শন ইয়েট ও একজন -০৫

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: বুধ, ১৬/০৪/২০০৮ - ৩:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14117 ](প্রথম পর্ব)[/url] (দ্বিতীয় পর্ব) (তৃতীয় পর্ব ) (চতুর্থ পর্ব)

লুমেন, বইটি স্লাইডে রাখ। বেশ একটা ব্যস্ত ভঙ্গিতেই বললেন প্রবীন প্রফেসর।
- মহামান্য শন, বইটির কোন রহস্যের সমাধান হল।
- রহস্যের সমাধান করব কিনা সেটাই ভাবছি ।
- আশ্চর্য তো। রহস্যের সমাধানের জন্য এত বছর চেষ্টা করলেন আজ সেটা হাতে পেয়েও সমাধান করবেন কিনা সেটা নিয়ে ভাবছেন? বইটি তো মনে হচ্ছে অজিওটিক ভাষায় লেখা।
-ঠিকই ধরেছ লুমেন। তবে জানতো আমাদের হিউম্যান মাইন্ড তোমাদের হিওটিটের মত নয়। এটা কখন কি করতে চায় তা নিজেই জানে না। কিছুটা হতাশ ভঙ্গিতেই যেন বললেন প্রবীন প্রফেসর।

আর কথা না বাড়িয়ে লুমেন বইটি মাইক্রস্কোপের ধাতব স্লাইডে রেখে বিদায় নিল। প্রফেসর শন আলতোভাবে বইয়ের কয়েকটি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে স্কিনটি অন করলেন। স্কিনে বেশ বড় করেই ভেসে উঠল বইয়ের বিবর্ধিত পাতাটি-

আমাদের গ্রহে জন্ম বিষয়ক কোন ব্যপার ঘটেনা আরও সহজভাবে বলা যায় গ্রহের মানুষদের ঐ বিষয়ে কোন ধারনাই সম্ভবত দেয়া হয়নি তবে মৃত্যু ব্যাপারটি আছে । মৃত্যুহার কম হওয়ায় যে পাঁচ-ছয় হাজার কোটি মানুষ নিয়ে সভ্যতার সূত্রপাত হয়েছিল তার থেকে মানুষের সংখ্যা খুব একটা কমেনি। তবে এটা জেনে আপনি আরো আশ্চর্য হবেন পৃথিবীর ও আমাদের গ্রহের সভ্যতার একটা উৎপত্তিগত মিল থাকলেও সভ্যতা সম্প্রসারণের সময়ের কোনো পার্থক্য রাখা হয়নি। পৃথিবীর সভ্যতা যেমন চলছে তেমনি আমাদের গ্রহের সভ্যতাও ঠিকই চলছে অথচ আমরা কিন্তু পৃথিবীর সভ্যতার সর্বশেষ অংশ। ব্যাপারটা ভেবে মাঝে মাঝে আমিই হতবাক হয়ে যাই। প্রকৃতির সিষ্টেমের নিয়ন্ত্রক খুব সম্ভবত এ ধরনের খেলা খেলে এক ধরনের আনন্দ নিচ্ছেন। আমি শুধু আমাদের এই গ্রহ ও পৃথিবীর কথা জানি। কিন্তু এখন তো আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে আমাদের গ্রহের সভ্যতার শেষ অংশটুকু নিয়ে অন্য কোন গ্রহে কার্যকলাপ চলছে। কি বিস্ময়কর ঘটনাই না ঘটছে প্রকৃতিতে। এই যে আমি এত কিছু জেনে ব্রন্টি নামক গ্যালাক্সির নির্জন একটা নেবুলায় পড়ে আছি এটার একটা কারণ আমি নিজেও জানিনা। না হয় মানতে চাইলাম আমি এক ধরনের নির্বাসনে আছি কিন্তু আমি কেনই এই ব্যাপারগুলো জানি সেটা নিয়ে আমার অসীম আগ্রহ থাকলেও সে বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। হয়ত বলা যায় প্রকৃতির সিষ্টেমের নিয়ন্ত্রক আমাকে নিয়েও একধরনের খেলা খেলছেন।

এরপর একটানা কয়েকপৃষ্ঠা জুড়ে বইটিতে ডট দেখতে পেলেন প্রফেসর। অস্পষ্টতাহেতু বোঝা গেল এই অংশগুলোতে কিছু লেখা ছিল। হয়ত এটাও ভাবা যায় এই বইটিও কোন মাধ্যমে এডিট বা সেন্সর হয়ে এসেছে। কথাটা ভাবতেই এক ধরনের এডভ্যানচার বোধ হল শনের। এরপর আবার স্কিন ভেসে উঠল MBH324 এর লেখা।

