আগুনে পোড়া দীর্ঘশ্বাস

মাসুদ সজীব এর ছবি
লিখেছেন মাসুদ সজীব (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৬/২০১৪ - ৬:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘড়িতে দশটা পঞ্চাশ, এই সময়ে বদরুলের থাকার কথা ছিলো প্রগতি ফার্মের হেড অব মার্কেটিং সুমন কিবরিয়ার বাসার ডয়িংরুমে অথচ সে বসে আছে ফার্মগেট মোড়ে ছত্রিশ নাম্বার বাসের একেবারে পেছনের সারির একটি আসনে। অধিক জনসংখ্যা কি কারণে আর্শীবাদ বদরুল কোনদিনও বুঝতে পারেনি, তবু রাত বিরাতে টেলিভিশন টকশোতে কিংবা কোন কোন রাজনৈতিক নেতার উচ্ছ্বাস ভরা কন্ঠে সে মাঝে মাঝে শুনতে পায় অধিক জনসংখ্যা নাকি সম্পদ। তার মনে পড়ে ছেলে বেলায় পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় তার ভাইরা এক ঈদে কাপড় পেত আর বোনেরা আরেক ঈদে। কিন্তু বাবা মা কোন ঈদেই নতুন কাপড় তেমন পরতো না, ঈদের দিনের মায়ের সেই বিষন্ন মুখ খানি বদরুলের আজও মনে পড়ে। শ্রাবণের আকাশের মত মায়ের মুখটা ভারি হয়ে থাকতো প্রতিটি ঈদে। তিন বোন আর তিন ভাই যে সংসারে মানুষ হয়েছে সেই বড় পরিবার তার বাবা মায়ের জীবনে কোন সুখ নিয়ে আসতে পারেনি। মায়ের জীবনের শেষ দিনগুলিতে বরং দেখা গেছে মাকে কে কতদিন রাখবে আর কে রাখবে না তার হিসেব কষতে। মাকে নিয়ে সেই অপরাগতার বিষন্নতা আজো ছুঁয়ে যায় বদরুলকে। ঠিক কি কারনে অধিক জনসংখ্যা দেশের জন্যে সুফল সেটা তাই বদরুল মিলাতে পারেনি কোনদিন। জানালার পাশে বসে থেকে মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ ঝাপসা হয়ে গেল তার। শুধু জনসংখ্যার হিসেব না জীবনের কোন হিসেবি বদরুল মিলাতে পারেনি। অথচ স্কুলে সে ছিলো সবচেয়ে ভালো ছাত্রদের একজন। গণিতের শিক্ষক হরিদাস কাঙাল তাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। তিনি মন থেকে দোয়া করেছিলেন বদরুল একদিন দেশ সেরা গাণিতিক হবে। হরিদাস কাঙালের আর্শীবাদ বিফলে গেছে, বদরুল এখন প্রগতি ফার্মের সাধারণ একজন হিসাব রক্ষক।

