এবারের বইগুলোর মধ্যে প্রথমেই পড়লাম ‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’।
তাজউদ্দীন আহমেদ আমাদের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ। একটা প্রগতিশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন যারা দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যারা নিজেদের নিবেদিত ও উৎসর্গ করেছিলেন তিনি তাদের অন্যতম। তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে আরো বেশী বেশী লেখা, আরো বেশী তাজউদ্দীন চর্চা আমাদের জন্য আরো বহুদিন জরুরী হয়ে থাকবে।
এই জরুরী চর্চায় সুহান রিজওয়ান এর ‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’ একটা মুল্যবান পালক হিসেবে যুক্ত হলো। সুহান ইতিহাস রচনা করেননি, ফিকশনই লিখেছেন- সেটা তিনি মুখবন্ধে বলে ও দিয়েছেন। কিন্তু ফিকশন হলে ও ইতিহাস সেই ফিকশনের বিষয়বস্তু বলেই ফ্যান্টাসীর কোন সুযোগ নেই, সত্যের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। রিজওয়ান তার এই দায়বদ্ধতা অস্বীকার করেননি এবং সত্যের প্রতি বাধ্য থাকতে সচেষ্ট – এই আন্তরিকতাটুকু টের পাওয়া যায়।
তাজউদ্দীন চর্চার সাম্প্রতিক প্রবণতায় একটা মারাত্মক অসুস্থতা ও আছে, সেটা ও অস্বীকার করা সুযোগ নেই। তাজউদ্দীন আহমেদ যার নেতৃত্বের প্রতি অনুগত ছিলেন, যে আনুগত্যের কারনে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে কিন্তু তারপর ও জোহরা তাজউদ্দীন এবং তাদের সন্তানেরা সেই আনুগত্য থেকে সরে আসেননি-সেই শেখ মুজিবকে ‘সামান্যকরণের’ ধান্দা থেকে ও তাজউদ্দীন চর্চার একটা বিষয় আছে। তাজউদ্দীন আহমেদকে শেখ মুজিবের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর একটা প্রবণতা আছে। এই দুষ্ট প্রবণতার বিষয়ে সতর্ক থেকেই তাজউদ্দীন চর্চা জরুরী - প্রগতিশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশের স্বপ্নমাখা ঐতিহাসিক অতীতকে জানার জন্য।
পাঠক হিসেবে ‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’ কে এই ক্ষেত্রে ও সৎ বলেই দৃশ্যমান হয়েছে।
পুরো উপন্যাসের শব্দচয়ন , বাক্যগঠন, উপমা চমৎকার সাবলীল। একেবারে শেষে অতিরিক্ত অংশে সুহান রিজওয়ান, তাজউদ্দীন কণ্যা সহ দৃশ্যপট বাহুল্য মনে হয়েছে। দরকার ছিলোনা।
বইটা আরেকটু শক্তপোক্ত হতে পারতো এবং পেজ মার্কার নাই! পরবর্তী সংস্করনে প্রকাশকের এই বিষয়টা খেয়াল করা দরকার।
এবার আসি মুল কথায়।
সম্ভবতঃ বেখেয়ালেই সুহান তার ‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’ এ একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিষয়কে ‘সামান্যকরন’ করেছেন।
আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ১৯৭৫ সালের পনেরো আগষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর তারিখে যেমন একটা একটা রাষ্ট্র, একটা চেতনার জন্ম হয়েছে- ৭৫ এর পনেরো আগষ্টে সেই চেতনার রাষ্ট্রকে হত্যা করা হয়েছে। আগষ্ট পনেরোর মুজিব হত্যাকান্ড কেবল ব্যক্তিহত্যা নয়, একটি রাষ্ট্র হত্যা ও বটে। এটি কোন আবেগাক্রান্ত অতিশোয়ক্তি নয়। পূর্বাপর কিছু ইশারা ইঙ্গিতে চোখ রাখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
ইসলামিক রিপাবলিক পাকিস্তান যার কেন্দ্রীয় উপাদান ছিলো সামরিকতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং সাম্রাজ্যবাদের সংশ্লিষ্টতা- মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই উপাদানগুলোকে অস্বীকার করেই বাংলাদেশের জন্ম।
