কর্ণফুলীর মোহনায় বসুন্ধরার বেসরকারী বন্দর:আবারও বন্দর রক্ষার ডাক

দিনমজুর এর ছবি
লিখেছেন দিনমজুর [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৮/১২/২০০৮ - ৪:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চট্টগ্রাম বন্দরের উজানে কর্ণফুলীর মোহনায় যে স্থানে মার্কিন কোম্পানী স্টিভিডোরস সার্ভিসেস আমেরিকা বা এসএসএ বন্দর নির্মান করতে চেয়েছিল, ঠিক সে স্থানে নদীর বিপরীত তীরে, আজকে যখন দেশীয় কোম্পানী বসুন্ধরা গ্রুপ বেসরকারী বন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে, তখন আমরা যারা এসএসএ’র বন্দরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম তাদের অনুভূতি কি? এসএসএ’র বন্দরের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলনের ভিত্তি কি কেবল জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনায় বেদেশী কোম্পানীর বিরুদ্ধচারণ নাকি মুনাফা কেন্দ্রীক অর্থনৈতিক ব্যাবস্থায় মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির স্বার্থে যে প্রকৃয়ায় জনগণের সম্পদ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ক্রমশ অকেজো করে দেয়া হয় তারও বিরুদ্ধতা করা? আজ থেকে পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে তেল-গ্যাস-বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতুত্বে যে লংমার্চ হয় তার মূল দাবী ছিল ‘বন্দর বাঁচাও’। তাহলে আজকে এসএসএ’র বদলে বসুন্ধরা গ্রুপ বন্দর নির্মান করলে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর কি বাঁচবে? জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনাতেও বসুন্ধরা কি মার্কিন কোম্পানী এসএসএ’র চেয়ে অধিকতর নিরাপদ?

চট্টগ্রাম বন্দর এবং আমাদের জাতীয় অর্থনীতি
সাধারণত দুনিয়ার কোন স্বাধীন দেশেই প্রধান বন্দরসমূহ বেসরকারী পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় না। অর্থনীতির জীবনপ্রবাহ, সামরিক গুরুত্ব, সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি প্রশ্নে প্রধান প্রধান বন্দরের কর্তৃত্ব সেজন্যই রাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে জাপানে প্রায় ২০০০ বন্দর রয়েছে, ভারতে দেড় ডজনের ওপর বন্দর, এ সমস্ত ক্ষেত্রে গোটা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে, সামরিক কৌশলগত বিষয় বিবেচনায় রেখে কিছু অপ্রধান এলাকায় অর্থনীতির মূলপ্রবাহের সাথে শাখা-প্রশাখা বিস্তারের স্বার্থে প্রাইভেট কন্টেইনার টার্মিনাল, ছোট-খাট পোর্ট ইত্যাদি দেওয়ার নমুনাও রয়েছে। কিন্তু দেশের একমাত্র বন্দরকে অচল করে দিয়ে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বাণিজ্যভিত্তিক গোটা অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ বেসরকারী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়ার উদ্যোগ নজিরবিহীন।

যে স্থানে বসুন্ধরার বন্দর নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে তার ঠিক ৯ নটিক্যাল মাইল উজানে আছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমাদের আরেকটি সমুদ্র বন্দর আছে খুলনায়। খুলনা থেকে চালনা এবং চালনা থেকে মংলায় বন্দর স্থানান্তরিত করার পর তা এখনও পর্যন্ত স্থায়িত্ব পায়নি। পলি জমে এখানে জাহাজ ভীড়া খুব কঠিন। দেশের অন্যান্য অংশের সাথে এর যোগাযোগব্যবস্থা খুব দুর্বল। ফলে, বর্তমানে, এ বন্দরের ক্ষমতার ৯০ ভাগই অব্যবহৃত পড়ে আছে। সেজন্য চট্টগ্রাম বন্দরই, কার্যত, দেশের একমাত্র সমুদ্র বন্দর। আমাদের আমদানি-রপ্তানির ৯২ ভাগই হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে। এ বন্দর অচল হলে গোটা অর্থনীতিই অচল হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ভৌগোলিক অবস্থান, এর ব্যবসায়িক গুরুত্ব
শুধু আমাদের অর্থনীতির নিরিখেই নয়, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ব্যবসায়িক-সামরিক দিক দিয়েও চট্টগ্রাম বন্দর খুব গুরুত্বপূর্ণ।চট্টগ্রামের পাশেই আছে মিয়ানমার, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা ও মিজোরাম। এখান থেকে, এই দুটো রাজ্যের লাগোয়া, যাদেরকে এক সাথে সাত বোন (সেভেন সিস্টার্স) বলা হয়, সেই আসাম-মেঘালয়-অরুনাচল-নাগাল্যান্ড-মনিপুরের দূরত্বও খুব বেশি নয়। অন্তত কলকাতা বন্দরের তুলনায় অনেক কম। ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিট পেলে নেপাল, ভূটানের জন্যও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার খুব লাভজনক। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের কারণে, এমনকি, চীনের জন্যও এ বন্দর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের সাথে চীনের দীর্ঘ সীমান্ত আছে। তাছাড়া, আমাদের পঞ্চগড় থেকে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর পেরুলেই চীনের সীমান্ত। মাত্র ১৭ মাইলের এ দূরত্বকে চিকেন নেক বা মুরগীর বাচ্চার গলার সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে।

চট্টগ্রাম বন্দরের এই ব্যবসায়িক গুরুত্বের কারণে এর ওপর বহু আগেই দেশী-বিদেশী লুটেরাদের নজর পড়েছে। ১৯৯৬ সালে বিশ্বব্যাংক বন্দর খাতকে ‘উন্মুক্ত’ করার পরামর্শ দেয়। সে-বছর ব্রিটেনের পোর্ট ভেঞ্চার লিঃ, চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম-এর প থেকে সেখানে ব্যক্তিমালিকানায় বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। অবশ্য, তখন দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য গণপ্রতিরোধের ভয়ে সরকার ওই প্রস্তাব গ্রহণ থেকে বিরত থেকেছিল। একই ভাবে কর্ণফুলীর মোহনায় বেসরকারী বন্দর স্থাপনের চেষ্টা করেছিল মার্কিন সংস্থা স্টিভিডোরস সার্ভিসেস আমেরিকা(এসএসএ)। ১৯৯৯ সাল থেকে টানা তিন বছর দেশি-বিদেশী নানা চাপ প্রয়োগ করা হয় বন্দর স্থাপনের জন্য। কিন্তু তেল-গ্যাস-বিদ্যূত-বন্দর রা জাতীয় কমিটির নেতুত্বে তীব্র আন্দেলন গড়ে উঠলে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এরই ধারাবহিকতায় সর্বশেষ ‘দেশীয়’ বসুন্ধরা কোম্পানীকে ব্যবসায়ীক-অর্থনৈতিক-ভৌগলিক-রাজনৈতিক বিবেচনায় স্পর্শকাতর একটি স্থানে বেসরকরী বন্দর নির্মানের অনুমোদনের এই পায়তারা।

যেভাবে বসুন্ধরাকে বন্দর নির্মানের অনুমতি দেয়া হচ্ছে
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে বিশাল জায়গা প্রাইভেট পোর্ট নির্মাণের জন্য লিজ প্রদানের লক্ষে ২০০৫ সালে টেন্ডার আহ্বান করে। সিটি কর্পোরেশন তাতে অংশ নেয়। কর্পোরেশন সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও বন্দর কর্তৃপ নির্ধারিত দিনে সবার সামনে টেন্ডার বাক্স খোলেনি। পরে গোপনে কর্পোরেশনের দর জেনে নিয়ে বসুন্ধরাকে দিয়ে সংশোধিত টেন্ডার জমা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। কর্পোরেশন থেকে এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বন্দর কর্তৃপকে।

ইস্ট-ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ছয়টি আরসিসি জেটি নির্মানের প্রস্তাব পাওয়ার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপ নৌবিভাগের প্রধান উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন নাজমূল হাসানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। এ কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তা, পরিচালক(পরিবহন), উপপ্রধান প্রকৌশলী এবং উপব্যবস্থাপক(ভূমি)। এ কমিটি বসুন্ধরার ছয়টি জেটি নির্মানের প্রস্তাবের বিপরীতে তিনটি জেটি নির্মানের সুপারিশ সহ প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবিত জেটি নির্মান হলে নাকি চট্টগ্রাম বন্দরের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে না! এছাড়া ওই জেটিগুলো থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের মাসুল বাবদ বন্দরের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে এবং বন্দরের জাহাজ জটের কিছুটা নিরসন হবে!

অন্যদিকে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি লিমিটেড ২৫০ একর জায়গা লিজ নেয়। লিজ চুক্তি স্বারিত হয় ২০০৬ সালের জুন মাসে। ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ২ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয়। প্রতি বছর ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা করে দু’বছরে লিজের পাওনা বাবদ মোট ১৭ কোটি টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বসুন্ধরার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি লিমিটেড এ পর্যন্ত বেশিরভাগ টাকা পরিশোধ করেনি। পুরো এক বছরের বকেয়া বাবদ ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপরে ১১ কোটি টাকা পাওনা হয়ে গেছে। কিন্তু বসুন্ধরা কর্তৃপ কেবল জেটি নির্মানের অনুমোদন পেলেই লিজের টাকা পরিশোধ করবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কোন্ বিধির ভিত্তিতে বন্দর কর্তৃপ বসুন্ধরা গ্রুপকে জেটি নির্মানের অনুমতি দেবে, তার কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বন্দর কর্তৃপ একটি খসড়া নীতিমালা অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে কর্ণফুলীর মোহনায় বসুন্ধরার বন্দর নির্মানে আর কোন বাধা থাকবে না।

বন্দরের নামে ভূমি দস্যুতা:
লিজ নেয়ার পর থেকে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়া এলাকায় বন বিভাগের বিশাল ভূমি গ্রাস করে ফেলে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি লিমিটেড। বিশাল প্যারাবন নির্বিচারে নিধন করা হয়। এর ফলে ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বন বিভাগ বসুন্ধরা গ্রুপের এই ভূমি গ্রাসের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে ১০টি মামলা করেছে। এর পরও থেমে থাকেনি জবরদখল। এখনও সমানে ভূমি গ্রাস চলছে। লিজ নেয়া ভূমিতে কোন গাছ অবশিষ্ট রাখেনি বসুন্ধরা গ্রুপ। কেটে কেটে সাবাড় করেছে। ২৫০ একর লিজ নেয়া ভূমির মধ্যে ২শ’ একরই চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের জায়গা। আবার কর্ণফুলী নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বিশাল জায়গা ইতিমধ্যে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। মৎস্য চাষের জন্য লিজ দেয়া জলাশয়ও ভরাট করে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা যারা একসনা লিজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি; অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে লোকজন এলাকাছাড়া হয়ে গেছেন।

নদীমুখের বন্দর মালিকানাধীন ২৫০ একর জায়গা কৌশলে দখলে নেয়ার পর বসুন্ধরা গ্রুপ বেপরোয়াভাবে আরও বেশি পরিমাণ ভূমি দখল করে ফেলে। দখল করা ভূমির পরিমাণ এক হাজার একর বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বন্দর থানাধীন মৌজা মাঝেরচরের ২ নং সিটের (জেএল নং-৩৩) রাঙ্গাদিয়া নং-৩১ অংশের ১০২, ১০৩, ১০৪, ১০৫, ১০৬, ১০৭, ১০৯, ১০৮, ১১০, ১১১, ১১২, ১১৩ নং বিএস দাগ এবং রাঙ্গাদিয়া নং-৩১ ও গোবাদিয়া নং-৩২ অংশের ১১৪ নং বিএস দাগের প্রায় ৩শ’ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গাজমি বিভিন্নভাবে দখল করে নেয়া হয়। অন্যদিকে ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত বিএস ১, ১০১, ১১৪ দাগাদির ৪০৪ দশমিক ৪৪ একর জমি থেকে বৈরাগ গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসিত ৪০ পরিবারকে ৪০ একর জমি বন্দোবস্ত করে দেয় সরকারের পে চট্টগ্রাম কালেক্টর। গুচ্ছগ্রামের পুনর্বাসিতদের তুলে দিয়ে এই ৪০ একর জমিও দখল করে নেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দর থানাধীন মৌজা পশ্চিম তুলাতলীর (জেএল নং-৩৪) বিএস ৬ নং দাগের প্রায় ৩শ’ একর সরকারি খাস জমি, বন্দর ও বন বিভাগের শত শত একর জমি লিজের নামে দখল করে নেয়া হয়েছে। এভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন ও সরকারি খাস জমি, গুচ্ছগ্রামের জমি, বন্দর ও বন বিভাগের জায়গাজমি মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার একর জায়গা নানা কৌশলে দখল করে নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