হরতালের দিনেও রাস্তারয় আজ প্রচুর গাড়ি। সিগন্যালে বসে থাকতে বদরুলের খারাপ লাগছে না, জীবনের অনেক স্মৃতি ভেসে ওঠছে চোখের পাতায়। এই হরতালেও রাস্তায় প্রাইভেট কার বেরিয়েছে প্রচুর। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার, যেখানে পেছনের আসনে মায়ের সাথে বসে আছে দশে এগারো বছরের ফুটফুটে এক কিশোরী। এই ভাপসা গরম আর মানুষের ধাক্কাধাক্কি কিছুই তারা টের পাচ্ছেনা, একি পৃথিবী একি দেশে মাত্র হাত কয়েক দূরত্ব দুটো মানুষের জীবনে কত ব্যবধান গড়ে দিতে পারে সেটা ভেবে বদরুল আরো একটি নীরব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সবুজ বাতি জ্বলার সাথে সাথে বাস আবার চলতে শুরু করেছে, স্থির থেকে গতিতে স্থানান্তর হওয়ার সাথে ভাবনার বদল হয়ে গেল। বাস্তবে ফিরলো বদরুল, সকাল দশটায় থাকার কথা ছিলো কিবরিয়া স্যারের বাসায়। অথচ গড়িতে এখন প্রায় এগারটা। ঘন্টা দেড়েক রাস্তা দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে এই বাসটির দেখা পেয়েছিলো বদরুল। এই হরতালের দিনে কেন বাসায় ডেকেছে তার জন্যে মনে মনে ম্যানাজারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে বদরুল ধাক্কধাক্কির যুদ্ধ শেষে গাড়িতে উঠলো। ম্যানেজারের সাথে তার সম্পর্ক এমনিতে তেমন ভালো নয়, যতবারি তার বাসায় সে গিয়েছে কতগুলো ধমক আর সর্তকবার্তা হজম করে বাসায় ফিরতে হয়েছে। এর সাথে সৎ থাকার আর সততার সাথে কাজ করার একগাল উপদেশ শুনে এসেছে। বদরুল জানে এগুলো লোক দেখানো কথা, কোম্পানি থেকে কে কত টাকা হালাল ভাবে নিজের পকেটে পুরছে সব তার মুখস্থ। সেই মেরে খাওয়ার লিষ্টে কিবরিয়া স্যারের নাম সবার উপরের দিকে। অথচ লোকটি পাঁচ বেলা নামাজ পড়ে, অন্যকেও পড়তে বলে। প্রথম প্রথম এই ভন্ডামি সহ্য হতো না কিন্তু সময়ে সাথে সবকিছুই মানিয়ে গেছে নিম্নমধ্যবিত্ত ধারার এই জীবনে। বদরুল তারপরও কৃতজ্ঞ এই ভেবে যে লোকটা তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়নি। অথচ প্রতিবার পীরবাগের অত্যাধুনিক রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে তার মনে হয়েছে এইবার বুঝি পথে নামতে হবে। কিন্তু আজকে কোন ভয় কাজ করছেনা বদরুলের মনে। কিবরিয়া স্যারের বাসায় প্রথম যাওয়ার কথা আজও মনে পড়ে তার। যেদিন প্রথম তার ডাক পড়লো সেইরাতে বদরুলের একফোটা ঘুম হয়নি। সারারাত ছুরিতে কাটা মুরগির মতো ছটফটিয়ে যখন ভোরের আলো ঢুকলো ঘরে তখন বদরুলের মনে হলো এক শতাব্দী পর বুঝি আলো ফুটলো। ঠিক নয়টায় যেতে বলেছেন কিন্তু সকাল আটটার আগেই পীরবাগে হাজির হয়ে যায় অস্থির বদরুল। একঘন্টা পীরবাগ হয়ে আজিজ আবার আজিজ হয়ে পীরবাগ পায়ছারি করে ঠিক সকাল ৯টায় যখন কিবরিয়া স্যারের কলিংবেলে হাত রাখে ভয় আর শংকায় তার প্রাণটুকু যায় যায় করে। দরজা খুলে বাড়ির কেয়ারটেকার যখন তাকে ভিতরে নিয়ে আসে তখন তার মাথা ঘুরে পড়া যাওয়ার দশা। চারিদিকে প্রাচুর্য্য আর বিত্তের ছড়াছড়ি। কালো চামড়ায় ঢাকা দুটো বড় সোফা সেট, কাঁচের একটি কর্ণার যাতে নানান রঙের শোপিসে ভর্তি। মেঝেতে দামি কার্পেট, উপরে মহামূল্যবান ঝাড়বাতি, কর্ণারের উপরের সারিতে অনেকগুলো পদক রাখা। প্রথম দেখায় বদরুল ঠিক বুঝতে পারলোনা এত পদক কিসের। দুই সোফার মাঝখানে রাখা অত্যাধুনিক টি-টেবিল, যার মাঝে আবার কৃত্রিম জলরাশি এবং কৃত্রিম রঙ্গিন নানা মাছ। এমন টি টেবিল সে কখনো দেখেনি। পশ্চিম দিকের দেয়ালে পাঞ্জাবির উপর মিহি চাদরে তোলা এক প্রতাপশালী ভদ্রলোক তার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, লোকটাকে চিনতে খুব বেশি কষ্ট হলোনা বদরুলের। চেহেরায় বলছে লোকটি কিবরিয়া স্যারের বাবা। আধা ঘন্টা বসে থাকার পর বাড়ীর কাজের মানুষটি এসে যখন তার সামনে এককাপ চা আর বিস্কুট রাখলো তখন বদরুলের মনে হলো সকালে সে নাস্তা করেনি। ভয় আর সংশয় নিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো স্যার কি বাসায় আছেন? উত্তর এলো স্যার এখনো ঘুম থেকে উঠেনি, আপনি বসুন। এরমাঝে ঠিক কখন চোখ লেগে এসেছিলো সেটা বুঝতে পারেনি বদরুল। স্যারের ডাক শুনে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন লজ্জা আর ভয়ে বদরুল প্রায় শেষ।

