মোবাইলের একটা কল মানে............

দিনমজুর এর ছবি
লিখেছেন দিনমজুর [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৩/০২/২০০৮ - ৪:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

dinmojur@yahoo.com
*********দিনমজুর*****************

আগের খবরঃ এবারের সিডরে বিশ্বব্যাংক পৌনে দুই হাজার কোটি টাকার ত্রান সহযোগীতা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে! এবারের দূর্যোগে সব মিলিয়ে প্রাপ্ত বৈদেশিক সহযোগীতা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে খবরে প্রকাশ!!!!

আসুন অংক কষি।
পাটীগণিত।
কিছু যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ।

কয়েকটি মোবাইল কোম্পানি(অপারেটর) দিয়ে শুরু করি। নরওয়িজান গ্রামীণ ফোন, ইজিপশিয়ান বাংলালিংক, মালয়েশিয়ান একটেল, সিঙ্গাপুরিয়ান(সিংটেল) সিটিসেল (কয়েকটি কোম্পানিতে বাংলাদেশী শেয়ারও অবশ্য কিছু আছে)। .............

গ্রামীন ফোনের ঘোষিত গ্রাহক সংখ্যা ১৬ মিলিয়ন,
বাংলালিংকের ৫.৫ মিলিয়ন,
একটেলের ৫ মিলিয়ন,
সিটিসেলের ২মিলিয়ন......

সর্বমোট ২৮.৫ মিলিয়ন। মানে ২কোটি ৮৫ লক্ষ।
ধরি ৩৫ লক্ষ সিম আনইউজড।
তাহলে, অ্যাকচুয়াল গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ২.৫ কোটি।

এবার আসি কলরেটে.......
সিটিসেলের ২৫ পয়সা/মিনিট বা বাংলালিংকের ২৯ পয়সা/মিনিট বা গ্রামীনের ৬০ পয়সা/মিনিট স্পেশাল অফার থেকে শুরু করে নানা রকমের বাহারি প্যাকেজে নানা ধরনের কলচার্জ। ওয়ান টু ওয়ান বা ফ্রেন্ড এন্ড ফ্যামিলি নাম্বার ছাড়া অন্য মোবাইলে কল চার্জ ৯৯ পয়সা/ ১.৫০ টাকা/ ১.৭৫ টাকা (একই অপারেটর নম্বরে) থেকে ২.৫ টাকা/ ৩.০ টাকা/ ৩.৫০ টাকা (ভিন্ন অপারেটর নম্বরে) পর্যন্ত। ধরি, সরকারের ট্যাক্স ছাড়াই গড়ে কল প্রতি মোবাইল কোম্পানি গুলো নেয় ১.৫০ টাকা।

এবার তাহলে, আরেকটা এজাম্পসান করি। ধরি, প্রতি মোবাইল(প্রতি গ্রাহক) থেকে গড়ে দিনে ১০টি কল হয়। .........

তাহলে, একটি মোবাইল থেকে প্রতিদিন কলচার্জ বাবদ গ্রাহকের পকেট থেকে দিতে হয় ১.৭৫*১০= ১৭.৫০ টাকা।

২.৫ কোটি গ্রাহক প্রতিদিন দিচ্ছেন, ১৭.৫০*২.৫কোটি= ৪৩.৭৫ কোটি টাকা। ........

প্রতি মাসে আমরা দিচ্ছি ৩০* ৪৩.৭৫ কোটি= ১৩১২.৫ কোটি টাকা.........

মোবাইল কোম্পানি গুলো এটাকা আমাদের পকেট হাতিয়ে নিয়ে বিনিময়ে আমাদের কি কি দিচ্ছে?

কর্মসংস্থান।
ধরি, ঐ চারটি কোম্পানিতে সরাসরি চাকরি করছেন ১০ হাজার জন। গড়ে প্রতিজনের বেতন ৫০ হাজার টাকা। তাহলে, আমরা ওদের কাছ থেকে মাসে পাচ্ছি, ১০ হাজার* ৫০ হাজার= ৫০ কোটি টাকা।

ওদের কাছে তারপরও থাকে, ১৩১২.৫ কোটি - ৫০ কোটি= ১২৬২.৫ কোটি টাকা। ...........

ঐ কোম্পানী গুলো ইকুয়েপমেন্ট কিনে সুইডিশ এরিকসন, জার্মান সিমেন্স, চাইনিজ হুওয়ায়েই, ফিনীশ নোকিয়া, আমেরিকান মোটরোলা..... থেকে।

ফলে, এই টাকার একটা বড় অংশ যাচ্ছে এসব ভেন্ডর কোম্পানির হাতে। এসব ভেন্ডর কোম্পানী গুলো আমাদের কি কি দিচ্ছে?

কর্মসংস্থান।
আবারো ধরি, এই কোম্পানি গুলোতেও বেতন বাবদ মাসে আমরা (মোট ১০ হাজার জন কর্মরত, মাথাপিছু বেতন গড়ে ৫০ হাজার টাকা) পাই ৫০ কোটি টাকা। .............

তারপরেও, আমরা প্রতিমাসে ঐসব বিদেশী বেনিয়াদের হাতে তুলে দিচ্ছি, ১২৬২.৫ কোটি - ৫০ কোটি টাকা= ১২১২.৫ কোটি টাকা। ...............

......................................
..........................................