আমার নামটা নিয়ে বেশ একধরনের মজার ব্যাপার আছে। সেটাই এখন আপনাকে বলব। তার আগে আমাদের এই গ্রহ নিয়ে একটু বলে নেই। প্রথমেই আপনাকে বলেছি আমাদের গ্রহের সবকিছুই পৃথিবী থেকে আলাদা। তাই আমার ঘটনাগুলো পড়তে হয়ত কিছুটা অবাস্তব মনে আপনি করতে পারেন। আমাদের গ্রহটা কোন আকৃতির কেউ কখনই তা স্পষ্টভাবে বলতে পারেনি। অত্যন্ত আশ্চর্য মনে হলেও বিশ্বাস করুন আমাদের গ্রহ প্রতি মিলিসেকেন্ড আকৃতি বদলায়। এজন্য আমি গ্রহটিকে বলি সচল আকৃতিবিশিষ্ট গ্রহ। আমাদের গ্রহের বায়ুমন্ডলে কোন অক্সিজেন নেই, আমরা শ্বষণকার্যে যে গ্যাসটা ব্যবহার করি তার নাম হল লিরুয়েট। সম্ভবত পৃথিবীর মানবসত্যতার শেষ অংশে বায়ু মন্ডলে অক্সিজেন কোন কারনেই হোক ছিলনা, তবে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ এতই বেশী হয়ে যায় যে সেটা অধিক ঘনত্বের কারণে লিরুয়েট গ্যাস পরিনত হয়। আমার ধারণমতে পৃথিবীর মানব সভ্যতার শেষ অংশে হয়ত মানুষ এই গ্যাসেই শ্বাসকার্য চালিয়েছে। সেটা হবেই না বা কেন। আপনি নিশ্চয়ই জানেন মানুষ হল অসম্ভব অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণী। যাই হোক আমাদের গ্রহের একটা ঠিক আপনাদের মতই নীল আকাশ আছে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকলে মাঝে মাঝে আমার পৃথিবীর কথা মনে পড়ে যেত। অবশ্য আমি এখন যে জায়গাটায় আছি সেটাকে বোধহয় মোটামুটি শান্তির জাহান্নামও বলা ভাল। শান্তি বলছি একারনে যে এখানে কারও আদেশ বা নির্দেশ পালন করতে হয় না অন্য কথায় দাসবৃত্তি করতে হয় না যেটা আমরা FSO২৫ এর নির্দেশে করেছি এবং যে রকম কাজ DF402 এর অধীনে করেছি। আমার চারপাশে গলিত জিংক তামা, বিষাক্ত গ্যাস।কিন্তু আমি রক্ষা পাছি মূলত প্লাটিনাম নির্মিত বিশেষ পোষাকের জন্য। এজন্যও আমার DF402 এর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, কি বলেন? যাইহোক আমাদের গ্রহ নিয়েই বলি। আমার বয়স যখন একদিনও হয়নি তখনই আমাকে ধারনা দেয়া হয় আমরা একজন DF402 এর অধীনে আছি। এটা যে কে বা কি ধরনের জিনিস এটা নিয়ে তখনও কিছু জানতাম না। আমার কোড নাম দেয়া হল MBH324। কোডগুলো মূলত কিছু সাংকেতিক চিহ্ন প্রকাশ করে যা DF402 এরই দেয়া যার ব্যাখ্যা আমি অনেক পরে পেয়েছি। ব্যাপারটা আপনি নিজেই পরে বুঝতে পারবেন।

