কেউ অপার্থিব সত্ত্বার দাবি করলে -সেটাকে ফলসিফায়াবিলিটির মাপকাঠিতে ফেলা যায় না। এখানেই সূচিত হয় বিজ্ঞান এবং অপবিজ্ঞানের সুস্পষ্ট পার্থক্য, কোন তত্ত্ব-এর 'বাতিলযোগ্যতার' গুনাবলির অভাব থাকলে এটি ছদ্মবিজ্ঞান হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। মার্ক্সের কী কনসেপ্টগুলা নিয়ে পপারের বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে - যেগুলো ফলসিফায়াবিলিটির মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয় না মোটেই। অনেক অংশেই আছে আবেগী স্বপ্ন - বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়।

আরেকটা ব্যাপার - বিজ্ঞান কিন্তু কাজ করে cause and effect নিয়ে, তথাকথিত ডায়েলেক্টিক নিয়ে নয়। মার্ক ভেবেছিলেন, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্টিত হলে ডায়লেক্টি উইল সিস টু অপারেট - উইদার এওয়ে! এটাও পরস্পরবিরোধি। ডায়লেক্টিক যদি একটা গতিশীল ব্যাপার হয়, তবে তা সবসময় বজায় থাকার কথা -এমনকি সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবার পরও।

এবার আসি কার্ল পপার এবং তাঁর দাবি মার্কসবাদের বেলায় কতটা প্রযোজ্য, সে বিষয়ে। প্রথমত, পদার্থবিজ্ঞানে বা বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের কোনো পদ্ধতিকে মানবিক বিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞানে হুবহু বসাতে যাওয়া কেবল কপটতাই নয়, বিভ্রান্তিকর। এরকম চিন্তা থেকেই কিন্তু সামাজিক ডারউইনবাদ সৃষ্টি হয়েছিল।

ঠিক। সেজন্যই আমি ডারউইনিজমকে সামাজিক ভাবে ব্যবহারের বিরোধি। সোশাল ইন্টারএকশান আর বায়োলজিকাল স্ট্রাগেল ফর এগসিস্টেন্স এক নয়। কিন্তু আমি বুজতে পারছি না মার্ক্সিজম এখানে ঠিক প্রমানিট হচ্ছে কোথায়? শুধু 'দ্বান্দ্বিক' পদ্ধতিতে বিশ্লেষন করেছে বলেই?

মার্কস তাঁর পুঁজিতে দেখিয়েছিলেন, কীভাবে একদিকে পুঁজিবাদ পর্বতসমান সম্পদ সৃষ্টি করে এবং একইসঙ্গে এর অপর পিঠে সৃষ্টি করে বিশাল মাত্রায় নিঃস্বকরণ। এ থেকে পুঁজিবাদের রেহাই নাই। এটা সম্পদ বন্টনের সমস্যা নয়, এটাই পুঁজিবাদের স্বভাব। আর এই দ্বন্দ্বের পিঠে জন্ম নেয় এক বিশ্বজনীন শ্রেণী, যার নাম প্রলেতারিয়েত। সে নিজেই হয়ে ওঠে জাতির মধ্যে জাতি, শ্রেণীগুলোর মধ্যে প্রধান শ্রেণী। সে তখনই জয়ী হতে পারে, যখন সে নিজেকে ধ্বংস করার মাধ্যমে অর্থাত তার সর্বহারাত্ব ঘুচানোর মাধ্যমে গোটা মানবজাতিকেই মুক্তি দেয়া বৈষম্য থেকে। নিজের স্বার্থের কারণেই প্রলেতারিয়েত সমগ্র মানবজাতির স্বার্থের প্রতিনিধত্ব না করে পারে না। কারণ, একদিকে সম্পদ আরেকদিকে নিঃস্বকরণ; এই বিকৃতি থেকেই তার জন্ম।

আপনি নিজেই দেখুন - আপনার লেখায় আবেগের আতিশয্য কি বেশি, সেই তুলনায় পৃথিবীর গতিপ্রকৃতির বাস্তব ব্যাখ্যার সত্যই অভাব। এত বর বড় লাইনে পুজিবাদের নিন্দা করার পরো কি আপনি বলতে পারবেন - আপনার সমাজতন্ত্রই জয়ী হচ্ছে, আর পুঁজিবাদ হেরে যাচ্ছে? "সর্বহারাত্ব ঘুচানোর মাধ্যমে গোটা মানবজাতিকেই মুক্তি দেয়া বৈষম্য থেকে" - এগুলো শুনতে বড় আরাম লাগে, বাস্তবে হইছিলো কবে? স্ট্যালিনের জামানায়, নাকি মাওএর আমলে?

আপ্নে একটু ভাবেন - 'পুজিবাদী জেনেটিক্স' সরাইতে ক্যামনে লাইসেঙ্কুজম প্রমোট করা হইছিলো। থিওরী অব রিলেটিভিটিরে নস্যাৎ করনের চেষ্টা করা হইছিলো- হেই লইয়া ত কোন উচ্চবাচ্চও করেন না। তত্ত্বে কোন ভুল নাই - ভুল খালি প্রয়োগে। আবার প্রয়োগ করেন - আবার জন্ম নিবো গ্রেট টেররের, জন্ম নিবো গ্রেট লিপ ব্যাকওয়ার্ডের, জন্ম নিবো গুলাগের, শ্রমশিবিরের। আর সেই সিস্টেমের বলি হইব শত-সহস্র সলঝনিতসিন। তারপরো মার্ক্সের সব কথাই বৈজ্ঞানিক!

এই দেশ-বৈরি অবস্থানের তারিফ করতে দেখে আপনার মানবদরদ নিয়ে সত্যিই সন্দেহ হলো অভিজিত।

আবারো সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা! আমি কিন্তু আমার লেখায় 'ব্যক্তি' নিয়ে লিখি নি, লিখেছি একটা বিষয় নিয়ে। আর আপনারা লিখছেন আমার 'লোভ' নিয়ে, আমার 'উদ্দেশ্য' নিয়ে, আমার 'মানব দরদ' নিয়ে। এটাই কি আপনাদের শ্রেষ্ঠ দ্বান্দিক বিশ্লেষণ? আমাকে 'লোভি' প্রমাণ করলেই কি মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান হয়ে যাবে?



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার ঐ ৯ টি পয়েন্টের আর্ধেকের খণ্ডন আপনার পোস্টে আমার ও পি মুনশির বক্তব্যে আছে। এখানেও আছে। একটু মনযোগ দেবেন কি? বাকিগুলো নিয়ে পরে কথা বলি? আগে কিছু জিনিষি তো সাব্যস্ত হওয়া দরকার, নইলে আলোচনা বিবাদে পরিণত হয়। আমার কোনো আচরণ কি আপনার কাছে অপমানকর মনে হয়েছে? না হলে অন্যের দোহাই আমি কীভাবে দেব?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অভিজিৎ এর ছবি

আমি ভোর বেলা যখন লগইন করেছিলাম তখন এত কিছু লেখা ছিলো না হাসি

পি মুনশী আমার লেখায় কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করেছিলেন, আমি তার জবাব দিয়েছিলাম। তারপর উনি অনাবশ্যকভাবে 'ছাগল' প্রসঙ্গে চলে গেলেন। আমি তার উত্তর দেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি নি।

আপনার পয়েন্টগুলো এই মাত্র দেখলাম। সময় করে উত্তর দিব।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

রাসেল এর ছবি

"কেউবা আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে 'ছাগল' বলেছেন।" কথাটা আমার লেখা থেকেই এসেছে বলে বলতে বাধ্য হলাম, ভাই নিজের লেখাও না যখন কারো লেখা পড়ে কোনো কিছু অনুধাবণ করবার প্রচেষ্টা নিবেন তখন একটু পড়ে বক্তব্য বলবেন, লাইগেশন করা ছাগল দিয়ে ছাগল পালন প্রকল্প আর অভিজিৎ ছাগল শাব্দিক অর্থে সমতুল হয়ে গেলে আলুও পটল, আলুও ঝিঙা এবং সবকিছুই আসলে সবকিছু।

যাই হোক ছাগলাদ্য প্রতিপাদ্য কিংবা ছাগল উপপাদ্য এখানেই সমাপ্ত হলো।

"খুব ভাল ভাবেই দেখিয়েছি পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি মার্ক্সের দেখানো পথে যায়নি। পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্র আর তা থেকে সাম্যবাদে উত্তোরিত হয়নি। বরং পুর্বতন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোই ফিরে গেছে পুঁজিবাদের পথে। "

সমস্যাটা সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা করতে গিয়ে এটার নিপীড়ক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়াটাকে মার্ক্সবাদের ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করা, আমি পূর্বে নিজের ২টি লেখায় যা বলেছি এখনও তাই বলবো সমস্যাটা রাশিয়ার সমাজমানস সঠিকভাবে উপলব্ধির ত্রুটি, আর অন্য যেসব দেশে রাশিয়া অনুকরণে কিংবা চীনের অনুকরণে কিংবা কিউবার অনুকরণে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে সেখানে একই রকমের ত্রুটি বিদ্যমান,

সমাজকে বিশ্লেষণ করে একটা প্রাথমিক পন্থা নির্ধারণ করতে হয় তবে সমাজবিশ্লেষণ কোনো স্থির বিষয় নয়, এটা পরিবর্তনশীল এবং এই পরিবর্তনশীলতাকে আমলে না নিলে মার্ক্সবাদের প্রায়োগিক ব্যর্থতা আসবে।

মার্ক ভেবেছিলেন, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্টিত হলে ডায়লেক্টি উইল সিস টু অপারেট - উইদার এওয়ে-- সমস্যা হলো আমার পড়া দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের বই কিন্তু এমন কোনো উপসংহারে পৌঁছায় না, মার্ক্সের বক্তব্য যদি এমনটা হয় তাহলে মার্ক্সের সিদ্ধান্তে একটা গলদ ছিলো, পরবর্তী মানুষেরা কিন্তু এই দ্বান্দ্বিকতাকে সমাজের অপরিহার্য গুণ বিবেচনা করেছেন,

যাই সমাজকে অপরিবর্তনীয় কাঠামো বিবেচনা করেছেন এই কথাটা আমি আমার অবস্থান থেকে যে কারণে বলেছিলাম সেটা হলো ৩০ এর মন্দায় কেনো যুক্তরাষ্ট্রে সমাজতন্ত্র কেনো কায়েম হলো না? যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক থাকাটাই বড় বিষয় ছিলো না, অনেকগুলো সম্মিলিত বিষয় এক হলে একটা শক্তিশালী সংস্থা দাঁড়ায় যারা সমাজের পরিবর্তন আনতে পারে- ৩০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা এবং বামপন্থী দলগুলোর প্রস্তুতি এবং জনসচেতনতার মান ভালো থাকলে সেখানে এই পরিবর্তন ঘটতো।

স্বল্প সময়ের পূঁজিবাদি কাঠামোতে যাওয়ার পরে পুনরায় বামঘনিষ্ঠ মানুষেরাই ফিরে আসছে রাষ্ট্র ক্ষমতায়, এটাও একটা নতুন উপলব্ধি মানুষের। চিলি, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে বামঘেঁষা মানুষেরাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্বাচিত হয়ে আসছে। এটা পূঁজিবাদী কাঠামোর ভেতরে হলেও এটার ভেতরে অন্য একটা সামাজিক উপলব্ধি যে এই এই উপসংহারে কি পৌঁছানো সম্ভব?

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

অভিজিৎ এর ছবি

স্বল্প সময়ের পূঁজিবাদি কাঠামোতে যাওয়ার পরে পুনরায় বামঘনিষ্ঠ মানুষেরাই ফিরে আসছে রাষ্ট্র ক্ষমতায়, এটাও একটা নতুন উপলব্ধি মানুষের। চিলি, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে বামঘেঁষা মানুষেরাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্বাচিত হয়ে আসছে। এটা পূঁজিবাদী কাঠামোর ভেতরে হলেও এটার ভেতরে অন্য একটা সামাজিক উপলব্ধি যে এই এই উপসংহারে কি পৌঁছানো সম্ভব?

