প্রতি বছর একবার করে দেশের আনাচ-কানাচ ঘোরার একটা পারিবারিক অভ্যেস গড়ে উঠেছে। সাধারণত ঈদের ঠিক পরপর বেরিয়ে পরলে রাস্তা ফাঁকা পাওয়া আর অনাকাংক্ষিত ভীড় এড়ানোটা সহজ হয়। মেঘালয় গারো পাহাড়ের সীমানা অঞ্চল দেখা বাকি ছিল। ময়মনসিংহ শহরে হল্ট করে শেরপুর, নেত্রকোনা বেড়াবার পরিকল্পনা করে বেরিয়ে পরা হল নভেম্বরের ৩০শে, ঈদের পরেই।
২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে রওনা হলাম বিরিশিরি। নেত্রকোনা শহরের আগেই বাঁয়ে একটা অফ্-রোড চলে গেছে জারিয়া হয়ে বিরিশিরি সদর। নেত্রকোনা হয়েও যাওয়া যায় অবশ্য।
ম্যাপ বলছে এটা মগরা নদী… যদিও লেখা ছিল না কিছু।
নদীর উপর ঝুঁকিপূর্ণ সেতু। পার হচ্ছে ট্রাক্টর থেকে শুরু করে গরুর গাড়ি!
কংস নদীর উপর দীর্ঘদিন ধরে (স্থানীয়দের মতে) নির্মীয়মান ব্রীজ (অসমাপ্ত)…
বিরিশিরি সদরেই আছে দেশের একমাত্র উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী।
একাডেমীর বাগানে এই লতান নাম-না-জানা ফুলটা ভাল লেগেছিল।
তেরী বাজার, দূর্গাপুর ঘাট থেকে ছাড়ে খেয়া আর মালবাহী নৌকা। সোমেশ্বরী নদী তীরবর্তী লোকালয়ের অন্যতম বাহন। বিরিশিরি ছেড়ে রানী খং গেলে পাওয়া যাবে রানী খং মিশন আর আরও গেলে চীনামাটির পাহাড়।
চীনামাটি আসে ট্রাকে, ভ্যানে, আর নৌকায়। আরো আসে ভারত থেকে আমদানীকৃত কয়লা।
শান্ত সোমেশ্বরীন, দূরে গারো পাহাড় সারি
গারো পাহাড়ের পাদদেশে দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত গ্রামবাসী।
পাহাড়কোলে বনের মাঝে রানীখং উচ্চ বিদ্যালয়
রানীখং স্কুল থেকে পাহাড় চূড়ায় রানী খং মিশনে উঠবার রাস্তা
মিশনে ‘শান্তি কুটির’। বাগানে ছিল অনেকদিন পরে দেখা ‘চুকাই’ গাছ।
বিকেল হয়ে এসেছিল… চীনামাটির পাহাড় দেখতে হলে আরো ঘন্টাখানেকের যাত্রা করতে হবে, ওদিকে জারিয়া টু বিরিশিরি রাস্তার যে হাল দেখে এসেছি তাতে বেলায় বেলায় ফিরতে পারলে বাঁচোয়া! কাজেই ফিরতি পথ ধরাই সাব্যস্ত হল।
চরায় আটকে পড়েছে কয়লাবাহী ইঞ্জিন-নৌকা। অপেক্ষারত শান্ত ধূমপায়ী মাঝি।
তেরী-বাজার ঘাটে ফিরে দেখা মিলল বিয়ে বাড়ির লোকেদের।
এই বাবা-ছেলেতে যাবার পথেও ছেঁকে তুলছিল পাহাড়ী সোমেশ্বরীর বয়ে আনা নুড়ি পাথর।
যেতে চাইলেঃ ঢাকা-ময়মনসিংহ যাত্রা কোন ব্যাপার নয়। নিজের গাড়ি না থাকলেও আছে বাস সার্ভিস। নেত্রকোনা যেতে হলে ময়মনসিংহ শহরে হল্ট করাটাই সবচেয়ে ভাল হবে মনে হয়েছে আমার কাছে। বেরুতে হবে সকাল সকাল, আমাদের লেগেছিল প্রায় ৩ ঘন্টা শুধু বিরিশিরি সদরে পৌঁছুতেই। জারিয়া পর্যন্ত রাস্তাটা ঠিক হাই-ওয়ে নয়, তবে চলবে। সমস্যা হল জারিয়া টু বিরিশিরি, ব্রীজগুলির ছবি দিয়েই দিয়েছি, বুঝে নিন। আমার সাজেশন হল ফোর-হুইল-ড্রাইভ, নইলে বেকায়দা পড়তে পারেন। আর শুকনো মৌসুম ছাড়া বিরিশিরি যাওয়ার চেষ্টা না করাই ভাল! যতদিন না কর্তৃপক্ষ রাস্তা মেরামতে নজর দিচ্ছেন।
বিরিশিরিতে দেখার আছে উপজাতীয় কেন্দ্র। রানীখং মিশন বা চীনেমাটির পাহাড় দেখতে হলে প্রথমে যেতে হবে দূর্গাপুরের তেরী-বাজার ঘাট, বিরিশিরি সদর থেকে আরো আধ ঘন্টার খারাপ রাস্তা। সোমেশ্বরীতে দাঁড়টানা নৌকা নেয়াই উত্তম, শীতে নদীর বেশির ভাগ স্থানেই হাঁটুপানি থাকবে, ইঞ্জিন নৌকা আটকে যেতে পারে চড়ায়। রানী খং পৌঁছুতে ভাটির সময় লাগবে প্রায় ঘন্টাখানেক।
সাথে করে ছাতা, ক্যাপ, খাবার পানি আর ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না।
পথের দুর্ভোগটা ভুলে গেলে, পাহাড়কোলে প্রকৃতির মাঝে নৌ-ভ্রমণটা ছিল অসাধারণ! সোমেশ্বরী নদী মনে করিয়ে দিয়েছে জাফলংয়ের কথা। কিন্তু তবুও এ যেন অন্য রূপ বাংলাদেশের। প্রাণবন্ত আর কর্মচাঞ্চল্যপূর্ণ এর তীরের মানুষেরা, ঠিক যেন বিপরীত শান্ত ধীর গম্ভীর এই শীতের সোমেশ্বরীর।
[ছবিগুলি তুলেছি আমি আর আমার ভাই, আমার Canon IXUS 950 IS, আর তার Sony Cybershot DSC-w220 পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ব্যবহার করে। টুকটাক কাট-ছাঁট যা করেছি তা পিকাসা-৩ দিয়ে।]
যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
নীলগিরি ডাকছে আমায়
ভাসতে হবে মেঘের ভেলায় ...
মন্তব্য