বিঃ দ্রঃ
১। সবই এজাম্পশান।
২। ভ্যাট বাবদ সরকারকে যা দেয় সেটাও কলপ্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে কেটে নেয়, কলচার্জ ১.৫০ টাকা ধরা হয়েছে সেই ভ্যাট ছাড়া।
৩। প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ।
৪। পরে আরো লিখবো, আরো কিছু ফিগার সহ।

অনুশীলনীঃ
১। হিসাব করুন তো- বিশ্ব(ঘাতক!!)ব্যাংকের প্রদত্ত ভিক্ষা না নিতে আমাদের কয় মাসের মোবাইল খরচ উত্সর্গ করা দরকার?
২। সকল বিদেশী ভিক্ষা ত্যাগ করতে আমাদের কয় মাসের মোবাইল খরচ উৎসর্গ করতে হবে?


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

প্রথমত, আপনি কিছু গ্রাফিক যোগ করতে পারেন। ইউনিকোডের কল্যাণে এখন এক্সেল গ্রাফগুলোতেও বাংলা শিরোনাম বসানো যায়। স্ক্রিনশট নিয়ে বা সরাসরি কপি করে কোন চিত্রসম্পাদনা সফটওয়্যার দিয়ে জেপিজি ফরম্যাটে সংরক্ষণ করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে মোবাইলসেবাদাতাদের একরকম কাখত ব্লঁশ দিয়ে দেয়া হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে কোন দেশে ব্যবসা করতে হলে চড়া দাম দিয়ে লাইসেন্স কিনতে হয়, এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার সে দেশের পুঁজিবাজারে উন্মুক্ত করতে হয়। আমাদের সেসব কিছু হয়নি।

তৃতীয়ত, মোবাইলসেবাখাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের দেখা যায় না কেন?

চতুর্থত, রাষ্ট্রীয় ফোনপরিষেবা বিটিটিবি এই মোবাইল ব্যবসার বিপরীতে কী ধরনের স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে প্রতিযোগিতার জন্যে?


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি লেখক এর ছবি

********দিনমজুর**********
হিমু,
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

১। আপনার প্রথম পয়েন্টটি বুঝিনি।
২। চড়া দামে লাইসেন্স কিনে ও একটা অংশ শেয়ার বিক্রির পরেও কিন্তু কোম্পানিগুলো এ খাতে বিনিয়োগ করতে আসে- কেননা, উচ্ছ মুনাফার হার। আর, আমাদের দেশে তো আমরা সবই লস করেছি।
৩। এই খাতটিতে একসাথে খুবই বিশাল অংকের বিনিয়োগ লাগে, ফলে এই খাতে নামতে গেলে পুঁজির জোরও দরকার- সেটা আমাদের দেশীয় পুঁজিপতিদের এখনও নেই। তবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সে সুযোগ ছিলো- এবং এখনও আছে।
৪। বিটিটিবি বা টেলিটকের ক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের দেশের টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার তথা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিঃশেষ হওয়ার সম্ভাবনাটি কম। তারপরেও বিটিটিবি বাজারে আসতে অনেক দেরি করে ফেলে, বাজারে আসলেও প্রতিযোগিতায় সেভাবে জোরেশোরে নামে না, .......... এসব কিছুর মূল কারণঃ
বিদেশী দাতা গোষ্ঠীর চাপ, আমাদের নতজানু সরকারব্যবস্থা, বিদেশী বিনিয়োগ নামের সোনার ডিম পাড়া মুরগীর প্রতি আমাদের অর্থনীতির মিথ্যা মোহ, বুর্জোয়া রাজনীতিবিদদের মাত্রাতিরিক্ত লোভ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
রাতুল এর ছবি

জনাব দিনমজুর,
অংক হিসাব ভালো করেছেন। কিন্তু একটা কথা না বলে পারছি না। আপনার এ টাইপের লেখা গুলো এর আগেও পড়েছি।

আপনি কি নতুন বোতলে পুরান মদ চালাতে চাইছেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

**********দিনমজুর**********
রাতুল,
আপনার বক্তব্য পরিস্কার হলোনা। এ ধরণের বক্তব্য আগেও আলোচিত হয়েছে বা আপনার চোখে পড়েছে দ্বারা আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন??

রাতুল এর ছবি

আপনার মোবাইল কলের হিসাব নিয়ে আর একটি বাংলা সাইটে একই রকম লেখা (লেখক : দিনমজুর) পড়েছিলাম।

রাতুল এর ছবি

এখানে পড়েছি।
http://www.somewhereinblog.net/blog/dinmojurblog

একজন প্রবাসী এর ছবি

দিনমজুর ভাই
"বিদেশী দাতা গোষ্ঠীর চাপ, আমাদের নতজানু সরকারব্যবস্থা, বিদেশী বিনিয়োগ নামের সোনার ডিম পাড়া মুরগীর প্রতি আমাদের অর্থনীতির মিথ্যা মোহ, বুর্জোয়া রাজনীতিবিদদের মাত্রাতিরিক্ত লোভ।"
একদম খাটি কথা বলেছেন
কিন্তু
এর থেকে পরিত্রানের উপায় বলেন ।

অতিথি লেখক এর ছবি

************দিনমজুর****************
একজন প্রবাসী,
পরিত্রাণের উপায় একটিইঃ
সরকারকে বাধ্য করা একটি স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে - সেটি সম্ভব ব্যাপক আকারে গণআন্দোলনের মাধ্যমেই- দরকারে গণবিরোধী সরকার ব্যবস্থাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

আমার "আমাদের কৃষি, আমাদের প্রাণ" শীর্ষক লেখাটি পড়ার আহবান করছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।