স্মৃতির এইজাল আরো বিস্তৃত হওয়ার আগেই বাসের কন্ট্রাকটার এসে কর্কশ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো কই যাবেন? ভাড়া দেন। ঢাকা শহরে বদরুলের মতো মানুষদের গনপরিবহণের গাড়িগুলোতে উঠতে নামতে ছোটখাট একটা যুদ্ধ সম্পন্ন করতে হয়। সেই হিসাবে হরতালের দিনে গাড়িতে উঠা এবং নামা বেশ আরাম দায়ক। আর সময় ও অপচয় হয়না। মিরপুর ১০ থেকে মাত্র পনের মিনিটে সে ফার্মগেট চলে এসেছে্। অথচ অন্যদিন হলে ঘন্টাখানিক লেগে যেত। তবে ভাড়াটা একটু বেশি গুনতে হয়েছে এই যা। তবু এটাকেই সুখকর মনে হয় বদরুলের। ইস ঢাকা শহর যদি প্রতিদিন এমন হতো! হরতালের কারণে দশটাকার ভাড়া পনের টাকা দিতে হলো। গাড়ি ভাড়া ঢাকা শহরে গত কয়েকবছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে কিন্তু সেই হারে বাড়েনি বদরুলের বেতন। অথচ বছর শেষে স্বপ্ন প্রতিবারি এসে উঁকি দেয় বদরুলের মনের ঘরে। এবার একটা পদোন্নতি হবে, বেতন বেড়ে যাবে।আর ছোট্ট দুটো রুমের টিনের বাসায় থাকতে হবে না ছেলে মেয়ে নিয়ে। মেয়ে বড় হয়ে উঠছে, ক্লাস সেভেনে পড়ছে। তার ভবিষ্যতের জন্যে আলাদা একটা ফান্ড করতে হবে। প্রতি মাসে শুরু করবো করবো বলে এখনো করা হয়ে ওঠেনি। ছেলেটাও স্কুলে যাচ্ছে গতবছর থেকে। অথচ বদরুলের পদোন্নতি হয়নি গত চার বছরে। বছর শেষে হাজার খানিক টাকা বাড়ে পুরাতন বেতনের সাথে, সেই টাকা দিয়ে কিছুই হয়না তাদের সংসারে। বরং প্রতিবছর আরো সংকুচিত হতে হয়, বাকীর দোকানে হিসেবটা আরো ফুলে উঠে।

