শন ইয়েট ও একজন -০৪

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: সোম, ১৪/০৪/২০০৮ - ৫:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(প্রথম পর্ব) (দ্বিতীয় পর্ব) (তৃতীয় পর্ব )

ইয়েট প্লাস মাইক্রোস্কোপে রুকটাইল কালিতে লেখা বইটির একটি পৃষ্ঠা কৌতুলহলভরে দেখতে লাগলেন প্রফেসর। অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে শন আবিস্কার করলেন এই বইটির পুরোটাই অজিওটিক ভাষায় লেখা। কিন্তু তার নিজের উদ্ভাবিত অজিওটিক ভাষাই যেন পড়তে পারছিলেন না তিনি। মনে মনে ভাবলেন হয়ত অতিরিক্ত উত্তেজনায় তার মস্তিস্ক প্রয়োজনীয় উত্তেজনা গ্রহণ করতে পারছে না। শন বিশ্বাসই কতে পারলেন না তিনি উনিশ বছর ধরে যে রহস্যের কোন কুলকিনারা করতে পারেননি তার সমাধান এখন তার হাতে। ডুকলিন১৯ থেকে একটা বিট্রিওন২০ পিল খেয়ে নিলেন শন। এখন যেন কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেন প্রফেসর। ইয়েট প্লাসের সাথে একটি ফ্লাবিশ স্কিন সংযুক্ত করে ধীরে ধীরে পড়তে লাগলেন বইটি-

-আপনি যে সময়ে বইটি পড়ছেন এই বইটি তার খুব বেশীদিন আগে লেখা হয়নি। তবে আপনি যে রকম স্থান থেকে বইটি পড়ছেন আমি সেরকম কোন স্থান থেকে বইটি লিখিনি। আমার ধারনামতে আপনি সম্ভবত মিলকিওয়ে২১ গ্যালাক্সিতে২২ সূর্য নক্ষত্রের দ্বারা পরিচালিত পৃথিবী নামক একটা গ্রহে আছেন। আমার গানিতিক গননা ঠিক হলে সম্ভবত এটিই হবে। আমি আপনার গ্রহ থেকে শতেরশ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ব্রন্টি গ্যালাক্সীর একটা নেবুলায়২৩ আছি। আপনারা এটার খোঁজ এখনও পাননি। সম্ভবত আরো কয়েকশ বছর পর পাবেন। প্রথমে আমার পরিচয়টি দিয়ে নেয়া থাক। আমি MBH324 । নামটি শুনে হয়ত আপনি একটু নড়েচড়ে বসতে পারেন। তবে হ্যাঁ আমাদের গ্রহ থেকে আমাদের এ ধরনের নামই দেয়া হয়েছে এবং সেখানে সাধারণত এ ধরনের নামই প্রচলিত।

এই যে, আমি বইটি লিখছি এটাকে আমার একটা আত্মজৈবনিক রচনাও বলতে পারেন। তবে হয়ত আপনি আশ্চর্য হচ্ছেন আমি কিভাবে আপনাদের সম্বন্ধে জানতে পেরেছি এবং কিভাবেই বা বইগুলো পাঠাচ্ছি।আপনি সম্ভবত খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন এধরনে আরো কয়েকটি আপনাদের ভাষায় বলতে গেলে ক্ষূদ্রাকৃতির বই পৃথিবীতে আমি পাঠিয়েছি। এ সব রহস্য আমি আপনাকে ঠিকই বলব। তবে আপনি জেনে রাখুন এই বইটি সম্ভবত আপনি ছাড়া আর কাউকে পড়তে দেয়া হবে না। অবশ্য এটি আমি আমার অনুমান থেকেই বলছি। এর অন্যথাও হতে পারে।

