দুটো মানুষের একটি গল্প...

স্বপ্নাহত এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নাহত (তারিখ: বুধ, ২৩/০১/২০০৮ - ১২:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটি গল্প।দুটো মানুষকে নিয়ে।
এপ্রিল এর বাইশ তারিখ। বিরক্তিকর ল্যাব ক্লাশ শেষে ছেলেটি নিজের রুমে ফিরলো।কিছুক্ষণ পর কম্পিউটারের সামনে বসা ছেলেটি।অতঃপর নেটে লগ ইন।মনিটরের কাঁপা কাঁপা আলোয় ''বাংলাক্যাফে''র জনারন্যে অস্থির চোখদুটো কোন একজনকে খুঁজে বেড়ায়।অচেনা কেউ,বিকেলটা যার সাথে বসে গল্প করে কথায় কথায় কাটিয়ে দেয়া যায়।অনেকের দরজাতেই টোকা পড়লো,সাড়া এল খুব কমই।দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালো একজনই, এ গল্পের দ্বিতীয় জন।
এরপর একটি কথা।দুটি কথা।তিনটি কথা।অনেক অনেক কথা।অনেক দুপুর।অনেক বিকেল।ভূগোলের সব নিয়ম মেনে দিনের পর রাত আর রাতের পর দিন আসে।কথার ভাজে কথা জমে।গল্পের মানুষ দুজন একটু একটু করে কাছে আসে।হাতের ওপর হাত পড়ে,মনের ওপর মন। কথার বৃষ্টি ঝরতেই থাকে,থামার কোন নাম নেই।
ভালোই চলছিলো।স্বপ্নগুলো সবে বাইরে এসে আড়মোড়া ভাঙছে।নিমগ্ন দুজন খেয়ালই করেনি আকাশের এক কোণায় কেমন মেঘ জমতে শুরু করেছে।
জুলাই এর কোন এক বিকেল।ছেলেটার তারিখটা ঠিক মনে নেই।মনে রাখতে চায়ওনা সে।জীবনানন্দ এখানে স্মরণযোগ্য।কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?
মেয়েটার ফোন।ঘুমজড়ানো চোখে ছেলেটা রিসিভ করলো।ঘুম উধাও।মেয়েটার বাবা হঠাৎ প্রচন্ড অসুস্থ।আগে থেকেই মেয়েটার বিয়ের কথা হচ্ছিল।এতদিনকার দমকা হাওয়া হঠাৎ ঝড় হয়ে বেরিয়ে এলো।বিয়ে তাকে করতেই হবে।মেয়েটা নিরুপায়।ছেলেটা নির্বাক।
সেদিনই সন্ধ্যাবেলা।ছেলে আগে থেকেই বাবার পছন্দ করা,বন্ধুর ছেলে।হাসি হাসি মুখে আংটি পড়িয়ে গেল।মেয়েটার চোখের কোণে স্বচ্ছ বিশুদ্ধ জল।ছেলেটার নজরেই পড়লোনা।সে তখন স্বপ্নে বিভোর,মেয়েটার প্রতি আটবছরের একপেশে ভালোবাসা আজ অবয়ব পেতে যাচ্ছে।
গল্পের দুজনের নির্ঘুম রাত কাটে।জেগে থাকে অন্য ছেলেটাও।প্রথম দুজন স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পোড়ে।তৃতীয়জন ভাঙ্গা টুকরোগুলো কুড়িয়ে এনে জোড়া লাগায়।
কিছুদিন পরের কথা।ঢেউ অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে।মেয়েটার বাবা এখন বেশ সুস্থ।মেয়েটা সব খুলে বলে।ছেলেটার কথা,ছেলেটার চোখের তারায় খুঁজে পাওয়া ভালোবাসার কথা।সব শুনে বাবা অনড়।অন্য ছেলেটাও নিশ্চুপ।ভালোবাসার এতো কাছে এসে ফিরে যেতে চায়না সে।মেয়েটার সব চেষ্টা পানাফুল হয়ে বানের জলে ভেসে যায়।বিয়ে ভাঙ্গার অংকটা অর্ধেক পাতায় এসেই মিলে যায়।ফলাফল ''শুন্য''।
মেয়েটা কাঁদছে।অঝোরে কাঁদছে।না পাওয়ার যন্ত্রণা কান্না হয়ে গলে গলে পড়ছে মেয়েটার গাল বেয়ে।বালিশে মুখ গুজে ফোপাতে ফোপাতে সিদ্ধান্তটি নিয়ে নিলো সে।ছেলেটা চাইলে প্রয়োজনে ভালবাসার টানে ঘর ছাড়বে।আকুল হয়ে ছেলেটিকে ফোন করলো।জানতে চাইল ছেলেটি কি চায়।ফোনের অন্য পাশে জোনাকি জ্বলা নৈশঃব্দ। এক হাতের মুঠোয় ভালোবাসা,অন্য হাতে মধ্যবিত্ত পরিবারের কিছু স্বপ্নমাখা প্রত্যাশার দায়।ট্রাপিজের সরু তারে দুলতে থাকে ছেলেটির মন।যে কোন এক হাত তাকে ছেড়ে দিতে হবে।এমন কঠিন সময় তার জীবনে আর কখনো আসেনি।থেমে গিয়ে ঘড়ির কাটাও কান পেতে আছে,উত্তরের অপেক্ষায়।বুকের ওপর হাজার মণী পাথর চেপে ছেলেটি অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো।কোন কথা না বলে রইলো নিরুত্তর।মেয়েটি ততক্ষণে তার উত্তর পেয়ে গেছে।রাত্রি কালো চোখে রাত আরো গাঢ় হয়ে নামে।