ঢাকা শহরে বড় কোন আত্নীয় নেই যারা বদরুলকে একটা ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। নিজের চেষ্টায় এই চাকরি খানি জোগাড় করে ছিলো বছর সাত-আট পূর্বে। এর মাঝে নানান জায়গায় চেষ্টা করেছে, অনেকই আশা দিয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ যেদিন প্রথম ঢাকায় এসেছিলো কত স্বপ্ন ছিলো চোখে, সবকিছু বদলে দিবে বদরুল। গ্রামে তাদের পাশের বাড়ির মুকবুল মাত্র বছর চারেক ঢাকা বাসী হয়ে গ্রামের বাড়িতে প্রচুর জায়গা জমি কিনে এলাহী কারবার করে ফেলেছিলো। মুকবুলের সেই সাফল্যই বদরুলকে ঢাকায় টেনে এনেছিলো। কিন্তু বদরুল কিছুই বদলাতে পারেনি। তার মতো অসহায় সৎ মানুষেরা বদলানোর সামর্থ্য রাখেনা এটি বুঝতে বেশি সময় লাগেনি বদরুলের। মায়ের জমানো হাজার খানিক টাকা আর চোখের জলকে সাথী করে বছর চৌদ্দ-পনের পূর্বে ঢাকা এসেছিলো বদরুল। তারপরের সবটুকু স্মৃতি প্রতারণার আর বঞ্চনার। কষ্টের সেই স্মৃতিকে ভুলে থাকতে গেলেও জীবনের এই দৈন্যতা বারবার সেটিকে মনে করিয়ে দেয়। মায়ের জন্যে কিছু না করতে পারার ব্যর্থতা বদরুলকে প্রতিনিয়ত দহন করে। কোনদিন যদি টাকা হয় তাহলে মায়ের কবরটা সুন্দর করে পাকা করবে এমন প্রতিজ্ঞা করেছে সে নিজের কাছে নিজে। এবার স্বপ্নটা সত্যি হলে স্ত্রীকে একটা জামদানি শাড়ি কিনে দিবে, কোনদিন একটা জামদানি শাড়ি দিতে পারেনি সাদিয়াকে।অথচ টেলিভিশনে যারা খবর পড়ে তাদের জামদানির প্রশংসা সে কতদিন শুনেছে সাদিয়ার মুখে। শাড়ি দেখে কিনে দিতে না পারার লজ্জায় সাদিয়ার সামনে খবর পাঠিকাদের দিকে তাকাতে পারেনা বদরুল। আর এইসব খবর পাঠিকারাও বোধহয় প্রতিদিন প্রতিযোগিতা দিয়ে জামদানি শাড়ি পরে আসে। মুখ ফুটে কোনদিন বলেনি কিন্তু বদরুল বুঝে সাদিয়ার ইচ্ছের কথা। কারো জন্যে কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা প্রতিনিয়ত বদরুলকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

অফিসে কানাঘোষা চলছে এইবার বদরুলের পদোন্নতি হচ্ছে। অ্যাডমিনের প্রধান রকিব উদ্দিন গত পরশু তার রুমে ডেকে তেমন ইঙ্গিত ই দিলো। মিষ্টি খাওয়ান বদরুল সাহেব, প্রমোশানতো পেয়ে যাচ্ছেন। বেতন ডাবল হয়ে যাচ্ছে আপনার। কিন্তু বার বার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাতর বদরুলকে এই সব আশার বুলি ছুঁয়ে যায়নি সেদিন। বছর দুই আগেও ঠিক এমন কথা অফিসের সবার মুখে মুখে রটেছিলো। পদোন্নতি নিশ্চিত জেনে বদরুল ধার করে বাসায় ভালো মন্দ খাওয়ার জন্যে বাজার করেছিলো। কিন্তু সেইদিন কিবরিয়া স্যারের বাসায় সুখবর শুনার বদলে বদরুল তার স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়েছিলো। তার অনেক পরে এসেও কতজন পদোন্নতি পেলো অথচ তার কিছুই হলো না। বড় স্যারদের সাথে জ্বি জ্বি স্যার করা, তাদেরকে তৈল দেওয়া বদরুলের কাজ না তাই অফিসে কোন বড় স্যারের খুব কাছের লোক হয়ে উঠতে পারেনি সে।