প্রথমেই বলে নেয়া ভাল আমি যে নেবুলায় আছি এখানে আমি খুব বেশী দিন হল নেই। আমার মাতৃগ্রহে আমি আমার জীবনের ছাব্বিশটি বছর অতিবাহিত করেছি। তবে অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমি গ্রহটির নাম বা এটার অবস্থান সম্বন্ধে আপনাকে কোন সুস্পষ্ট ধারনা দিতে পারছিনা। বলতে পারেন ব্রন্টি গ্যালাক্সীর এই নেবুলায় আমাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে এবং এখানে পাঠানোর আগমুহূর্তে সম্ভবত আমার মস্তিষ্কের থেকে কিছু স্মৃতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এজন্যই আমি প্রায় সব ঘটনাই মনে করতে পারলেও কিছু কিছু ঘটনা মনে করতে পারছিনা। ব্রন্টি ছায়াপথের এই নেবুলায় আমার আয়ু হবে আপনাদের পৃথিবীর হিসাবে মাত্র সাত মাস। আমার মস্তিষ্কের পিটুইটারী গ্রন্থিতে জমা করে রাখা ক্রুটাইল বিষটি আর কিছুদিন পরই সক্রিয় হয়ে উঠে বিষক্রিয়া ঘটানো শুরু করবে। অবশ্য আমি ঠিক করে রেখেছি এর আগেই আমি আমাকে শেষ করে দেব। এই যে আমি এত তাড়াতাড়ি নিঃশেষ হয়ে যাব এজন্য আমার কোন আফসোস নেই কারণ আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে আমি যতটা বিচিত্রতা পেয়েছি সেটাই সম্ভবত একটা জীবনের জন্য যথেষ্ট। আমাকে আপনি মানুষও ভাবতে পারেন আবার অতিমানবও ভাবতে পারেন। আমাদের গ্রহের সব মানুষই আপনাদের দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে অতিমানব। শুনে হয়ত খুবই আশ্চর্য হবেন যে আমরা মুলত আপনাদেরই পরবর্তী সংকরন । প্রকৃতি যে রকম সিষ্টেম দ্বারা চলছে সেটা আপনি জানেন না বলে হয়ত আমার আগের কথাটি শুনে কিছুটা বিস্মিত হতে পারেন।
আসলে মূল ব্যপারটা হল আপনাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌছানোর পর আপনাদের সভ্যতা ধ্বংস করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর আমাদের গ্রহের শুরুটা হয়েছে আপনাদের শেষ থেকে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যেটা সেটা হল আমরা আপনাদের সর্বশেষ অংশ হলেও এ বিষয়ে কোন ধারনা না নিয়েই আমরা সভ্যতা শুরু করেছি। সাথে সাথে এটা জেনেও আপনি আশ্চর্য হবেন যে আমাদের গ্রহের সভ্যতার বয়স খুব সম্ভবত একশ বছরের বেশী স্থায়ী করা হবেনা। প্রথম দিকে যে আমি উল্লেখ করেছিলাম আমি আমার জীবন সম্পর্কে ভিন্ন ধারনা পোষণ করি এটার পিছনে আমার আমার একটা জোরালো যুক্তি আছে। আমাদের গ্রহের কেউ পৃথিবী থেকে তাদের অস্তিত্বজনিত কোন স্মৃতিই আনতে পারেনি। কিন্তু আমি আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করেছি কোন একটা কারণে আমার মস্তিষ্কের আপনাদের সময়ের কিছু স্মৃতি সরানো হয়নি। এজন্য আমি ছিলাম আমাদের গ্রহের অন্যদের তুলনায় কিছুটা হলেও আলাদা।

