সময় পরিভ্রমণ কি আসলেই সম্ভব?

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: মঙ্গল, ০১/০৪/২০০৮ - ২:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সময় পরিভ্রমণ কি সম্ভব? সায়েন্স ফিকশনগুলোতে সময় পরিভ্রমণ করে অতীত বা ভবিষৎতে যাওয়া-আসা দেখানো হয়। সুতরাং খুব বাড়াবাড়ি রকম সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত ছাড়া সবাই বলবে যে, না, সময় পরিভ্রমণ সম্ভব নয়। তবে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান কিন্তু একধরণের সময় পরিভ্রমণের কথা স্বীকার করে। আইনস্টাইনের থিওরী অব রিলেটিভিটি থেকে আমরা জানি, কোন নভোচারী যদি দূরবর্তী কোন গ্রহ বা নক্ষত্রে আলোর কাছাকাছি কোন বেগে ভ্রমণ করে তাহলে সে একশো বছরের ভবিষ্যতেও যেতে পারবে। কারণ এই প্রক্রিয়ায় তার মাত্র কয়েক বছর ব্যয় হবে। সুতরাং না হয় ধরেই নেয়া হলো যে, ভবিষ্যৎ সময়ে এভাবে পাড়ি দেয়া সম্ভব, কিন্তু অতীতে? বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোতে এ ধরণের ঘটনা দেখানো হয়, যা আপাতত দৃষ্টিতে অসম্ভব। ধরুন, আপনার জন্ম ১৯৬০ সালে। এখন যদি আপনি সময় পরিভ্রমণ করে ১৯০০ সালে যেতে চান সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে? কারণ, সেই সময় তো আপনি জন্মগ্রহণই করেননি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেয়া হয় যে, আপনি সময় পরিভ্রমণ করে আপনার শৈশবে ফিরে গেছেন, তবুও এটা ধরে নেয়া অবশ্যই যুক্তিযুক্ত হবে না যে, সময় পরিভ্রমণ করে আপনার জন্মের আগের সময়েও আপনি যেতে পারবেন।

এ ধরণের প্যারাডক্স এড়ানোর জন্য দুটি বিকল্প কথা চিন্তা করা যায়। একধরণের সামাধানে বলা হয় যে, অতীত সময় পরিভ্রমণকারীরা নতুন একধরণের টাইমলাইন সৃষ্টি করবে। যেটা প্রকৃত ঘটনা, যেটা ঘটেছে সেটার সমান্তরাল কিন্তু স্বাত্বন্ত্র্যপূর্ণ হবে। যেমন ধরে নেয়া হলো, টাইম মেশিনের আবিস্কারক অতীত সময় পরিভ্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির গুপ্তহত্যা প্রতিরোধ করতে চাইল। সে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে কোন একদিন টাইম মেশিনে রওনা হলো এবং ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর (কেনেডির মৃত্যুদিন) সকালের ডালাসে পৌছাল, সকালের সংবাদপত্র সেদিনকার তারিখ নিশ্চিত করছে। শহরের সবাই কেনেডিকে উঞ্চ অভিনন্দন দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে এরকম অনেক কিছু। কিন্তু প্যারাডক্সের সমাধান মতে এটা অরিজিনাল ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর নয়, যেদিনের ইতিহাস বইয়ে আছে অথবা প্রবীনদের মস্তিষ্কে আছে। অরিজিনাল ২২শে নভেম্বর ১৯৬৩ সালে আমাদের ভ্রমণকারী যেখানে ছিল না, সে সেদিনকার সংবাদপত্রের কপিও কেনেডি অথবা কেনেডির হত্যাকারী অসওয়ার্ল্ডকে দেখে সন্দেহ করেনি। তার এই সকাল পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও ছিল না। তাহলে ভ্রমণকারী প্রকৃতপক্ষে ১৯৬৩ এর ২২শে নভেম্বর যায়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে কেনইবা দাবী করা হবে যে ঐ সময়ে গিয়েছিল। এটার সমাধান হলো আসলে সময় পরিভ্রমণকারী যেখানে যাবে সেটা একটা সমান্তরাল বিশ্ব, যেখানে পৃথিবীর সমান্তরাল কিছু ঘটনাই অথবা ধরা যাক প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটেছে সেটাই ঘটেছে।