বদরুলের ঠিক সামনের আসনে বসে দুজন মধ্যবয়স্ক মানুষ দেশ আর রাজনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছে। বদরুল তাদের কথা শুনার চেষ্টা করলো। মাথায় চুল কম, সদ্য তারুণ্যকে বিদায় জানানো লোকটি বলছে এমনি হওয়া উচিত। আপনি যদি বিরোধীদলকে আন্দোলন করতে না দেন তাহলে তারা তো রাজপথে ভাঙ্গচুর করবেই। এটাতে বিস্ময়কর কিছু নেই, বরং বলতে হয় বিরোধী দল এতদিন চুপ থেকে সংযমের পরিচয় দিয়েছে। অপর ভদ্রলোক বলছে তাই বলে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ মারবে এটা কি ঠিক? এই আলোচনার মাঝেই গাড়ি কাওরান পেরিয়ে গেছে, রাজনৈতিক আলোচনায় অংশগ্রহনকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। দুই দল সমান খারাপ এমন একটা মহান সিদ্ধান্তে সবাই মোটামুটি ঐকমতে পৌছে গেছে। ঠিক তখনি সামনের দিকে একটা চিৎকার শুনা গেল, কিছু বুঝে উঠার আগেই বদরুল দেখলো গাড়িতে আগুন লেগে গেছে। সামনের দিকে দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুনের লেলিহান ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত, নিজের শরীরেও তাপ লাগছে সেই আগুনের। বদরুলের বুঝতে বাকী থাকলো না এই আগুনও কয়েক সেকেন্ডর মাঝে তাকেঁ ছুয়ে যাবে, পুড়িয়ে যাবে। হতভম্ব অসহায় বদরুলের হঠাৎ করে ছেলেবেলার বিষন্ন বাবা-মায়ের ঝাপসা মুখগুলো মনে পড়লো। চিৎকার আর আগুনের লেলিহান ধেয়ে আসছে বদরুলের দিকে। সাদিয়ার মলিন মুখ আর মেয়ের জন্যে একটা দীর্ঘশ্বাস জন্মানোর সাথে সাথেই গনতন্ত্র রক্ষার আগুন বদরুলকে ছুঁয়ে গেল।

মাসুদ সজীব


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সজীব ভাই ,প্লিজ লিখুন। আরো আরো এবং আরো অনেক। এই দহন দিনের গল্পগুলো লিখে যেতে হবে, এখানে সেখানে দলিলে ধরে রাখতে হবে। যদি কখনো ভোর হয় , আমাদের পরের জেনারেশন যাতে আমাদের চোখ দিয়ে এই রাতগুলো দেখতে পায়। দেখতে পায় আমাদের অশ্রুজলকে আর চিনে নিতে পারেএই রাজনীতির নির্মম হিপোক্রেটদের। আলু পত্রিকা থেকে ভেক বিপ্লবী কাউকে বাদ দেয়া যাবে না।

রাজর্ষি

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম গল্প লেখার চেষ্টা এটি। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা হাসি

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

উরিব্বাস! মেরেই ফেললেন? মন খারাপ
আপনি খারাপ লোক মশাই।

ভালো থাকবেন সজীব।
আপনার জন্য শুভকামনা।

----------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি একজনকে মেরে ফেলার গল্প বললাম, ওরা কতজন কে মেরেছিলো সেই দু:সময়ে। চিন্তিত
পড়ার জন্যে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
মাসুদ সজীব