আমি যে গ্রহে থাকতাম সেখানকার মানুষগুলোকে আপনাদের ভাষায় ঠিক মানুষ বলা চলে না। যেমনটা আমিও বলতে চাই না। আপনি হয়ত খেয়াল করে থাকবেন আপনাদের পৃথিবীর মানব সভ্যতায় মানুষের মানবিক গুনাবলী ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। শুনে আশ্চর্য হতে পারেন এই সমস্ত গুনাবলী হারিয়ে সর্বশেষ পর্যায়ে মানুষ অনেকটা হিওটিটের দলে পড়বে। এই যেমন আমাদের গ্রহ অর্থাৎ আপনাদের সভ্যতার শেষ অংশের কিছু ঘটনাই না হয় আপনাকে বলি। আপনাকে আগেই বলেছি কোন কারনেই হোক আপনাদের বর্তমান সময়ের সামগ্রিক ধারনা আমার মস্তিষ্কে ছিল বলে আমি আমার গ্রহের লোকজনের এই রকম যান্ত্রিক আচরণ বেশীরভাগ সময়েই মেনে নিতে পারতাম না। আমার মা MBH321 জানেন না তিনি আমার জন্মদাত্রী । আসলে কি এরকমের সকল স্মৃতিই তার মস্তিষ্ক থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। তিনি আমাকে শুধুমাত্র পরিবারের একটা ইউনিটই মনে করতে শিখেছেন। তার সাথে আমার জন্য কোন মানবিক স্নেহ বা ভালবাসা জাতীয় কিছু নেই। তার এবং আমার বাবা MBH524 এর কাজই হল DF402 এর প্রেরিত প্রয়োজনীয় সিগনাল আমাদের মাঝে বিতরণ করা। আমাদের গ্রহের সবকিছুই মূলত সম্ভবত এখন পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে DF402 দ্বারা। DF402 আমাদের যে রকম সিগন্যাল পাঠাতো আমরা ঠিক সেরকম কাজ করার চেষ্টা করে যেতাম। এ জন্য আমি নিজেই আমাদের গ্রহের এই সভ্যতাকে বলি দাসত্বের সভ্যতা। কিন্তু শুনে আশ্চর্য হবেন আমাদের গ্রহের কেউ এর কোনদিন বিরোধিতা করেনি। কারণ হয়ত বুঝতেই পারছেন এদের মস্তিষ্কের পৃথিবী বিষয়ক অনেকটা অংশ আগে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আমি এই ব্যাপারটা পছন্দ করতাম না। আজকে আমি যে মোটামুটি একজন হিউম্যান ও সুপারহিউম্যান হয়েও ব্রন্টি গ্যালাক্সীর এই নেবুলায় ভাবলেশহীনভাবে পড়ে আছি তার কারণও এটাই। সেটা কিভাবে হল এখন আপনাকে সে বিষয়েই বলব।

DF402 আমাদের যে ধরনের সমস্যা দিত তার মধ্যে বেশীর ভাগ বাস্তবভিত্তিক গাণিতিক সমস্যা ও মানুষের মস্তিষ্ক ভিত্তিক কাজই থাকত। আমাদের গ্রহের প্রত্যেকটি মানুষই হল সুপার হিউম্যান সুতরাং এগুলো নিয়ে খুব একটা সমস্যা আমাদের হত না। আমাদের গ্রহের হিসাবে আমার বয়স যখন সাত মাস তখন আমাকে প্রথম একটি সমস্যা দেয়া হয়েছিল। সমস্যাটি ছিল আমাদের গ্রহ থেকে দুইশ আলোকবর্ষ দূরে মিলিনিক নক্ষত্রের সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে তেজস্ক্রিয় রশ্মি আমাদের গ্রহে অদূর ভবিষ্যতে প্রভাব ফেললে তার তীব্রতা সভ্যতার কতখানি ক্ষতি করতে পারে এ বিষয়ক একটি গাণিতিক পর্যালোচনা। আমি বেশ কয়েকমাস সময় নিয়ে সমস্যাটার বেশ একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করে ফেলি। এই কাজের জন্য DF402 এর শুভেচ্ছা বিষয়ক সিগন্যালও পাওয়া যায় কিছু দিন পর। এরপর আমাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সমস্যার সমাধান করে আমি FSO এর শীর্ষপর্যায়ের একজন বিজ্ঞানী হিসাবে উঠে আসি। তখন আমার প্রধান কাজ হয় বিভিন্ন ফ্যামিলি ইউনিটকে DF402 এর দেয়া সিগন্যালগুলো পৌছে দেয়া এবং বিভিন্ন ফ্যামিলি ইউনিট থেকে আসা সমস্যার সমাধানগুলোর প্রাথমিক ভুল ত্রুটিগুলো দেখে DF402 কে প্রেরণ করা। এই তথ্যগুলো প্রেরণ করা হয় অডিয়াম নামক কম্পিউটারের মাধ্যমে । তারপরও যে আমাকে দাসবৃত্তি করতে হয় না তা নয়। তবে এই পর্যায়ে আসার পর আমাকে সাধারণত মানব মস্তিষ্কের জটিল সমস্যাগুলো দেয়া হয়। এই যেমন FSOএর শীর্ষ পর্যায়ে আসার পর আমি যে সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করি সেটা হল মানব মস্তিষ্কের কোটি কোটি নিউরনের মধ্যে যে নিউরনগুলি আনন্দ জাতীয় ব্যাপারগুলো পরিবহন করে তাকে নিস্ক্রিয় করতে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকশক্তির কোন ব্যবহার করা যায় কিনা সেটা। বলে রাখা ভাল এ সমস্যার আমি কোন সমাধান করতে পারিনি। তবে আমার কেন জানি এক প্রকার ভাবনা হয় সমস্যাটির প্রকৃতি নিয়ে। এই সমস্যার সমাধান হলে DF402কি মানুষের আনন্দ বা এই জাতীয় সংকেতগুলো তুলে নেবে। ঘটনাটি আমি মন থেকে মেনে নিতে না পারলে মনকে এই বলে শান্ত্বনা দিলাম যাই হোক এটার এখনও তো কোন সমাধান হয়নি সময়ই বলে দেবে ঘটনার গতির দিক।