অযত্ন ও অবহেলা করে চট্টগ্রাম বন্দরকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে
১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৭ টি জেটি ছিল। এর মধ্যে ১ থেকে ১৩ নং জেটি ছিল কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর। ১৭ নং জেটি বিস্ফোরক ও সামরিক সরঞ্জামাদি হ্যান্ডলিং করা হত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১০ নং জেটি বিধ্বস্ত হয়। ১৯৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ে বিপর্যস্ত হয় ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ নং জেটি। এ পর্যন্ত এগুলো পুনর্নির্মিত হয়নি।
এ বন্দরে ১৯৭৭ সাল থেকে কন্টেইনারে মাল পরিবহন শুরু হয়। তখন ৬ টা দিয়ে শুরু করে গত বছর (২০০৭) চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ ল কন্টেইনার ওঠানো-নামানো হয়েছে। বন্দরের মতা বাড়ানোর লক্ষে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকর্তৃপ নিজস্ব অর্থায়নে ৭০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০০ মিটার বার্থসহ নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মাণ ও ১৯৯৬ সালে ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্র্যান্টি ক্রেন (প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও যে-ক্রেন সক্রিয় থাকে)সহ ১৪২ টি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে তারা সরকারের অনুমতি চায়। কিন্তু ক্ষোভের বিষয় হল, অর্থমন্ত্রণালয় লিকুইডিটি সার্টিফিকেট দিলেও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় তার অনুমতি দেয় নি।

কর্নফুলী নদী খননের জন্য ‘পতেঙ্গা’ ও ‘কর্ণফুলী’ নামে ২ টি ড্রেজার ছিল। ‘পতেঙ্গা’ পুরনো হয়ে যাওয়ায় এবং ‘কর্ণফুলী’ ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ায় নিলামে বিক্রি হয়েছে। ‘খনক’ নামে যে ড্রেজারটি আছে তা দিয়ে নদীর মধ্যভাগ খনন করা গেলেও জেটির সম্মুখভাগ খনন করা যায় না। তারপরও ড্রেজার কেনার ব্যবস্থা হয় নি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ এখানেই শেষ নয়। এরকম আরও বহু নজির আছে। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের দ্বারা সৃষ্ট যে ‘কন্টেইনার জট’ ও ‘জাহাজ জট’-এর কথা বলা হলো তা কমানোর জন্য বন্দর কর্তৃপ ’৯৮ সালের দিকে বন্দরের প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক নির্ধারিত ১৫ দিনের বেশি জাহাজ বা কন্টেইনার বন্দরে অবস্থান করলে জরিমানা আদায়ের প্রথা চালু করে। এর ফলে ওই সমস্যা কিছু কমেও আসে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই এক রহস্যময় কারণে সরকার বন্দর কর্তৃপকে তা প্রত্যাহারে বাধ্য করে।

এত কিছুর পরেও চট্টগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বন্দর কর্তৃপ কখনো সরকারের কাছ থেকে এক পয়সাও অনুদান নেয় নি। বরং ’৮৪-’৯৮ পর্যন্ত সরকারি তহবিলে ২৩৫ কোটি টাকা দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ৩৫ ধারা অনুযায়ী সরকার বন্দর তহবিল থেকে কোন টাকা নিতে পারে না। অথচ ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকার প্রায় জোর করে বন্দর তহবিল থেকে ১৫০ কোটি নেওয়ার চেষ্টা চালায়। বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের মুখে তা সম্ভব হয় নি। সরকার তখন ক্ষেপে গিয়ে আইন করে বন্দরের ওপর ৪০% কর্পোরেট ট্যাক্স আরোপ করে, যা বন্দরকে চাপে ফেলে লোকসানি খাত হিসেবে প্রমাণ করার একটা চক্রান্ত।

এ ধরনের চক্রান্ত আরো আছে। দেশে বিমানসহ সরকারি আধা-সরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানকেই তার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা মালামাল কেনার জন্য সারচার্জ দিতে হয় না। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরকে যে কোন সরঞ্জাম ক্রয়ের সময় তা দিতে হয়। উপরন্তু, চট্টগ্রাম বন্দরের নামে বিদেশ থেকে কোন ঋণ বা অনুদান পেলেও সরকার তা থেকে ৮% - ১৪% সুদ আদায় করে।

চট্টগ্রাম বন্দরের যথাযথ আধুনিকায়ন হলে নতুন কোন বন্দরের প্রয়োজন হবে না
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপ (সিপিএ) বিশ্ব ব্যাংক নিয়োজিত বন্দরবিশেষজ্ঞ-প্রতিষ্ঠান মট ম্যাকডোনাল্ডের ১৯৯৮ সালের পরামর্শানুসারে ভবিষ্যৎ বর্ধিত কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সমস্যা মোকাবিলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। সে অনুসারে ১ম পর্যায়ে, বর্তমান কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি)-এ ৪টি গ্যান্টি ক্রেন, আর.টি.জি.রিচ স্টেকারসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, গ্যান্ট্রি ক্রেন ও অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই সিসিটিতে ২০০০-২০০১ আর্থিক সালে ৫ লক্ষাধিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। বর্তমানে ১৫ টি গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে সিপএ’র সিসিটি ৯ লক্ষের ওপরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারছে। নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে প্রত্যেকটি ফিডার জাহাজ ৩ দিনের স্থলে ১ দিনে জাহাজের কার্যক্রম শেষ করে বন্দর ত্যাগ করতে পারবে ও বহিঃনোঙ্গরে কন্টেইনারবাহী কোন জাহাজ জট থাকবে না। মট ম্যাকডোনাল্ড এর রিপোর্ট অনুসারে আগামী ২০১০ সালে বাংলাদেশে কন্টেইনার গমনাগমন করবে প্রায় ১১ লক্ষ ৩০ হাজার। যা বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) দিয়ে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। মট ম্যাকডোনাল্ডের পরামর্শনুসারে ২য় পর্যায়ে সিপিএ ১০০০ মিটার দীর্ঘ নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণ করে ১২ টি গ্যান্ট্রি ক্রেন বসালে প্রায় ২২ ল কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে। তখন সিপিএ একাই ২০৪৬ সাল পর্যন্ত দেশের প্রয়োজনীয়তা মিটাতে সম হবে। ৩য় পর্যায়ে ১১-১৩ নং জেটিকে কন্টেইনার টার্মিনালে রূপান্তরিত করে ৬ টি গ্যান্ট্রি ক্রেন বসালে আরো ১১ লক্ষ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। অর্থাৎ বন্দরের পর্যাপ্ত জায়গায় কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বছরে প্রায় ৪৪ লক্ষ কন্টেইনার অনায়াসে হ্যান্ডলিং করা যাবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে কন্টেইনার এর গড়-অবস্থানকাল ২৪/ ৪৮, সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা। আমদানিকারকেরা যথাসময়ে বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাস না করার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার এর গড় অবস্থানকাল দাঁড়ায় প্রায় ১৫ দিন। যদি তা, আইসিডি নির্মাণ ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে, ৭ দিনে কমিয়ে আনা হয় তাহলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর পরিমাণ পূর্বের হিসাব থেকে দ্বিগুণ বেড়ে গিয়ে ভবিষ্যতে ৮৮ ল টি ই ইউ হবে। তদুপরি যদি বর্তমানে ২/৩ হাই স্টেকিং (উচ্চতায় রাখা) এর পরিবর্তে সাসটেইনার ব্যবহার করে সিংগাপুর, হংকংসহ পৃথিবীর অন্যান্য বন্দরের ন্যায় কন্টেইনার ৬/৭ হাই স্টেকিং করে রাখা হয় তাহলে ভবিষ্যতে বন্দরে বছরে কয়েক কোটি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সহজেই সম্ভব হবে।

বসুন্ধরার বন্দরের প্রভাব হবে খুবই ভয়ঙ্কর
সবার জানা আছে, বর্তমানে বন্দরের ১-১৩ নং জেটি এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে পানির গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। পূর্ণ জোয়ার ছাড়া জেটিসমূহে জাহাজ আসা-যাওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে। নদী বিশেষজ্ঞদের মতামত না নিয়ে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুর পিলারে স্রোত বাধা পেয়ে ওই হাল দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট সেতুর প্রভাবও একই, চাক্তাই এলাকা পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। এখন কর্ণফুলীর মোহনায় বসুন্ধরার বন্দর নির্মিত হলে অবস্থাটা কি দাঁড়াবে?

কর্ণফুলীর একেবারে মোহনায় বন্দরের মত বড় একটা স্থাপনা নির্মিত হলে নদীর স্রোত অবশ্যই বাধা পাবে। ফলে উজানে, নদীর তলদেশ, ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাবে। তখন চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে। কর্ণফুলীর মোহনায় চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ২০০-২৫০ মিটার। প্রস্তাবিত বন্দরের প্রস্থ যদি ৬০ মিটার হয় তখন জাহাজ চলাচলের জন্য বাকী থাকে ১৪০-১৯০ মিটার। ওই নদীতে উক্ত স্থানে জাহাজ চলাচলের জন্য সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় থাকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। এ সময়ে যদি বসুন্ধরার কোন জাহাজ, যার দৈর্ঘ্য আনুমানিক ১৭০ মি. -১৮০ মিটার, নোঙর বা জেটি থেকে বের হওয়ার লক্ষে ওই স্থানে ঘুরে তাহলে বাকী সামান্য জায়গা দিয়ে অন্য কোন জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। কখনও সাইক্লোন বা কোন দুর্ঘটনার কারণে যদি কোন জাহাজ মূল চ্যানেলে ডুবে যায় তাহলে বন্দরের মূল চ্যানেল বা প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাবে। স্মরণ রাখা দরকার, প্রস্তাবিত ওই বসুন্ধরার-বন্দরের উজানে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরই নয়, আছে ইস্টার্ন রিফাইনারি, ফুড সাইলো, বিমান ও নৌ বাহিনীর ঘাঁটি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। জাহাজ চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোও অকেজো হবে। তাছাড়া প্রস্তাবিত বসুন্ধরা বন্দরের অবস্থানও সিসিটি-র চেয়ে সুবিধাজনক জায়গায়। ফলে বাস্তবে যা ঘটবে, হয় উভয়ের মধ্যে কন্টেইনার জাহাজ ভীড়ানো নিয়ে সংঘাত হবে। অথবা সিসিটি বসে বসে রোদ পোহাবে। আর ফলাফল হিসাবে বন্দরের প্রায় ২০০ কোটি টাকার কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য স্থাপনা, ঢাকাস্থ বন্দরের ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাপনা পরিত্যক্ত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতি বছর যে টাকা আয় হয় তন্মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থাকে যা বন্ধ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হবে, তা হল, এভাবে চট্টগ্রাম বন্দর একসময় একটি চরম লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। আমাদের শাসকদের প্রচলিত নীতি অনুসারে, ওই লোকসান ঘুচাতে, এ বন্দরটিও বেসরকারি খাতে দিয়ে দেওয়া হবে। সে সাথে বেকার হবে বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫০ হাজার মানুষ; নিদারুন দুরবস্থায় পড়বে তাদের পোষ্য আরও কয়েক ল মানুষ। আমাদের আমদানি-রপ্তানিও ওই লুটেরাদের হাতে জিন্মী হয়ে যাবে।