স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঐ কেন্দ্রীয় উপাদানগুলো ক্রিয়াশীল ছিলো সক্রিয় ভাবেই। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ছিলো, সামরিক-বেসামরিক অভিজাততন্ত্র ছিলো, ছিলো ধর্মীয় গোষ্ঠি। এরা পরস্পরকে বাঁচিয়ে রাখে কারন এদের স্বার্থের জায়গাটুকু এক। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে তাদের স্বার্থে ক্ষুণ্ণ হয়েছিলো বলেই প্রথম থেকেই তারা সক্রিয় ছিলো প্রতিবিপ্লবের। তারা জানতো সবচেয়ে জোরালো বাধা ব্যক্তি মুজিব তাই তাকে সরিয়ে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। মুজিবকে হত্যা করলে কারা সরাসরি প্রতিরোধ গড়তে পারে সেটা ও তাদের জানা ছিলো- সেই হিসেবেই ঐ রাতে খুন করা হয়েছে শেখ মণিকে। শেখ মুজিব না থাকলে আত্মমর্যাদাসম্পণ্ণ , প্রগতিশীল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা কারা টেনে নিয়ে যেতে পারে সেই হিসাব ও ছিলো ঘাতক সিন্ডিকেটের কাছে। তাই খুন করা হয়েছিলো তাজউদ্দীন আহমেদ সহ বাকী তিন জাতীয় নেতাকে যারা ছিলেন মুলতঃ স্বাধীন বাংলাদেশের ‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ ।
তাই তাজউদ্দীন আহমেদের জীবন নিয়ে সৎ ও সম্পূর্ণ হতে হলে ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ কে বুঝতেই হবে। কেনো মুজিব হত্যাকান্ডের পর পরই রেডিও ঘোষনায় ‘পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ’ হয়ে গেলো ‘ ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ’ -কেনো স্বীকৃতি সহ পাকিস্তান থেকে বিশেষ বিমানে ক্ষুদ্র অস্ত্রের চালান এলো, কেনো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো খুনী সরকারকে তড়িৎ স্বীকৃতি দিলো? কেনো ভারত আশ্চর্য্যজনক ভাবে চুপ থাকলো!
সুহান রিজওয়ান এর ‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’ এ মেজর ফারুক চরিত্র এসে উপস্থিত হয়েছে ৭৫ এর জুলাই এর এক দুপুরে যেদিন তাজউদ্দিন আহমেদ দৌড়ে গিয়েছেন শেখ মুজিবের কাছে- কারো কাছ থেকে তাকে হত্যা করার চক্রান্ত শুনে সতর্ক করে দেয়ার জন্য। তাজউদ্দীন আহমেদ বের হওয়ার সাথে সাথে শেখ মুজিবের বাড়ির সামনে থেকে সরে যায় বুশ শার্ট আর লুঙ্গী পড়া এক তরুন যে নজরদারী করছে এই বাড়ি কয়েকদিন থেকে। সেই মেজর ফারুক!
এরপর সুহান লিখেন আগের বছরের সেনাবাহিনী কর্তৃক অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের কাহিনী। ফারুকের নেতৃত্বাধীন বাহিনী নারায়নগঞ্জে অস্ত্র উদ্ধার করেছিলো আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছ থেকে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে সেই অভিযান স্থগিত হয়ে গেলে ফারুক ক্ষুব্দ হন আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবের উপর। ক্ষোভ বাড়তে বাড়তে এক সময় তার মনে হয় শেখ মুজিবকে সরিয়ে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। তারপর তিনি কথা বলেন মেজর রশীদের সাথে, রশীদ যোগাযোগ করেন মুশতাকের সাথে। একবার সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমানের সাথে ও তারা কথা বলেন। জিয়া কৌশলগত ভাবে চুপ থাকলে তারা ভরসা পান। সদ্য চাকরীচ্যুত আরো কিছু মেজর (ডালিম, নূর, শাহরিয়ার) এই চক্রান্তে যোগ দেন এবং ১৫ আগষ্ট ভোরবেলা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়।
যে হত্যাকান্ডের মাধ্যমে একটা রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্র বদলে দেয়া হয়, আন্তর্জাতিক অবস্থান পাল্টে যায়, পরবর্তী পনেরো বছরের জন্য সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসে, ধর্মীয় রাজনীতি ফিরে আসে, যুদ্ধাপরাধীরা মুক্তি পেয়ে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রন করা শুরু করে সেই হত্যাকান্ড কোন একজন বা একদল মেজরের কাজ!
বহুদিন ধরে আরো অনেক মিথ্য গল্পের মতো এই গল্প ও আমাদের শুনানো হয়েছে। মেজর ডালিম, মেজর ফারুকেরা স্রেফ ব্যক্তিগত ক্ষোভ মেটানোর জন্য এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে!
