। । দাসব্যবসা বিলুপ্তির দুশো বছর:: শেষপর্ব । ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শনি, ২৪/০৩/২০০৭ - ১০:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


[রং=#666666] এ বছর, 2007 সালে উদযাপিত হচ্ছে বৃটেনে দাসপ্রথা বিলুপ্তির 200 বছর। মিডলসেক্স বিশ্বিবদ্যালয়ের আফ্রিকান স্টাডিজ বিভাগের এর ড: হাকিম আদি 'রসাথে এ সংক্রান্ত একটি আলাপচারিতা প্রকাশিত হয়েছে 'এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল' এর মাসিক ম্যাগাজিনে । এমনেষ্টি'র অনুমতিক্রমেই আলাপচারীতার বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে ।
[/রং]

প্রথম পর্ব
দ্্বিতীয় পর্ব

------------------------------------------------

এমনেষ্টি:: তাহলে আমরা বলতে পারি, মুলত: জনসচেতনতাই সরকারকে বাধ্য করেছিল দাসব্যবসা নিষিদ্ধ করতে?

ড: হাকিম :: গনজাগরন নি:সন্দেহে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলো । তবে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে, এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে বৃটিশ সরকারের নিজস্ব কিছু হিসাব -নিকাশ ছিলো ।

এমনেষ্টি:: হিসাব-নিকাশ? কি রকম?

ড: হাকিম:: দাসরা ছিলো বৃটিশদের জন্য খুবই লাভজনক পন্য । নিজেদের প্রয়োজন মিটানোর পর এ পণ্য তারা বিক্রী করতো ফ্রান্স , স্পেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দের কাছে । অজেয় সামরিক শক্তির কারনে দাসব্যবসায় তাদের ছিলো একচেটিয়া অধিকার ।
1790 ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে প্রশ্ন উঠতে থাকে -বৃটেন কেনো তার প্রতিদ্্বন্ধীদের দাস সরবরাহ করবে? বৃটেনের নিজেদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক দাস ততদিনে সংগ্রহ হয়ে গেছে যারা পরবতর্ী কয়েক প্রজন্ম ধরে সেবাদান করতে থাকবে ।
সে কারনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এরকম যে , বৃটেন দাস ব্যবসা বন্ধ করলে অন্য কেউ এ ব্যবসা শুরু করতে পারবেনা ।
আরেকটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও ছিলো এর পেছনে । যেহেতু দাসব্যবসা বন্ধ করার একটা 'প্রো-পিপল' দাবী ছিলো সে সময়ে , আর ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিলো নাগরিকদের নৈতিক সমর্থন ।তাই দাস ব্যবসা নিষিদ্ধকরনের ঘোষনা ছিলো অনেকটাই সাধারন মানুষকে পক্ষে আনার একটা রাজনৈতিক কৌশল ।
আরেকটা বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা । বিভিন্ন বৃটিশ কলোনীতে ততোদিনে দাসবিদ্্রোহ শুরু হয়ে গেছে । 1790 এর হাইতি বিদ্্রোহে দাসেরা বৃটিশ সৈনিকদের পরাজিত ও বন্দী করেছিলো ।
মুলত: এসব কিছু মিলিয়েই বৃটিশ এস্টাবলিশমেন্ট তাদের পলিসি বদলানোর চিন্তা ভাবনা করতে বাধ্য হয় । অমানবিক দাসব্যবসা নিষিদ্ধ করে বরং মানবিক ক্যামোফ্লজে শ্রমিক আমদানীর ব্যবস্থা করা হয় দরিদ্্র দেশ গুলো থেকে । আর ইতিমধ্যে এশিয়া আর আফ্রিকার দেশ গুলোতো দরিদ্্র হয়েই গেছে । এবার আর জোর করে দাস আনতে হবেনা, শ্রমিকেরা স্বেচ্ছায় এসে শ্রম দান করবে ।

এমনেষ্টি:: দাসব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষনা র 200 বছর পুর্তিতে, পুরো ঘটনাকে আমরা কিভাবে মুল্যায়ন করতে পারি?

ড: হাকিম :: যারা ব্যবসা করেছে, গল্পটা তাদের কাছ থেকে না শুনেআরেকটু গভীরে ভাবতে হবে । ভাবতে হবে, দাসব্যবসা কি আসলেই বন্ধ হয়েছে?বৈধ এবং অবৈধভাবে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের গরীবদেশের মানুষদের কে এদেশে আসার যে সকল সুযোগ দেয়া হচ্ছে, তার পেছনের উদ্দেশ্য টা কি? প্রশ্ন তোলতে হবে গোটা আফ্রিকা মহাদেশকে নি:স্ব করে ফেলার, কয়েক কোটি মানুষকে দাস বানিয়ে একটা জাতি গোষ্ঠির স্বকীয়তা ধ্বংস করার ক্ষতিপুরন কেনো দেয়া হবেনা?
ভুলে যাওয়া অনুচিত হবে যে মানুষ ইতিহাসের অংশ । আজকের দিনটা কেবল গতকালের ধারাবাহিকতা মাত্র । তাই গতকালের হিসাব না চুকিয়ে আজকের আমরা একটা সুন্দর আগামীর দিকে এগিয়ে যেতে পারবোনা ।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।