শেষ কথা
আমরা জানিনা বসুন্ধরাকে সরকার ঠিক কি কি শর্তে এবং কতদিনের জন্য বেসরকারী বন্দর নির্মান এবং পরিচালনার অনুমোদন দিতে চাচ্ছে। আমরা জানিনা চট্টগ্রাম এবং মংলায় দুটি বন্দর থাকা সত্বেও কোন ধান্দায় বসুন্ধরা এখানে বন্দর নির্মান করতে চাচ্ছে এবং এ বন্দর নির্মানের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন পড়বে তার যোগান কি কেবল বসুন্ধরা দেবে নাকি আন্তর্জাতিক লগ্নীপুজিরও এতে অংশগ্রহন থাকবে? তবে আমরা মনেকরি পুজির কোন জাতীয়তা নেই, জাতীয়তা বিচারে মুনাফাখোর পুজিমালিকেরও কোন ভাল-মন্দ ভেদ নেই, মুনাফার প্রয়োজনে পুজিমালিক, তা সে দেশীয় হোক আর বিদেশী হোক, পারেনা এমন কোন কাজ নেই। যে বন্দর বসুন্ধরা আজকে নিজে পরিচালনা করবে বলে বানাতে চাচ্ছে, কালকে যে সে তা কোন বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দিবে না তার নিশ্চয়তা কি? মুনাফার স্বার্থে বসুন্ধরা যে কর্ণফুলীর মোহনায় জাহাজ জট তৈরী করে রেখে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানী-রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে না তারও বা নিশ্চয়তা কি? কাজেই আমাদের প্রধান বন্দরের মুখে বেসরকারী বন্দর নির্মাণ করে সরকারী বন্দরকে ক্রমশ অচল এবং অপ্রয়োজনীয় করে তোলা, বন্দর নির্মানের নামে কর্ণফুলীর মোহনায় বন এবং জলাভূমি দখল করে রমরমা হাউসিং ব্যবসার পায়তারা করা, আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্যের নিয়ণ্ত্রণ বেসরকারী মালিকের হাতে তুলে দেয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে এসএসএ’র বন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে যেমন দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবারও একই ভাবে বসুন্ধরার বেসরকারী বন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে অবিলম্বে জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।

সূত্র: লেখাটি তৈরী করা হয়েছে তেল-গ্যাস-বিদ্যূৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ২০০৩ সালের চট্টগ্রাম বন্দর অভীমুখে লংমার্চ উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ) কর্তৃক প্রকাশিত ভ্যানগার্ড-বুলেটিন এবং প্রথম আলো, ২ ডেসেম্বর ২০০৮ সংখ্যা ও যুগান্তর, ৪ ডিসেম্বর,২০০৮ সংখ্যা অবলম্বনে।


মন্তব্য

দিনমজুর [অতিথি] এর ছবি

কনভার্ট করার পরে "ক্ষ" গুলো বাদ পড়েছে, প্রকাশিত পোস্ট এডিট করার পদ্ধতিও জানা নেই-----, একটু কষ্ট করে "ক্ষ"গুলো পড়ে নিবেন------

আলমগীর এর ছবি

চমৎকার তথ্যমূলক লেখা। লিজ দেয়ার পক্ষে না, কাউকেই না।
বন্দরকে নিজেই বাড়তে হবে।

রণদীপম বসু এর ছবি

লেখাটা পড়ে তো রীতিমতো হতবাক হয়ে গেছি ! বলেন কী ! ন্যুনতম দেশাত্মবোধ থাকলেও তো নীতিনির্ধারকদের কেউ এমন আত্মবিনাশী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ! আমাদের বিবেক-বিবর্জিত লালসার সাথে বিদেশী বেনিয়া যুক্ত হয়ে যা দাঁড়াচ্ছে তাতে আমরা নিজেরা যে একটা বেজন্মা জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হতে যাচ্ছি, তা ঠেকানোর উপায় এখনই তো বের করতে হবে !
আসলে আপামর বাঙালীর রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেছে। প্রতিবাদের ভাষা ভুলে যাচ্ছে একে একে। জাতির জন্য যা অশনি-সংকেত !!!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

এনকিদু এর ছবি

বারবার বেজন্মা জাতি - ধরনের কথা শুনতে ভাল লাগে না । আসলেই কি আমরা সবাই বেজন্মা হয়ে গিয়েছি ? তাহলে এখানে লিখছে যারা তারা সম্ভবত অন্য জাতির লোক ।

আসলে আমাদের মধ্যে কিছু বেজন্মা ঢুকে পড়েছে । এগুলোকে পাছায় লাত্থি মেরে খ্যাদানো দরকার । লাত্থি অনেক ভাবেই দেয়া যেতে পারে । অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি । আর সর্বোপরি দৈহীক লাত্থি তো আছেই ।

-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ফাহিম এর ছবি

মাঝে মাঝে একটা জিনিষ বুঝতে পারি না, আমাদের নীতি-নির্ধারকেরা কি সবাই লোভের কাছে সমর্পিত? ন্যূনতম বিবেকবোধ কি কারোর নেই? কি অদ্ভুত দেশ আমাদের! অন্তত একজনও কেউ ছিলো না এর প্রতিবাদ করার?

রাজনীতিবিদদের কথা বাদ দিলাম, তারা কোন স্তরের মানুষ এটা সবাই জানে। কিন্তু আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন লেয়ারে যে সব মানুষ বসে আছে, তাদের কারোরই কি একবারও মনে হলো না যে এটা করাটা ঠিক হচ্ছে না? কি যুক্তিতে তারা এই সিদ্ধান্তটাকে যায়েজ মনে করলো? আমি তাদের পক্ষের যুক্তি শুনতে আগ্রহী।

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

পুতুল এর ছবি

আচ্ছা আমাদের দেশটা বসুন্ধরাকে ইজারা দেয়া যায় না?
শুনেছিলাম কোন একটা হত্যা মামলায় বসুন্ধরা জড়িত ছিল, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, তারেক এবং খালেদা জিয়ার সংশ্লিষ্টার কথাও শোনা গেছে, তারা এখন কোথায়?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্নিগ্ধা এর ছবি

বড়ই হতাশ লাগে ... !

দিগন্ত এর ছবি

আমার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আপনি চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিযোগী হিসাবে দেখাচ্ছেন এই নতুন বন্দরকে ... এটার ভিত্তি কি?

ধরা যাক আগামী দশ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য আয়তনে ১০% হারে বাড়ল। সেক্ষেত্রে ১০ বছর পরে দ্বিগুণ মাল পরিবহন করতে হবে বাংলাদেশের বন্দরগুলোকে। এখন বলুন আরেকটা বন্দর হলে অসুবিধাটা কোথায়? আপনিই তো বলেছেন মংলা বন্দর কর্মক্ষম নয় ততটা।

আপনি বলেছেন -

যে স্থানে বসুন্ধরার বন্দর নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে তার ঠিক ৯ নটিক্যাল মাইল উজানে আছে চট্টগ্রাম বন্দর।

আবার বলেছেন -
সবার জানা আছে, বর্তমানে বন্দরের ১-১৩ নং জেটি এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে পানির গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে।

আমার ধারণা যদি আপনার দুটো কথা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরকে বাঁচানোর জন্যই কর্ণফুলীর মোহানায় বন্দর তৈরী করা দরকার। নাহলে, যদি নদীর নাব্যতা অনেকটা কমে যাবার পরে এ নিয়ে ভাবা শুরু হয় তাহলে সমস্যা বাড়বে।

কখনও সাইক্লোন বা কোন দুর্ঘটনার কারণে যদি কোন জাহাজ মূল চ্যানেলে ডুবে যায় তাহলে বন্দরের মূল চ্যানেল বা প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাবে।

এমনিতে এই সম্ভাবনা এখনও আছে। তাছাড়া, আমার তো মনে হয় বন্দর কতৃপক্ষ (বসুন্ধরা) নিজেদের স্বার্থেই ড্রেজিং করে বন্দরের মূল চ্যানেলকে খারাপ অবস্থায় যেতে দেবে না।

আমি আপনার লেখা পড়ে যা বুঝলাম সেটা হল, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বাড়াতে তার পরিপূরক হিসাবে আরেকটি বন্দর গড়ে তোলা দরকার আর সেটাই এর পেছনের পরিকল্পনা। এর পরিবর্তে ড্রেজিং করে চট্টগ্রাম বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখা যেতে পারে কিন্তু সেটা খুবই খরচাসাপেক্ষ (এটা আপনি লেখেন নি)। এখন সরকারী পক্ষের অস্বচ্ছতা বা দুর্নীতি নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, কারণ এটা দক্ষিণ এশিয়াতে খুবই "সাধারণ" ব্যাপার।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধ্রুব হাসান এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার বিশ্লেষন পড়ে চলুক এই ব্যাপারটাকে সবাই মিলে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছি যে এখন বন্দর নিয়ে কথা বলা, এর বিকল্প ভাবনার কথা বললেই বিশ্বাসঘাতকের কাতারে নাম উঠার ভয় আছে! তাই আমরা অনেকেই চুপ থাকি, চলুক যেভাবে চলছে......

দিনমজুর এর ছবি

আমার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আপনি চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিযোগী হিসাবে দেখাচ্ছেন এই নতুন বন্দরকে ... এটার ভিত্তি কি?

বসুন্ধরার প্রস্তাবিত বন্দরকে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিযোগী হিসাবে দেখানোর ভিত্তি কি পুরো পোস্ট পড়েও পরিষ্কার নয়? কর্ণফুলীর মোহনায় বন্দর হলে, উজানে অবস্থিত আমাদের বর্তমান বন্দরটি কি টিকবে?
তারচেয়েও বড় যে বিষয়টি এখানে তুলে ধরা হয়েছে- সেটি হচ্ছে, কর্ণফুলীর উজানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ যেসমস্ত স্থাপনাগুলো আছে- সেগুলোর অবস্থা কি হবে- প্রবেশপথ খ্যাত মোহনায় যদি বেসরকারী বন্দর নির্মিত হয়?
ধরা যাক আগামী দশ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য আয়তনে ১০% হারে বাড়ল। সেক্ষেত্রে ১০ বছর পরে দ্বিগুণ মাল পরিবহন করতে হবে বাংলাদেশের বন্দরগুলোকে। এখন বলুন আরেকটা বন্দর হলে অসুবিধাটা কোথায়? আপনিই তো বলেছেন মংলা বন্দর কর্মক্ষম নয় ততটা।

আরেকটা বন্দর হলে কোন অসুবিধা নেই, বরং খুবই দরকার। প্রথম প্রশ্ন এই বন্দর করতে গিয়ে আগেরটি ধ্বংস করা হলে আদৌ লাভ কি হবে? ২য় প্রশ্ন- এই বন্দর কার হাতে থাকবে?
আর চট্টগ্রাম বন্দর এখন পর্যন্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠান, এর অর্থেই কিন্তু বন্দর আধুনিকায়ন করা সম্ভব, নষ্ট জেটিগুলো বিনির্মাণ করে মালামাল খালাস ও পরিবহনের ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব- সেটির চিন্তা কেন করা হবে না? এমনকি নিজস্ব লাভের টাকার সাথে আর সামান্য কিছু সরকারী বরাদ্দ যুক্ত হলে জেটির সংখ্যা আরো বাড়ানো সম্ভব।

মংলা বন্দরকে কার্যকর করার উদ্যোগ কেন নেয়া হবে না? প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু হয়ে গেল কিন্তু রাজধানী ঢাকা থেকে মংলার দূরত্ব ঢাকা-চট্টগ্রামের চেয়েও অনেক কমে যাবে। (প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর দুই পাশের রাস্তা এরই মধ্যে প্রস্তুত)। এবং সেক্ষেত্রেও বেসরকারী নয়, সরকারী মংলা বন্দরেরই পুনর্জীবন চাইব।

উদ্ধৃতি
সবার জানা আছে, বর্তমানে বন্দরের ১-১৩ নং জেটি এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে পানির গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে।

আমার ধারণা যদি আপনার দুটো কথা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরকে বাঁচানোর জন্যই কর্ণফুলীর মোহানায় বন্দর তৈরী করা দরকার। নাহলে, যদি নদীর নাব্যতা অনেকটা কমে যাবার পরে এ নিয়ে ভাবা শুরু হয় তাহলে সমস্যা বাড়বে।


কর্ণফুলীর মোহনায় বন্দর তৈরী হলে কিভাবে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে? নাকি মোহনায় বন্দর তৈরী হলে মোহনার বন্দর উজানে পলি জমিয়ে নাব্যতা কমিয়ে ফেলে চট্টগ্রাম বন্দরের বন্ধ হওয়াটা ত্বরান্বিতই করবে?
তবে আপনার অবস্থান দেখে মনে হলো অনেকটা এরকম যে, চট্টগ্রাম বন্দরের যেহেতু নাব্যতা কমছে এবং এটা ধীরে ধীরে এমনিতেই ধংসের দিকে যাচ্ছে- সেহেতু এখনই নতুন বন্দর তৈরীর দিকে যেতে হবে- নাহলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে! আমরা এ জায়গাটি অন্যভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি- প্রথমত একমাত্র রাষ্ট্রীয় বন্দরটি রক্ষার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানাই- কেননা এখনো এই বন্দরকে রক্ষা করা খুবই সম্ভব, এবং দ্বিতীয়ত- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় বন্দর মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে আর আরেকটি বেসরকারী বন্দর তৈরী হওয়ার মানে হচ্ছে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য পুরোটাই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল হওয়া। এটা কি মেনে নেয়ার মতো?