একদিন FSO এর সম্মেলনশেষে অডিয়াম কম্পিউটারের পশ্চিম অংশে কি যেন একটা বিষয় সমাধানের চেষ্টা করছি এমন সময় অমায়িক পদার্থবিদ ক্রুবো -২৪ আমার পাশে এসে বসল। ক্রুবোকে বলা হয় আমাদের সভ্যতার সবচেয়ে সফল বা উজ্জ্বল পদার্থবিদ। অমায়িক এই ভদ্রলোকের সাথে আগেই আমার পরিচয় ছিল ফলে ঘনিষ্টতাও কিছুটা ছিল। অডিয়াম কম্পিউটারের সামনে আমার পাশের আসনে বসে এক ধরনের হাসি দিল ক্রুবো। তার এ রকম একটা হাসি দেখে আমার প্রথম সমস্যার কথা মনে পড়ে গেলো। আমার ভাবতে কষ্ট হল সমস্যাটির সমাধান হলে এই পদার্থবিদের মতো অনেকেরই মুখের হাসি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ব্যাপারটি নিয়ে আমি একটু তার সাথে আলোচনা করতে চাইলাম।

-ক্রুবো আপনি কি আমার প্রথম অসমাধানকৃত সমস্যাটি সম্বন্ধে জানেন? প্রথমেই আমি বেশ ভনিতা করে জিজ্ঞাসা করলাম।
-না, ঠিক জানি না।
-আমি FSO তে আসার পর প্রথম যে সমস্যাটি দেয়া হয়েছিল সেটা।
-ও, হ্যাঁ ওটা নিয়ে আমি জানতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু... ।আমি কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু কোন সমস্যা।
-না, ঠিক তা নয় তবে অডিয়াম কম্পিউটার জানাল ওটা নাকি অন্য কাউকেই জানতে দেয়া হবে না।
-এটাই বলেছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
-হ্যাঁ।
- আপনাকে আমি প্রাথমিক একটা ধারণা দিই। কি বলেন?
- কিন্তু ব্যাপারটি কি ঠিক হবে। উদ্ধিগ্ন হয়ে বললেন ক্রুবোকে।
-অডিয়াম কম্পিউটার কারো মাধ্যমে জানতে না পারলেই ঠিক হবে। আপনি ভুলে যাবেন না আপনি পুরোটাই হিউম্যান। কারো আদেশ নির্দেশ আপনি মানবেন কিনা সেটা ভাবার বা করার পূর্ণ অধিকার আপনার আছে। বেশ একটা বক্তৃতা দেয়ার ভঙ্গিতে বললাম আমি।
-ঠিক আছে বলুন।
-তার আরো বলুন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনি কি হাসতে চান?
-অবশ্যই। কেন এ বিষয়ক কোন ব্যাপার। খানিকটা যেন আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস করলেন ক্রুবো।
-হ্যাঁ যদি বলি সমস্যার সমাধান হলে আপনি আর হাসতে পারবেন না।
-রসিকতা না করে আসল ব্যাপারটাই বলুন না।
-ব্যাপারটি হল এটাই ক্রুবো, আমাকে যে সমস্যাটি দেয়া হয়েছিল সেটার আমি সমাধান করতে পারিনি কথাটা সত্য সেই সাথে এটাও সত্য সমস্যাটির আমি কোন রকম সমাধান বের করতে চাইনি।
-কারণ? উৎসুক চোখে জিজ্ঞাসা করলেন ক্রুকে।
-আসলে সমস্যাটি ছিল মানুষের নিউরনের এমন কিছু অংশকে ভোতা করে দিতে হবে যাতে তারা আনন্দ জাতীয় ব্যাপারগুলির সংবেদন গ্রহন করতে না পারে।
-সত্যিই বলছেন? এরকমটাও হতে পারে নাকি।
-সত্যিই তাই। বেশ জোরের সাথে আমি বললাম। কিন্তু তবুও সম্ভবত ক্রুবো এটাকে রসিকতা বলেই ধরে নিয়ে হাসতে হাসতে বিদায় নিলেন আমার কাছ থেকে। তবে এটাকে যে তিনি কি পর্যায়ে নিয়ে গেছেন সেটা বুঝতে পারলাম অডিয়াম কম্পিউটারের কাছে আমার ডাক শুনে। FSO এর পূর্বাংশের ওডিয়াম কম্পিউটারের জায়ান্ট স্কিনের সামনে আমাকে সবশেষে দাড়াতেই হল।

দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই বুঝতে পালাম আমি যার উপর দাড়িয়ে আছি সেটা ক্রমশ নিচের দিকে নামছে। এরপর বেশ কিছু বর্নিল প্রকোষ্টের মধ্য দিয়ে আমি যেখানে পৌছালাম সেটার আকৃতি ঠিক বুঝতে পারলাম না কিন্তু তাকিয়ে দেখলাম আমার ঠিক সামনেই অডিয়াম কম্পিউটারের জায়ান্ট স্কিন।

-স্বাগতম FSO এজেন্ট MBH324 । আপনাকে কেন ডাকা হয়েছে যে বিষয়ে আপনার কি কোন ধারণা আছে?
-না।
-আপনি FSOএর একজন এজেন্ট এটা কি আপনার জানা আছে।
-হ্যাঁ।
-আপনার গবেষণাকৃত ফলাফলে DF402 বেশ ভালোই খুশি এটা কি আপনি জানেন।
-শুনেছি।
-এই গ্রহে আপনার কি কোন মেজর অসুবিধা হচ্ছে বলে আপনি মনে করছেন MBH324 ।
-না।
-তবে DF402 এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার শক্তি আপনি কোথায় পেলেন।
-মানে, একটু যেন ভয়ে ভয়েই বললাম আমি।
-আপনি FSO তে অংশ নেয়ার পর প্রথম অসমাধানকৃত সমস্যা লোকসমক্ষে প্রকাশ করেছেন? বেশ যেন একটু জোর দিয়েই বলল অডিয়াম কম্পিউটার।
-কিন্তু সমস্যাটি তো অসমাধানকৃত। আমি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম।
-আপনি কি জানেন না কোন সমস্যা সমাধানকৃত বা অসামাধানকৃত যাই হোক না কেন তা অডিয়াম কম্পিউটার ও DF402এর অনুমতি ব্যতিরেখে প্রকাশ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।আমি কোন উত্তর খুঁজে না গেলে চুপ করে থাকলাম।
-আপনার এই অপরাধের শাস্তি কি আপনি জানেন? সাধারণভাবে কোন ফ্যামিলির কোন ইউনিট এরকম অপরাধ করলে তাকে দুমাস ক্র্যাক নেবুলায় রাখা হয়।
নেবুলার কথা শুনেই কেমন জানি গা গুলিয়ে উঠল আমার। আমি ভাবতে লাগলাম ক্র্যাক নেবুলায় অসংখ্য মহাজাগতিক শক্তির সাথে আমিও নির্জীবভাবে পড়ে আছি। অডিয়াম কম্পিউটারের পরের কথা শুনে একটু চমকে উঠলাম।
-তবে এর অনেক জটিল সমস্যার অসাধারণ সমাধান আপনি দিয়েছেন। তাই এবারের মত DF402আপনাকে সুযোগ দিচ্ছে। তবে খেয়াল করবেন অডিয়াম কম্পিউটার বা DF402 অনুপস্থিত নয়। সবধরনের খবরই আমাদের কাছে জমা হচ্ছে। ভাববেন না কোন কিছু গোপনে করলেই সেটা গোপন থাকবে। বেশ একটা শাসন করার ভঙ্গিতে বলল ওডিয়াম কম্পিউটার।
-বুঝতে পারছি। নরম গলায় বললাম আমি।