তিথীডোর এর ছবি

দেশ সেরা গাণিতিক না গণিতবিদ? চিন্তিত

ক্লিশে প্লট।
আরো লিখুন।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ

মাসুদ সজীব

মেঘলা মানুষ এর ছবি

মনটাও বিষণ্ন হয়ে গেল বদরুল সাহবের জীবনের বঞ্চনার গল্প শুনতে শুনতে মন খারাপ

ভালো লেগেছে গল্পটা, শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

বদরুল সাহেবদের মতো মানুষদের গল্পগুলো এখনি হারিয়ে গেছে ইতিহাসের ডাষ্টবিনে। আমরা সব ভুলে গেছি যেমন আমরা সব ভুলে যাই। সেই ভুলে যাওয়া গল্পগুলো বলতে চেয়েছি এবং সেই চেষ্টা থাকবে ভবিষ্যতেও। ধন্যবাদ

মাসুদ সজীব

দীনহিন এর ছবি

আপনি যদি বিরোধীদলকে আন্দোলন করতে না দেন তাহলে তারা তো রাজপথে ভাঙচুর করবেই।

ভাঙচুর তো আন্দোলনেরই অংশ! নিয়মতান্ত্রিক সভা-সমাবেশ বোঝাতে চেয়েছেন মনে হয়।

বাস্তবে ফিরলে বদরুল, সকাল দশটায় থাকার কথা ছিলো কিবরিয়া স্যারের বাসায়।

ঠিক এরকম আরও কয়েকটা জায়গা আছে, যা একটি প্যারা ভীষণভাবে দাবী করছিল!

শেষটা আরও শিল্পিত করা যেত, তৈরি করা যেত আরও হাহাকার, তবু,

শ্রাবণের আকাশের মত মায়ের মুখটা ভারি হয়ে থাকতো প্রতিটি ঈদে।

বা,

এই ভাপসা গরম আর মানুষের ধাক্কাধাক্কি কিছুই তারা টের পাচ্ছেনা, একি পৃথিবী একি দেশে মাত্র হাত কয়েক দূরত্ব দুটো মানুষের জীবনে কত ব্যবধান গড়ে দিতে পারে সেটা ভেবে বদরুল আরো একটি নীরব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

বা,

শাড়ি দেখে কিনে দিতে না পারার লজ্জায় সাদিয়ার সামনে খবর পাঠিকাদের দিকে তাকাতে পারেনা বদরুল।

বা,

আধা ঘন্টা বসে থাকার পর বাড়ীর কাজের মানুষটি এসে যখন তার সামনে এককাপ চা আর বিস্কুট রাখলো তখন বদরুলের মনে হলো সকালে সে নাস্তা করেনি।

-- এইসব বাক্য গল্পটিকে ভীষণ ভীষণ সত্যি করে তুলেছে, বাঙময় করে তুলেছে আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অন্তর্লীন অপ্রাপ্তিকে, নিত্যদিনের হাহাকার ও জীবন-দহনকে!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। প্যারা বাড়ানো যেত সেক্ষেত্রে গল্প দীর্ঘ হয়ে যেত। এটি আমার লেখা প্রথম গল্প, আশা করি ভবিষ্যতে আরেকটু দীর্ঘ আকারেই লেখবো।

মাসুদ সজীব

মর্ম এর ছবি

১। গল্প ভাল লেগেছে পড়তে। বাসযাত্রার বিরক্তিটা টের পাওয়া যায়নি, হঠাৎ আগুণ কেন এল সেটার জন্য একটু ফিরে গিয়ে পড়ে নিতে হয়েছে।

২। 'বানান' আর 'টাইপো' নিয়ে আরো সাবধান থাকবেন প্লিজ। 'মাসুদ সজীব' নামটা পড়ার পর এই জায়গাটায় একটু হতাশই লাগল, আপনি কতদিন ধরে কমেন্ট করছেন এখানে, চেনা নাম, প্রত্যাশার ভার কিছুটা তো থাকবেই!