অবশ্যই। আমি কিন্তু আমার প্রবন্ধে মার্ক্সবাদকে বাতিল করিনি। আমি কিন্তু নিজেই বলেছি। যে সমস্ত সমাজব্যবস্থায় শ্রেনী বৈষম্য এবং শ্রেনী নিপিড়ন বিদ্যমান সে সমস্ত ব্যবস্থায় মার্ক্সের শিক্ষা এবং তত্ত্ব যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তা নিঃসংশয়ে বলা যায়। আমিই ত বলেছি - "এ ছাড়া ভুলে গেলে চলবে না যে, সমগ্র তৃতীয় বিশ্ব সহ লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যে সমস্ত মানুষ মুক্তিসংগ্রামে সামিল, তাদের অনেকের কাছেই মার্ক্সবাদ এখনো আলোকবর্তিকা। সম্প্রতি নেপালে মাওবাদীরা যেভাবে দীর্ঘদিনের রাজতন্ত্রকে উতখাৎ করেছে তা অনেক মার্ক্সিস্টকেই উদ্দীপ্ত করেছে। " আমার প্রবন্ধের উপসংহার ছিলো আসলে সেই অবস্থান থেকেই। শুধু ল্যাটিন আমেরিকা ন্য - উদাহরণ দিয়েছি ফুল্বাড়িয়ার, কানসাটের। আমি মার্ক্সবাদকে বিজ্ঞানের মোড়কে পুড়তে চাইনি, দেখতে চেয়েছি হাজারো নিপীড়িত মানুষের হৃদয়ে মুক্তির আলোকবর্তিকা হিসেবে। আমার দুর্ভাগ্য সেগুলো কেউ উল্লেখ করেছেন না।

সমায়াভাবে এবং ব্যস্ততার কারণে সব পয়েন্ট বা সবার সব লেখার উত্তর দিতে পারছি না। পরিস্থিতি একটু ঠিক হোক, সময় করে দেব নিশ্চয়।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

"বিশুদ্ধ বিজ্ঞান বলে কিছু কিছু বিষয়কে যেভাবে অন্য জ্ঞানশাখার তুলনায় ‘এলিট’ করা হয়, জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে তা বৈধ হয় না। এটাও বিজ্ঞানকে ধর্ম বানাবার সামিল। মানবীয় প্রগতি সকল শাস্ত্রের মিলিত ফসল। অতএব বিজ্ঞানকে অন্য সব কিছুর ওপরে মাপকাঠির মর্যদা বিজ্ঞান ও মানবপ্রগতি সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারণারই প্রতিফলন মাত্র। যে কোনো শাস্ত্রের মধ্যে কিছু কিছু ‘বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য’ থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞ ছাড়াও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মধ্যেও সায়েন্টিফিক নেচারের নিদর্শন থাকতে পারে। "
একমত, গুরুত্বপূর্ণ কথা।

তবে কার্ল পপারের ব্যাখ্যা কিন্তু অভিজিৎদা'র লেখায় ঠিকমতো আসেনি বলে মনে হলো। কার্ল পপার কখনই বলছেননা যে মার্কবাদ অবৈজ্ঞনিক উপায়ে তৈরী হয়েছে। তিনি বলছেন যে মার্কসবাদের অন্ধ অনুসারীরা যেভাবে মার্কসবাদের বিরুদ্ধে কোন উদাহরণ দেখলেই সেটাকে এক্সটেনডেড কিছু ব্যাখ্যার মাধ্যমে সেটাকে "মার্কসবাদের দূর্বলতা নয়" বলে ঢাকার চেষ্টা করেন, সেটা আদতে মার্কবাদের ধারকে নষ্ট করে দিচ্ছে।

একটা তত্বের বিরুদ্ধে যত বেশী স্পেসিফিকভাবে কন্ট্রাডিকশন দেখানো যায় সেই তত্ব তত বেশী ধারালো। যেমন ধরুন "পৃথিবী গোল" এই থিওরীটি। স্যাটেলাইট থেকে তোলা থ্রি-ডি ছবিতে যদি দেখানো যায় যে পৃথিবী একটা সিডি ডিস্কের মতো, তাহলেই শেষ!! তাই, "পৃথিবী গোল" থিওরীটা খুব ধারালো। এটাও আবার দেখুন, সময়ের সাথে সাথে থিওরীটার ধার বেড়েছে, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে যত সহজে এর বিরুদ্ধে প্রমাণ আনার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এর ধার বেড়েছে ততবেশী।

এখন একটা তত্বের পক্ষে যখন বাড়তি কিছু অনুসিদ্ধান্ত যোগ হতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে তত্বটা স্পেসিফিকনেস হারায়, সাথে সাথে নিজের ধার, বিজ্ঞানময়তা সবই। কার্ল পপার সেই জায়গাটাতেই ফোকাস ফেলেছেন।
তবে উনার তত্বের সীমাবদ্ধতাটা উনার তত্বের ভেতরেই আছে। মানে একটা থিওরীকে ঠিক কখন "রিফিউটেবল না" বলা যাবে? কতগুলো কন্ট্রাডিকশনকে নাকচ করে দিলে একটা থিওরী "রিফিউটেবল না" হয়ে যায়? এটা ডিফাইন না করতে পারলে উনার তত্বকেই রিফিউট করা যাচ্ছেনা।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অভিজিৎ এর ছবি

এখানে দূটো জিনিস গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। -১) ফলসিফায়াবিলিটি ২) ফলসিফিকেশন। কার্ল পপার তার ‘ফলসিফিকেশন ভার্সেস কনভেনশনালিজম’ প্রবন্ধে পরিস্কার করেই বলেছেন –

‘We must clearly distinguish between falsifiability and falsification. We have introduced falsifiability solely as a criterion for the empirical character of a system of statements As to falsification special rules must be introduced which will determine under what conditions a system is to be regarded falsified. ’

আমি দুটো বিষয় একটু পরিস্কার করি।

ফলসিফিফায়াবিলিটি
‘ফলসিফিফায়াবিলিটি’ বা ‘বাতিলযোগ্যতা’ একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অন্যতম গুন। এটা যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নির্মাণের অপরিহার্য শর্ত। মুলতঃ এই গুনটিই বিজ্ঞান থেকে অপবিজ্ঞানকে পার্থক্য করে দেয় পরিস্কারভাবে। আমি আগে উদাহরন দিয়েছি। যেমন ‘যুধিষ্ঠির স্বশরীরে স্বর্গে গেছেন’ – এটি একটি টটোলজিকাল স্টেটমেন্ট – ফলসিফায়াবেল নয়। কারণ আমরা কোনভাবে পরীক্ষা করে এর যথার্থতা নির্ণয় করতে পারি না। কিন্তু ‘ইলেক্ট্রন প্রটোনের চেয়ে ভারী’ –এটি একটি ফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট। কারণ পরীক্ষা করে আমরা এর সত্যমিতথ্যা যাচাই করতে পারি। কার্ল পপার তার ‘দ্য লজিক অব সায়েন্টিফিক ডিস্কভারি’তে পরিস্কার করে বলেছেন – ‘A theory is scientific to a degree to which it is testable.’

মার্ক্সের তত্ত্বের বেশ কিছু জায়গায় ফলসিফায়াবেলিটির অভাব রয়েছে বলে পপার মনে করা হয় । যেমন মার্ক্সের অর্থনৈতিক তত্ত্বে যেভাবে শ্রমিকদের ‘increasing misery’ পরিমাপের কথা বলা হয়ছে তা ফলসিফায়াবেল নয়। এ প্রসঙ্গে রুপার্ট য়ুডফিন বলেন, ‘…Increasing misery can be explained without reference to value. We don’t know if it is significant and have no way to finding out.’। একই ধরনের কথা মার্ক্সের এলিনেশন থিওরীর জন্যও খাটে, যেখানে মার্ক্স বলেছেন – ‘We have only the illusion of happiness, because it is an essential part of our nature to be in a proper relationship to these things.’। এখানেও সমস্যা – ‘আমরা সুখে আছি নাকি এটা ইল্যুশন অব হ্যাপিনেস’ – এগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে নির্ণয়ের কোন উপায় নেই। ‘ডায়েলেক্টিক্স’ ব্যাপারটাও ফলসিফায়েবল কিনা তা বিবেচনার দাবী রাখে। পপারের মতে এটি ‘mystical, unverifiable nonsense’।

ফলসিফায়াবিলিটি ছাড়াও মার্ক্সিজমের আরেকটা সমস্যা হল ফলসিফিকেশন বা ‘ভুল প্রমাণিত’ হয়ে যাওয়া ভবিষ্যদ্বানীগুলো। এখানে আসে ফলিফিকেশন প্রসঙ্গ।

ফলসিফিকেশন

ধরুন আমি বললাম ‘ইলেক্ট্রন প্রটোনের চেয়ে ভারি’। আগেই বলেছি এটি একটি ফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট। কারণ এর মধ্যে ‘বাতিলযোগ্যতা’ একটি গুন হিসেবেই ছিলো। এটি টেস্টেবল। এখন পরীক্ষা করে দেখা গেল না - ইলেক্ট্রন প্রটোনের চেয়ে অজনে হাল্কা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আমার স্টেটমেন্ট ফলসিয়ায়েড বা বাতিল হয়ে যাবে। ঠিক একই কারণে টলেমীর ভূকেন্দ্রিক তত্ত্ব বাতিল হয়ে গেল কারণ পর্যবেক্ষনের সাথে বাস্তবতা মিললো না।

কার্ল পপার, David Prytchitko, ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা সহ অনেকেই তাদের বইয়ে দেখিয়েছেন যে, মার্ক্সের অনেক ভবিষ্যদ্বানীই ভুল প্রামণিত হয়েছে। যেমন, মার্ক্স যেভাবে ভেবেছিলেন ধনতন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্র, এবং সমাজতন্ত্র থেকে সাম্যবাদ – এভাবে ঘটেনি। রাসেল অবশ্য বলছেন ‘প্রয়োগে ভুল হইছিলো’। প্রয়োগে ভুল আর তত্ত্বে ভুল যাই হোক না কেন - বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করলে বলা যায় - মার্ক্সের অনুমান সঠিক প্রমাণিত হয় নি। মার্ক্সের ভবিস্যদ্বানীর আরেকটি বড় বিপর্যয় হল – মার্ক্স ভেবেছিলেন সমাজতান্ত্রিক বিল্পব এডভান্সড পুঁজিবাদি রাষ্ট্রগুলোতে আগে হবে – কারণ সে সমস্ত দেশেই শ্রমিকেরা হবে ‘সবচেয়ে শোষিত’। কিন্তু সে সমস্ত দেশে বিপ্লব আগে হয় নি। এ প্রসঙ্গে পপার লেখেন –

‘It has been predicted revolution would happen first in the technically highest developed countries, and it is predicted that the technical evolution of the ‘means of production’ would lead to social, political, and ideological movements, rather than other way round… But (so-called) socialist revolutions came first in one of the backward countries.’।

এমনকি রাশিয়ায় যখন বিপ্লব হয়েছিলো, তখন রাশিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়ালি ডেভেলপ্ট ছিলো না মোটেই। তাদের ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি হয়েছে বিপ্লব-পরবর্তী যুগে। সমাজতন্ত্রের পতনের পর ব্যাপারটা আরো বেশি দৃশ্যমান। ফারুক ওয়াসিফ রা যে সমস্ত দেশ গুলোর – নেপাল, ভেনিজুয়ালা প্রভৃতি দেশের উদাহরণ হাজির করেন সেগুলো কোনটিই কিন্তু ‘শীর্ষ পুঁজিবাদী’ দেশ নয়। আসলে আমি বার বারই বলেছি আমার প্রবন্ধে – বাস্তবতা হচ্ছে – কট্ট্র পুঁজিবাদীদেশ গুলোতে বিপ্লব হচ্ছে না – হবেও না বোধ হয়। কারণ বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে পুঁজিবাদি ব্যবস্থা ধ্বংস না হয়ে যে টিকে গেছে – সেই টিকে থাকার পেছনে ‘অন্তর্নিহিত বিবর্তন’টি মার্ক্স গোনায় ধরেন নি, কিংবা ধরতে চাননি।

পপারের কথা দিয়েই শেষ করি –

‘Marxism is no longer science; for it broke the methodological rule that we must accept falsification, and it immunized itself against most blatant refutations of its predictions’.

সেজন্যই আমি আমার প্রবন্ধে বলেছি - যখন মার্ক্সের অনুরাগীরা দেখলেন পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি মার্ক্সের দেখানো পথে যাচ্ছে না, তখন তাদের দরকার ছিল এই তত্ত্বকে বাতিল করে নতুন তত্ত্বের খোঁজ করা। তা না করে তারা পুরোন তত্ত্বকেই তারা আঁকড়ে ধরে রইলেন, এবং তত্ত্বকে জোড়া তালি দিয়ে একধরণের যথার্থতা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। পপারের মতে এ ধরণের কর্মকান্ড বিজ্ঞানমনস্কতার পরিপন্থি। সত্যি বলতে কি, এ ধরনের মনোভাবই তৈরি করে অন্ধ স্তাবকের এবং একটি তত্ত্বকে ঠেলে দেয় বিজ্ঞান থেকে অপবিজ্ঞানের দিকে।

মানি - পপারের কথাই শেষ কথা নয়। বিভিন্ন ভাবেই এর সমালোচনা করা যায়, থমাস কুন সহ অনেকেই করেছন, তাও জানি - কিন্তু তারপরও তার পয়েন্টগুলো ভেবে দেখবার মত।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

sajed এর ছবি

দর্শন আর ধর্মের ক্ষেত্রে এর অনুরাগীরা যে কেন এগুলির প্রয়োগিত ফলাফল, প্রমানিক বাস্তব অতীত, বর্তমান উপেক্ষা করে বুঝি না।

আমার মনে হয় উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে দর্শন আর ধর্ম প্রেমিকগন তাদের স্বপ্নগুলিকে বিড়ম্বিত করতে ভয় পায়।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার এ যুক্তি প্রমাণ করতে আপনাকে দেখাতে হবে যে, আলোচ্য দর্শন বা ধর্মের নিরঙ্কুশ প্রতিফলন হলো উল্লেখিত বাস্তব উদাহরণগুলি।

আর কে বললো, বাস্তবকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, বাস্তবকে আমলে নেয়া হচ্ছে বলেই তো দর্শনটির অনেক প্রায়োগিক ধরন ও সূত্রায়ন নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে, সংষ্কার হয়েছে। মার্কসবাদের দেড়শ বছরের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় ক্রমাগত দেশ-কাল-পাত্র ভেদে এর বৈচিত্র ও প্রবণতায় বদল ঘটেছে এভং তার পথ নিরন্তরই খোলা।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রণদীপম বসু এর ছবি

ফারুক ভাই ও অভিজিৎ দা, আপনাদের দুজনের ধারালো আলোচনা থেকে অনেকগুলো জিনিস জানার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছি। এবং দুর্দান্ত আকর্ষণ বোধ করছি। তবে আমার ছোট্ট একটু অনুরোধ-
প্লিজ, আপনারা কেউ অন্তত ব্যক্তিগত কটাক্ষের তারল্যে ভাসবেন না। ওগুলো বাদ দিলে বরং লেখাগুলোর ভার ও ধার আরো বেশি করে টের পাবো আমরা।

কোলাকুলিকে কিলাকিলি নয়, কিলাকিলিকে কোলাকুলিতে দেখতে চাই।
সবার জন্য শুভেচ্ছা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অভিজিৎ এর ছবি

তবে আমার ছোট্ট একটু অনুরোধ-
প্লিজ, আপনারা কেউ অন্তত ব্যক্তিগত কটাক্ষের তারল্যে ভাসবেন না।

আমার কাছ থেকে ১০০% গ্যারান্টি। আমাকে যে যাই বলুক, আমি ব্যক্তিগত আক্রমন করবো না।

বাই দ্য ওয়ে, ফারুক ওয়াসিফ এবং রাসেল দুজনই আমার খুব প্রিয় লেখক। ফারুক সাহেব যেদিন সচলায়ন ছেড়ে দিবেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেদিন মনে মনে ঘোষনা দিছিলাম - আমিও আর লিখুম না সচলায়তনে, যদিও কাউরে জানাই নাই ব্যাপারটা।

আমাদের মতান্বতর হবে, কিন্তু প্রতিহিংসা থাকবে কেন?