সময় পরিভ্রমণ প্যারাডক্স সমাধানের দ্বিতীয় পন্থায় ধরে নেয়া হয় যে, পরিভ্রমণকারী ঐ সময়ে পরিভ্রমণ করবে ঠিকই কিন্তু ঘটনার কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। অর্থাৎ ধরে নেয়া হলো যে, পরিভ্রমণকারী ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বরে পৌঁছল ঠিকই, সংবাদপত্র কিনে সেদিনের তারিখ দেখে নিশ্চিতও হলো, এমনকি কেনেডির গুপ্তহত্যা ঠেকাতে চেষ্টাও করল কিন্তু পারল না। অথবা অসওয়ার্ল্ডকে গুলি করা থেকে নিবৃত্তও করল কিন্তু ধরে নেয়া হলো যে, সেখানে আরো গানম্যান ছিল যাদের সে রুখতে পারল না। অর্থাৎ সময় পরিভ্রমণকারীরা অতীত সময়ে যেতে পারল ঠিকই কিন্তু প্রকৃত ঘটনা বা ইতিহাসের কোন পরিবর্তন করতে পারল না। এধরণের সময় পরিভ্রমণ যৌক্তিকভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা ফিজিকালী বা শারীরীকভাবে সম্ভব হবে। কারণ, হিসেব করে দেখা গেছে যে, একাজে যে পরিমাণ শক্তির দরকার হবে সেটা প্রকৃত অর্থেই অকল্পনীয় এবং প্রকৃতি সে পরিমাণ শক্তিকে সমর্থনও করে না। আবার একটি যুক্তি দিয়ে অনেকে দেখিয়ে দেন যে, সময় পরিভ্রমণ বাস্তবে কখনও সম্ভব নয়। যদি ধরেই নেয়া হয় বর্তমান প্রযুক্তিগত অসুবিধার কারণে শারীরীকভাবে সময় পরিভ্রমণ করতে যে পরিমাণ শক্তি দরকার তা পাওয়া যাচ্ছে না কিন্তু এটা তো অন্তত ধরে নেয়া যাবে যে ভবিষৎতে প্রযুক্তিগত আরো উৎকর্ষ সাধন হলে এ পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মানুষরা সময় পরিভ্রমণ করতে পারবে। সুতরাং অবশ্যই তারা অতীত পৃথিবী ভ্রমণ করতে চাইবে। কিন্তু আমরা কি আমাদের মানব সভ্যতার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এরকম কোন অতীত সময় পরিভ্রমণকারী দেখতে পাই? সুতরাং হাজার হাজার বছর পরের উন্নত প্রযুক্তির পৃথিবীর মানুষই যদি সময় পরিভ্রমণ করে আমাদের এ সময় বা আগেকার কোন সময়ে আসতে পারেনি, তাহলে কেনইবা আমরা সময় পরিভ্রমণের ব্যাখ্যা মেনে নেব? সুতরাং ওয়েলসের টাইম মেশিন নিয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়ে সেগুলোকে আগামী দিনের ঘটনা মনে হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ কি মেনে নেয়া উচিত হবে?
eru

------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

ইমরুল ভাই, ভালো লিখছেন।
টাইম ট্রাভেল যদি আসলেই হয় তাহলে তাকে সমান্তরাল ইউনিভার্সেই যেতে হবে।
এই বিষয়ে দুইটা ফাটাফাটি জিনিস দেখেছি...
১. দ্যা ইউনিভার্স (পর্ব "কসমিক হোলস্‌") এখানে টাইম ট্রাভেল কিভাবে করা যেতে পারে তার আলোচনা হয়েছে।

২.টিভি সিরিয়াল "হিরোস্‌" এখানে দেখানো হয়েছে সময় পরিভ্রমণকারী একজন মানুষকে। সেই অতীত কিংবা ভবিষ্যতে যেতে পারে। তবে কোন কিছু পরিবর্তন করার ক্ষমতা তার থাকেনা।
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

টাইম মেশিন রিলেটেড সবকিছুই আমার ভালো লাগে।
আহা !
একখান টাইম মেশিন যদি আমার থাকতো !!