১৩ জুলাই,শুক্রবার।
এই দিনটার কথাও ভুলে যেতে পারলে ভালো হত।কিন্তু বাস্তবতা বড় বেশি কিপ্টেমি করে,মানুষের সব চাওয়া পূরণ করে দেবার মত উদারতা তার কোন কালেই ছিলোনা। ছেলেটারও তাই আর ভুলে যাওয়া হয়না।লাল শাড়িতে দুঃখগুলোকে পেচিয়ে পরিবারের সবচেয়ে আদরের ছোট মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়।সবাই অনেক খুশি,মেয়েটি খুশি হয়েছিল কীনা তা জিজ্ঞেস করার মত সময় কারোরই ছিলোনা।
তারপর......??
দুটো হৃদয় ভাঙার আটপৌরে এই গল্পের এখানেই আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি।আড়ালে আড়ালে গল্পের মানুষ দুজনের গল্প তবু এত অল্পেই শেষ হয়ে যায়না।দুঃখরা যে এতো সহজে নিঃশেষিত হতে চায়না।
......... কলম থামিয়ে ছেলেটা এখন অঝোরে কাঁদছে।প্রিয় পাঠক,আপনি চাইলে এখনই চলে যেতে পারেন।কারণ ছেলেটির কান্নার এখনো অনেক বাকি।সে কান্না কখন থামবে তার উত্তর ক্রমশ গাঢ় হয়ে আসা রাত্রি ছাড়া আর কারো জানা নেই।

স্বপ্নাহত


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সংসার এবং প্রেম
এই দুটো একসঙ্গে রাখার কোনো মেকানিজম নেই?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

সম্ভবতঃ ত্যাগ ...

বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

অতিথি লেখক এর ছবি

জনাব, উত্তরটা অন্তত আমি জানিনা।
আর এখন জানার চেষ্টাও করিনা। লাভ যে নেই

অনিন্দিতা এর ছবি

ভালবাসার জোর খুব বেশী হলে একজনের সঙ্গেই দুটো বজায় রাখা সম্ভব। এজন্য সৎসাহস দরকার।
তবে দু নৌকায় পা দিয়ে চলার ব্যাপারে নো কমেন্ট।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অসম্ভব
একজনের সাথে দুই বিপরীত বিষয়?

সবজান্তা এর ছবি

আপনি বাদে পৃথিবীর সবাই বলবে, " নিশ্চয়ই সময়ের স্রোতে, আপনার মনের বালুকাবেলাতে থেকে যাওয়া পদচিহ্ন একদিন মুছে যাবে"

কথাগুলো বলা অনেক সহজ, কিন্তু সেই স্রোতের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা যে না করে সে কখনোই বুঝবে না।

তাই আপনার কষ্ট আমি বুঝি, এমন কথা বলার দুঃসাহস আমার নেই। তবে শুভকামনা থাকলো, যাতে তথাকথিত সেই "ঈশ্বর" আমাদের সবকিছু ভুলে যাওয়ার সেই আশ্চর্য শক্তি প্রদান করেন।
--------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভ কামনা মাথা পেতে নিলাম।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

কিছু বললাম না, কিই বা বলার আছে?

ভাবতে ইচ্ছা করছে এটা আসলে একটা গল্প, এমন ঘটনা কারও সাথে ঘটেনি ...

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাবতে না চাওয়া ভাবনা গুলোই সবচেয়ে বেশিক্ষণ মনজুড়ে থাকে।
জানিনা এটাকে ঠিক কি বলা যায়, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হবার পুরস্কার কিংবা অভিশাপ।
তারচেয়ে আসুন ভাবি এবং প্রার্থনা করি এমন ঘটনা যেন আর কারো জীবনে না ঘটে।গল্পের শেষ যেন এখানেই হয়...

- স্বপ্নাহত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।