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার সদিচ্ছাকে আমি সম্মান জানাই। এবং সেটাই রীতি হওয়া উচিত। আমি এখানে আপনার বিবরণমূলক পাতলা উদাহরণগুলো বাদ দিয়ে শক্তিশালী যুক্তিগুলোর কয়েকটি ধরে কথা বলবো।

আপনি বলছেন যে, আপনি পুঁজিবাদকে ইতিহাসের শেষ ধাপ বলেন নি। মানছি। তাই আপনার কমেন্টের নীচের অংশটাকে অন্যভাবে পাঠ করছি।

এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সিস ফুকুয়ামার 'The end of History and the last man" সাম্প্রতিক বইটা পড়া যেতে পারে - যেখানে বলা হয়েছে 'সমাজতান্ত্রিক' বা এ ধরণের কোন 'আদর্শবাদ' নয় - বরং লিবারাল ডেমোক্রেসিকে মানব সভ্যতার শেষ পরিণতি বলা হয়েছে। দেখা যাক কারকথা সত্যি হয় ফারুক ওয়াসিফের নাকি ফ্রান্সিস ফুকুয়ামার।

হান্টিংটনের মতোই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক এই কর্মচারি ফুকুয়ামা আসলেই আর ধর্তব্যে পড়েন না। যেদিন ৯/১১ ঘটলো, সেদিনই বোঝা গেল ইতিহাসের শেষ হয় নাই। তা আবার অন্য রূপে ফিরে আসছে। একদিকে পুঁজিবাদে বিশ্বে প্রথমত অর্থনৈতিক সংকট অন্যাদিকে বুর্জোয়া গণতন্ত্র সবখানেই অসাড় ও ব্যর্থ হয়ে যাওয়া থেকে প্রমাণ হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো জরুরি। এর পাশে ভেনেজুয়েলার নের্তৃত্বে ল্যাটিন আমেরিকায় জাতীয় সমাজতন্ত্রের জোয়ার আর নেপাল প্রভৃতি দেশে ও ইওরোপে বামপন্থার প্রত্যাবর্তন ঘটছে। এরা নিশ্চিতভাবেই আগের ভুল থেকে শিখবে আশা করা যায়। এসবই ফুকুয়ামাকে অবান্তর করে দিয়েছে।
কিন্তু তারপরও আপনি যখন বলছেন, লিবারেল ডেমোক্রেসিই ইতিহাসের শেষ। তাহলে বলবেন কি, পুঁজিবাদ ছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেসি কারা চালাবে, আর এই রাজনৈতিক উপরিকাঠামোটির তলায় পুঁজিবাদ ছাড়া কোন অবকাঠামো সক্রিয় রয়েছে? ফলে আপনি আমি উভয়েই পুঁজিবাদের অন্তিমে একমত হয়েও আমরা একত্রে খুঁজতে পারি, লিবারেল ডেমোক্রেসির অন্তিম কী হতে পারে। পারি না?

** ১০)

মার্ক্সের ইকোনমিক থিওরী অনেক সরল - সেই রিকার্ডোর 'লেবার থিওরী ভ্যালুর' উপর নির্মিত। আজকের সমাজ অনেক জটিল। আধুনিক অর্থনীতিতে মার্ক্সের তত্ত্বকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ‘মার্জিনাল ইউটিলিটি’ তত্ত্ব দিয়ে। আসলে গানিতিক মডেল, গেম থিওরী ইত্যাদি অন্ত্ররভুক্ত না করলে আজকের গ্লোবালাইড ওয়ররল্ডের বাস্তবতা ঠিকভাবে উঠে আসবে না।

আজকের সমাজ অর্থনীতি অবশ্যই জটিল। সেই জটিলতার ব্যাখ্যা আজকের মার্কসবাদীরা করবার চেষ্টা করেছেন। মার্কসের পুঁজি, লেনিনের সাম্রাজ্যবাদ পূঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর আর্নস্ট মেন্ডেলের মনোপলি ক্যাপিটাল, হ্যারি ম্যাগডফ প্রভৃতির লেখালেখি থেকে দেখাবে কি, কীভাবে মার্কস পুঁজির আজকের বিকাশে মৌলিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক? পুঁজির বেসিক আচরণ অদ্যাবধি একই থাকছে, ততক্ষণ মার্কস থাকবেন। পুঁজির ভেল্কি যত বেড়েছে, রিয়েল ওয়ার্ল্ডকে শোষণ করে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদকে লুন্ঠন, কালচারকে শোষণের নয়া স্পেস বানানো ইত্যাকার ধরনগত পরিবর্তন ছাড়াও নিশ্চয়ই আরো কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু শেয়ার মার্কেট, কর্পোরেট ব্যবস্থাপনা, ব্যক্কি মালিকের জায়গায় কের্পারেট ব্যবস্থাপনা, ফোর্ডিজম পর্যন্ত লেনিন দেখিয়েছিলেন। সেগুলো নেড়ে দেখলে আমি নিশ্চিত আপনিও স্বীকার করতেন মার্কসের ইকনমিক
থিওরির সাপেক্ষে রিকার্ডো-স্মিথ প্রমুখ আদিম পিতার বেশি কিছু নয়, আর মার্কস মূলগত ভাবে পুঁজিকে আবিষ্কার করেছিলেন।

*** বিপ্লবের 'অলটারনেটিভ' হিসবে 'গনতান্ত্রিক ট্রাঞ্জিশন' অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকরী প্রমানীত হয়েছে এই বিশ্বে।

কোথায় এবং কবে? বরং আবারো একদিকে যুদ্ধের মাধ্যমে আরেকদিকে সশস্ত্র প্রতিরোধের পথে ফিরে আসছে সেই বিপ্লবই। মার্কিন গণতন্ত্র যেখানে চল্লিশ শতাংশই ভোট দেয় না, যেখানে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে জনমত, বিশ্ব মিডিয়া যেখানে মিসইনফর্মেশনের ঘাঁটি হয়ে ইলেকশণ ইঞ্জিনিয়ারিং করে, যেখানে আদালতি র্ক্যু এর মাধ্যমে বুশকে সামনে রেখে মিলিটারি+কর্পোরেশন ক্ষমতা দখল করে, যেখানে বিশ্বব্যাপী ১০ হাজারেরও বেশি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত, সেকানে গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন আরেক নিওলিবারেল ধাপ্পা। এই ধাপ্পার আড়ালে আমেরিকার নের্তৃতত্বে নয়া জাতবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক, সভ্যতা-সংষ্কৃতি বিরোধী এবং দুনিয়াকে দখলকারী ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে যাচ্চে। দুঃখিত, আপনার মতো বিচক্ষণ ব্যক্তি কেন সেটা ধরতে পারছেন না। আমি কিন্তু আপনাকে কমিউনিস্ট আদর্শে আসতে বলছি না, বলছি কোন জিনিষগুলোকে আমরা না বলতে পারি, তা ঠিক করার জন্য।

**** ৪। ফারুক ওয়াসিফ সফটওয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত বিপুল সঙ্খ্যক 'মধ্যবিত্ত' শ্রেনীর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এ সমস্ত ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত হাজার জাহার মানুষ চিরায়ত শ্রমিকের ধারনাই পালটে দিয়েছে।[/quote
এর উত্তর মনে হয় আমার বর্তমান লেখা এবং আগে আপনার পোস্টের মন্তব্যে দিয়েছি। তবে ঠিক এটা নিয়ে স্বতন্ত্র আলোচনা করা দরকার। এখানে আবারো এটুকু বলি, এই মধ্যবিত্ত শ্রমিকদের সংখ্যা বিশ্বে মোট শ্রমিকদের কত অংশ? চোখের আড়ে পাহাড় কি সত্যিই ঢাকা পড়ে?

কিছু মনে করবেন না, আপনি সত্যের অপলাপও করেছেন আপনার প্রবন্ধের শেষ অংশে। সেসব নিয়ে পরে বলবো। এখানে দুটি উদাহরণ টানবো: একটা টেক্সচুয়াল, আরেকটা রেফারেন্সিয়াল।
Literature must become party literature... Down with non partisan literatures! Literature must become the general cause of the proletariat, “a small and a small screw” in the social democratic mechanism, one and individual – a mechanism set in motion by the entire conscious vanguard of the whole working class. Literature must become the integral part of the organized, methodical and unified labors of the Social Democratic Party. (Novaia Jizn, Movember, 1905)

এ থেকে আপনি বোঝাতে চেয়েছেন লেনিন এক পাঁড় মাথামোটা। সাহিত্য বোঝে না। এই লেনিনই কিন্তু ভাববাদী টলস্টয়কে রুশ বিপ্লবের দর্পণ বলেছেন, বুর্জোয়া পুশকিনকে বলেছেন বিপ্লবের পটভূমি দেখানো মাস্টার। মার্কস দান্তে, গ্যোথে, শেক্সপীয়র ও গ্রিক ট্রাজেডিগুলোর ভক্ত ছিলেন। উভয়ের রচনায় এঁদের ভূরি ভুরি উদ্দৃতি মিলবে। ট্রটস্কি ছিলেন সেসময়ের বুর্জোয়া ফর্মালিস্ট ও ফিউচারিস্ট সাহিদত্যর সঙ্গে মিত্রতার সম্পর্কে জড়িত। তাহলে?
তাহলে এই যে, লেনিন ওটা বলেছিলেন, বলশেভিকদের রাজনৈতিক সাহিত্য সম্পর্কে। লেনিনের অতি বড় শত্রুও এমন কথা বলবে না।
আপনি কম্বোডিয়ার খেমারদের কমিউনিস্ট ধরে নিয়ে তাদের গণহত্যার কথা তুলেছেন। সবাই জানে খেমার পলপট ছিলেন মার্কিন প্রশাসনের বসানো পুতুল। লাল পাতাকা দিয়ে লাল পাতাকা ঢাকার রণকৌশলের হাতিয়ার। বাংলাদেশের জাসদ ও সিরাজুল আলম খানও দ্রষ্টব্য। খেমারদের মার্কিন প্রশিক্ষক ও অস্ত্র দিয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সোভিয়েত প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র ভোটো দিয়ে ঠেকায়। শেষে ভিয়েতনাম তাদের পরাজিত করে সেভিয়েত সাহায্যে। এসবের তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে দিতে পারবো। এই লিংক ধরে প্রবন্ধটা একটু দেখবেন?