৩। লেখাটায় ফ্ল্যাশব্যাক আছে, আছে তার বিস্তারিত- এবং 'দীনহীন' যেমন দেখালেন, কিছু চমৎকার 'লাইন'। প্যারা করে দিলে ওগুলোতে চোখ পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে, লেখার 'মানবিক দিক'টা আরো জোরালো হয়'। একটু বড় লাগে বটে, কিন্তু লেখায় আকর্ষণটা ধরে রাখতে পারলে সে ঝুঁকি নিতেই পারেন।

নিয়মিত লিখুন, শুভেচ্ছা হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো। প্রকাশ ভঙ্গী একটু কেতাবী থেকে গেছে, আরেকটু সহজ বা আটপৌরে হতে পারত। কিন্তু প্রথম লেখায় ‘Hat’s Off’.
কিছু লাইন বেশ ভাল লেগেছে- “স্থির থেকে গতিতে স্থানান্তর হওয়ার সাথে ভাবনার বদল হয়ে গেল। বাস্তবে ফিরলো বদরুল,” অথবা “রং প্রতিবছর আরো সংকুচিত হতে হয়, বাকীর দোকানে হিসেবটা আরো ফুলে উঠে।”
ছোট্ট পরিসরে অনেক কিছু উঠে এসছে, একটি পূর্ণ ছবি পাওয়া যায়। গল্পটা এই সময়ের, এই দেশের। আরো লিখবেন। নিশাচর জীব।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ হাসি

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

১। ধন্যবাদ, হরতালে গাড়িতে আগুন দেওয়া না দেওয়া নিয়ে আলাপচারিতা ছিলো। তাই একেবারে স্পষ্ট না করে দিলেও পাঠক বুঝে থাকবে।

২। বানান নিয়ে আমার দুর্বলতা আছে। চেষ্টা করছি সেটা কাটিয়ে ‍উঠার।

৩। আপনাদের পরামর্শ লেখার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দিবে।

মন্তব্যের জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ

মাসুদ সজীব

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বাহ প্রথম গল্পেই তো মাত!
এই গল্পগুলো সমসাময়িক কালের প্রতিচ্ছবি। যাত্রীসহকারে বাস পুড়িয়ে দেবার উৎসব গেল মাত্র কদিন আগে। এই গল্পের চেয়েও ভয়াবহসব ঘটনা ঘটেছে অনেকের চোখের সামনেই।
আরো গল্প চাই আপনার কাছ থেকে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

নীড় দা সচলে আমার প্রিয় গল্পকারের একজন আপনি, আপনার মন্তব্যের জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রথম গল্প যখন পাস মার্ক পেয়ে গেছে তাহলে আরো কিছু লেখার চেষ্টা করা যেতে পারে হাসি