দুঃখজনকভাবে সুহান নিজে ও এই ফাঁদে পা দিয়েছেন।
অথচ তথ্যসূত্র হিসাবে তিনি যেসব বইয়ের উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে মেজর ডালিমের ‘ যা দেখেছি, যা বুঝেছি, যা করেছি’ আছে। ডালিমের স্বীকারোক্তিতেই পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা সেনাবাহিনীর অফিসারেরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে যুদ্ধ করতে অসন্তুষ্ট ছিলেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্ণেল ওসমানী প্রাক্তন সেনাকর্মকর্তা হলে ও তিনি আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্য ছিলেন। তারা বরং চাচ্ছিলেন মেজর জিয়ার নেতৃত্বে ‘ওয়ার কাউন্সিল’। এই চিন্তা থেকে সেক্টর কমাণ্ডারদের জরুরী সভা ও ডাকা হয়েছিলো কিন্তু খালেদ মোশারফের বাধার মুখে সেনা কর্মকর্তাদের ‘ওয়ার কাউন্সিল’ আর হয়ে উঠেনি। কিন্তু স্বাধীনতার পর পর ১৯৭২ সালেই ‘সেনা পরিষদ’ নামে তারা একটা গোপন সংস্থা গড়ে তোলে পাকিস্তান মডেলে সেনাস্বার্থ সংরক্ষণের জন্য রাজনৈতিক সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে।
এছাড়া ও আরো বহু তথ্য প্রমান আছে এই হত্যাকান্ডের পেছনে আন্তর্জাতিক সংযোগের, পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার।
পনেরো আগষ্টের হত্যাকান্ডকে ‘সামান্যকরন’ এর বিষয়টা না ঘটলে ‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’ আমার ব্যক্তিগত ভালো লাগার তালিকায় একেবারের শুরুর দিকেই থাকতো।
ভরসা করতে পারি, একজন সামান্য পাঠকের এই অনুভূতি লেখক সুহান রিজওয়ানকে স্পর্শ করবে।
মন্তব্য
১৫ই আগস্টকে সামান্যকরনের ত্রুটিকে সামান্য হিসেবে দেখতে পারছি না।
পড়ার সময় আমার এই ব্যাপারটি মাথায় আসেন। আপনার পর্যবেক্ষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো বিশ্লেষন মোরশেদ ভাই । বইটা এখনো হাতে পাই নি । পড়ার আগ্রহ রইলো ।
এই মতবাদটা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মনে বেশ ভালোভাবে গেঁথে গেছে । ইচ্ছে করেই এই ধারনাটা ঢোকানো হয়েছে যাতে এর আরো শাখা প্রশাখা গজায় ।
কারা খুন করেছে ? ; উঃ কিছু মেজর ?
-- > কেন খুন করেছে ? ; উঃ ব্যক্তিগত ক্ষোভ
--- > কেন এই ব্যক্তিগত ক্ষোভ ? ; উঃ আওয়ামিলীগের দূর্নীতি ।
----- > কারা এই মেজর ? উঃ এদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ।
-------> ও মুক্তিযোদ্ধারা মুজিবকে খুন করলো ?, কেন ? উঃ আওয়ামিলীগতো মুক্তিযুদ্ধ করেনি । বরং মুক্তিযুদ্ধের পর দুর্নীতি করেছে । তাতে বিরক্ত হয়েই ।
এভাবেই বেড়ে চলে মুজিব হত্যার অতি সরলীকরণ এবং জায়েজ করার প্রচেষ্টা ।
এ বিষয়ে কিছু রেফারেন্স দিলে ভালো হয় [নেহায়েতই পড়ার কৌতহল থেকে ]
========
মামুনুর রশীদ
মেজর ডালিমের 'যা দেখেছি, যা বুঝেছি, যা করেছি’ ।
ডঃ মুনতাসীর মামুনের ' বাংলদেশী জেনারেলদের মন'
এ ছাড়া সুহান রিজওয়ানের উপন্যাসের পেছনে একটা বইয়ের তালিকা আছে। ওগুলো ধরে ধরে পড়া যেতে পারে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ফারুক রশিদ মুক্তিযুদ্ধ করেনি মামুনুর রশীদ ভাই ।
ফারুক আবুধাবি থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেয় বিজয়ের দিন তিনেক আগে। রশিদ কাশ্মীর থেকে এসে যুদ্ধে যোগ দেয় নভেম্বরে। পরবর্তী কর্মকাণ্ড এই কথাই প্রমাণ করে যে বিজয়ের হাতছানি দেখেই তারা এই যুদ্ধে জয়ী পক্ষে থাকতে চেয়েছিলো।
প্রথমেই মোরশেদ ভাইকে একটি নির্মেদ আর অকপট প্রতিক্রিয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