আপনি দেরিদাকে একবার আধুনিক একবার উত্তরাধুনিক বলেছেন। ঠিক করেন আগে তিনি কী?
তার আগে আমি একটু গুছিয়ে কমিউনিস্টদের দোষ ও গুণের একটা ব্যালান্স শিট তৈরি করি? রাশিয়া সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ছিল, সস্ট্যালিন ক্ষমাহীন অনেক অপরাধ করেছিলেন, বামপন্থিদের অনেক ভূলেই আজ দুনিয়া আশাহীন, তাদের শূণ্যতা থেকেই প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় রাজনীতি ফিরে এসেছে পুঁজিবাদের মোড়লদের সেবাশুশ্রুষা পেয়ে। মার্কসবাদের তাত্ত্বিক ও প্র্যাক্সিসের পুনর্গঠন ছাড়া তা যে মুক্তিকামী মতাদর্শ হিসেবে বিরাট গ্রহণযোগ্যতা নিতে পারবে না, তা সত্য। এই সত্য লেনিনের সময় তাঁরই কমরেড জার্মান রোজা লুক্সেমবার্গ, যাঁকে হাতুড়ি পিটিয়ে হত্যা করেই হিটলার ক্ষমতায় এসেছিল, ইতালিয় কমিউনিস্ট আন্তোনিও গ্রামসি, যাকে পরাজিত করেই মুসোলিনী দাঁড়িয়েছিল, ভারতের এমন এন রায় প্রমুখ সমালোচকও কিন্তু কমিউনিস্ট ও মার্কসবাদী ছিলেন। আর মহান ট্রটস্কির থেকে স্ট্যালিনের বড় সমালোচক আর কে ছিলেন এবং আছেন? ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তৃতীয় আন্তর্জাতিক তো তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুতরাং আমাদের সমালোচনা করুন, ভুল ধরিয়ে দিন আবার সুযোগ দিন পুনর্গঠনের।
কিন্তু হায়, আমার বেলা যে যায় পিঠ বাঁচাতে, তোমার সুরে সুরে সুর মেলাব কোন ফুরসতে!!!
ভাল থাকবেন প্রিয়বর অভিজিত।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অভিজিৎ এর ছবি

হান্টিংটনের মতোই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক এই কর্মচারি ফুকুয়ামা আসলেই আর ধর্তব্যে পড়েন না। যেদিন ৯/১১ ঘটলো, সেদিনই বোঝা গেল ইতিহাসের শেষ হয় নাই। তা আবার অন্য রূপে ফিরে আসছে।

আমি ফুকুয়ামার কথা বলেছিলাম যাতে আপনার 'সমাজতন্ত্র ফিরে আসবে' এর বিপরীতে অন্য অপশনটিও স্পষ্ট হয় সবার কাছে - এধরনের 'আইডিয়ালিস্টিক ধারণা' আর ফিরবে না।

আমি ফুকুয়ামার থিসিসকে হান্টিংটনের সমতুল্য মনে করি না। হান্টিংটনের থিসিস খুবই রিয়েকশনারি। তবে আমি প্রত্যাখান করি অন্য কারণে। ফুকুয়ামা যে 'লিবারেল ডেমোক্রেসি'কে সভ্যতার শেষ পর্যায় দেখেছেন, সেটাও শেষ পর্যন্ত এক ধরনের 'আইডিওলজি প্রিচিং'ই। কাজেই যে কোন আইডিওলজি প্রিচিংকে সভ্যতার শেষ পর্যায় মনে করা মানে সমাজের গতিশীলতাকে স্থবির করে দেয়া। দেরিদা এর ভাল জবাব দিয়েছেন - "টু লং ফর দেম টু ডিসেপিয়ার ইন দ্য এন্ডিস্ট পাফ অব স্মোক'। আমি যে কারণে মার্ক্স এঙ্গেলসের ডায়লেক্টিক থেমে যাওয়া - ইন গুড টাইম দ্য ডিক্টেটর অব প্রলেতরিয়েত উইল উইদার এওয়ে এন্ড সানলিট আপ্ল্যান্ড' কে মেনে নিতে পারি না - ঠিক তেমনি ফুকুয়ামার 'এণ্ড অব হিস্ট্রি'ও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় - কারণ এতে হিস্ট্রিকে স্থবির করে দেওয়ার প্রবণতা আছে।

একদিকে পুঁজিবাদে বিশ্বে প্রথমত অর্থনৈতিক সংকট অন্যাদিকে বুর্জোয়া গণতন্ত্র সবখানেই অসাড় ও ব্যর্থ হয়ে যাওয়া থেকে প্রমাণ হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো জরুরি।

আমার মনে হয় না আপনি যে ভাবে বলছেন- 'বুর্জোয়া' গণতন্ত্র সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক বিশ্লেষণ। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কনফ্লিক্ট আছে, আর এটা তো থাকবেই। এর মধ্যে দিয়েই সমাজ ব্যবস্থা বিবর্তিত হচ্ছে। 'পুঁজিবাদী' ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বিবর্তনটা মেনে নিতে আপনাদের এত আপত্তি কেন? আমিরিকার সাথে আজ ইউরোপীয় দেশে বা কানাডায় গনতন্ত্রের পার্থক্য আমি লক্ষ্য করি। পৃথিবীর অনেক জায়গায়তেই গনতন্ত্র কিন্তু আর সেই 'আগ্রাসী' রূপে নেই। অনেক পরিশীলিত রূপ লাভ করেছে। শ্রমিকেরা সত্যই যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পায় সেগুলোকে স্রেফ 'ছদ্ম সমাধান' ভাবতে পারছি না। সমাজতান্ত্রিক দেশে শ্রমিকদের তুলনায় এ সমস্ত পুঁজিবাদী' দেশের শ্রমিকেরা কম ভাল নেই। এদের অপ্সহন দেয়া হলে তারা সমাজতান্ত্রিক দেশে চলে যাবে না, পুঁজিবাদী সমাজেই থাকবে। অনেক প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক দেশের শ্রেমিকদের সাথে মোলাকাতের বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখেই কিন্তু বলছি।

মার্কিন গণতন্ত্র যেখানে চল্লিশ শতাংশই ভোট দেয় না, যেখানে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে জনমত, বিশ্ব মিডিয়া যেখানে মিসইনফর্মেশনের ঘাঁটি হয়ে ইলেকশণ ইঞ্জিনিয়ারিং করে, যেখানে আদালতি র্ক্যু এর মাধ্যমে বুশকে সামনে রেখে মিলিটারি+কর্পোরেশন ক্ষমতা দখল করে, যেখানে বিশ্বব্যাপী ১০ হাজারেরও বেশি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত, সেকানে গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন আরেক নিওলিবারেল ধাপ্পা। এই ধাপ্পার আড়ালে আমেরিকার নের্তৃতত্বে নয়া জাতবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক, সভ্যতা-সংষ্কৃতি বিরোধী এবং দুনিয়াকে দখলকারী ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে যাচ্চে। দুঃখিত, আপনার মতো বিচক্ষণ ব্যক্তি কেন সেটা ধরতে পারছেন না।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে আমি অনেক লিখেছি আগে। একটি লেখা এখানে দেখতে পারেন। কিন্তু মুশকিল হল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ব্যাখ্যার জন্য আমাকে মার্ক্সিজমের দারস্ত হতে হয় না। দেখুন - কমিউনিস্ট রাশিয়াও সাম্রাজ্যবাদ করেছে, পাল্লা দিয়ে নিউক্লিয়ার ওয়েপন বানিয়েছে আর মানবাধিকারের লংঘন তো আছেই। একসময়। আমার প্রবন্ধে বিভিন্ন পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছি। কোন দেশ যখন ক্ষতার শির্ষে থাকে 'পাওয়ার প্লে'র খেলা ভালই খেলে - তা সে মার্ক্সিস্ট হোক আর না হোক। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সাম্রাজ্যবাদ অনেক সহনীয়, কারণ তারা ক্ষমতার শীর্ষে নেই।

এর পাশে ভেনেজুয়েলার নের্তৃত্বে ল্যাটিন আমেরিকায় জাতীয় সমাজতন্ত্রের জোয়ার আর নেপাল প্রভৃতি দেশে ও ইওরোপে বামপন্থার প্রত্যাবর্তন ঘটছে। ...

কোথায় এবং কবে? বরং আবারো একদিকে যুদ্ধের মাধ্যমে আরেকদিকে সশস্ত্র প্রতিরোধের পথে ফিরে আসছে সেই বিপ্লবই।

সত্যই? কোথায়? ৯/১১ কে বিপ্লব বললে আমার কিছু বলার নেই। বিশ্বে কফ্লিক্ট গুলো খুবই লোকাল। একেক দেশের সমস্যা একেক রকম। যেমন নেপাল দির্ঘদিন রাজতন্ত্রের অধীনে ছিলো। সেখানে মাওবাদিরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে রাজতন্ত্রকে হটিয়ে প্রচন্ডকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। সেটাকে মার্ক্সবাদের বিজয় দেখলে ৯০ এর দশকে এরশাদকে হটানোও 'মার্ক্সবাদের বিজয়' হিসেবে দেখা উচিত। নেপালে সমস্যা এক রকম, ভেনিজুয়ালায় আরেক রকম। লোকাল কনফ্লিক্ট থেকে সমাধান আসছে নিজ নিজ দেশ - তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং সমস্যাভেদে। আরো একটা ব্যাপার আপনাকে ভেবে দেখতে বলি। ক্ষমতায় কিন্তু বামপন্থি দলগুলো যাচ্ছে 'গণতান্ত্রিক'ভাবে নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েই। গণতন্ত্রকে রিপ্লেস কিন্তু করা হচ্ছে না - যতই আমরা সিস্টেমকে 'পুঁজিবাদি গনতন্ত্র' বলে গাল দেই।

এর উত্তর মনে হয় আমার বর্তমান লেখা এবং আগে আপনার পোস্টের মন্তব্যে দিয়েছি। তবে ঠিক এটা নিয়ে স্বতন্ত্র আলোচনা করা দরকার। এখানে আবারো এটুকু বলি, এই মধ্যবিত্ত শ্রমিকদের সংখ্যা বিশ্বে মোট শ্রমিকদের কত অংশ? চোখের আড়ে পাহাড় কি সত্যিই ঢাকা পড়ে?

ভাই, আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি - আমি সফট ওয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দিন ধরেই চাকরী করছি। বলতে পারেন আমি নিজেও একজন 'মেন্টাল লেবার'। আমি নিজের চোখে পশ্চিমে এই ইণ্ডাস্ট্রির বিবর্তন দেখেছি। চোখের আড়ে পাহাড় কি সত্যিই ঢাকা পড়ে কিনা তা হলফ করে বলা যাবে না, তবে এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, পুঁজিবাদী সমাজে মধ্যবিত্ত জনগোস্টির উত্থান হয়েছে। মার্ক্সের সনাতন ধারণায় সমগ্র উৎপাদিকা শক্তিকে কেবলমাত্র কায়িক শ্রমদানকারী শ্রমিকের মাধ্যমে মূল্যায়ন করেছিলেন - যা আজকের দুনিয়ার সাপেক্ষে সেটা বদল করার সময় এসেছি।

আমি নিজের চোখে দেখেছি সামান্য প্রগ্রামাুর(মেন্টাল লেবার) হিসবে কোম্পানিতে জয়েন করে শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার শেষ করছে কোম্পানির সিইও পোজিশনের কাছাকাছি কোথাও এসে। কোম্পানির স্টক কেনা, ইন্স্যুরেন্স অন্যান্য বেনিফিটের কথা না হয় বাদই দিলাম।

এবারের আমেরিকার ইলেকশনে মিডল ক্লাস ইস্যু একটা বড় ইস্যু। প্রতিদিনই লুডব টিভিতে মিডল ক্লাস ইস্যুতে চিক্কুর পাড়ে। আপনি এত দূর থেকে অবস্থাটা সত্যই বুঝচ্ছেন না।

কিছু মনে করবেন না, আপনি সত্যের অপলাপও করেছেন আপনার প্রবন্ধের শেষ অংশে। সেসব নিয়ে পরে বলবো। এখানে দুটি উদাহরণ টানবো: একটা টেক্সচুয়াল, আরেকটা রেফারেন্সিয়াল। ... এ থেকে আপনি বোঝাতে চেয়েছেন লেনিন এক পাঁড় মাথামোটা। সাহিত্য বোঝে না।

এই 'পাঁড় মাথামোটা' কথাটা কিন্তু আমি বলি নি। আপনি আমার মুখে কথা বসাচ্ছেন। আমি লেলিনের উক্তি কোট করেছি অথেন্টিক সাইটেশন থেকেই।

আপনি কম্বোডিয়ার খেমারদের কমিউনিস্ট ধরে নিয়ে তাদের গণহত্যার কথা তুলেছেন। সবাই জানে খেমার পলপট ছিলেন মার্কিন প্রশাসনের বসানো পুতুল।

কিন্তু আমি ত শুধু কম্বোডিয়ার উল্লেখ করিনি, সোভিয়েত ইউনিয়নে ২ কোটি লোক, সাড়ে ৬ কোটি লোক চীনে, ১০ লাখ লোখ ভিয়েতনামে, ২০ লাখ লোক উত্তর কোরিয়ায়, ২০ লাখ লোক কম্বোডিয়ায়, ১০ লাখ লোক পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে, দেড় লাখ লোক পূর্ব ইউরোপে, ১৭ লাখ লোক আফ্রিকায়, ১৫ লাখ লোক আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট শাসনামলে নিহত হয়। --- এরা কি সব বানের জলে ভেসে এসেছে? শুধু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে গাল পাড়লেই কি সব কিছু বৈধ হয়ে যাবে?

