একটি কর্তিত বৃক্ষের জন্য এলিজি

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: সোম, ৩০/০৬/২০০৮ - ১২:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই লেখাটা একটা গাছকে নিয়ে লেখা , প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের একটা গাছ যেটাকে বছর চারেক ধরে দেখছি এবং হঠাৎকরে মাত্র ঘন্টা চারেক আগে কেটে ফেলা হবে এমনটা কখনো চিন্তাও করিনি।

অনেকদিন ধরে সচলে লিখিনা , টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা , অমানুষিক পড়াশুনার চাপ । মাঝে মাঝে নেটে ঢুকলে সচলেই ঢুকি , অফলাইনেই থেকে পড়ি , লেখা-টেখায় কমেন্ট না করেই চলে যাই - আবার পড়তে বসি । এভাবে ঝাড়া মাসদেড়েক চলার পর পরীক্ষা শেষ হয় । আমিও হাত-পা ঝেড়ে উঠি , সচলে লিখব বলে লেখার প্লট রেডী করি গল্প -কবিতা এইসব আরকি । কয়েকদিন ধরে মাথার মধ্য একটা গল্প ঘোরে , গতকাল রাতে লিখেও ফেলি কয়েকটা প্যারা । বাকীটা লিখব ভেবে আজকে অলস দুপুরে দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে বিকেলে ঘুম থেকে থেকে উঠি , চা-টা খেতে যাই পলাসী বাজারে । মাথায় গল্পের প্লট ঘোরে কিন্তু আমি জানি গল্পটা আজকে আর লেখা হয়ে উঠবে না ।

চারতলার সিঁড়ি দিয়ে নামতেই আমার মনে হয় চারপাশে কিছু একটা নেই । নিচে নেমে দেখি হলের লোকজন ডালপাতা সরাচ্ছে , অর্ধেক কাটা একটা গাছ মাটি থেকে তিন-চারফুট উচ্চতা নিয়ে কোন ধরনের শাখা-প্রশাখা ছাড়াই দাড়িয়ে আছে । আমার ভাবতে কষ্ট হয় এটা সেই গাছটা যেটা প্রতিনিয়তই দেখছিলাম , যেটা কখনও আলাদা করে নিজের অস্তিত্ব ঘোষনা করেনি , আমরাও বুঝতে পারিনি আলাদাভাবে সে আমাদের সাথে মিশে আছে কিন্তু তার অনস্তিত্ব এখন বেশ বড় করে বাজে , আমি বুঝতে পারি কেউ একজন আশেপাশে ছিল যে আজ নেই , যেন চারপাশটা ফাঁকা করে কেউ একজন চলে গেছে। গেটে একজন কর্মচারী ছিল । আমি তাকে বলি কে কাটল গাছটা । আমার কন্ঠে বোধহয় কিছুটা আলাদা কোন ঝাঁঝ ছিল । সে বুঝতে পারে । উত্তর দেয় প্রভোষ্ট স্যারের নির্দেশক্রমে হলের লোকজন কেটেছে । আমি কাটার কারন জানতে চাই । সে কোন উত্তর দিতে পারে না , শুধু বলে স্যার বলেছে এজন্য লোকজন কাটছে । সে ও ব্যাপারটা মানতে পারে না বলে গাছটা কাটায় পুরো বিল্ডিংটা কেমন জানি ন্যাড়া হয়ে গেছে । আমি তাকে আর কিছু বলিনা , কাটা গাছটার দিকে বোকার মত অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকি ।

এই দুনিয়ায় অনেক কিছুই হচ্ছে যেগুলো নিয়ে আমি কখনও মাথা ঘামাই নি । চারদিকে কথাবার্তা হয় পরিবেশ দূষন হচ্ছে , গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত , গাছ লাগাতে হবে , পরিবেশ রক্ষা করতে হবে -এইসব কথাবার্তা কখনও আলাদাভাবে দৃষ্টি আকর্ষন করেনি আমার । সুতরাং গাছটা কাটায় পরিবেশের কি ক্ষতি হল ,না না হল তা আমার মাথাব্যথার বিষয় নয় । খুব স্বার্থপর একজন মানুষ হিসেবে আমার শুধু নিজের কথাটাই মনে হচ্ছে , মনে হচ্ছে কেউ একজন আমার খুব কাছে ছিল আজ সে নাই । আমার অভিযোগটা সেই শুন্যতাটা নিয়েই । আগে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে-নামতে গাছটা দেখতাম এখন আর দেখতে পাব না , আমার অভিযোগ এই শূন্যতাটা নিয়েই ।

আমি অনেকক্ষন ধরে কাটা গাছটার দিকে চেয়ে থাকি । দু-চার জন ছাত্র হলে ঢোকে , এদেরও চোখে জিনিসটা অস্বাভাবিক লাগে । কেউ কেউ স্বগতোক্তি করে আহ! হঠাৎকরে গাছটা খামাখা কাটল কেন ?
শূন্যতা জিনিসটা কারই বা ভাল লাগে ?