যাহোক, আপনাকে আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।

দিগন্ত এর ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের যেহেতু নাব্যতা কমছে এবং এটা ধীরে ধীরে এমনিতেই ধংসের দিকে যাচ্ছে- সেহেতু এখনই নতুন বন্দর তৈরীর দিকে যেতে হবে- নাহলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে!

ঠিকই ধরেছেন, এটাই আমার মত।

এবার দেখে নিই পৃথিবীতে আর কোথায় কোথায় পাশাপাশি এরকম দুটো বন্দর আছে।
১) লন্ডন আর টিলসবারি বন্দর ২৫ মাইল দূরত্বে।
২) হলদিয়া আর কোলকাতা বন্দরের নদী-দূরত্ব ৫০ মাইল।
৩) জাপানে প্রায় সব শহরেই একটা করে বন্দর আছে।
৪) সাঙ্ঘাইতে অনেককাল হল নদীবন্দর আছে। কিন্তু সদ্য বেশী গভীরতায় আরো একটি বন্দর গড়ে তোলা হল।
এদের কোনওটিই অন্যটির ক্ষতি করেনি, বরং পরিপূরক হিসাবে কাজ করেছে। সরকারি বেসরকারি ব্যাপারটা অন্যরকম। আমেরিকা তো প্রতিরক্ষার কাজও বেসরকারি কোম্পানীকে দিয়ে করায়।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিনমজুর এর ছবি

আপনার এই মন্তব্যের মাজেজা বুঝলাম না। আসলেই বুঝতে পারছি না- আপনি আমার সাথে কোন পয়েন্টে দ্বিমত করছেন?

পাশাপাশি বন্দরের উদাহরণ ৪টি দেয়ার উদ্দেশ্য কি? এটা কি এই জন্য যে, ঐ সব জায়গাতে পাশাপাশি বন্দর থাকায় কোন ক্ষতি হয়নি বলে বাংলাদেশেও হবে না এটা প্রমাণ করার জন্য? আমি তো পাশাপাশি বন্দরের বিরোধিতা করিনি কোথাও! জাপানের পাশাপাশি শহরের বন্দর আর চট্টগ্রাম বন্দর একই রকম হয় কি করে? চট্টগ্রাম বন্দরটি সমুদ্রে নয়- সেটা কর্ণফুলী নদীতে, মোহনা থেকেও বেশ কিছু ভেতরে। এবং সাথে এই তথ্যটিও জেনে নিন যে, বাংলাদেশ একটি পলিবাহিত দেশ- এখানকার নদীগুলো দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী পলিবাহী নদীগুলোর অন্যতম। যতই ভাটির দিকে স্থাপনা গড়বেন- তা স্রোতধারাকে প্রতিহত করবে এবং উজানে পলি জমতে সাহায্য করবে- এবং উজানে নদীর নাব্যতা কমবে। এই তথ্য যদি ভুল হয়- তবে সেটা জানান, তা না করে দুনিয়ায় কোথায় পাশাপাশি কি বন্দর আছে- তা বললে কি দাঁড়ায়? বঙ্গোপসাগরে এক চট্রগ্রামেই আরো চারটা আরো কাছাকাছি বন্দর হোক না। সেটা হলে আর কর্ণফুলীর চ্যানেল ব্যবহার করা না হলে কি বলা হবে যে, পাশাপাশি বাকি বন্দরের জন্য আগের বন্ধটি ধ্বংস হয়ে যাবে?

২য় বিষয়টি হলো- আপনি পাশাপাশি বন্দরের যে উদাহরণ দিয়েছেন- সেগুলোর কোনটি কোনটি একই রিসোর্স ব্যবহার করে? কর্ণফুলীর মোহনায় বন্দর হলে- চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য কিন্তু জাহাজগুলো যাওয়া আসার জন্য নতুন বন্দরের জন্য চ্যানেল শেয়ার করতে হবে। কর্ণফুলী চ্যানেলে পর্যাপ্ত জায়গা নেই পাশাপাশি দুটো জাহাজ একত্রে ভীড়তে পারবে। এমনটি কি আপনার কথিত উদাহরণ গুলিতে আছে?

৩য় বিষয়টি হচ্ছে- সেগুলোর মালিকানা কার হাতে? এমনকি যে একটি সরকারী আরেকটি বেসরকারী? একই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দুটো বন্দর থাকলে তাতে প্রতিদ্বন্দিতা না হয়ে একটা আরেকটার পরিপূরক হয়ে কাজ করে- কিন্তু আলাদা প্রতিষ্ঠানের হলেও কি প্রতিদ্বন্দিতা থাকবে না বলছেন? আর সেই প্রতিদ্বন্দিতায় ব্যাকওয়ার্ড জায়গায় রাখতে চাইছেন- রাষ্ট্রীয় বন্দরটিকে? মোহনায় বন্দর যদি করতেই হয়- হোক না রাষ্ট্রীয় বন্দর, তাতেও অনেক সমস্যা হলেও শেষ পর্যন্ত অতখানি আপত্তি করবো না; কিন্তু উজানে রাষ্ট্রীয় বন্দর আর ভাটিতে মোহনায় প্রাইভেট বন্দর? প্রশ্নই উঠেনা।

আর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কাজ বেসরাকারী কোম্পানী দিয়ে করায় এটা বলে আপনি কি প্রমাণ করতে চাইলেন? যুক্তরাষ্ট্র করে বলে আমাদেরও বন্দর-প্রতিরক্ষা ইত্যাদি সমস্ত কিছুই বেসরাকারী হাতে তুলে দিতে হবে? দেশী- এমনকি বিদেশী বণিকদের হাতে পুরো দেশটাই তুলে দেই আরকি!! আরো ভালো হয়- ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিলে, তাই না?
শুনেন- প্রতিরক্ষার কিছু কাজ বেসরকারী কোম্পানীকে দিয়ে করানো আর- পুরো প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বেসরকারী খাতে তুলে দেয়া এক নয়। বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরেও অনেকগুলো প্রাইভেট কোম্পানী কাজ করে, সেটা নিয়ে এখানে কথা হচ্ছে না- মূল প্রশ্নটি হচ্ছে মূল মালিকানার প্রশ্ন, মূল নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন। আপনার যুক্তরাষ্ট্রের পুরো প্রতিরক্ষা বাহিনী যেমন বেসরকারী হাতে দিতে চাইবে না- যতই বেসরকারী কোম্পানী দিয়ে প্রতিরক্ষার কাজ করাক না কেন, তেমনি আমরাও আমাদের বন্দরের নিয়ন্ত্রণ আমাদের রাষ্ট্রের হাতেই রাখতে চাই। এরপরে অনেক কাজই প্রাইভেট কোম্পানীকে দিয়ে হতে পারে। আর, আশা করি এরপরের উদাহরণে আপনি প্রতিরক্ষাকে না টেনে প্রাইভেটাইজেশনের স্বর্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরের মালিকানার উদাহরণ টানবেন।

আপনাকে ধন্যবাদ।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আরো ভালো হয়- ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিলে, তাই না?

এই কথাটা কেন বললেন একটু ব্যাখ্যা করেন তো ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

দিগন্ত এর ছবি

পয়েন্টে থাকি। বন্দর উদাহরণ ১,২ আর ৪-এর ক্ষেত্রে পুরোনো বন্দর লন্ডন, কোলকাতা আর সাংহাইকে বাঁচানোর জন্য পরের বন্দরগুলো পরিপূরক হিসাবে তৈরী করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই মূল চ্যানেল শেয়ার করা হয়েছে, ম্যাপ দেখে নিতে পারেন। এর কারণ নদীর নাব্যতার পরিবর্তন। চট্টগ্রাম বন্দরের নাব্যতা যদি বছরের পর বছর কমতে থাকে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে ওখানে বড় জাহাজ ঢুকতে পারবে না, কিন্তু বন্দরের জন্য তৈরী করা ইনফ্রাস্ট্রাকচার রয়ে যাবে একই রকম।
auto
এটা বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতি হবে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য মোহানার কাছে একটা পরিপূরক বন্দর তৈরী করা দরকার, যেখানে বড় জাহাজ মাল নামিয়ে চলে যাবে, পরে ছোটো জাহাজে করে সেই একই মাল মূল বন্দর (চট্টগ্রাম) অবধি নিয়ে যাওয়া হবে। আরও পরে, চট্টগ্রামের নিকটবর্তী কোনো দ্বীপে (এখন অবধি পরিকল্পনা হল সোনাদিয়া দ্বীপে) গভীর কোনো উপকূলে আরো একটা বন্দর তৈরী করতে হবে। ঠিক এভাবেই কাজ করে লন্ডন বন্দর, কোলকাতা বন্দর আর সাংহাই বন্দর। লন্ডনেরটা নিশ্চিত নই, কিন্তু কোলকাতা আর সাংহাই বন্দরের পলির সমস্যা খুবই বেশী।

বাকিগুলোর ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান নেই, কিন্তু কোলকাতা বন্দর কার্গো পরিবহনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কেবলমাত্র হলদিয়া বন্দর হবার কারণেই। তার আগে যা আয় হত তার অধিকাংশই চলে যেত ড্রেজিং করাতেই। ড্রেজিং করানো বড় খরচাসাপেক্ষ, তার ওপর ড্রেজিং-এ ওঠা মাটি/পলি ডাম্প করার জায়গা লাগে। হলদিয়া বন্দরটা মোহানার কাছাকাছি অঞ্চলে অবস্থিত। বর্তমানে কুলপিতে, মোহানার আরও কিছুটা নিকটবর্তী অঞ্চলে তৃতীয় একটি বন্দরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা ম্যাপ দিলাম, আরো ভাল ম্যাপ পাবেন এখানে

auto

সাংহাই বন্দর
auto

লক্ষ্য করুন, সাংহাই বন্দর কতটা ভেতরে, এমনকি ইয়াংসি নদীর থেকেও আলাদা একটা ছোটো নদীতে। এই বন্দরের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে প্রথমে ইয়াংসির মোহানায় আর এখন পার্শ্ববর্তী দ্বীপে বন্দর বানানো হয়েছে। বন্দর আর মূল ভূখন্ডের মধ্যের রাস্তাটার ছবি ইন্টারনেটে অনেক জায়গায় পেয়ে যাবেন - খুবই বিখ্যাত - ম্যাপে লাল লাইন টেনে দেখানো হয়েছে।