আমাদের সমালোচনা করুন, ভুল ধরিয়ে দিন আবার সুযোগ দিন পুনর্গঠনের।

অবশ্যই। আপনার কাছেও আমার দাবী - আপ্নারা আমাকে শত্রু বানিয়ে ফেলবেন না। আপনারাই তো থিসিস এন্টি থিসিস থেকে সিন্থেসিসে উত্তোরণের কথা বলেন। আমার লেখাটিকে না হয় এণ্টি থিসিস হিসেবে নিন। হয়ত আমরা সম্মিলিত ভাবেই হয়ত কোন উপসংহারে পৌছুতে পারব। দুনিয়ার সবাইকে ত মার্ক্সিস্ট হোতেই হবে এমন কোন কথা নেই। নাকি আছে? কিন্তু অন্ততঃ সভ্যতার অগ্রগতির পথে বাধা যেন না হই।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনি দেখি এক জায়গায় অসমর্থ প্রমাণিত হলে আরেক জায়গায় গিয়ে থই খোঁজার চেষ্টা করছেন। এখন বলছেন, মার্কস সমাজতন্ত্রে (হবে সাম্যবাদে) সকল দ্বন্দ্বের অবসানের কথা বলেছেন, এটা কেমন কথা? এটা আসলেই কোনো কথা না। মার্কস বলেছেন, সাম্যবাদে উত্তরণের মধ্যে দিয়ে মানবজাতি ব্যক্তি মালিকানা বনাম সামাজিক উৎপাদনের বর্তমান দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পাবে। সেখানে মানুষে মানুষে আর কোনো বৈরি দ্বন্দ্ব থাকবে না, থাকবে বৈচিত্র্যের (প্লুরালিটি) মিত্রতামূলক দ্বন্দ্ব। সেটাই হবে মানুষের সত্যিকার ইতিহাসের সূত্রপাত। মার্ক্সিয় দর্শনে যার প্রাথমিক ধারণা আছে, সেই জানে যে, এই দর্শনে না সাম্যবাদ, না প্রলেতারিয়েত কোনো কিছুই পরম নয়, পরম হলো দ্বান্দ্বিকতা। আবারো বলি দ্বান্দ্বিকতা মানেই সংঘাত নয়। এইজন্যই বলছি, চিলে কান নিয়ে গেছে না শুনে কানে হাত দিয়ে দেখেন।

এরপর বলছেন,

আমি নিজের চোখে দেখেছি সামান্য প্রগ্রামাুর(মেন্টাল লেবার) হিসবে কোম্পানিতে জয়েন করে শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার শেষ করছে কোম্পানির সিইও পোজিশনের কাছাকাছি কোথাও এসে। কোম্পানির স্টক কেনা, ইন্স্যুরেন্স অন্যান্য বেনিফিটের কথা না হয় বাদই দিলাম।

বেশ মজা তো? পশ্চিমে তাহলে সকল মেন্টাল লেবার অচিরেই সিইও হয়ে যাচ্ছে। তা ভাল। তাহলে এত এত সিইও-কে সিই-ও রাখার জন্য কত শ্রমিকের দরকার হবে? দরকার হবে কত শোষণ?
মেন্টাল লেবার কি শোষিত হচ্ছে না? আপনার লেবার দিয়ে যে মূল্য তৈরি হচ্ছে, তার কত অংশ মজুরি বাবদ দেয়া হয়? আমার আসলেই দুঃখ হচ্ছে নিজের ব্যর্থতায়। আপনি বোধহয় আমার লেখাগুলোও মন দিয়ে পড়েননি!!!

আমি লেলিনের উক্তি কোট করেছি অথেন্টিক সাইটেশন থেকেই।

লেলিন নয়, লেনিন। তাঁর ওই সাইটেশন যে খণ্ডিত তার পক্ষে আমি কিছু বাক্য খরচ করেছি ওপরে। সেটা দেখলে আপনার ওই অথেন্টিক সাইটেশন যে, অপ্রতিনিধিত্বশীল ও খণ্ডিত সেটা ধরতে পারতেন। লেনিনের অন লিটারেচার নামে একটা সংকল পাওয়া যায়, সেটা দেখতে পারেন। রুশ মার্ক্সিস্ট সাহিত্য সমালোচনা যথেষ্ঠ উদারই ছিল, কিন্তু তাদের গলদ ছিল এই যে, সাহিত্য সমালোচনাকে বাস্তববাদের নামে কিছূটা সমাজতান্ত্বিক মাপকাঠিতে দেখা। সেটার সমালোচনা ভাসকুয়েজ, জেমসন, ঈগলটন প্রমুখ মার্কসবাদীরাই করেছেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নে ২ কোটি লোক, সাড়ে ৬ কোটি লোক চীনে, ১০ লাখ লোখ ভিয়েতনামে, ২০ লাখ লোক উত্তর কোরিয়ায়, ২০ লাখ লোক কম্বোডিয়ায়, ১০ লাখ লোক পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে, দেড় লাখ লোক পূর্ব ইউরোপে, ১৭ লাখ লোক আফ্রিকায়, ১৫ লাখ লোক আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট শাসনামলে নিহত হয়। --- এরা কি সব বানের জলে ভেসে এসেছে? শুধু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে গাল পাড়লেই কি সব কিছু বৈধ হয়ে যাবে?

খেমাররুজদের ব্যাপারে যে ভুল করেছেন তা স্বীকার করায় আশা জাগছে, যে বাকি বিষয়েও কাছাকাছি আসতে পারবো। স্ট্যালিন জমানার গোড়ায় রাশিয়ায় একটা গৃহযুদ্ধ হয়েছিল, সেখানে ব্রিটেন-ফ্রান্স প্রমুখ রাষ্ট্রের সহায়তায় জারের অবশেষরা বিপুল পরিমাণে অন্তর্ঘাত চালায়। সেই যুদ্ধ উভয় পক্ষে বিপুল লোক নিহত হয় প্রায় দশ বছরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার দুই কোটি লোক মারা যায়। এর বাইরে, বাইরের অন্তর্ঘাত এক লহমার জন্যও বন্ধ হয় নাই। সেগুলো ঠেকাতে আর অতি বিশুদ্ধতবাদের প্রকোপে বেশ কিছূ অনাচারও হয়েছিল। সেগুলোর কঠোর সমালোচনা অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু গড়ে বলে দেওয়াটা সততা হয় না। দুই কোরিয়াতেও সাম্রাজ্যবাদের ইন্ধনে যুদ্ধ হয়েছে। আফগানিস্তানে সেভিয়েত অনুপ্রবেশ ভুল ছিল । ফাঁদে ফেলে প্ররোচিত করে আমেরিকা সেখানে ভিয়েতনামের প্রতিশোধ নিয়েছে। কম্বোডিয়ার টা তো ভুল দেখালঅমই। যাহোক, এই পয়েন্টটা পরে আলোচনা করবো বলে ধরিনি। এখন উল্লেখ করে গেলাম। আবারো বলা হবে। কারণ, আপনার সকল অভিযোগ এখন এই ফাঁপানো পরিসংখ্যানে এসে ঠেকেছে যেহেতু।
জানি আমার ওপরের কথাগুলো ধরেই এখন আপনার/দের সমালোচনার গরল বইবে। সেগুলোর যা মানা দরকার তা মানতে অবশ্যই কুণ্ঠা করবো না।
তবে কথা কি, আপনার জবান ও কলম থেকে গণহত্যা ও মানব-বিধ্বংস কারী মার্কিন-ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে যে কোনো সমালোচনা বেরয় না, তাতে বিষ্ময়ের কিছু নাই। মানুষ নিজেকে দেখার আগে অপরকে দেখে। আপনি এখন আমাদের দেখছেন, এরপর নিজের অঙ্গনেও তাকাবেন, সেই আশা তবুও রাখছি।
.................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অভিজিৎ এর ছবি

জনাব ফারুক,
আপনার লেখায় ব্যক্তি আক্রমনের প্রভাব স্পষ্ট। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, ব্যক্তি আক্রমণ এড়িয়ে আপনাকে উত্তর দিতে। আপনি নিয়েও লেখালিখি করেন, তারপরও ব্যক্তি-আক্রমনের চিরন্তন লোভটা আপনি সামলাতে পারছেন না। খুবই দুঃখের বিযয়। আপনি আপনার লেখা শুরুই করেছেন এই বলে -

আপনি দেখি এক জায়গায় অসমর্থ প্রমাণিত হলে আরেক জায়গায় গিয়ে থই খোঁজার চেষ্টা করছেন।

ব্যাপারটা যদি আমিও আপনাকে বলি? আপনি আমার মার্ক্সের উপর আর্টিকেল নিয়ে বড় পেরেশান ছিলেন, সাইটেশন নিয়ে হৈ হৈ বাধিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু এর বিপরীতে পপার নিয়ে এক নাতিদীর্ঘ আর্টিকেল লিখে ফেললেন, সেখানে রেফারেন্স কই? পপারের কোন বই কি আসলেই পড়া হয়েছে? 'ফলসিফায়াবেলিটি' এবং ফলসিফিকেশনের ধারনাও আপনার পরিস্কার ছিলো না। আপনাকে যখন সেটি বললাম, আপনি আর 'সেদিকে উচ্চবাচ্য না করে আরেক জায়গায় থই খোঁজার চেষ্ঠা করেছেন'। এখন কথা হচ্ছে - আপনার মত উত্তর আমিও দিতে পারি। শুধু দেখুন এভাবে উত্তর দিলে কেমন লাগে।

আপনি আরো বলেছেন -

আপনার জবান ও কলম থেকে গণহত্যা ও মানব-বিধ্বংস কারী মার্কিন-ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে যে কোনো সমালোচনা বেরয় না, তাতে বিষ্ময়ের কিছু নাই।

এটা যে কতবড় মিথ্যাচার তা আপনিও জানেন। আমি নিজেই আপনাকে আমার আর্টিকেলের লিঙ্ক দিয়েছিলাম - আপনি বোধ হয় ওপেন করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। বেশ করেননি যখন, আমি এখানেই কিছু নমুনা দিচ্ছি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে আমি কি লিখেছিলাম -

যারা আমেরিকার ‘গণতান্ত্রিক’ মূল্যবোধে উদ্বেলিত থাকেন তারা ভুলে যান যে এই গণতান্ত্রিক আমেরিকাই ১৯৫৩ সালে ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোসাদেককে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে স্বৈরশাসক শাহকে ক্ষমতায় বসায়, ভিয়েতনামে সৈন্য প্রেবণ করে গণহত্যা চালায় , ১৯৭৫-৭৬এ ইন্দোনেশিয়ায় সুকর্ণকে ক্যু করে সরিয়ে সুহার্তোকে ক্ষমতায় বসায় আর পরবর্তীতে সুহার্তোর নির্বিচারে গনহত্যাকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দান করে, প্রায় একই সময় স্বৈরশাসক পলপট যিনি নিজ দেশে ১.৭ মিলিয়ন মানুষ মারার জন্য দায়ী- তাকে পর্যন্ত নিজ স্বার্থে সমর্থন করে ‘অ্যান্টি-কমিউনিস্ট’ আমেরিকা, তারা একটা সময় এলসালভাদর আর আর্জেন্টিনায় স্বৈরশাসকদের সমর্থন করে, নিকারাগুয়ার গণতন্ত্র উৎখাত করে, জিয়াউল হকের মত মৌলবাদী সরকারকে ‘মিত্র’ হিশেবে সমর্থন করে আর তার ওহাবী ইসলাম বিস্তারে সাহায্য করে, চিলির স্বৈরশাসক পিনোচেটকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে, এমনকি সোভিয়েত রাশিয়ার আফগানিস্তান আক্রমনের ছয় মাস আগে থেকেই ওসামা-বিন লাদেনকে সাহায্য আর সমর্থন যুগিয়ে প্রকৃত ‘লাদেন’ হিসেবে গড়ে তোলে এই ‘গণতান্ত্রিক’ আমেরিকা। ইসলামী মৌলবাদের পীঠস্থান সৌদি-আরব আর তার রাজতন্ত্রকে তো এখনও মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে চলেছে। সবকিছু না হয় বাদই দিলাম, ১৯৭১ সালে বাঙালীদের উপর পাকিস্তানী গণহত্যা আর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে ‘গণতান্ত্রিক’ আমেরিকার ভুমিকা কি ছিল তা সবাই জানে। বাংলাদেশে নিয়োজিত আমেরিকান রাষ্ট্রদূতেরা সুযোগ পেলেই বাংলাভাই-এর অস্তিত্ব নিয়ে ‘সন্দেহ’ করে, কখনওবা জামাতে-ইসলামীকে ‘মডারেট গণতান্ত্রিক’ শক্তি মনে করে। তারপরও ‘আমেরিকার পলিসির’ মধ্যেই ‘মুক্তি’ খোঁজেন তথাকথিত প্রগতিশীলরা । এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, আমেরিকার সামরিক আগ্রাসনের কারণে সারা পৃথিবীতেই এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে, আর তার দায়ভাগ বহন করতে হচ্ছে আমেরিকার জনগণকে। সৃষ্টি হচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা, বাড়ছে বেকারত্ব। সাম্রাজ্যবাদের প্রতিঘাতকে ঠেকাতে জোরদার করতে হচ্ছে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। অপরদিকে আমেরিকার শঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়ে চীনের মত দেশগুলো দ্রুতগামী অশ্বের মতই প্রতিদ্বন্দ্বী হিশেবে উঠে আসছে, উঠে আসছে পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশগুলো। আমেরিকা সারা জীবনই ‘ক্ষমতার শীর্ষস্থানে’ থেকে যাবে এ ধারণায় যারা বিশ্বাস করেন তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ভুলে গেছেন। সাম্রাজ্যবাদের পতনের পর তার তোষণকারী সুবিধাভোগী অংশটিও অচীরেই আস্তাকুড়েই নিক্ষিপ্ত হবেন।

এ ধরণের প্রবন্ধ আমি অজস্র লিখেচছি। এর পরেও বলবেন, আমি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে কিছু লিখি নাই, কিছু লিখি না? আমি মার্ক্সিজম নিয়ে আরটিকেলটা লিখার পর থেকেই দেখছি আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে আমাকে 'লোভি', 'ছাগল', 'বেকুব' নানা অভিধায় অভিহিত করে যাচ্ছেন আপনি এবং আপনার 'বিপ্লবী' সহচরেরা। কখনো আমার 'মানব দরদ' নিয়ে প্রশ্ন করছেন, কখনো বা প্রমান করতে চাইছেন আমি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী। এটা কি অবজেক্টিভ উত্তর হচ্ছে?