মাসুদ সজীব

এক লহমা এর ছবি

প্রিয় মাসুদ সজীব-ভাই একটু গুছিয়ে মন্তব্য করার ইচ্ছে ছিল। ঠিকমত সময় পাওয়া গেলনা। শুধু মন্তব্য করতে দেরী হয়ে গেল।
প্রথমেই বলি, প্রথম গল্প লেখার জন্য অভিনন্দন। দ্বিতীয়ত, আপনি লিখেছেন দায়বদ্ধতার অনুভূতি থেকে। তার জন্য আপনাকে আরো অভিনন্দন।
এবারে গল্পে আসি। আর এইখানেই আমার কথা ফুরিয়ে নটে গাছ মুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কারন দেরীতে বলতে বসায় সব কথাই প্রায় বলা হয়ে গেছে হাসি । আর দু-এক কথা যা বলতে পারি, গল্পটা পড়তে পড়তে আমার যা মনে হয়েছে সেটা এই যে লেখক দেখাচ্ছেন - একজন সাধারন মানুষ বদরুল হরতাল-টাকে উপভোগ করছে। (অত্যন্ত সঠিকভাবেই সেটাকে ধরা হয়েছে। আর সেখানেই সবচেয়ে করুণ মোচড়টা অপেক্ষা করেছিল।) সে যেটা ধরতে পারছে না, যে অন্ধকারের শক্তি হরতাল পরিচালনা করেছে, করে, সে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য হরতালে থামে না, থামেনি, থামবে না। সে একে নিয়ে যাবে তার পরের পর্বে, নৃশংসতার অধ্যায়ে। হরতাল উপভোগ করা বদরুলরা সেটা ধরতে পারার আগেই সেই নৃশংসতার বলি হয়ে যায়।
এই ছবিটা তুলে ধরার ক্ষেত্রে গল্পকার সফল। যা যা এর মধ্যই বিভিন্ন পাঠকরা বলে দিয়েছেন তার বাইরে পাঠক হিসেবে আমার আর যা মনে হয়েছে -
গল্পটা আরো ছোট হতে পারত।
গল্প একই সাথে মূল লক্ষ্য এবং একটি পার্শ্ব-গল্প (কিবরিয়া ...) উভয়কে ধরতে গিয়ে তার গতি হারিয়েছে, খানিকটা আগোছালো হয়ে গেছে।
গল্পটা সম্ভবতঃ আরো সুবিন্যস্ত করা যায়। যে কথাগুলি বসাচ্ছেন, তারা কোনটা আগে আসবে কোনটা পরে আসবে সেটা ঠিক করার উপর একই গল্প ভিন্ন ভিন্ন দ্যোতনা পেয়ে যায়।
পরের গল্পগুলোয় আপনি এগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই ভাববেন।
সাগ্রহে আপনার পরের গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সুহৃদয় মন্তব্যের জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। গল্প লেখার চেষ্টা কখনো করিনি, সাহস করে একটা চেষ্টা দিলাম আর কি হাসি । গল্পটি একটানে লেখা। লেখার পর সেটিকে আর কাটছাট করিনি। ভবিষ্যতে গল্প লেখার সময় আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যগুলো মাথায় রাখবো এবং আরো বেশি যত্নশীল হওয়ার চেষ্টা করবো।

আমি আসলে বদরুলের বঞ্চনার গল্পের আড়ালে সাধারণ জনগনের সহজ সরলীকরণটাকে দেখাতে চেয়েছি, বাংলাদেশে যারা একশ টাকা চুরি করা আর একশ কোটি টাকা চুরি করা দুই দলকে এক কাতারে বিচার করে ফেলে। খুব সহজে বলে সব রাজনৈতিক দল সমান খারাপ। এবং যারা বলেছে গাড়িতে আগুন দেয়া তাদের দৃষ্টিতে ঠিক তাদেরকে একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অন্যায়কে অন্যায় বলতে হবে, কোন অজুহাত দিয়ে অন্যায়কে বৈধতা দেওয়া যায়না। আর সেটাকে বৈধতা দিলে একদিন সেই অন্যায় নিজের সাথেও ঘটে যেতে পারে। যেমন টা এখানে ওই আলোচনাকারী যাত্রীদের সাথে ঘটেছে। আর বদরুলের মতো রাজনীতি থেকে দূরে থাকা মানুষগুলো গনতন্ত্র রক্ষা নামের আন্দোলনে বলি হয় মন খারাপ

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্প ভাল লেগেছে চলুক আপনার পরের লেখার জন্য অপেক্ষা করব।

শুভেচ্ছা রইল।

সোহেল লেহস

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ হাসি, আপনাকেও শুভেচ্ছা ।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

অদ্ভূত লিখেছেন ভাই। সত্যিই অদ্ভুত।

এম এস কে বাঁধন

মাসুদ সজীব এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

গল্পের ঝরঝরে ভাষা, অনুভূতির তীব্রতা দেখে বোঝাই যাচ্ছে না প্রথম গল্প। আঙুলে সাহস ভর করলেই এসব লেখা আসে। আরও গল্প চাই। রাজর্ষির লিংক ধরে লেখাটি পড়া হল। আমার নামের ব্যবহার আছে, হাহাহা। বেশ হল।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মাসুদ সজীব এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।