লন্ডন আর টিলবারি পোর্ট
auto

আমার বক্তব্যের মূল ধারা ও তথ্য অধিকাংশই আমাদের মাধ্যমিক ভূগোল বই থেকে পাওয়া। ক্লাসের পরীক্ষায়ও অনেকবার লিখেছি কেন হলদিয়াতে বন্দর দরকার হয়েছিল। সুতরাং একই ধরণের একটি বন্দর বাংলাদেশে তৈরী হচ্ছে - তাই আমার মনে হয় এতে কোনো ভুল নেই।

দুর্নীতি আর অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে আমি আপনার সাথে একমত। আর বেসরকারী বা বিদেশী কোম্পানী নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই - এটা আপনার ব্যক্তিগত বায়াস, আপনি এ নিয়ে যৌক্তিক কিছু লেখেননি।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিনমজুর এর ছবি

দিগন্ত সাহেব, পয়েন্টে থাকি বলছেন, কিন্তু আপনি নিজেই তো পয়েন্টে নাই! আপনি কি আমার পয়েন্ট ধরতে পারছেন না নাকি ধরতে চাচ্ছেন না? ধরতে না চাইলে কিছু করার নেই কিন্তু যদি ধরতে না পারেন তাহলে ধরানোর চেস্টা আবারও করতে পারি। আপনি বলেছেন: ‍'আর বেসরকারী বা বিদেশী কোম্পানী নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই - এটা আপনার ব্যক্তিগত বায়াস, আপনি এ নিয়ে যৌক্তিক কিছু লেখেননি।' অথচ আমার লেখার মুল পয়েন্টই হলো এই বেসরকারীকরণ নিয়ে--- বসুন্ধরার মত একটা বেসরকারী কোম্পানীকে কর্ণফুলীর মোহনায় মূল বন্দরের প্রবেশ পথে একটা বেসরকারী বন্দর নির্মান করার অনুমতি দিচ্ছে বলেই না আমার এই লেখা! অথচ এই বিষয়েই আপনার কোন বক্তব্য নেই! আপনি ম্যাপ-ট্যাপ দিয়ে শুধু শুধুই আমাকে আরেকটি বন্দর নির্মানের যৌক্তিকতা বোঝানোর চেস্টা করছেন.. আমি তো আমার লেখায় স্রেফ আরেকটি বন্দর নির্মানের বিরোধিতা করছিনা করছি আরেকটি বেসরকারী বন্দর নির্মানের বিরোধিতা... এবং এ জন্য যুক্তি হিসাবে আমি বলেছি যেখানে বিশেষজ্ঞের মতে পুরোনো বন্দরের আধুনিকায়নের মাধ্যমে ৪৪ লক্ষ কন্টেইনার বহন করা সম্ভব(বর্তমানে বহন করছে ৯ লক্ষ কন্টেইনার, ২০১০ সাল নাগাদ বহন করতে হবে ১১ লক্ষ কন্টেইনার.... যদি বন্দরের আধুনিকায়ন করে ৪৪লক্ষ কন্টেইনার বহন করার পরও আরও ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন হল তাহলে অবশ্যই আরেকটি কেন প্রয়োজন হলে আরও ১০টি বন্দর নির্মান করলেও আমার আপত্তি নাই, আপত্তি করি তখনই যখন দেখি প্রকৃত কার্যক্ষমতা পুরোপুরি কাজে না লাগিয়েই আরেকটি নতুন বন্দর নির্মানের কথা বলা হয়, যখন দেখি বন্দরের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বেসরকরী মালিকানায় করার ধান্দা করা হয়) সেখানে কেন আরেকটি বন্দর নির্মান করতে হবে? তাও আবার বেসরকারী খাতে যার ফলাফল হলো সম্পূর্ণ মুনাফা বেসরকারী মালিকের হস্তগত হওয়া, দেশের আমদানী রপ্তানী বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ বেসরকারী মালিকের হাতে চলে যাওয়া। আমার লেখাটিতে বেসরকারী করনের এই কুফল সম্পর্কে পরিস্কার বলা থাকলেও আপনি বলছেন এটা নাকি আমার স্রেফ ব্যাক্তিগত বায়াস, এটা নিয়ে নাকি আমি যৌক্তিক কিছু লিখিনি!ভাই বুঝতে না পারলে বুঝতে চাইলেই হয়.. যৌক্তিক কিছু লিখিনাই জাতীয় ফালতু বাতচিত না করলেই ভালো হয়।

পুরুজিত এর ছবি

আপনার লেখার মূল সুরটা ধরতে পারি নি। ২টা বিষয় উঠে এসেছে –
১। চট্টগ্রামে ব্যক্তিমালিকানাধীন বন্দর তৈরি।
২। বন্দর তৈরিতে বসুন্ধরার নানা রকম অনিয়মের আশ্রয় নেয়া।
আমি দ্বিতীয়টার বিরোধী কিন্তু আপনি সম্ভবতঃ দুটোরই বিরোধী। আপনার প্রথম বিরোধের বেশ কিছু জায়গায় খটকা লাগলো। আশা করি পরিস্কার করবেন আমার খটকা গুলি।
“এত কিছুর পরেও চট্টগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বন্দর কর্তৃপক্ষ কখনো সরকারের কাছ থেকে এক পয়সাও অনুদান নেয় নি। বরং ’৮৪-’৯৮ পর্যন্ত সরকারি তহবিলে ২৩৫ কোটি টাকা দিয়েছে।“
একটা মনোপলি প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক হওয়া খুব একটা কঠিন কাজ না। ১৪ বছরে ২৩৫ কোটি টাকার হিসাবে একজন করদাতা হিসেবে আমি খুব একটা খুশি না। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান যদি আরো অনেক লাভজনক হয় আমি অবশ্যই তার প্রস্তাব খতিয়ে দেখার পক্ষে।
“বন্দরের পর্যাপ্ত জায়গায় কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বছরে প্রায় ৪৪ লক্ষ কন্টেইনার অনায়াসে হ্যান্ডলিং করা যাবে।“
গত ৩০/৩৫ বছরে যে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা দেখা গেল না, আজ কিসের ভিত্তিতে আমরা সেটা আশা করব চট্টগ্রাম বন্দর থেকে, কিছু মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে কি? বামদলগুলোরো ২য় বন্দর ঠেকানোর দিকে যতটা আগ্রহ তার সিকি ভাগ আগ্রহ বর্তমান বন্দর উন্নয়নে নেই (সম্ভবতঃ বন্দর বাঁচাও লংমার্চে যত লোক হয়, “বন্দর আরো লাভজনক কর” লংমার্চে তত লোক হয় না)
“কর্ণফুলীর একেবারে মোহনায় বন্দরের মত বড় একটা স্থাপনা নির্মিত হলে নদীর স্রোত অবশ্যই বাধা পাবে। ফলে উজানে, নদীর তলদেশ, ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাবে। তখন চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে।“
আপনার এ তথ্যের সূত্র কি? অনুমান?
“কখনও সাইক্লোন বা কোন দুর্ঘটনার কারণে যদি কোন জাহাজ মূল চ্যানেলে ডুবে যায় তাহলে বন্দরের মূল চ্যানেল বা প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাবে।“
এটা তো যে কোন সময়েই হতে পারে।
“আর ফলাফল হিসাবে বন্দরের প্রায় ২০০ কোটি টাকার কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য স্থাপনা, ঢাকাস্থ বন্দরের ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাপনা পরিত্যক্ত হবে।“
একটু বেশি নাটকীয়তা হয়ে গেল না? যদি এই প্রতিষ্ঠাণগুলো ভাল সেবা দিয়ে থাকে তবে নতুন বন্দরের এই সেবা না নেবার কোন কারণ আছে কি?
“চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতি বছর যে টাকা আয় হয় তন্মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থাকে যা বন্ধ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হবে, তা হল, এভাবে চট্টগ্রাম বন্দর একসময় একটি চরম লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। আমাদের শাসকদের প্রচলিত নীতি অনুসারে, ওই লোকসান ঘুচাতে, এ বন্দরটিও বেসরকারি খাতে দিয়ে দেওয়া হবে। সে সাথে বেকার হবে বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫০ হাজার মানুষ; নিদারুন দুরবস্থায় পড়বে তাদের পোষ্য আরও কয়েক ল মানুষ।“
আপনার এ কথা সত্য হবে যদি নতুন বন্দর সরকারকে কোন রকম শুল্ক না দেয়, এবং কোন কর্মচারী নিয়োগ না করে। খুব একটা বাস্তব চিন্তা ভাবনা মনে হয় না।

দিনমজুর এর ছবি

১।

আপনার লেখার মূল সুরটা ধরতে পারি নি। ২টা বিষয় উঠে এসেছে –
১। চট্টগ্রামে ব্যক্তিমালিকানাধীন বন্দর তৈরি।
২। বন্দর তৈরিতে বসুন্ধরার নানা রকম অনিয়মের আশ্রয় নেয়া।
আমি দ্বিতীয়টার বিরোধী কিন্তু আপনি সম্ভবতঃ দুটোরই বিরোধী।

হ্যাঁ, আমি ১ ও ২ উভয়েরই বিরোধী। এবং নীচে অনিন্দ্য প্রথমে আরেকটি অপশন এনেছেন- সেটি হলো নতুন বন্দর। আমি এর বিরোধী নই। অবশ্যই নতুন বন্দর দরকার হবে আমাদের। আমি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে- রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় নতুন বন্দর চাই। প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন- এক্সপানশন চাই, মংলা বন্দরের পুনর্জীবন চাই। এরপরে দরকারে অন্যত্র অন্য বন্দরও হতে পারে (এমনকি ডিপ সি পোর্টও হতে পারে)- তবে সেটাও থাকবে রাষ্ট্রের হাতে এবং সে বন্দরের কারণে এক্সিসটিং বন্দরের ক্ষতি করা যাবে না, আর এক্সিসটিং বন্দরকে ধ্বংস করে বেসরকারী খাতে বন্দর করার তো প্রশ্নই উঠে না।

২।

“এত কিছুর পরেও চট্টগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বন্দর কর্তৃপক্ষ কখনো সরকারের কাছ থেকে এক পয়সাও অনুদান নেয় নি। বরং ’৮৪-’৯৮ পর্যন্ত সরকারি তহবিলে ২৩৫ কোটি টাকা দিয়েছে।“
একটা মনোপলি প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক হওয়া খুব একটা কঠিন কাজ না। ১৪ বছরে ২৩৫ কোটি টাকার হিসাবে একজন করদাতা হিসেবে আমি খুব একটা খুশি না। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান যদি আরো অনেক লাভজনক হয় আমি অবশ্যই তার প্রস্তাব খতিয়ে দেখার পক্ষে।

একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লাভজনক হওয়া আর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক নয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য কেবল ব্যবসা করা বা মুনাফা নয়। রাষ্ট্রের নীতি-কৌশল, সার্বভৌমতা অক্ষুন্ন রাখা, জনগণকে নানাবিধ সার্ভিস দেয়া, রাষ্ট্রের স্ট্রাটেজিক বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্রের হোল্ড ঠিক রাখা এরকম নানাবিধ উদ্দেশ্যই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান তাই শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান থেকেই হিসাব করা যায় না, কেননা এর পরোক্ষ অনেকগুলো খাত আছে, যেগুলোকে ডেরিভেটিভও বলতে পারেন। এ কারণেই প্রাইভেট একটা কোম্পানী তার পণ্যের (মুনাফার উদ্দেশ্যে বিক্রি করা সার্ভিসও পণ্য) দাম ইচ্ছা ও সুবিধা মাফিক বাড়াতে পারে- বাড়িয়ে কমিয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিতে পারে; সেটা একটা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পারেনা; এমনকি মনোপলি হওয়ার পরেও পারেনা- অনেকক্ষেত্রে লোকসানে পড়ার পরেও পারেনা- এখানে লোকসানে পড়া মানে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আসা বরাদ্দ যা আবার প্রকারন্তরে জনগণেরই ট্যাক্সের টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এমনটি করে না কেন? কারণ রাষ্ট্র নাগরিককে বিভিন্ন সার্ভিস দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, নাগরিক সেকারণে ট্যাক্স পে করে, এবং গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু খাত আছে- সেখানে একটি পয়সা দাম বাড়ালে তার সাথে সংশ্লিষ্ট আরো দশটা খাতে তার প্রভাব পড়ে, নাগরিক খরচ একলাফে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেকারণে বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস, পরিবহন এর খরচ, লেভি-সারচার্জ-টোল প্রভৃতি এমন বিভিন্ন খাত সরকারের হাতে থাকায় রাষ্ট্র দরকারে কখনো কখনো আপাত লোকসান দিয়েও অর্থনীতির মূল প্রবাহটা অটুট রাখে। একইভাবে পাবলিক চিকিৎসা, শিক্ষা এখাতে সরাসরি রাষ্ট্র শুধু বরাদ্দই দিয়ে যায়- অন্যান্য প্রাইভেট মুনাফাখোর কোম্পানীর মত লাভ বা মুনাফার আশা করলে রাষ্ট্রের একটা বড় অংশের জনগণকে শিক্ষা-চিকিৎসা থেকে দূরে রাখা হতো। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের এসব আপাত লোকসানকে আসলে বিনিয়োগ হিসাবে দেখলেই ভালো। কেননা- শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ ও সবল নাগরিকই পারে রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ভালো গতি দিতে, সে বিবেচনায় চিকিৎসা-শিক্ষায় বরাদ্দ দেয়াটাও লোকসান নয়।
এতসব বলার উদ্দেশ্য একটাই- ১৪ বছরে আপনার কাছে ২৩৫ কোটি টাকা লাভ আপনার কাছে অপ্রতুল মনে হওয়ায় এবং অন্য প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যদি এর বেশী আয় রাষ্ট্রকে দিতে পারে- সেক্ষেত্রে প্রাইভেটাইজেশন করা উচিৎ এমন যুক্তি তোলায় মনে হয়েছে, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কার্যক্রমটিই আপনার কাছে পরিষ্কার নয়। পোস্টে উল্লেখিত সমস্ত ফ্যাক্টর বাদ দিলেও দেখুন- প্রাইভেট পুঁজি যখন এখানে বিনিয়োগ হবে- তখন তাদের মূল উদ্দেশ্যই হবে মুনাফা। তার বর্তমান যে খরচ, তার সাথে এক্সট্রা যুক্ত হবে রাষ্ট্রকে দেয়া শুল্ক (এটা আবার আপনার দাবী মোতাবেক বর্তমানের লাভের চেয়ে বেশী), তার সাথে বিশাল পরিমাণে মুনাফা, ফলে বুঝতেই পারছেন- এই বন্দর থেকে কি পরিমাণ আয় করতে হবে এবং মালামাল পরিবহনের চার্জ কতখানি করতে হবে; আর বন্দরের চার্জ বাড়লে প্রতিটি আমাদানীকৃত পণ্যের উপর তার প্রভাব পড়বে- একইভাবে রপ্তানীকৃত পণ্যের ব্যয়ও বেড়ে যাবে- এসমস্তই রাষ্ট্রের অর্থনীতির উপরই কি প্রভাব ফেলবে? আর কোন রাষ্ট্রীয় বন্দর যদি না থাকে- এবং পুরোটাই যদি প্রাইভেট বন্দরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়- তবে বাস্তবে কোন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে?

এখন যদি বলেন, এই রাষ্ট্রীয় বন্দরের ক্ষমতা অনুযায়ী ১৪ বছরে আরো লাভ করার উপায় ছিল। তাহলে আমিও আপনার সাথে একমত হবো- এবং সে ব্যাপারে আমিও অসন্তুষ্ট। দুর্ণীতি, আধুনিকায়ন না করা, ব্যবস্থাপনায় ঝামেলা ইত্যাদি সমস্যাগুলো না থাকলে, নষ্ট জেটি ঠিক করলে ও নতুন জেটি নির্মাণ করলে আরো বেশী লাভ করা যেত। কিন্তু সেটার অজুহাত তুলে পুরো বন্দরকেই বাতিল করে প্রাইভেট বন্দরের জয়গান গাওয়া মোটেও কাজের কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় দুর্ণীতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, দুর্ণীতি বন্ধ করতে না পারলে যে, প্রাইভেট ওনারশিপেরা আসলে সবাই খুব ফেরেশতা হয়ে যাবে- এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই, কেননা এরাও যে বড় দুর্নীতিবাজ তার প্রমাণ তো এই পোস্টেই আছে। বিদেশীরা আমাদের দু-দুটো গ্যাসক্ষেত্র পুড়িয়ে ফেলেছে- আমরা কিছুই করতে পারিনি। ফলে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লোকসব দুর্নীতিবাজ আর তার বাইরের সবাই ফেরেশতা এমনটা ভাবার মত মূর্খতা কিছুই নেই।

৩।

“বন্দরের পর্যাপ্ত জায়গায় কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বছরে প্রায় ৪৪ লক্ষ কন্টেইনার অনায়াসে হ্যান্ডলিং করা যাবে।“
গত ৩০/৩৫ বছরে যে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা দেখা গেল না, আজ কিসের ভিত্তিতে আমরা সেটা আশা করব চট্টগ্রাম বন্দর থেকে, কিছু মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে কি?

৩০/৩৫ বছর ধরেই কিন্তু এই বন্দর দিয়েই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের অধিকাংশটা হয়ে আসছে। এখন প্রশ্ন আসছে- একে আরো আধুনিক করা, জেটি বাড়ানো, নষ্ট জেটিগুলো ঠিকঠাক করা- সেটা কেন করা হবে না? স্বাধীন বাংলাদেশ কয়টা টাকা খরচ করেছে? কয়টা নতুন জেটি বানিয়েছে? কয়টা ড্রেজার কেনা হয়েছে? কেন হবে না?
যেখানে বন্দর লাভ করছে, সেখানে সেই লাভের টাকাই এখানে খাটতে দেয়া হবে না কেন? বন্দরের নিজের পর্যাপ্ত জায়গাও আছে। তাহলে এ সিদ্ধান্তগুলো কেন নেয়া হবে না? ৩০/৩৫ বছরে যেটা হলো না- সেটা কি অসম্ভব ধরণের কিছু? কোন জায়গায় আটকে যাচ্ছে? গতদুবছরে বন্দর ব্যবস্থাপনায় কিছুটা গতি বাড়ানো সম্ভব হয়েছে- এর মানে এই যে, গতি বাড়ানো সম্ভব। এখন সেই দাবীই কি আমরা করবো না?

৪।

বামদলগুলোরো ২য় বন্দর ঠেকানোর দিকে যতটা আগ্রহ তার সিকি ভাগ আগ্রহ বর্তমান বন্দর উন্নয়নে নেই (সম্ভবতঃ বন্দর বাঁচাও লংমার্চে যত লোক হয়, “বন্দর আরো লাভজনক কর” লংমার্চে তত লোক হয় না)

জ্বিনা, বামদলগুলো ২য় বন্দর ঠেকানোর দিকে কোন আগ্রহ নেই। এর চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে লংমার্চের শ্লোগান ছিল বন্দর বাঁচাও। সেটাতে এসএসএ এর বিরুদ্ধে যেমন দাবী ছিল- চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকায়ন করা, জেটি নির্মাণ, ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এসব দাবীও তুলেছিল। মংলা বন্দর অভিমুখেও লংমার্চ করেছে। মংলা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করার দাবী বামদলগুলোই তুলছে। সেগুলো আপনাদের দৃষ্টিতে না-ই পড়তে পারে। তবে আপনার এমন অভিযোগটি দেখে খুব অবাক ও হতাশ হলাম। বামদলগুলোর দিকে অভিযোগের তীর না ছুড়ে রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় যারা আছে তাদের দিকে তীর তুলা দরকার নয় কি? আমার মনে হয়- আপনার উপরের এই প্রশ্ন না তুলে বরং আমাদের সবারই এই প্রশ্ন করা উচিৎ যে "বন্দরকে আধুনিক করা- লাভজনক করার দিকে সরকারগুলোর আগ্রহ নেই; যাবতীয় আগ্রহ কেবল ব্যক্তিমালিকানাধীন বন্দর করার দিকে। কেন?"

৫।

“কর্ণফুলীর একেবারে মোহনায় বন্দরের মত বড় একটা স্থাপনা নির্মিত হলে নদীর স্রোত অবশ্যই বাধা পাবে। ফলে উজানে, নদীর তলদেশ, ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাবে। তখন চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে।“
আপনার এ তথ্যের সূত্র কি? অনুমান?

না অনুমান নয়। সরকারী দৈনিকগুলোতে বিশেষজ্ঞ মতামত হিসাবেই এটা ছাপা হতে দেখেছি।

“আর ফলাফল হিসাবে বন্দরের প্রায় ২০০ কোটি টাকার কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য স্থাপনা, ঢাকাস্থ বন্দরের ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাপনা পরিত্যক্ত হবে।“
একটু বেশি নাটকীয়তা হয়ে গেল না? যদি এই প্রতিষ্ঠাণগুলো ভাল সেবা দিয়ে থাকে তবে নতুন বন্দরের এই সেবা না নেবার কোন কারণ আছে কি?

না নাটকীয়তা হয়নি। বন্দর অকেজো হয়ে গেলে এর কার্গো হ্যাণ্ডলিং যন্ত্রপাতির কি হবে? মংলা বন্দরের যন্ত্রপাতির আজ কি দশা? আমাদের অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর ক্ষেত্রে এমন আরো ভয়ানক অভিজ্ঞতা আছে। আদমজীতে ৩২৫০ তাঁত থাকার পরে ডাউন সাইজের নামে ১৫০০ তাঁত চালাতে বাধ্য করা হয়েছিল- তখন বাকি তাঁতগুলোর কি দশা হয়েছিল জানেন? অকেজো বসে থেকে থেকে জীর্ণ-নষ্ট হয়েছিল; আজ সে চালু-অচালু তাঁত গুলোর অবস্থা কি? অন্যান্য প্রাইভেটাইজ করা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই চিত্র, যেগুলো বিক্রি করা হয়েছে- সব পানির দরে। আর বন্দর সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে আপনার প্রশ্ন- নতুন বন্দর কেন সেগুলো ব্যবহার করবে না? আমার প্রশ্ন প্রাইভেট বন্দর যদি রাষ্ট্রীয় সে স্থাপনা- সে প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যবহার না করতে চায়- আপনি বাধ্য করতে পারবেন? বড় ক্যাপিটাল আসলে, তারা নিজেদের বিকল্প স্থাপনা গড়ে নিবে বলেই ধরা যায়- বড়জোর এতটুকু হতে পারে- সেই রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোও পানির দরে কিনে নিতে পারে।

৬।

“চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতি বছর যে টাকা আয় হয় তন্মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থাকে যা বন্ধ হয়ে যাবে। ------- সে সাথে বেকার হবে বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫০ হাজার মানুষ; নিদারুন দুরবস্থায় পড়বে তাদের পোষ্য আরও কয়েক লক্ষ মানুষ।“
আপনার এ কথা সত্য হবে যদি নতুন বন্দর সরকারকে কোন রকম শুল্ক না দেয়, এবং কোন কর্মচারী নিয়োগ না করে। খুব একটা বাস্তব চিন্তা ভাবনা মনে হয় না।

শুল্কের বিষয়টি আগেই বলেছি।
নতুন বন্দর কর্মচারী নিয়োগ করবে অতি অবশ্যই। তাতে একটা এক্সিসটিং বন্দর বন্ধ হয়ে গেলে তার সাথে যুক্ত মানুষদের বেকার হয়ে যাওয়ায় হেরফের হবে বলে মনে হয় না। এদের কিছু লোক হয়তো কাজ পাবে ঠিকই, কিন্তু বেশীরভাগই বেকার হবে।