এখন বলছেন, মার্কস সমাজতন্ত্রে (হবে সাম্যবাদে) সকল দ্বন্দ্বের অবসানের কথা বলেছেন, এটা কেমন কথা? এটা আসলেই কোনো কথা না।

আপনি আরেকবার কষ্ট করে মার্ক্স এবং এঙ্গেলসের অরিজিনাল কথাগুলা পড়েন।

মার্কস বলেছেন, সাম্যবাদে উত্তরণের মধ্যে দিয়ে মানবজাতি ব্যক্তি মালিকানা বনাম সামাজিক উৎপাদনের বর্তমান দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পাবে। সেখানে মানুষে মানুষে আর কোনো বৈরি দ্বন্দ্ব থাকবে না, থাকবে বৈচিত্র্যের (প্লুরালিটি) মিত্রতামূলক দ্বন্দ্ব।

খুবই ভেগ এবং ইউটোপিয়ান ধারনা। পোস্ট রিভ্লুশনারি ওয়ার্ল্ড নিয়ে কোন ডিটেইলই নাই - কেবল কতগুলা আবেগী কথা- সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হইয়া গেলে - মানুষে মানুষে আর কোনো বৈরি দ্বন্দ্ব থাকবে না, থাকবে বৈচিত্র্যের (প্লুরালিটি) মিত্রতামূলক দ্বন্দ্ব।! আহারে, এগুলা স্বপ্ন দেখন সহজ কিন্তু এইগুলারে বৈজ্ঞানিক কইলে আমার কোন কথা নাই আর।

তবে আমার মনেই হয় মার্ক্স এঙ্গেলস যেভাবে ক্লাসলেস সোশাইটি গঠন কইরা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করাটাই 'উদ্দেশ্য' হিসেবে নির্বাচিত করছিল- সেইটাই পরম বলে মনে করেছিলেন। সেজন্যই বলেছিলেন -

"With this social development, the prihistory of society ends"

এঙ্গেলস ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট করেছে এভাবে -

"The sate must itself disapear, its hitherto political charecter will be transformed into the simple adminstrative functions of watching over real social interests"

সেটাই হবে মানুষের সত্যিকার ইতিহাসের সূত্রপাত। মার্ক্সিয় দর্শনে যার প্রাথমিক ধারণা আছে, সেই জানে যে, এই দর্শনে না সাম্যবাদ, না প্রলেতারিয়েত কোনো কিছুই পরম নয়, পরম হলো দ্বান্দ্বিকতা।

দ্বান্দ্বিকতা থাকাটাই যদি মূখ্য হয়, তবে সাম্যবাদের পেছনে ধাবিত হওয়ার আর কি দরকার। এখনকার সমাজে তো দ্বান্দ্বিকতা আছে পুরোমাত্রায়। পরম সাফল্য তো অর্জিত হইয়া গেছে মনে হয়। আর কেন খামাখা সোনার হরিনরূপী 'মিত্রতামূলক দ্বন্দ্ব' -এর পেছনে ছোটা!

মানুষ নিজেকে দেখার আগে অপরকে দেখে। আপনি এখন আমাদের দেখছেন, এরপর নিজের অঙ্গনেও তাকাবেন, সেই আশা তবুও রাখছি।

আমাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী বানিয়ে আপনি তারপর এ কথাগুলো বলেছেন। কাজেই এ নিয়ে আমি আর কিছু বলছি না। আপনি দ্বান্দিক বিশ্লেষনে যেটাকে আমার অঙ্গন ভেবে সিদ্ধান্তে পৌছেছেন, সেটা আমার কোন অঙ্গন নয়- এটা শুধু বলতে পারি। আর তাছাড়া তথাকথিত 'নিজের অঙ্গনেও আমি তাকাই তার উদাহরণ আমি উপরেই দিয়েছি। শুধু একটা কথা -

এই ব্লগে নতুন নতুন মার্কিস্টের আবির্বভাব হইছে । এমনে তো বাত্তি লাগায় এগো পাওন যায় না। আপ্নে এক্সময় অভিযোগ করছিলেন আপ্নেরে জবাব দেওনের লাইগাই নাকি কারো কারো রহস্যময় আবির্ভাব ঘটত। সেই ব্যাপারটা আমিও অনুভব করছি ইদানিং! নিচেই এইরকম একটা রেসপোন্স আছে, ইউনিটির স্বার্থে যারে আপ্নে সঙ্গে রাখতে চাইছেন। ইউনিটির জয় হোক। সত্যই বোধ হয় আমাদের সবারই নিজের অঙ্গনে তাকানো দরকার। এটাই এই থ্রেডে আমার শেষ জবাব।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

জাতিশ্বর এর ছবি

]এটাই এই থ্রেডে আমার শেষ জবাব।

এটা দিয়েই আপনি লেখা শেষ করেছেন।সুতরাং এই মন্তব্যের জবাব হবেনা জেনেই লিখছি,কেননা আপনি অনাবশ্যকভাবে আমাকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে ফারুক ওয়াসিফ কে পাটকেলটি মেরেছেন।বেশ।আপনাদের দুজনের একটা বিষয় নিয়ে বাকযুদ্ধ(যদিও এখন আর এটা বলা যায়না,শেষের দিকে এটা দাঁড়িয়েছে নোংরা তুল্যসঙ্ঘাতে)
আমিও ভেবেছিলাম ৯সেপ্টম্বর লেখা কমেন্টটাই আমার শেষ কমেন্ট,কিন্তু প্রায় একই ভাষায় এবং ঢঙে আপনি সুবিণয় মুস্তফী'র মত
ব্লগে নতুন আগমন নিয়ে বিরক্তিকর মন্তব্য করলেন।সে কারণে আপনার কিছু কথা শোনা ফরজ হয়ে গেল।

এই ব্লগে নতুন নতুন মার্কিস্টের আবির্বভাব হইছে । এমনে তো বাত্তি লাগায় এগো পাওন যায় না। আপ্নে এক্সময় অভিযোগ করছিলেন আপ্নেরে জবাব দেওনের লাইগাই নাকি কারো কারো রহস্যময় আবির্ভাব ঘটত। সেই ব্যাপারটা আমিও অনুভব করছি ইদানিং! নিচেই এইরকম একটা রেসপোন্স আছে, ইউনিটির স্বার্থে যারে আপ্নে সঙ্গে রাখতে চাইছেন। [/quote
১। কথাটা আপত্তিকর।
আপনাদের ব্লগ পড়তে যাওয়ার অর্থ 'আবির্ভাব ' কি-না, সেটা মডারেটররাই বলতে পারবেন। এইসব 'আবির্ভাব 'পছন্দ না হলে নোএন্ট্রি করে দিলেই তো পারেন।

২। আমার কোন 'রহস্যময় আবির্ভাব ' ঘটেনি। আপনাদের আর কোন পোস্টে আমার কোন কমেন্ট পাবেন না। শুধু এই বিষয়টা টেনেছিল বলে লিখেছিলাম,এটা সুবিনয় এর প্রতিউত্তরেও বলেছি। ফারুক ওয়াসিফ আমার কমেন্টে রেসপন্স করেছে বলেই কি ধরে নিলেন, তিনি আমাকে ইউনিটির স্বার্থে সঙ্গে রাখতে চেয়েছেন ?এখন তো আপনাকেই আমার প্রবলভাবে সন্দেহবাতিকগ্রস্থ হামলাকারী মনে হচ্ছে !

যাহোক,এখানে আর মার্কসবাদ নিয়ে কিছু বলছিনা। আপনি মাকর্সবাদের দ্বিগগজ পন্ডিত এ নিয়ে আর দ্বিমত করার কিছু নেই। কেননা দ্বিমত করলেই আবার আপনার আদি ঢাকাইয়া খোমক এবং বচন শুনতে হবে(যতই শেষ বলেন না কেন),তবে একটা বিষয়ে বহিরাগত হিসেবে অনুরোধ বোধহয় করতে পারি: একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ফেঁদে সেখানে আপনাদের সার্কিটের বাইরের কেউ আলোচনায় অংশ নিলে ভদ্রজনেরা এই ভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় তা এখানে এসে দেখলাম। অভিজ্ঞতা হলো।আপনার শেষ প্যারায় এসে ব্যাপারটা এতই দিগম্বর হয়ে গেল যে, আপনি প্রচন্ড রেগেছেন,ক্ষেপেছেন এবং আক্রমন্ত্মক হয়েছেন।তাতে করে আপনার ভাষা-বাচনভঙ্গী-শব্দচয়ন সবই প্রমান করে দিয়েছে ত্বাত্ত্বিক গুরুগম্ভির বিষয়ের অবতারণা করলেও, এই সব বিষয়ে যতকিঞ্চিত্ পড়াশুনা করলেও কিছু কিছু পুরোনো গ্রাম্যতা ত্যাগ করতে পারেননি।
ভবিষ্যতে এই বিষয়ে লেখা হলে আবারো দেখা হবে(যদি এ্যাকসেস মেলে)।

জাতিশ্বর এর ছবি

আর একটা কথা। যদ্দুর জানি মিখাইল বুলগাকভ (১৮৯১-১৯৪০) এর যে পঙতি আপনার 'সিগনেচার' হিসেবে ব্যবহার করেছেন ওটা হবে---‌‌'পান্ডুলিপিরা পুড়ে যায়না '।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনি দেখি এক জায়গায় অসমর্থ প্রমাণিত হলে আরেক জায়গায় গিয়ে থই খোঁজার চেষ্টা করছেন। এখন বলছেন, মার্কস সমাজতন্ত্রে (হবে সাম্যবাদে) সকল দ্বন্দ্বের অবসানের কথা বলেছেন, এটা কেমন কথা? এটা আসলেই কোনো কথা না। মার্কস বলেছেন, সাম্যবাদে উত্তরণের মধ্যে দিয়ে মানবজাতি ব্যক্তি মালিকানা বনাম সামাজিক উৎপাদনের বর্তমান দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পাবে। সেখানে মানুষে মানুষে আর কোনো বৈরি দ্বন্দ্ব থাকবে না, থাকবে বৈচিত্র্যের (প্লুরালিটি) মিত্রতামূলক দ্বন্দ্ব। সেটাই হবে মানুষের সত্যিকার ইতিহাসের সূত্রপাত। মার্ক্সিয় দর্শনে যার প্রাথমিক ধারণা আছে, সেই জানে যে, এই দর্শনে না সাম্যবাদ, না প্রলেতারিয়েত কোনো কিছুই পরম নয়, পরম হলো দ্বান্দ্বিকতা। আবারো বলি দ্বান্দ্বিকতা মানেই সংঘাত নয়। এইজন্যই বলছি, চিলে কান নিয়ে গেছে না শুনে কানে হাত দিয়ে দেখেন।

এরপর বলছেন,

আমি নিজের চোখে দেখেছি সামান্য প্রগ্রামাুর(মেন্টাল লেবার) হিসবে কোম্পানিতে জয়েন করে শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার শেষ করছে কোম্পানির সিইও পোজিশনের কাছাকাছি কোথাও এসে। কোম্পানির স্টক কেনা, ইন্স্যুরেন্স অন্যান্য বেনিফিটের কথা না হয় বাদই দিলাম।

বেশ মজা তো? পশ্চিমে তাহলে সকল মেন্টাল লেবার অচিরেই সিইও হয়ে যাচ্ছে। তা ভাল। তাহলে এত এত সিইও-কে সিই-ও রাখার জন্য কত শ্রমিকের দরকার হবে? দরকার হবে কত শোষণ?
মেন্টাল লেবার কি শোষিত হচ্ছে না? আপনার লেবার দিয়ে যে মূল্য তৈরি হচ্ছে, তার কত অংশ মজুরি বাবদ দেয়া হয়? আমার আসলেই দুঃখ হচ্ছে নিজের ব্যর্থতায়। আপনি বোধহয় আমার লেখাগুলোও মন দিয়ে পড়েননি!!!

আমি লেলিনের উক্তি কোট করেছি অথেন্টিক সাইটেশন থেকেই।

লেলিন নয়, লেনিন। তাঁর ওই সাইটেশন যে খণ্ডিত তার পক্ষে আমি কিছু বাক্য খরচ করেছি ওপরে। সেটা দেখলে আপনার ওই অথেন্টিক সাইটেশন যে, অপ্রতিনিধিত্বশীল ও খণ্ডিত সেটা ধরতে পারতেন। লেনিনের অন লিটারেচার নামে একটা সংকল পাওয়া যায়, সেটা দেখতে পারেন। রুশ মার্ক্সিস্ট সাহিত্য সমালোচনা যথেষ্ঠ উদারই ছিল, কিন্তু তাদের গলদ ছিল এই যে, সাহিত্য সমালোচনাকে বাস্তববাদের নামে কিছূটা সমাজতান্ত্বিক মাপকাঠিতে দেখা। সেটার সমালোচনা ভাসকুয়েজ, জেমসন, ঈগলটন প্রমুখ মার্কসবাদীরাই করেছেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নে ২ কোটি লোক, সাড়ে ৬ কোটি লোক চীনে, ১০ লাখ লোখ ভিয়েতনামে, ২০ লাখ লোক উত্তর কোরিয়ায়, ২০ লাখ লোক কম্বোডিয়ায়, ১০ লাখ লোক পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে, দেড় লাখ লোক পূর্ব ইউরোপে, ১৭ লাখ লোক আফ্রিকায়, ১৫ লাখ লোক আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট শাসনামলে নিহত হয়। --- এরা কি সব বানের জলে ভেসে এসেছে? শুধু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে গাল পাড়লেই কি সব কিছু বৈধ হয়ে যাবে?