কথাটা বলেই অডিয়াম কম্পিউটারের জায়ান্ট স্কিনটা বন্ধ হয়ে গেল। সেই সাথে পুরো ঘরটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। খেয়াল করলাম আমাকে নিয়ে নিচে নামা পাতাটনটি আবার উপরে উঠতে শুরু করেছে। অবশেষে আবার বর্নিল সব প্রকোষ্ট পেরিয়ে উপরে উঠে আসলাম।
অডিয়াম কম্পিউটারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমার যে কাজটা করা উচিত ছিল সেটা হল ক্রুবোর সরাসরি মুখোমুখি হয়ে শোনা অডিয়াম কম্পিউটার কিভাবে এটা জানতে পারল। কিন্তু কেন জানি ক্রুবোর সাথে দেখা করার কোন ইচ্ছা আমার হল না। DF402 মূলত সকল কর্মকান্ডই চালায় অডিয়াম কম্পিউটার দিয়ে। সুতরাং বিশালায়তন এই কম্পিউটার যে এই জিনিস গুলোও সম্বন্ধে খোঁজখবর রাখে সে ধারণা আমার আগে ছিল না। বেশ ভাল রকম একটা শিক্ষা নিয়ে FSOএর গবেষণাগারের দিকে রওনা হলাম।

(চলবে)
----------------------------------------------------------
(পরিশিষ্ট)
১. ইয়েট মাইক্রোসকোপ : এক ধরনের বিবর্ধক যন্র যার সাহায্যে ছোট কোন জিনিসকে বড় করে দেখা যায়।
২. রুকটাইল কালি :এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ীত্বের কালি। (কল্পনা)
৩. হিওটিট : রোবটদের উন্নত সংস্করণ। (কল্পনা)
৪. প্রাইসম : রোবটদের মস্তিস্কের একটি অংশ। (কল্পনা)
৫. WSO : World scientific organization।
৬. ইন্টারনেট : তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের একটি মাধ্যম।
৭. উইরিয়াল সিগনাল : মানুষের মস্তিস্কের নিউরনের মাধ্যমে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের একটি মাধ্যম। (কল্পনা)
৮. ফ্লাবিশ ষ্কিন : এক ধরনের পর্দা যা আপতিত আলোর উপযুক্ত প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করতে পারে। (কল্পনা)
৯. অটোমেটিক লিন্ডিকার: রিমোটের ন্যায় এক ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। (কল্পনা)
১০. নিউরন : মানুষের মস্তিস্কের একটা অংশ যা সংবেদন পরিবহনের কাজ করে। মানুষের মস্তিস্ক কোটি কোটি নিউরন নির্মিত।
১১. ডাই অপিনাইল : এক ধরনের ট্যাবলেট যা মৃত স্নায়ু বা কোষকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাগিয়ে তুলে স্বল্প সময়ের জন্য জীবিত রাখতে পারে। (কল্পনা)
১২. ওথাল হোম : অজিওটিক ভাষায় সম্বোধনবাচক শব্দ। (কল্পনা)
১৩. থায়োডেজাট্রোব্লুটানেট : এক ধরনের যৌগ। (কল্পনা)
১৪. ওয়াল্ড্রল মাদার : ক্লোন শিশুদের যারা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকে। (কল্পনা)
১৫. ব্লোনাড : ক্লোন শিশু। (কল্পনা)
১৬. লিওবিট টিউব : কলিংবেলের মত একধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। (কল্পনা)
১৭. রিসাইকেলএবল : পূনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায় যা।
১৮. লেন্টালিন : এক ধরনের রাসায়নিক তরল যা অবশ স্নায়ুকে সংবেদন গ্রহনে সাহায্য করে। (কল্পনা)
১৯. ডুকাইল :ফ্লিজ জাতীয়। (কল্পনা)
২০. বিট্রিওল : এক ধরনের পিল। (কল্পনা)
২১. মিলকিওয়ে : পৃথিবী যে গ্যালাক্সীতে আছে তার নাম।
২২. গ্যালাক্সী : ছায়াপথ। প্রতিটি গ্যালাক্সীতে সূর্যের ন্যায় অসংখ্য নক্ষত্র থাকে।
২৩. নেবুলা : মহাকাশে ঘণীভূত হয়ে থাকা ভস্ম, গ্যাস, গলিত পদার্থ ইত্যাদি।
২৪. অক্টোবিট ভেইকল : এক ধরনের যানবাহন। (কল্পনা)
২৫. FSO: Federal Scientific organization
২৬. এলোবেশিয়ান : কুকুর ও বিড়ালের সংকর প্রজাতি। (কল্পনা)
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।