পরিশেষ: সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোষ্ট মহাশয়কে বলছি , জানি লেখাটা হয়ত কোনভাবেই আপনার নজরে পড়বে না , কিন্তু আমার বলা দরকার সেজন্যই বলছি , হলের বাজেটে সমস্যা হলে প্রতি বছর ছাত্রদের প্রদেয় ফি বিশ টাকা করে বাড়ান কিন্তু হুটহাট
এরকম পুরানো কোন গাছ দয়া করে কেটে ফেলবেন না ।
(২৯ জুন ২০০৮ রাত নয়টায় লেখা)
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।


মন্তব্য

কবীর এর ছবি

প্রিয় ইরু, কোন গাছটা কাটা হয়েছে বলবেন কি? আমি ১৯৯১-১৯৯৬ সময়কালে সোহরাওয়ার্দী হলের নর্থ ব্লকের বাসিন্দা ছিলাম। গাছটি যদি আমাদের ব্লকের পাশের বিশাল কড়ই গাছটা হয় তাহলে বলতে হবে আমার বুকে এর মধ্যেই একটা ক্ষত তৈরী হয়ে গেছে। আর এটি যদি আমাদের হলের অন্য গাছও হয় তাহলেও শোকের পরিমান কিছুমাত্র কমবেনা। অযথা গাছ কাটার অধিকার কারোই নেই। যাদের মধ্যে গাছ লাগানোর বা এধরনের নির্মানের সংস্কৃতি নেই তারা যে এমন কাজ করবে তাতে অবাক হবার কিছু নেই। এরাই বুয়েটের এক নাম্বার গেট চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে। সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়ার দেয়াল থেকে ফ্রেসকো মুছে দিয়েছে। আরো যা যা অন্যায় আমার নিজ চোখে দেখেছি তা বলতে গেলে এক মহাভারত হয়ে যাবে। এদের জন্য আমার মনে সীমাহীন ঘৃনা ছাড়া কিছু নেই।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সূর্যসেন হলের গেটের শিরিষ গাছটি কাটার পর আমারও এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

অচেনা কেউ এর ছবি

অকারণে কেউ গাছের ডাল ভাংলেই আমার দেখতে খুব খারাপ লাগে, আর বিশাল গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে দেখে কেমন লাগে সেটা আর বলে দিতে হবেনা!
গাছের প্রতি আমাদের আরো বেশি যত্নশীল হওয়া দরকার।
ইমরুল তোমার লেখা ভাল হচ্ছে, চালিয়ে যাও।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কীভাবে কীভাবে গাছকে নিয়ে যেন আমারও দুয়েকটা লেখা মিলে যায় এই লেখার সাথে

আদিবাসী মানুষের মতো মাটি কামড়ে পড়ে থাক বৃক্ষ সকল
বৃক্ষের প্রযত্নেই আমি ঠিকানা বলব উদ্বাস্তু দিনে;
ওই যে। ওই যে গাছ দেখা যায় ওখানে আমার বাড়ি
আমার ভাইয়েরা এখনো ওখানে থাকে

ওই মাটির দাবিতে আমি ফিরে এসে ডাক দেবো বৃক্ষকে আবার;
আমি এসেছিরে ভাই
আমিও তোর মতো এ বাড়ির লোক


ভূমিজ/বাজারিবাটু

০২

আমার একটি গাছ ও দেশান্তরের গল্প ভূমিলক্ষ্মী

রায়হান আবীর এর ছবি

অথোরিটি হলেই কি সবার বুদ্ধি হাটুঁতে নেমে আসে? কি দরকার এভাবে গাছ কাটার...

---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কেউ প্রতিবাদ করলো না বুয়েটে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

বৃক্ষহত্যা নরহত্যার চে' কোন অংশেই কম নয়। আমি তাই আজ দাবি করছি-
এই সব নির্বিচার বৃক্ষহন্তারকদেরকেও একেকজন নির্মম খুনি হিসেবে চিহ্নিত করা হোক।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আমিও তো তা-ই কই: বুয়েটের পোলাপান প্রতিবাদ করলো না?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।