খেমাররুজদের ব্যাপারে যে ভুল করেছেন তা স্বীকার করায় আশা জাগছে, যে বাকি বিষয়েও কাছাকাছি আসতে পারবো। স্ট্যালিন জমানার গোড়ায় রাশিয়ায় একটা গৃহযুদ্ধ হয়েছিল, সেখানে ব্রিটেন-ফ্রান্স প্রমুখ রাষ্ট্রের সহায়তায় জারের অবশেষরা বিপুল পরিমাণে অন্তর্ঘাত চালায়। সেই যুদ্ধ উভয় পক্ষে বিপুল লোক নিহত হয় প্রায় দশ বছরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার দুই কোটি লোক মারা যায়। এর বাইরে, বাইরের অন্তর্ঘাত এক লহমার জন্যও বন্ধ হয় নাই। সেগুলো ঠেকাতে আর অতি বিশুদ্ধতবাদের প্রকোপে বেশ কিছূ অনাচারও হয়েছিল। সেগুলোর কঠোর সমালোচনা অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু গড়ে বলে দেওয়াটা সততা হয় না। দুই কোরিয়াতেও সাম্রাজ্যবাদের ইন্ধনে যুদ্ধ হয়েছে। আফগানিস্তানে সেভিয়েত অনুপ্রবেশ ভুল ছিল । ফাঁদে ফেলে প্ররোচিত করে আমেরিকা সেখানে ভিয়েতনামের প্রতিশোধ নিয়েছে। কম্বোডিয়ার টা তো ভুল দেখালঅমই। যাহোক, এই পয়েন্টটা পরে আলোচনা করবো বলে ধরিনি। এখন উল্লেখ করে গেলাম। আবারো বলা হবে। কারণ, আপনার সকল অভিযোগ এখন এই ফাঁপানো পরিসংখ্যানে এসে ঠেকেছে যেহেতু।
জানি আমার ওপরের কথাগুলো ধরেই এখন আপনার/দের সমালোচনার গরল বইবে। সেগুলোর যা মানা দরকার তা মানতে অবশ্যই কুণ্ঠা করবো না।
তবে কথা কি, আপনার জবান ও কলম থেকে গণহত্যা ও মানব-বিধ্বংস কারী মার্কিন-ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে যে কোনো সমালোচনা বেরয় না, তাতে বিষ্ময়ের কিছু নাই। মানুষ নিজেকে দেখার আগে অপরকে দেখে। আপনি এখন আমাদের দেখছেন, এরপর নিজের অঙ্গনেও তাকাবেন, সেই আশা তবুও রাখছি।
.................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মানবতাবাদী অবস্থান থেকে সাম্রাজ্যবাদের কার্যকলাপের (যুদ্ধ ও আগ্রাসন) বিরুদ্ধে আপনার সমালোচনা দেখে আনন্দিতও হলাম এবং দুঃখও প্রকাশ করলাম। বুঝলাম, আপনাকে এস্টিমেট করায় আমার কিছু ভুল হয়েছিল।

যাই হোক, ইউনিটি, নতুন ব্লগারদের আবির্ভাব নিয়ে আমি আগে একটা কমেন্ট করে সেটা আর পোস্ট করা হয়নি। আজ মনে হচ্ছে সেটা করাই উচিত ছিল। তাতে আপনার সন্দেহবাতিকতায় কিছুটা জল পড়তো। বিষয়টা তোলা কেবল অশোভনই নয়, সচলের ম্যানারিজমের দিক থেকে সংকীর্ণতা।
যাহোক. এই বিতর্ক এখানেই শেষ করছি। তবে এই লিংক ধরে গেলে দেখতে পাবেন, মান্যবর পি মুন্সী আপনার উত্থাপিত আলোচনার সূত্র ধরে মার্কসবাদ ও বিজ্ঞান বিষয়ে একটা পোস্ট দিয়েছেন। আপনার অতীব কাজে লাগতে পারে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

জাতিশ্বর এর ছবি

অভিজিত্ এর 'মার্কসবাদ কি বিজ্ঞান',গত পাঁচ দিন ধরে পড়ছি।আমরা যারা বাইরে থেকে পড়কে আসি তাদের কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে।সে কারণে মন্তব্য করা বা পোস্ট করায় কিছুটা সমস্যা থাকেই।

অভিজিত্ এর লেখা এবং পাঁচ-ছ' দিনের জমে ওঠা মন্তব্য-প্রতি মন্তব্য পড়ার পর এবং ফারুখ ওয়াসিফের এই লেখা পড়ার পর মনে হয়েছে একদল মানুষ চাইছেন...একটা সংবেদনশূল,পরিবর্ধণশীল,পরিবর্তনশীল সমাজ বিজ্ঞান কে নিরেট বিজ্ঞান আখ্যা দিয়ে প্রমানের ফ্রেমে ফেলে বাতিল বলে প্রতিয়মান করা,অথচ বাক্যপটুতায়,বাক্যগুরুগম্ভিরতায় এবং রেফারেন্সতুল্যতায় তা যেন প্রতিয়মান হয় 'দেখুন ভাই আমি মার্কসবাদের পক্ষেই' ধরণের সিদ্ধান্তে !এই প্রায়-নিখুঁত বুদ্ধিবৃত্তিক জালিয়াতি তে আর যাই থাকুক কোন সত্ উদ্দেশ্য নেই।
পাশা পাশি অন্য দল চাইছেন অভিজিত্ এবং ওই পক্ষের তার্কিকদের 'আসল মার্কসবাদ' বোঝাতে !প্রথম পক্ষ যা করেছেন তা জেনেবুঝেই করেছেন।উত্তরাধুনিকতাবাদী চিন্তাবিদেরা এটা কিছু পরিমানে কোশেশ না করেই করে ফেলতে পারেন,এবং এটা আনকোরা নতুন কোন গিমিক নয়।মার্কসবাদ বিশ্বজনীনতা পাওয়ার আগেও এ নিয়ে মার্কস-এঙ্গেলস কে সংগ্রাম করতে হয়েছে।

আমি হুট করে ইন করায় আশা করি কেউ রুষ্ঠ হবেন না। দুই পক্ষ কেই বিনীত ভাবে অনুরোধ করব আপনাদের এই 'প্রমান করার বিষয়' নিয়ে আরো ব্যাপক বিতর্ক করার আগে এঙ্গেলস যে ডুরিং সাহেব কে খারিজ করেছিলেন সেই 'এ্যান্টি ডুরিং' কিতাব খানা পড়ুন,এবং মার্কস যে প্রুধোবাদকে প্রমান করে দিয়েছিলেন সেটাও ঘেটে দেখুন।ইচ্ছা করলে Ralf Dahrendorf এর Class and Class Conflict in Industrial Society, London,2nd Impression,1961 ও পড়ে দেখতে পারেন।
যে বিষয়টা মার্কসের আমলে একাধিকবার জবাবিত হয়েছে, পরবর্তিতে আরো অনেকবার খারিজকৃত তা নিয়ে নুতুন করে ভেনডোরার বাক্স খুলে বসার একটাই অর্থ হতে পারে, এর তা হলো কারেন্ট সোসিও ইকোনমিক স্ট্রাকচারের ঘুর্নয়মান জটিল সমীকরণে মাকর্সবাদ কে ফেলে তাকে সেকেলে বা বাতিলযোগ্য প্রমানের বালখিল্য চেষ্টা।

আরো পরে আলোচনার আশা রইল। ধন্যবাদ।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

পরিবর্ধণশীল,পরিবর্তনশীল সমাজ বিজ্ঞান কে নিরেট বিজ্ঞান আখ্যা দিয়ে প্রমানের ফ্রেমে ফেলে বাতিল বলে প্রতিয়মান করা,অথচ বাক্যপটুতায়,বাক্যগুরুগম্ভিরতায় এবং রেফারেন্সতুল্যতায় তা যেন প্রতিয়মান হয় 'দেখুন ভাই আমি মার্কসবাদের পক্ষেই' ধরণের সিদ্ধান্তে !এই প্রায়-নিখুঁত বুদ্ধিবৃত্তিক জালিয়াতি তে আর যাই থাকুক কোন সত্ উদ্দেশ্য নেই।

জাতিষ্মর, আপনার এই মন্তব্যে আলোচনার আরো গভীর দেশ আবিষ্কারের ইঙ্গিত পাচ্ছি। ফলত আপনার প্রতি আবেদন থাকবে, আপনি এই আলোচনার সঙ্গে থাকবেন এবং যা বলবার বলবেন। এখানে রুষ্ঠ হওয়ার কোনো পরিসর আসলেই নাই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পুতুল এর ছবি

সালোচনাটা অভিজিৎ বাবুর পোষ্ট থেকে এপর্যন্ত দেখলাম।
অনেকদিন হল এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাই না। এখনো তেমন কিছু বলার নেই। ফারুক ওয়াসিফের বলাটা আমার কাছাকাছি।

শুধু একটা জিজ্ঞাসা: মার্ক্স কোন রাষ্ট্রের ধারনা দিয়েছেন কী?

একটাই যুক্তি শোষণ মুক্তি!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সাজেদ এর ছবি

"সমাজ পরিবর্তনশীল এবং পরিবর্তনশীল সমাজের প্রেক্ষিতে মার্ক্সবাদ কখনই ওয়ান সাইজ ফিটস অল বিশ্লেষণ নয়, অভিজিৎ কিংবা সুবিনয় কিংবা অন্য যারা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে মার্ক্সবাদের প্রায়োগিক ব্যর্থতা হিসেবে মেনে নিতে নারাজ তার সম্ভবত পরিবর্তনশীলতাকে স্বাভাবিক গণ্য করতে রাজি না।"

কোন দর্শনের বার বার প্রায়োগিক ব্যর্থতাকে সেই দর্শনের দুর্বলতা বলা যাবে না?
মজা তো!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

অবশ্যই বলা যাবে জনাব সাজেদ! খেয়াল করে দেখেন, আমাদের তর্কটা প্রথমত দাঁড়িয়েছে মার্কসবাদের দার্শনিক ও রাজনৈতিক সঠিকতার বিচার বিষয়ে। প্রায়োগিক প্রসঙ্গ এর সঙ্গে ক্রমশ আলোচিত হবে।
এখানে কেবল একটা কথা বলে রাখি, পৃথিবীতে শ্রেণীহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাই নাই। রাশিয়াতে যা ছিল তা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ। এটা ষাট দশকের বলা কথা। তার মধ্যে যতটুকু সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণ হয়েছে, তা বাইরের সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে এবং ভেতরের বুর্জোয়া অবশেষের চাপে সর্বদাই ব্যতিব্যস্ত ছিল। সমাজ-ইতিহাস কোনো ল্যাবরেটিরি নয় যে, সকল ফ্যাক্টরকে আদর্শ অবস্থায় আদর্শ পদ্ধতিতে বিক্রিয়া করানো যাবে। সেহেতু দার্শনিক সঠিকতাকে প্রয়োগের বিশুদ্ধ পরিস্থিতির সাপেক্ষে বিচার করতে হয় না কি?
কিন্তু আমরা দেখাব, অন্য পদ্দতিও আছে। আপনার প্রশ্নটি সেই দেখানোর বেলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে রাখা গেল। আশা করি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