এই অংশটুকু পর্যন্ত পড়ে স্কিনটা বন্ধ করে দিলেন প্রফেসর শন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারলেন না এরকম কোন ঘটনাও ঘটতে পারে। সব রহস্যের সমাধান এখন হাতেই আছে। কয়েকলক্ষগুণ বিবর্ধণ ক্ষমতাসম্পন্ন ইয়েটপ্লাসের সাহায্যে তিনি পুরো বইটি অল্প সময়েই পড়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু শন ভাবতে লাগলেন সেটা ঠিক হবে কিনা। বইটি পড়লে শন ভবিষ্যতের অনেক কিছুই জানতে পারবেন যদি গ্রহচারির ওই কথাগুলো সত্যি হয়। আবার সে একথাও লিখেছে বইটি তাকে ছাড়া আর কাউকে পড়তে নাও দেয়া হতে পারে। এই কথাটারই বা ব্যাখ্যা কি? এরকম ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লেন শন।
(চলবে)
----------------------------------------------------------
(পরিশিষ্ট)
১. ইয়েট মাইক্রোসকোপ : এক ধরনের বিবর্ধক যন্র যার সাহায্যে ছোট কোন জিনিসকে বড় করে দেখা যায়।
২. রুকটাইল কালি :এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ীত্বের কালি। (কল্পনা)
৩. হিওটিট : রোবটদের উন্নত সংস্করণ। (কল্পনা)
৪. প্রাইসম : রোবটদের মস্তিস্কের একটি অংশ। (কল্পনা)
৫. WSO : World scientific organization।
৬. ইন্টারনেট : তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের একটি মাধ্যম।
৭. উইরিয়াল সিগনাল : মানুষের মস্তিস্কের নিউরনের মাধ্যমে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের একটি মাধ্যম। (কল্পনা)
৮. ফ্লাবিশ ষ্কিন : এক ধরনের পর্দা যা আপতিত আলোর উপযুক্ত প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করতে পারে। (কল্পনা)
৯. অটোমেটিক লিন্ডিকার: রিমোটের ন্যায় এক ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। (কল্পনা)
১০. নিউরন : মানুষের মস্তিস্কের একটা অংশ যা সংবেদন পরিবহনের কাজ করে। মানুষের মস্তিস্ক কোটি কোটি নিউরন নির্মিত।
১১. ডাই অপিনাইল : এক ধরনের ট্যাবলেট যা মৃত স্নায়ু বা কোষকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাগিয়ে তুলে স্বল্প সময়ের জন্য জীবিত রাখতে পারে। (কল্পনা)
১২. ওথাল হোম : অজিওটিক ভাষায় সম্বোধনবাচক শব্দ। (কল্পনা)
১৩. থায়োডেজাট্রোব্লুটানেট : এক ধরনের যৌগ। (কল্পনা)
১৪. ওয়াল্ড্রল মাদার : ক্লোন শিশুদের যারা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকে। (কল্পনা)
১৫. ব্লোনাড : ক্লোন শিশু। (কল্পনা)
১৬. লিওবিট টিউব : কলিংবেলের মত একধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। (কল্পনা)
১৭. রিসাইকেলএবল : পূনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায় যা।
১৮. লেন্টালিন : এক ধরনের রাসায়নিক তরল যা অবশ স্নায়ুকে সংবেদন গ্রহনে সাহায্য করে। (কল্পনা)
১৯. ডুকাইল :ফ্লিজ জাতীয়। (কল্পনা)
২০. বিট্রিওল : এক ধরনের পিল। (কল্পনা)
২১. মিলকিওয়ে : পৃথিবী যে গ্যালাক্সীতে আছে তার নাম।
২২. গ্যালাক্সী : ছায়াপথ। প্রতিটি গ্যালাক্সীতে সূর্যের ন্যায় অসংখ্য নক্ষত্র থাকে।
২৩. নেবুলা : মহাকাশে ঘণীভূত হয়ে থাকা ভস্ম, গ্যাস, গলিত পদার্থ ইত্যাদি।
২৪. অক্টোবিট ভেইকল : এক ধরনের যানবাহন। (কল্পনা)
২৫. FSO: Federal Scientific organization
২৬. এলোবেশিয়ান : কুকুর ও বিড়ালের সংকর প্রজাতি। (কল্পনা)
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।


মন্তব্য

শিক্ষানবিস এর ছবি

মূল কাহিনীতে তো বোধহয় এসে গেল। একটি নির্দিষ্ট স্তরের পর মানব সভ্যতাকে আর বিকশিত হতে দেয়া হবে না। এটা প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু সেই সময়ে মানুষের ধ্বংসের পর ধ্বংসের আগের অবস্থা থেকেই আরেকটি সভ্যতার যাত্রা শুরু হবে। তারা অন্য কোন গ্রহে অন্যভাবে শুরু করবে। সভ্যতায় এমনিতেই অনেক এগিয়ে, তার উপর তারা অতিমানব। দুয়ে মিলে ভালই হবে।
প্রক্রিয়াটা পরিষ্কার নয়। অবশ্য সবে তো শুরু। নিশ্চয়ই সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিবেন পরের পর্বগুলোতে।

আরেকটি বিষয়, খুব বেশী অপরিচিত তথা উদ্ভাবিত শব্দ না এনে কয়েকটি নির্দিষ্ট শব্দই বারবার ব্যবহার করুন। তাহলে লোকজনের পড়তে সুবিধা হবে। অনেকেই পরিশিষ্ট দেখে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়তে চান না।

কল্পবিজ্ঞানের মূল বিষয় হল, বিজ্ঞানের কোন একটি ধারণা বা তার ভবিষ্যৎ অগ্রগতির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান। ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট না হলে তা রূপকথার পর্যায়ে চজলে যায়। সেদিক থেকে আপনি সফল। চালিয়ে যান।

অতিথি লেখক এর ছবি

কষ্ট করে সবগুলো পর্ব পড়ার জন্য ধন্যবাদ।সচলে বোধহয় এরকম সায়েন্স ফিকশনের পাঠক কম,কতবার পঠিত সেটা দেখি বাড়েনা,মন্তব্যতেও একই অবস্থা।মডারেটররাও প্রথম পাতায় দিতে চাচ্ছেন না কেনজানি।
---------------------------------------------------
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।

শিক্ষানবিস এর ছবি

হুম। সচলায়তনে কল্পবিজ্ঞানের তেমন কোন পাঠক নেই বোধহয়। আমিও প্রথম দিকে একটা লিখছিলাম। কেউ পড়ে নাই। সেটা অবশ্য আমার দোষ ছিল। গল্পের শেষটায় একেবারে গ্যারায় দিছিলাম। তাও দেখতে পারেন:
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/12448

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো হচ্ছে। চার পর্ব এক সাথে পড়লাম। চালিয়ে যান।
~রেনেট

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।