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

কেউ একজন অতীতে গেলেন, অতীতে গিয়ে তিনি যদি কেনেডিকে রক্ষা করতে পারেন তবে এইখানে নতুন ধারার সৃষ্টি হবে, ভবিষ্যত পালটে যাবে, এখন এই সময় ধারা কিন্তু লোকটি যে সময় ধারা থেকে এসেছে তা নয়, এটা সম্পূর্ণ আলাদা একটা বিশ্ব আলাদা টাইম লাইন, সেই লোক যেখানেই থাকুক তখন সেটা তার বিশ্ব, সে যেখান থেকেই আসুক না কেন, তা হতে পারে তার সমান্তরাল, ওটি তখন আর তার সাথে যুক্ত নয়, তো কেউ অতীতে এসে নিজের 'শিশু আমি' কে যদি ধ্বংসও করে ফেলে তবে তার বর্তমান অস্তিত্বের ক্ষতি-বৃদ্ধি কিছুই হবে না, হবে শুধু সেই শিশুটার যার সাথে সে আর জড়িত নয় । কারণ একটু সহজ ভাবে ভাবলেই বুঝা যায়, সময় পরিভ্রমণ করে কিন্তু আমরা অতীতে যাওয়া বলতে সমান্তরাল অতীতেই যাচ্ছি, নিজের অতীত অবস্থাতে নয়, আমরা কিন্তু বড় থেকে আবার ছোট হয়ে যাচ্ছি না । এখন এইখানে কিছু কথা বলি ।

টাইম ডিলেশনের অঙ্কগুলাতে এরকম অঙ্ক থাকে, যেমন ধরা যাক দুই যমজ ভাই, বয়স কুড়ি, একজন পৃথিবীতে রয়ে গেল আরেক জন এক রকেটে করে একটি গতিতে পৃথিবীর হিসেবে বিশ বছর পরে ঘুরে আসলে দেখা গেল, ঘুরে আসা ভাই এর বয়স তিরিশ, আর ধরাধামী ভাই চল্লিশ । আমার মনে পরে আমি তখন খঁজে বের করেছিলাম কত গতিতে ঘুরে আসলে কোন লোকের বয়সই বাড়বে না, তা পেয়েছিলাম ও । তারপর আরেক চিন্তা আসলো, বয়স কমানোর চিন্তাটা, ছেলেমানুষী নাকি জানি না, অঙ্ক করে ঠেকে গিয়েছিলাম 'রুট-ওভার মাইনাস ওয়ান' এ এসে [ V-1] , যা কিনা জটিল রাশিমালা, বা 'i' ও বলা হয়ে থাকে । যে গতিতে ছোটা শুরু করলে সেই বস্তুটির ক্ষেত্রে সময় পিছন দিকে যাবে, অর্থাৎ বস্তুটি তার বর্তমান অবস্থা থেকে তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অতীত অবস্থার এককে ( ধরা যাক এক মিনিট আগের আমি তে ) পৌঁছাবে সেখানে বাধা মানে i । পরে আমি অবশ্য এ নিয়ে আগাইনি তেমন, তবে ব্যাপারটা আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল !

- খেকশিয়াল

শিক্ষানবিস এর ছবি

বিষয়টা আসলেই জটিল। আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা দিয়ে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় তাকে ঠিক সময় পরিভ্রমণ বলা যায় না। কারণ এটা হল নিজের বয়স কমিয়ে বা বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়। এর সাথে পারিপার্শ্বিকের কোন সম্পর্ক নেই। তার বয়স কমে বা বেড়ে যাওয়ার সাথে বোধ হয় স্থান-কাল এর কোন সম্বন্ধে এখানে করা চলে না। তাই আমাদের চলে যেতে হয় সাধারণ আপেক্ষিকতায়।