সরাসরি পাঠ প্রতিক্রিয়া যারা জানান, ভালো মন্দ বাতলে দেন, তাদের সাথে মিথস্ক্রিয়াটা অনলাইনে খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটা ব্যাপার। বলতে গেলে অফলাইনের সাথে প্রতিযোগিতায়, আমার ধারণা, অন্তত এই জায়গায় অনলাইনের লেখকেরা এগিয়ে থাকবেন যে- তারা অনেক বেশি সমালোচনা সহ্য করতে পারেন। যে পাঠক ত্রুটি নির্দেশ করেন, আহত বোধ করবার পরিবর্তে তার মন্তব্য পেয়েই লেখক সবচেয়ে বেশি খুশি হন। এই যেমন এখনো, মোরশেদ ভাইয়ের প্রতিক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় উঠে আসায় লেখক হিসেবে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে আরো সচেতন হবার প্রয়োজনও বোধ করছি নতুন করে।
উপন্যাসে, আমার ধারণা, মুজিবহত্যার পূর্বের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত বিবিধ ইঙ্গিতের কিছু উদাহরণ সচেতন ভাবে দেয়া আছে। আবদুল গাফফার চৌধুরী এবং শেখ মণির মাঝের আলাপচারিতায় সেই ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট বলেই মনে হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তো সিআইএ’র সেট প্যাটার্নের আদর্শ উদাহরণ। তেমন ভাবেই প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখিত মধ্যপ্রাচ্যের বিরোধিতা, মার্কিন লবির সাথে মোশতাকের সংশ্লিষ্টতা, অথবা পাকিস্তানের ভুত ঘাড়ে নিয়ে ঘোরা গোষ্ঠী- আমার ধারণা এই বিষয়গুলোর প্রত্যেকটিরই অল্পবিস্তর উল্লেখ রয়েছে উপন্যাসে।
শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড একটি দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফল, ৭৫’এর মাঝে এসে উপন্যাসে যে ফারুকের আগমন, সে সেই ষড়যন্ত্রের একটি গুটি মাত্র। তার এবং তার মতো আরো কিছু মেজরের ব্যক্তিগত ক্ষোভকে পুঁজি করে ইতিহাসের সেই কৃষ্ণতম সময় ( যার পেছনে ক্রিয়াশীল সিয়াইএ, পাকিস্তান লবি ইত্যাদি গং) ১৫ই আগস্ট ঘটিয়ে নেয় বাংলাদেশের চরিত্র বদলে দেয়া হত্যাকান্ডটি।- আপনার এই অনুধাবনটি যদি আমি উপন্যাসে প্রকাশে ব্যর্থ হই, তবে নতমুখে সেই ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। ছড়ানো পটভূমিতে দীর্ঘ সেই ষড়যন্ত্রের বয়ান আনতে অক্ষম হওয়াটাকে নতুন লেখকের ব্যর্থতা বলেই জানবেন। ভবিষ্যতে হয়তো কোন লেখক সক্ষম হবেন ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকাণ্ডটি উপস্থিত করবেন উপন্যাসের বিষাদমাখা স্বাদে, আমরা বরং অপেক্ষায় থাকবো সেইদিনের।
শেষ কথা হচ্ছে, আমার ধারণা, উপন্যাস পাঠকের হাতে চলে যাবার পর সেটা আর কেবল লেখকের থাকে না। পাঠক যেভাবে সেই উপন্যাসের অর্থ করবেন, সেটিকেই যথার্থ বলে মেনে নিতে হবে। একজন পাঠকও যদি দাবি করেন ইতিহাসের ছবি আঁকতে গিয়ে ক্যানভাসে ঐতিহাসিক একটি ঘটনার আঁচড় পড়েছে লঘু হয়ে, তবে বুঝতে হবে লেখক প্রকৃত অর্থে ব্যর্থ।
অগ্রজ এবং শ্রদ্ধেয় হাসান মোরশেদ ভাইয়ের অনুযোগ তাই আজ লেখক সুহান নতমুখে মেনে নিলো।
এই চমৎকার ফিডব্যাক আর আলোচনা, পাঠক আর লেখকের মধ্যে এই চমৎকার সম্পর্ক অফলাইনের লেখকেরা সম্ভবত ধরতেই পারবেন না।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভয়ে ছিলাম, লেখক না আবার সমালোচনামুখর পাঠককে দৌড়ানি দেন
হ্যাঁ, আব্দুল গাফফার চৌধুরী এবং শেখ মণির একান্ত বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের আভাস পাওয়া যায়। এছাড়া আলাউদ্দিন এসে তাজউদ্দিন আহমেদকে জানায় ক্যান্টনমেন্ট এ ষড়যন্ত্র চলছে।