পুরুজিত এর ছবি

হ্যাঁ, আমি ১ ও ২ উভয়েরই বিরোধী

আপনি যদি ব্যক্তি মালিকানার কনসেপ্টটারই বিরোধী হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের চিন্তাধারায় কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। আমি মনে করি শিল্প কারখানা বা বন্দর পরিচালনার মত কাজ চালানোর দক্ষতা রাষ্ট্রের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। যেমন গুগলের মত কোন প্রতিষ্ঠান কখনোই রাষ্ট্রীয় খাতে গড়ে উঠবেনা। রাষ্ট্র ঐতিহাসিক ভাবেই ইনোভেশন বা ব্যক্তিগত দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাষ্ট্রের নীতি-কৌশল, সার্বভৌমতা অক্ষুন্ন রাখা, জনগণকে নানাবিধ সার্ভিস দেয়া, রাষ্ট্রের স্ট্রাটেজিক বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্রের হোল্ড ঠিক রাখা এরকম নানাবিধ উদ্দেশ্যই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান তাই শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান থেকেই হিসাব করা যায় না, কেননা এর পরোক্ষ অনেকগুলো খাত আছে, যেগুলোকে ডেরিভেটিভও বলতে পারেন।

নীতি কৌশল, সার্বভৌমতা রক্ষা, স্ট্রাটেজিক বিষয়ে রাষ্ট্রের হোল্ড রাখায় একটা বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা সম্পর্কে জানার আগ্রহ রইল। তবে জনগণকে যথাযথ সার্ভিস দিতে পারছে না বলেই নতুন বন্দর করার কথা উঠছে। অন্ততঃ এইটা তো আপনিই বলছেন যে, যতটা লাভজনক হতে পারত, বন্দর ততটা লাভজনক হয়ে ওঠে নি নানাবিধ কারণে। আমার দৃষ্টিতে কারণগুলোর মূলে রয়েছে সরকারের (বিশেষ করার আমাদের দেশের মত দায়বদ্ধতাহীন সরকারের) বন্দর পরিচালনার অনুপযোগিতা।
তার বর্তমান যে খরচ, তার সাথে এক্সট্রা যুক্ত হবে রাষ্ট্রকে দেয়া শুল্ক (এটা আবার আপনার দাবী মোতাবেক বর্তমানের লাভের চেয়ে বেশী), তার সাথে বিশাল পরিমাণে মুনাফা, ফলে বুঝতেই পারছেন- এই বন্দর থেকে কি পরিমাণ আয় করতে হবে এবং মালামাল পরিবহনের চার্জ কতখানি করতে হবে; আর বন্দরের চার্জ বাড়লে প্রতিটি আমাদানীকৃত পণ্যের উপর তার প্রভাব পড়বে- একইভাবে রপ্তানীকৃত পণ্যের ব্যয়ও বেড়ে যাবে- এসমস্তই রাষ্ট্রের অর্থনীতির উপরই কি প্রভাব ফেলবে? আর কোন রাষ্ট্রীয় বন্দর যদি না থাকে- এবং পুরোটাই যদি প্রাইভেট বন্দরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়- তবে বাস্তবে কোন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে?

একই সাথে আপনি ভুলে যাচ্ছেন, প্রাইভেট বন্দরের অপারেটিং কস্ট কম হবে কারণ তাদের ডিসিশান প্রসেস অনেক বেশি স্ট্রিমলাইনড, আমলাতান্ত্রিক বা রাজনৈতিক ওভারহেড নেই, নেই অপ্রয়োজনীয় কর্মশক্তিকে বসিয়ে বেতন দেয়ার কোন বাধ্যবাধকতা। তাই তারা মুনাফা নিয়েও সরকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম খরচে সার্ভিস দিতে পারবে। আর যদি না পারে, তাইলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। আপনি হয়তো বলবেন, চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে গেলে তখন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠাণের মনোপলি হবে। সেই ব্যাপারে চিন্তিত থাকলে আপনার যথাযথ দাবিটি হওয়া উচিত নতুন বন্দর তৈরির ফলে যাতে পুরানো বন্দর বন্ধ না হয়ে যায় এমন ভাবে ডিজাইন করার। অথবা একাধিক প্রাইভেট বন্দর তৈরিও সুস্থ প্রতিযোগিতা প্রমোট করতে পারে। ঢালাও ভাবে প্রাইভেট বন্দরের বিরোধিতা করার মত কারণ নয় এটা।
ফলে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লোকসব দুর্নীতিবাজ আর তার বাইরের সবাই ফেরেশতা এমনটা ভাবার মত মূর্খতা কিছুই নেই।

রাষ্ট্রে যদি কোন দুর্নীতি নাও থাকে তবুও আমি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠাণের বিরোধী, কারণ রাষ্ট্রের পক্ষে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠাণ পরিচালনার মত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়, যেটা আমি আগেই বলেছি।
সরকারী দৈনিকগুলোতে বিশেষজ্ঞ মতামত হিসাবেই এটা ছাপা হতে দেখেছি।

আমার মতে যথাযথ ডিজাইন করা হলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে আপনার প্রশ্ন- নতুন বন্দর কেন সেগুলো ব্যবহার করবে না? আমার প্রশ্ন প্রাইভেট বন্দর যদি রাষ্ট্রীয় সে স্থাপনা- সে প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যবহার না করতে চায়- আপনি বাধ্য করতে পারবেন? বড় ক্যাপিটাল আসলে, তারা নিজেদের বিকল্প স্থাপনা গড়ে নিবে বলেই ধরা যায়- বড়জোর এতটুকু হতে পারে- সেই রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোও পানির দরে কিনে নিতে পারে।

আমার মনে হয় না, প্রাইভেট বন্দরের রাষ্ট্রীয় স্থাপনার বিরুদ্ধে কোন অব্যাখ্যনীয় আক্রোশ থাকবে। যদি বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের পণ্য সুলভ মুল্যে এবং স্বল্পতম সময়ে বহন করে দেয় তার নিশ্চই শুধু বিকল্প করার জন্যই নতুন রেলওয়ে বানাবে না, আর এজন্য কাউকে বাধ্য করতে হবে না। তারে র‌্যাশনাল বিজনেস ডিসিশান নেবে বলেই আমার ধারণা।
নতুন বন্দর কর্মচারী নিয়োগ করবে অতি অবশ্যই। তাতে একটা এক্সিসটিং বন্দর বন্ধ হয়ে গেলে তার সাথে যুক্ত মানুষদের বেকার হয়ে যাওয়ায় হেরফের হবে বলে মনে হয় না। এদের কিছু লোক হয়তো কাজ পাবে ঠিকই, কিন্তু বেশীরভাগই বেকার হবে।

এইখানে কিছু গাণিতিক ব্যাখ্যা দিতে হবে মনে হচ্ছে।
ধরুন বর্তমানে ৫০০০০ লোক চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করে এবং এদের কেউই অপ্রয়োজনীয় নয়। তাইলে নতুন বন্দরেরো সম পরিমাণ লোক লাগার কথা। মোট বেকারের সংখ্যা বাড়ার কোন কারণ দেখি না।

দিনমজুর এর ছবি

আপনি যদি ব্যক্তি মালিকানার কনসেপ্টটারই বিরোধী হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের চিন্তাধারায় কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। আমি মনে করি শিল্প কারখানা বা বন্দর পরিচালনার মত কাজ চালানোর দক্ষতা রাষ্ট্রের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। যেমন গুগলের মত কোন প্রতিষ্ঠান কখনোই রাষ্ট্রীয় খাতে গড়ে উঠবেনা। রাষ্ট্র ঐতিহাসিক ভাবেই ইনোভেশন বা ব্যক্তিগত দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

যাক এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন তাহলে যে আমি ব্যাক্তি মালিকানার কনসেপ্টারই বিরোধী! প্রথমে তো বুঝতেই পারছিলেনা না! আপনার আপনার চিন্তার মাঝে মৌলিক পার্থক্য তো অতি অবশ্যই আছে.. সেই সাথে বলবো আপনার চিন্তা মৌলিক ভাবেই ভুল কেননা দক্ষতা বিষয়টা রাষ্ট্র চালাচ্ছে না ব্যাক্তি মালিকানায় চলছে তার উপর নির্ভর করেনা। উভয়ক্ষেত্রেই আদি ও অকৃত্রিম মানব সন্তানই চালায়... বেসরকারী মালিকনায় মানব সন্তানেরা যদি দক্ষ ভাবে চালাতে পারে তাহলে সরকারী মালিকানাতেও পারবে। প্রশ্ন হলো যে মানবসন্তানেরা চালাচ্ছে তারা কি করতে চাচ্ছে বা কি করতে পারছে। বেসরকারী মালিক তার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি লুটপাট করতে দেয়না বলেই মানবসন্তানেরা লুটপাট করতে পারেনা... আমাদের রাষ্ট্র আমরা যাদের হাতে দিয়ে রেখেছি তারা লুটপাট ঠেকাবে কি, নিজেরাই লুটপাট করতে ব্যস্ত। কাজেই রাষ্ট্রক্ষমতায় কে আছে, কার স্বার্থে আছে সেটাই মূল প্রশ্ন... এই প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে গিয়ে গুগলের মত প্রতিষ্ঠান কখনই রাষ্ট্রীয় খাতে গড়ে উঠবেনা.. রাষ্ট্র ঐতিহাসিক ভাবেই ইনোভেশন বা ব্যক্তিগত দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে-- এই সব কথা বলা মানে হলো ইতিহাসের নামে ঐতিহাসিক বদমায়েসি করা... আরে ভাই জনগনের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় নাথেকেও দেখেন ভারতের রেলওয়ে কি চমতকার চলছে... স্কেনডেনেভিয়ান দেশগুলতে স্রেফ রাষ্ট্রিয় পুজিবাদের মাধ্যমেই রাষ্ট্রিয় মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলো কি দারুন সার্ভিস দিচ্ছে... আর যেসব দেশগুলোতে এখন বেসরকরীকরনের রমরমা অবস্থা সেসব দেশের ও শিল্প অর্থনীতির বিকাশ কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাতেই হয়েছে.... চীনের দিকে তাকান...এমনকি সিঙ্গাপুরের বন্দরও তো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় হংকং এর বেসরকারী বন্দরের চেয়ে ভালো সার্ভিস দিচ্ছে! আর জ্ঞানবিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিস্কারগুলো কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাতেই হয়েছে। এখন বরং বিভিন্ন কর্পোরেট মুনাফার স্বার্থে মানুষের ক্রিয়েটিভিটি দক্ষতা ইত্যাদিকে স্রেফ মুনাফা অর্জনের পক্ষে কাজে লাগাতে গিয়ে সাবান-শ্যাম্পু-কোমলপানীয়-চকচকে ডিজিটাল বিনোদনের পেছনে যত মেধা এবং সম্পদ নিয়োজিত হচ্ছে মানবজাতির প্রকৃত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তার সমান্য ও হচ্ছে না।

নীতি কৌশল, সার্বভৌমতা রক্ষা, স্ট্রাটেজিক বিষয়ে রাষ্ট্রের হোল্ড রাখায় একটা বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা সম্পর্কে জানার আগ্রহ রইল।

এবিষয়ে আমার মূল লেখাটিতে ভালো করেই লিখেছি... বুঝতে না চাইলে তো আর জোর করে বোঝাতে পারব না। কষ্ট করে আরেকবার পড়ে দেখুন।

একই সাথে আপনি ভুলে যাচ্ছেন, প্রাইভেট বন্দরের অপারেটিং কস্ট কম হবে কারণ তাদের ডিসিশান প্রসেস অনেক বেশি স্ট্রিমলাইনড, আমলাতান্ত্রিক বা রাজনৈতিক ওভারহেড নেই, নেই অপ্রয়োজনীয় কর্মশক্তিকে বসিয়ে বেতন দেয়ার কোন বাধ্যবাধকতা। তাই তারা মুনাফা নিয়েও সরকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম খরচে সার্ভিস দিতে পারবে। আর যদি না পারে, তাইলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। আপনি হয়তো বলবেন, চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে গেলে তখন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠাণের মনোপলি হবে। সেই ব্যাপারে চিন্তিত থাকলে আপনার যথাযথ দাবিটি হওয়া উচিত নতুন বন্দর তৈরির ফলে যাতে পুরানো বন্দর বন্ধ না হয়ে যায় এমন ভাবে ডিজাইন করার। অথবা একাধিক প্রাইভেট বন্দর তৈরিও সুস্থ প্রতিযোগিতা প্রমোট করতে পারে। ঢালাও ভাবে প্রাইভেট বন্দরের বিরোধিতা করার মত কারণ নয় এটা।