বজলুর রহমান এর ছবি

ভবিষ্যতে যাওয়াটা খুবই সহজ তাত্ত্বিক দিক দিয়ে, এটা একটা সহজ লোরেন্তস রূপান্তর। আলোর কাছাকাছি গতিতে গেলে স্থির বস্তুর তুলনায় ধাবমান বস্তুর বয়স কম বাড়বে। সুতরাং জীবন কালেই স্থির মানুষদের তুলনায় হাজার বছর এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে, যদি এমন বেগবান যাত্রায় কোন দুর্ঘটনা না ঘটে।
এটা নিশ্চয়ই টেকনলজিকালী ঘটবে ভবিষ্যতে।
অতীতে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ ওপরে যে বর্গ[-১] এর কথা উঠেছে, তা লোরেন্তস ফর্মুলাতে চলে আসবে। তাছাড়াও সমান্তরাল বিশ্বের ধারণায় অনেক লজিকাল গোঁজামিল আছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সেও সমান্তরাল বিশ্বের কথা তুলেছিলেন হুইলার-এভারেট, ধোপে টেঁকে নি।

শিক্ষানবিস এর ছবি

সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণাটা বেশ মজার। মিশিও কাকু এ বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞ। তার ধারণাগুলো বেশ মজার। হিস্টরি চ্যানলের দ্য ইউনিভার্স সিরিজে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন তিনি। তার একটা বইয়ের লিংক দিলাম। আমি পড়িনি। কেউ চাইলে অনুবাদ শুরু করতে পারেন:

Hyperspace: A Scientific Odyssey Through Parallel Universes, Time Warps, And The 10th Diemension

সৌরভ এর ছবি

হ, M তত্ত্ব আর ১১ মাত্রা নিয়া "মিচিও কাকু" র ব্যাখ্যাগুলান মজার। গুগল ভিডিও তে ম্যালা ডকুমেন্টরি আছে।

"দাদু প্যারাডক্স" ও মজার। দাদাজান প্যারাডক্সে বলে,

আপনি টাইম মেশিনে কইরা, আপনার দাদাজানের তরুণ বয়সে (দাদির লগে দেখা হওনের আগে)গিয়া, তারে মাইরা আসলেন।
->
দাদায় মইরা যাওয়ায়, যা ঘটসে তা হইলো, আপনার বাপে জন্মায় নাই, আপনিও জন্মান নাই। তার মানে, আপনি টাইমমেশিনে কইরা অতীতে গেছেন, এই ঘটনাও ঘটে নাই।
->
আপনার দাদাও মরে নাই। আপনার বাপের জন্ম হইসে, আপনার জন্ম হইসে। আপনি আবার টাইম মেশিনে কইরা, আপনার দাদাজানের তরুণ বয়সে (দাদির লগে দেখা হওনের আগে)গিয়া,....

(প্রথম থাইকা আবার পড়তে থাকেন)
চলতে থাকবো।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সবজান্তা এর ছবি

আরেক ধরণের প্যারাডক্স দেখসিলাম, Back to the Future ... ...

calvin klein..

কারো মনে পরে ?
----------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

টাইম ট্র্যাভেল কখনো করা সম্ভব হয়নি বলে যে ভবিষ্যতেও কখনো হবে না, তা কিন্তু হলফ করে বলা যায় না।
কত অসম্ভবই তো সম্ভব করেছে মানুষ। হয়তোবা এটা ও কোনিদিন হবে।
~রেনেট

শিক্ষানবিস এর ছবি

ভবিষ্যতে সম্ভব হবেই। অন্তত আমার তাই মনে হয়। কত কিছুই তো সম্ভব হল। এটাও হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আগে দরকার একটা শীতল ঘরের, জাফর ইকবাল স্যার যেমন বলসে, সেইটায় ঘুমায়া এমন একটা টাইমে উঠুম যখন টাইম মেশিন বানান শেষ, পাবলিক পঞ্চাশ টাকা টিকেট কাইটা টাইম ট্রাভেল করে, ব্যস !

- খেকশিয়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।