কিন্তু এগুলোর পারস্পরিক সংযোগটা ঠিক যেনো প্রকাশিত নয়। ফারুকের হঠাৎ উদয়, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান স্থগিত হওয়া নিয়ে ক্ষোভ, রশিদের সাথে যোগাযোগ, রশিদের মোশতাক সংযোগ, জিয়াউর রহমানের সাথে কথা বলা- এগুলো আলাদা আলাদা আছে কিন্তু আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, বুদ্ধিবৃত্তিক ইন্ধন, সামরিকায়নের বাসনা এসবের পারস্পরিক যোগাযোগ স্পষ্ট হলে বোধ হয় আরেকটু সহজ হতো।
যাহোক, লেখককে আবারো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সময় করে জবাব দেবার জন্য।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সুহান, একটা উপন্যাস প্রকাশিত হয়ে গেলে তাকে আর সংশোধন করা যাবে না এমনটা কিন্তু নয়। এই উপন্যাসের পরবর্তী সংস্করণে এটা শুধরে নেবার অবকাশ কিন্তু আছে। তুমি সেই সুযোগটা নিতে পারো।
উপন্যাসের এই অংশটা নিয়ে যে ভুল বোঝার অবকাশ থেকে যাচ্ছে সেটা আমি উপন্যাস প্রকাশের পূর্বে আমার পাঠজনিত প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত যোগাযোগের অংশ বলে সেটা এখানে উল্লেখ করছি না। হয় সুহান সম্ভবত সময়াভাবে সেটা খেয়াল করতে পারেনি নয়তো সেটা শোধরানোর আর সময় ছিল না।
তাজউদ্দিন কন্যার সাথের অংশটুকু বাহুল্য মনে হয়েছিল - আগেও, এখনও।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ পান্ডবদা। ভুল সংশোধনের চেষ্টায় কোনোই খামতি নেই, আশা করি পান্ডুলিপি পড়ার বিভিন্ন পর্যায়ে আপনার সাথে আলোচনা থেকে সেটি অন্তত বোঝাতে পেরেছি। সমস্যা হচ্ছে, এই পাঠ প্রতিক্রিয়ায় মোরশেদ ভাই নির্দেশ করছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় "লঘুকরণের" দিকে। আমার অক্ষমতাই হবে, নানাবিধ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আর ইন্ধনের বিষয়টি আমি একাধিক পাঠকের কাছে স্পষ্ট করতে পারিনি।
আপনার পরামর্শ মাথায় থাকলো পান্ডবদা। এবং এ সংক্রান্ত আলোচনার জন্যে আপনার কাছে সময় চেয়ে রাখলাম। ব্যক্তিগত মেসেজে বাকি কথা হবে
বইটা পড়েছি বেশ কিছুদিন হলো। সবচেয়ে ভালো হতো সঙ্গে সঙ্গে একটা রিভিউ লিখে ফেলতে পারলে, কিন্তু নানান ঝামেলায় হয়ে ওঠেনি। আপনার অবজার্ভেশনের সঙ্গে আমার অনেকটা মিলে গেলো। আশাকরি বিস্তারিত একটা লেখাই লিখবো।
যাহোক, আপাতত বলে রাখি, মোটের ওপর 'সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ' ভালো লেগেছে আমার।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সুহান প্রতি উত্তরে যেটা বলেছে আন্তর্জাতিক এবং আভ্যন্তরীণ নানান ষড়যন্ত্রের ইংগিত উপন্যাসে দেওয়া আছে। এবং এটা সত্যি যে পাঠকভেদে এই ইংগিত যথেষ্ট না হওয়ার আশঙ্কা আগে থেকে জানা থাকলে লেখক এই গুরূত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়তো অন্যভাবেও লিখতে পারতো।
কিন্তু "পনেরো আগষ্টের হত্যাকান্ডকে ‘সামান্যকরন’" শুনলে কেউ বুঝি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে 'সামান্যকরণ' করছে বলে মনে হয়। সেই সমালোচনা বড়ো নির্মম।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হাতে পাইনাই এখনো। পাইলেই পইরালবাম।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ঘটনা হলো এই বইয়ের জন্য যে পরিমান দৌড় ঝাপ করছি ততই বইটা আমার কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। বাতি ঘরে কপি আসে বাট আমি যাওয়ার আগে ফুরুত! আবার অপেক্ষা!!!
এই বইটা নিয়ে যত লেখা বের হচ্ছে ততই আগ্রহ এতো বেশী পরিমানে বাড়ছে বলার মতো না!যাক নিজে পড়ে দেখি কেমন হলো দেন মন্তব্য।
-------------
রাধাকান্ত
নতুন মন্তব্য করুন