ঠিক এই ধরনের যুক্তি দেখিয়েই বলিভিয়ার পানিসম্পদ বেসরকারী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া হয়ে ছিল।জনগন তার ফলাফল হাড়ে হাড়ে টের পাওয়ার পর সেখান থেকে বেখটেল কে ঝেটিয়ে বিদায় করে। শুধু তাই নয় বলিভিয়া, ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করে পুরো ল্যাটিনআমারেকিতেই জাতীয়করনের হাওয়া বইছে। আমরা শালা দেখেও শিখিনা! আরে অপারেটিং কষ্ট-ফষ্ট তো আসল কথা না, আসল কথা মুনাফা.... খালি ইফিশিয়েন্ট ভাবে চালায়া আমার কি হবে যদি লাভের গুড় পিপড়ায় খায়... রাষ্ট্রীয় ভাবে চালালে ইফিশিয়ান্ট ভাবেও চালানো সম্ভব, সেই সাথে মুনাফার ভাগটাও জনগনেরই থাকল.. যে কারণেই আমরা কেবল বন্দর না যেকোন কিছু প্রাইভেটাইজেশানের বিরোধি।

আমার মতে যথাযথ ডিজাইন করা হলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

যাক, সমস্যা যে হতে পারে এটা স্বীকার করছেন তাহলে... নিজেকে আমার ধন্য মনে হচ্ছে! আমার কথা হলো, প্রথমত আমি পুরোন বন্দরের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যাবহার করার পরেই কেবল নতুন আরেকটা বন্দর করার পক্ষপাতি, দ্বিতীয়ত, যদি আপনার মত প্রতিভাবান ডিজাইনার দিয়ে ডিজাইন করিয়ে আরেকটা বন্দর বানাতেই হয়, তাহলে তা বানাবো রাষ্ট্রীয় মালিকানায়।

রাষ্ট্রে যদি কোন দুর্নীতি নাও থাকে তবুও আমি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠাণের বিরোধী, কারণ রাষ্ট্রের পক্ষে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠাণ পরিচালনার মত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়, যেটা আমি আগেই বলেছি।

রাষ্ট্রের পক্ষে যে বেসরকারী মালিকের চেয়ে ভালো ভাবে এবং জনগনের জন্য আরো লাভজনক উপায়ে যেকোন প্রতিষ্ঠান চালনা সম্ভব সে বিষয়ে আমি উপরে বলেছি।

আমার মনে হয় না, প্রাইভেট বন্দরের রাষ্ট্রীয় স্থাপনার বিরুদ্ধে কোন অব্যাখ্যনীয় আক্রোশ থাকবে। যদি বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের পণ্য সুলভ মুল্যে এবং স্বল্পতম সময়ে বহন করে দেয় তার নিশ্চই শুধু বিকল্প করার জন্যই নতুন রেলওয়ে বানাবে না, আর এজন্য কাউকে বাধ্য করতে হবে না। তারে র‌্যাশনাল বিজনেস ডিসিশান নেবে বলেই আমার ধারণা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের ভালো সার্ভিস দিচ্ছে না .. বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, এই অজুহাতে অচিরেই আপনারা বাংলাদেশ রেলওয়েকেও বেসরকারী করণের পক্ষে বলবেন!

এইখানে কিছু গাণিতিক ব্যাখ্যা দিতে হবে মনে হচ্ছে।
ধরুন বর্তমানে ৫০০০০ লোক চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করে এবং এদের কেউই অপ্রয়োজনীয় নয়। তাইলে নতুন বন্দরেরো সম পরিমাণ লোক লাগার কথা। মোট বেকারের সংখ্যা বাড়ার কোন কারণ দেখি না।

খালি গণিত দিয়ে এইটা বুঝতে পারবেন না। অপ্রয়োজনীয় কথাটা কেবল গাণিতিক হিসাবে নির্ধারিত হয় না। যখন মুনাফা মূল কথা থাকে তখন মুনাফার প্রয়োজনেই শ্রমশক্তি একবার প্রয়োজনীয় হয়, একবার অপ্রয়োজনীয় হয়। শ্রমিকের মানবিক প্রয়োজন, শ্রম অধিকার এইসব মুনাফাখোরেরা বোঝেনা। যে শ্রমিক তাকে সারা বছর মুনাফার যোগান দিয়ে এলো, সেই মুনাফাতে সামন্য টান পড়লেই সে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়.. দেখছেনা বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় কেমন করে ফোর্ড, জেনারেল ইলেক্ট্রিক থেকে শুরু করে বড় বড় বহুজাতিক কেমন করে হাজার হাজার শ্রমিক ছাটাই করছে।অথচ রাষ্ট্রীয় কারখানায় কিন্তু এরকম ঘটছেনা..

মুনাফার লজিকে পথ চললে এরকম অনেক কিছুই চোখে পড়বেনা, এরকম অনেক কিছুই ধরতে পারবেনা না। তাই বলি মুনাফার লজিক থেকে বাইরে এসে দুচোখ ভরে দুনিয়াটা একবার দেখুন, সামাজিক মানবিক প্রয়োজনটুকু বুঝতে শিখুন.. দেখবেন অনেক অসম্ভবই সম্ভব হয়ে উঠবে।

হিমু এর ছবি

মডারেশন নোটঃ

দ্বিতীয়ত, যদি আপনার মত প্রতিভাবান ডিজাইনার দিয়ে ডিজাইন করিয়ে আরেকটা বন্দর বানাতেই হয়

তর্ক বেশ চলছিলো, এই জায়গায় এসে হোঁচট খেলাম।

আপনি কি কাউকে খোঁচা না দিয়ে কথা বলতে পারেন না, নাকি আদৌ ইচ্ছুক না? বেশ তো তর্ক চলছিলো, মাঝখানে এই ছোট ছোট ব্যক্তিগত খোঁচার কি কোন দরকার ছিলো? এমনটা আজ নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছি আপনার লেখায়। অবধারিতভাবে এই ধরনের খোঁচা তর্ককে একটা তিক্ত কচলাকচলির দিকে নিয়ে যায়। আপনি কি সেটাই উপভোগ করেন?

ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য অপ্রকাশিত রয়ে যাবে। আপনার মন্তব্যের দীর্ঘ, ভাবিত অংশ যেন এই ধরনের ফালতু খোঁচাখুঁচির কারণে নষ্ট না হয়, সে কথা বিবেচনার অনুরোধ রইলো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দিনমজুর এর ছবি

৫।

“কর্ণফুলীর একেবারে মোহনায় বন্দরের মত বড় একটা স্থাপনা নির্মিত হলে নদীর স্রোত অবশ্যই বাধা পাবে। ফলে উজানে, নদীর তলদেশ, ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাবে। তখন চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে।“
আপনার এ তথ্যের সূত্র কি? অনুমান?

না অনুমান নয়। জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষজ্ঞ মতামত হিসাবেই এটা ছাপা হতে দেখেছি।

রাগিব এর ছবি

জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষজ্ঞ মতামত হিসাবেই এটা ছাপা হতে দেখেছি।

বন্দর নিয়ে বিতর্কের আগা মাথা কিছুই ভালো জানিনা, তবে জাতীয় দৈনিকের "বিশেষজ্ঞ" দের বিশেষ জ্ঞান যে সহজেই কেনা সম্ভব =, তা বুঝি। বিভিন্ন বিষয়ে এমন সব পরামর্শ এরা দিয়েছে, অনেক কিছুই
চাঙ্গে উঠেছে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

নতুন বন্দর না বেসরকারী বন্দর - আপত্তিটা কোথায়? দুটোই হতে পারে। - সেক্ষেত্রে দুটো নিয়েই স্পেসিফিক হওয়া যায়। আবার বেসরকারী হলে বসুন্ধরা নাকি বসুন্ধরা না এটিও তর্কের মূলে থাকতে পারে।

কিন্তু

এখন সরকারী পক্ষের অস্বচ্ছতা বা দুর্নীতি নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, কারণ এটা দক্ষিণ এশিয়াতে খুবই "সাধারণ" ব্যাপার।

বিষয়টিকে সাধারণ ব্যাপার বলে দূরে রাখায় আমার আপত্তি আছে।
------------------------------------------------------------------------
The philosophers have only interpreted the world in various ways; the point, however, is to change it.
[MARX : Theses on Feuerbach]


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দিগন্ত এর ছবি

আমি কিন্তু সাধারণ শব্দটাকে "" এর মধ্যে রেখেছি। আমার বক্তব্য এটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করাই যায় কিন্তু সেই আন্দোলনের ব্যাপকতা আরো বেশী হতে হবে আর দেশজুড়ে হতে হবে। শুধু তাই নয়, একদিনে এই দুর্নীতির নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে ফেলা যাবে কি?


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলাদেশের বন্দরগুলোর ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বিষয়ের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করছি। বন্দরগুলোর ইনএফিশিয়েন্সির জন্য টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর পাশাপাশি সমানভাবে দায়ী এর সাথে জড়িত সরকারী-বেসরকারী সংস্থা ও সংগঠণগুলোর আচরন ও মনোভাব। আমদানীকারক বা রপ্তানীকারক উভয়ের প্রতি এদের মনোভাব "দোহন করার উপযুক্ত গাভীর" ন্যায়। দীর্ঘদিন ধরে মাল পড়ে থাকা, বন্দরে কনজেশন, কাজ বন্ধ থাকা এগুলো নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর তার পেছনে আছে এধরণের আচরণ ও মনোভাব। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়মিতভাবে ব্যবহারকারী হিসাবে আমি জানি এই সমস্যাগুলো কত গভীর এবং ক্ষতিকর। হাজারোটা অ্যাসোসিয়েশন আর নানা ধরণের নিয়ম আর নর্ম আমদানী ও রপ্তানী ব্যয় দুটোই অযৌক্তিকভাবে অনেক বাড়িয়ে দেয়। আমি মংলা বন্দর পারত পক্ষে ব্যবহার করিনা শুধুমাত্র এই বিষয়গুলোর ভয়ে। মনে হয় সুন্দরবনের ক্ষুধার্ত বাঘগুলো ওখানে বসে আছে। কোনভাবেই ঢালাও বেসরকারীকরণ মেনে নেয়া যায় না বিশেষতঃ যেখানে প্যারালাল সরকারী সংস্থাকে অকার্যকর করার অসৎ উদ্দেশ্য থাকে। এই দুষ্ট ক্ষতগুলো বেসরকারী বন্দরে থাকবে না এমন নিশ্চয়তা কেউ দেবে না। বরং আমাদের অভিজ্ঞতা বলে ঢালাও বেসরকারীকরণ লুটে-পুটে খাবার পথ খুলে দেয়। বসুন্ধরার মত চিহ্নিত ভূমিদস্যু যখন এমন ব্যবসার সুযোগ পায় তখন এর ভবিষ্যত কী হবে তা বোঝার জন্য জ্যোতিষ হবার দরকার পড়েনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

গৌতম এর ছবি

আপনার লেখাটা পড়ে অনেকদিন পর একটি স্মৃতি রোমন্থন করলাম। কয়েক বছর আগে এসএসএকে যখন এই বন্দর তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো তখন 'বিজ্ঞানচেতনা'র জন্য একটি লেখা তৈরি করেছিলাম। আপনার লেখাটা পড়ে সেটি খুঁজে বের করে দেখি মূল জায়গাটা তো একই রয়ে গেছে। কেবল এসএসএ-র বদলে আসছে বসুন্ধরা!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।