। । দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের গান । ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ১৭/১১/২০০৬ - ৯:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ,
তুমি ভাঙলে কেন? পড়লে কেন? দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?
তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?

ইয়াসমিনের সঙ্গে তুমি দিনাজপুরের বাসে
তুমি ও বাড়ি যাচ্ছিলে তো ইয়াসমিনের পাশে ।
কুত্তারা সব ঝাঁপিয়ে পড়ে--কাপড় ধরে টান ।
খুবলে খেয়েছিলো মেয়ের গোলাপ এবং প্রাণ ।
তখন তুমি করতে কিছুই পারলেনা তো মানুষ!
তাই কি তুমি ভাঙলে মানুষ?
তাই কি তুমি পড়লে মানুষ,দঁড়িয়ে থাকা মানুষ?
তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ।
তুমি ভাঙলে কেন, পড়লে কেন দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?

শাহজালালের দেশে বাবার মেয়ে নূরজাহান ।
সমাজ বলে অসতী সে! বিচার অনুষ্ঠান!
সেই বিচারে পাথর মেরে হত্যা করার রায়!
আর কারো নয় নারীর প্রান নূরজাহানের যায় ।--
তখন তুমি করতে কিছুই পারলেনা তো মানুষ!
তাই কি তুমি ভাঙলে মানুষ?
তাই কি তুমি পড়লে মানুষ,দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?
তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ।
তুমি ভাঙলে কেন, পড়লে কেন দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?

জাহাজ ভেঙে চট্রগ্রামে মাল হচ্ছে খালাস ।
বন্দরে আজ পড়ে আছে মেয়ে মানুষের লাশ ।
ধর্ষিতা সে মেয়ে মানুষ--নাম ছিল তার সীমা ।
ভগবানের দিকেই ঘৃনায় তুই তাকালি মা!
তখন তুমি করতে কিছুই পারলেনা তো মানুষ!
তাই কি তুমি ভাঙলে মানুষ?
তাই কি তুমি পড়লে মানুষ,দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?
তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ।
তুমি ভাঙলে কেন, পড়লে কেন দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?

অসতী আজ আমার মেয়ে যদিও সতী সে!
ধর্ষিতা আজ আমার বোন একলা যদি সে!
ধর্ষকেরা লাফিয়ে বসে সিংহাসনে আজ ।
আল্লা তোমার চক্ষু তুলে খাচ্ছে শকুন বাজ ।
তখন তুমি করতে কিছুই পারলেনা তো মানুষ!
তাই কি তুমি ভাঙলে মানুষ?
তাই কি তুমি পড়লে মানুষ,দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?
তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ।
তুমি ভাঙলে কেন, পড়লে কেন দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?

দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ।
ইয়াসমিনের পাশে তুমি,নূরজাহানের পাশে তুমি,
সীমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলে মানুষ ।
অপমানের বোঝা মাথায় অপঘাতেই শেষ ।
তারপর ও কি বলবে তুমি সমাজ,মানুষ,দেশ?
তারপর ও কি মায়ের দিকে চোখ ফেরাতে পারো?
মাতৃভূমি,মাতৃভাষা বলতে তুমি পারো?
বলতে তুমি পারো মানুষ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ?
দাঁড়িয়ে ছিলে, ভাঙছো কেন পড়ছো কেন তুমি?

দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ।
তুমি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ । ।

**********************************************

আমি কবিতা লিখতে পারিনা ।
এ নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই ।
স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা--এমন এক দেশে জন্মেছি, যে খানে সবথেকে নিরক্ষর মানুষটা ও বুনতে জানে পদ্য-পয়ার । কেউ কেউ তুচ্ছার্থে বলেন-- এ দেশে কবি আর কাকের সংখ্যা সমান ।
আমি বলি --তাই হোক, বাড়ুক আরো কবি , লিখা হোক আরো কবিতা ।

এতো কবি, এতো কবিতা আছে বলেই তো কবিতা লিখতে না পারার দু:খবোধে কাতর হইনা । দ্্রোহে ও অভিমানে, বিরহ ও প্রণয়ে, বিষন্নতা ও উল্লাসে--- যখনই যেমন আঁকড়ে ধরতে পারি কবিতার শরীর ।

পড়ছিলাম অমি রহমান পিয়ালের 'বীরাঙ্গনা ' সংক্রান্ত পোষ্টগুলো । চেনা কষ্ট, চেনা অপমান,চেনা ব্যর্থতা ।
তবু বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে উঠে ।
আমি আমার আপাত: অস হায় আক্রোশ গুলো শেয়ার করি সৈয়দ শামসুল হকের এই কবিতার সাথে ।

যুদ্ধ জয়ী মানুষ! দাঁড়িয়ে উঠা মানুষ--- তবু ভাঙলো কেনো?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।