P Munshe [অতিথি] এর ছবি

কার্ল পপারের চিন্তার গুছানো প্রকাশ ঘটা বইয়ের নাম The Open Society and Its Enemies, ১৯৪৫ । দুখন্ডের এই বইয়ে দ্বিতীয় খন্ডে ১৩ চাপ্টার থেকে মার্কসের সমালোচনা শুরু হয়েছে। সংক্ষেপে বইটার নাম Open Society বলে চালু। পপারের কল্পনায় তাঁর Open Society কেমন হবে, এর শত্রু কারা, কেমন রাষ্ট্র হবে, সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হবে, রক্তপাতহীন ক্ষমতা হস্তান্তর কিভাবে হবে, ইত্যাদি সবকিছু এর বিষয়। বলা যেতে পারে "পপারবাদ" এর আকর গ্রন্হ এটা। এটাই তাঁর লিবারেলিজম, তাঁর চিন্তার সবচেয়ে গুছানো প্রকাশ।
আমরা কী এখন অভিজিতকে প্রশ্ন করতে পারি, পপারবাদ বা Open Society বিজ্ঞান কী না? পপারবাদী বিজ্ঞান হলেও অসুবিধা নাই।
এই কথায় অভিজিতের মনে হতে পারে পপারবাদের "স্টালিন" নাই, তাই এর প্রয়োগ দেখানো যাচ্ছে না। তো, পপারবাদের "স্টালিন" চিনিয়ে দেই।
পপারকে জন্মদেশ অষ্ট্রিয়া (তৎকালীন অষ্ট্রিয়-হাংগেরি ) ছেড়ে নাজীদের ভয়ে নিউজিল্যান্ডে মাষ্টারি করে শেষে লন্ডনে থিতু হয়ে বসেছিলেন। তাঁর স্বদেশী আজকের জমানার জগৎ বিখ্যাত বিনিয়োগকারী (global financier), ক্ষমতাধর, দাতব্যধর (philanthropist) ব্যক্তি হলো হাংগেরিয়ান-আমেরিকান জর্জ সোরোস (George Soros)। তিনিই পপারবাদের "স্টালিন"। পপারবাদে আপ্লুত হয়ে এর বাস্তবায়নে তিনি নিজের নামে নামের ফাউন্ডেশন এর মালিকানায় Open Society Institute খুলেছেন, কমপক্ষে ৫৮ টা দেশে তাঁর কাজকর্ম বাস্তবায়ন চলছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত লক্ষ্য হলো, foundations that promote, among other things, the creation of open, democratic societies based upon the rule of law, market economies, transparent and accountable governance, freedom of the press, and respect for human rights. দেখেন কিছু মিল পান না কী!
আর ওদিকে, জগৎ বিখ্যাত নিজের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তাঁর Institute বলছে, In 1967 he helped establish an offshore investment fund; and in 1973 he set up a private investment firm that eventually evolved into the Quantum Fund, one of the first hedge funds, through which he accumulated a vast fortune.
এ'কেমন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান? বাংলায় বললে হবে, টাকা দিয়ে টাকা কিনে এবং বেচে দেয়া - এর কাজ। বিভিন্ন দেশের স্হানীয় মুদ্রা (শেয়ার সার্টিফিকেট) কখনও দেদারসে কিনে আবার দেদারসে বেচে চলে যায়। স্পেকুলেশন যাকে আমরা ফাটকাবাজি বলি; যার অত্যাচারে আজকের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার, তেলের দাম এমনকি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) সবসময় বেপরোয়াভাবে অস্হির। এই সেই ফাটকাবাজি বিনিয়োগ ব্যবসা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মানে যার কাজ হলো - বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় ব্যায় ও এর ব্যালেন্স সীটের খবর রাখা, মুদ্রা ছাড় করানো, মুদ্রার মান (বাজার দর) মনিটর নির্ধারণ করা, বিভিন্ন দেশের স্হানীয় কোষাগার ব্যবস্হাপনা (ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট) কীভাবে করবে (IMF) সেই হুকুম বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে এই শর্তে বৈদেশিক মুদ্রা ধার দেওয়া ইত্যাদি সব কিছুর মাধ্যমে পুঁজির আন্তর্জাতিক বিচলন ব্যবস্হাপনাকে সচল রাখা। আন্তর্জাতিক পুঁজির এই জগৎব্যাপী স্বার্থ (Global interest) রক্ষার এই কাজকেও প্রতি মুহুর্তে বেসামাল হবার হূমকির মধ্যে রাখছে ও রাখতে সক্ষম এই ফাটকাবাজি বিনিয়োগ ব্যবসা। এর চেয়ে কম কথায় এই hedge funds সম্পর্কে বলতে পারলাম না। জর্জ সোরোসের এই ক্ষমতা তৎপরতার একটা উদাহরণ দিয়ে প্রসঙ্গ শেষ করবো। সারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ১৯৯৭ সালে উত্তাল হয়ে গিয়েছিল একে একে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া - প্রত্যেকের দেশীয় মুদ্রার দর পতনে অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছিল। একা মালয়েশিয়ান রিংগিত এর মুদ্রামান ৩৫-৪০% নীচে নেমেছিল। মাহাথির জনসমক্ষে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে দায়ী করেছিলেন "ঠগবাজ ফাটকাবাজি ও পরাশক্তিকে" (rogue speculators' and 'great powers,') এবং আরও সুনির্দিষ্ট করে বলেছিলেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যাপারি George Soros ও আমেরিকার নাম। অবশ্য Soros নিজের ইজ্জত বাঁচাতে জবাব দিয়েছিলেন, Mahathir an autocratic 'loose cannon' and a 'menace to his own country.'। অভিজিতের যুক্তি অনুসারে, পপারবাদের এই স্টালিনের অর্থাৎ প্রয়োগকর্তার দায় নিশ্চয় পপারের। পপারের Open Society unrestrained 'capitalist system' এর বিরুদ্ধে বিস্তর কথা খরচ করেছে। George Soros তৎপরতাকে unrestrained 'capitalist system' বললে কমই বলা হবে। তাহলে আমরা কী সিদ্ধান্তে আসতে পারি পপার ব্যর্থ, পপারবাদ অবৈজ্ঞানিক?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

পি মুন্সী, আপনাকে আবারো অভিনন্দন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

p munshe [অতিথি] এর ছবি

উপরে আমার মন্তব্যের ধারাটা অভিজিতের যুক্তি অনুসরণে, আমার নয়।
আমি মনে করি, পপারের সমালোচনা পপারের মূল রচনার উদ্ধৃতি দিয়ে করা উচিত। বিশেষত যখন পপারের Open Society সোরোসের গুণে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও তার সমর্থক "সুশীল সমাজের" মতাদর্শগত ভিত্তি হয়ে গেঁড়ে বসতে চাচ্ছে। এই কাজটা আলাদা পোষ্টে অল্প কিছুদিনের মধ্যে হাজির করবো।

জিফরান খালেদ এর ছবি

পপারের এই মহা ভক্তের কথা আনলেন দেইখা খুশি হইলাম। সে সরাসরি পপারের শিষ্যত্ব গ্রহণ করসিলো এলএসই তে থাকাকালে। তার যে পলিসি মেকিং, সেইটাও পপারের ওপর দাড় করানো।

এই লোকরে অনেকে রবিন হুড কই। সোরোসের কথা কই। আফ্রিকাতে এর অবদান নাকি অনেক। কিছুদিন আগে আইসিলো এলএসইতে। তার তত্ব আবার প্রচার কইরা গেলো। তারে ইংল্যান্ড দেখতে পারে না। মানে, ব্যঙ্ক অফ ইঙ্গল্যান্ড। তার জন্যেই তো ব্ল্যাক ওয়েডনেসডের লাইগা। সে এক ঘটনা আসিলো। তবে, তার অর্থনৈতিক রাহাজানির তো শেষ নাই।

আমি কার্ল পপাররে আনলে এই কারণে আনতাম না কখনোই। কার্ল পপার আমার কাসে শ্রদ্ধার পাত্র হয়া থাকবেন ভিয়েনা সার্কলের যে যৌক্তিক পরমাণুবাদ, সেইটারে আগায়া নেয়ার জন্যে। সেদিক থিকা, মরিস শিল্কের পরে আমি তারে গুরু মানি।

বিপ্লব পাল এর ছবি

বিজ্ঞানের দার্শনিক কার্ল পপারের বরাতে মার্কসবাদকে ভুল প্রমাণের উৎসাহ এখান থেকেই তিনি পেয়েছেন। কার্ল পপারের অবদান বিজ্ঞানের যথাযথ মেথড কী তার পর্যালোচনার বেলায়। পপার দাবি করেছেন, বৈজ্ঞানিক থিওরির বেলায় ইনডাক্টিভ পদ্ধতি শ্রেয় নয়। কাক কালো এটা তাঁর কাছে সত্যবচন নয়, যে সকল কাক দেখা যায়, সেগুলো কালো এই-ই তাঁর পদ্ধতি। যদি দেখা যায় যে, একটি কাক সাদা, তাহলে আগের বলা সত্য বদলে যাবে। সংক্ষেপে এটাই তাঁর ফলসিফায়েবিলিটির তত্ত্ব। কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাসে দেখা যাবে, সকল আবিষ্কারই এই পদ্ধতিতে হয় নি। উল্টোভাবেও অর্থাৎ কাক কালো ধরে নিয়েও যাত্রা হয়েছে। অনেক আবিষ্কারই ঘটেছে একেবারে উল্টো জিনিষ ধরে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। আবার নিউটন যেভাবে গতিবিদ্যা বুঝেছেন, আইনস্টাইন এসে সেটাকে ভুল প্রমাণ করলেন। তার মানে কি নিউটন বাতিল হলেন? না, তা হলেন না, পার্থিব মাত্রায় তিনি তখনও ঠিকই থাকলেন, কিন্তু মহাবৈশ্বিকমাত্রায় তাঁর গতিবিদ্যা ও অভিকর্ষ তত্ত্ব বাতিল হয়ে গেল নিউটনের আপেকিতার তত্ত্বের কাছে। এরপর কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এসে আরেকটা প্যারাডাইম শিফট ঘটালো। এই তিনটি রদবদলই কি পরস্পরের ত্রে তৈরি করেনি? আবার একইসঙ্গে এদের মধ্যে দ্বান্দ্বিক বিরোধও পাওয়া যায় না কি? এদের জন্য অভিন্ন মেথড কীভাবে সম্ভব?

>>
লেখক পপারের দর্শন কিছুই বোঝেন নি-এবং না বুঝে পপার নিয়ে এখান ওখান থেকে টুকে পন্ডিতি ফলিয়েছেন। পপার যে সমস্যাটার সমাধান করেছিলেন-সেটার নাম ডিমার্কেশন প্রবলেম-আমরা অভিজ্ঞতা থেকে সে সব ইন্ডাক্টিভ সত্যে উপনিত হয় তার মধ্যে সব ই কি বিজ্ঞানের সূত্র হবে?
পপারের পি এই এচডি থিসিস ছিল মার্ক্সবাদের ওপরে। এবং তিনি এটাই বোঝার চেস্টা করছিলেন মার্ক্সবাদের সাথে
নিউটনের গতি সুত্রের মিল কি থাকতে পারে? এই সমস্যা বোঝার জন্যে হিউমস ইন্ডাকশন বোঝা দরকার।

যেমন ধরুন লেনিন বললেন পুঁজির সর্বচ্চ স্তর সাম্রাজ্যবাদ-উনি ডাটা দিলেন ইউরোপ থেকে

তাহলে এই 'রাজনৈতিক সত্যটি' কি অন্য উপমহাদেশের জন্য ও সত্যি?
তিনি যে সময় লিখেছেন তার জন্যে না হ য় সত্য। কিন্ত ভবিষ্যতের জন্য ও এটি সত্য হবে
এই ইন্ডাকশন কি করে বলা যায়? তার দার্শনিক ভিত্তি কি?

এটি যেকোন বৈজ্ঞানিক সত্যের সাধারন সমস্যা। পরীক্ষা করা হ য় খুব ছোট এক সাম্পলের ওপর-কিন্তু আমরা
সেই সত্যটা কি ইন্ডাকশন করি অনেক বড় স্পেসে এবং টাইমে। এটাই হিউমস ইন্ডাকশন সমস্যা(১৭৮৪)।

এর সমাধানেই ফলসিফিকেশন লাগে। আপনি আমার একটা পুরো আর্টিকল পড়তে পারেন এর ওপরঃ
http://www.mukto-mona.com/Articles/biplab_pal/popper_marxism171105.htm

যাইহোক সমাজবিজ্ঞানের গবেষনা এখন নাল হাইপোথেসিস টেস্টিং ব্যাতিরেকে প্রায় হয় না। ৮৫% সমাজ বিজ্ঞানের কাজ নাল টেস্টিং করে। এটা না করলে টাইপ ওয়ান ভুল হয়। প্রতিটা সমাজ বিজ্ঞানের জার্নাল নাল হাইপোথেসিস এক্সেপ্ট করে। বরং সেটা না করলেই পেপারে মান খুব নিম্নমানের ধরা হয়। অর্থাৎ পপারের ফলসিফিকেশন এখন ও সমাজবিজ্ঞানের গবেষনায় সুপ্রীম। আর পারাডিম শিফটের গল্প তার আবিস্কারক কুন ই এখন অস্বীকার করেন-আর আপনারা নিয়ে নাচানাচি করছেন। বাস্তবে নাল হাইপোথেসিসের দৌলতে সমাজ বিজ্ঞানে পপার এখনো সুপ্রীম।
এর মানে অবশ্য মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান নই তাও না। বর্তমান সমাজবিজ্ঞানীরা মার্ক্সবাদকে অতি সরল অবস্থার বিজ্ঞান বলেন। আমার এই আর্টিকলের শেষ পাতাটি দেখতে পারেনঃ
http://biplabpal2000.googlepages.com/America11.pdf

আপনি পুরো লেখাটাই সামাজিক বিজ্ঞান, সামাজিক বাস্তবতা, সামাজিক সত্য ইত্যাদি নিয়ে গুলিয়েছেন।
ফলসিফিকেশন আর টেস্টেবিলিটির মধ্যে গুলিয়েছেন। মানুষ মরণশীল এটা টেস্টেবল। এটেম্পট টু ফলসিফিকেশন হচ্ছে মূল কথা পরম ফলসিফিকেশন নয়-সেটাকেই টেস্টেবিলিটি বলে। বিজ্ঞান, সুত্র, বাস্তবতা, সত্য এসব আলাদা টার্ম-সব এক করে দিলে খিচুরী হবে।

সন্দেশ এর ছবি

বিপ্লব পাল লিখেছেন:
লেখক পপারের দর্শন কিছুই বোঝেন নি-এবং না বুঝে পপার নিয়ে এখান ওখান থেকে টুকে পন্ডিতি ফলিয়েছেন।

আপনার এই লাইনটা আপত্তিকর। শব্দচয়নে আপনার আরো সর্তকতা আশা করছি।

বিপ্লব পাল এর ছবি

জর্জ সোরসের সাথে স্টালিনের তুলনা? সেই স্টালিন যিনি ৫ কোটি লোক খুন করেছেন?

মুন্সী সাহেব খুব মুন্সিয়ানা নিয়েই সোরসের অনেক কিছু চেপে গেছেন। যেমন বুশের ইরাক আক্রমনের বিরুদ্ধে সব থেকে সরব ছিলেন সোরস। শুধু তাই নয়-বুশকে সরানোর জন্যে মিডিয়াতে ডেমোক্রাটদের পক্ষে সবথেকে বেশী খরচ তিনি ই করেছে। সোরস শান্তিবাদি এবং আফ্রিকায় সিভিল ওয়ার বন্ধ করার জন্যে অনেক অনুদান দিয়েছেন। সোরস বুশকেও গণ তান্ত্রিক সমাজের "ডেঞ্জার" বলে শুধু ভাবেন না-তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও করছেন। এগুলো মুন্সি চেপে গেছেন। নইলে গপ্পোটা খাবে না। সত্যিটা কি এই ভাবে চাপা থাকে?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।