যুদ্বাপরাধীদের বিচার না হওয়া||অপরাধপ্রবন সমাজের গোড়াপত্তন

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ২৭/০৪/২০০৭ - ৮:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


একটা সমাজের ঠিক কত অংশ মানুষ অপরাধী হলে , গোটা সমাজ অপরাধপ্রবন হয়ে উঠে?
সমাজবিজ্ঞান কিংবা সাইকোলজি নিয়ে যারা কাজ করেন, নিখাদ তথ্য তারা দিতে পারেন । আমি বানিজ্য অনুষদের মানুষ । স্রেফ ব্যক্তিগত আগ্রহ এই সব ভাবনার জন্ম দেয় ।
বিশ্বের শীর্ষদুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র চিহ্নিত হতে যেহেতু বাংলাদেশের সকল নাগরিকের দুর্নীতিবাজ হতে হয়নি, তাই উপলব্দি হয়- একটা ক্ষুদ্র অপরাধী গোষ্ঠি ও যদি ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে উঠে, তারা বুঝে ফেলে বিচারের মুখোমুখি তাদের হতে হবেনা- তাহ্লে গোটা সমাজ ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয় ।

মুক্তিযুদ্ধের সময়টাতে সংগঠিতভাবে হত্যা, ধর্ষন, লুটতরাজ সক্রিয় ছিলো কতোজন ? ধরে নিচ্ছি সংখ্যাটা ৫০ হাজার ।
তাহলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার যাত্রা শুরু করেছিল ৫০ হাজার চিহ্নিত অপরাধীকে নিয়ে । ১৬ ই ডিসেম্বরের পর পর হয়তো কয়েক হাজার মারা গেছে মুক্তিযোদ্ধা ও ভুক্তভোগীদের হাতে ।
প্রথমে ৩৬ হাজার দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো । আমেরিকা , চীনের চাপ ও পাকিস্তানে আটক বাংলাদেশীদের মুক্তির বিবেচনায় সাধারন ক্ষমা করা হলো ২৬ হাজারকে । এরা কিন্তু নির্দোষ প্রমানিত নয়। অপরাধী হিসেবেই ক্ষমা পেয়েছে । এই ২৬ হাজার এসে মিশে গেলো সমাজে ।
অপরাধীদের সর্দার গুলো পালিয়ে গেলো পাকিস্তানে । কারাগারে র‌য়ে যাওয়া ১০ হাজারের বিচারকাজ চলছিলো, কিছু সংখ্যকের রায় হয়ে শাস্তি ও ভোগ করছিলো ।
এই ১০ হাজার গুরুতর অপরাধী ও বের হয়ে এলো ৭৫ এর মুজিব হত্যাকান্ডের পর । কে জানে, যে কয়টা কারনে মুজিব হত্যা জরুরী হয়ে পরেছিলো, ১০ হাজার দাগী অপরাধীর মুক্তি ও তার মাঝে একটি কিনা ?
সাধারন ক্ষমার ২৬ হাজার, জিয়াউর রহমানের দালাল আইনের বাতিলের ১০ হাজার আর জিয়া-মোশতাক আমলে পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা সর্দার গন----- অপরাধীদের নেটওয়ার্ক পুর্নগঠিত হতে সময় লাগেনি সাড়ে তিন বছর ও ।
শুধু পুর্নগঠিত হওয়া নয়, এই ৩৬ হাজার অপরাধী পুর্নবাসিত হতে হতে চলে গেছে রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রনে, যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই তাদের চরম অপরাধ ।

এও প্রমানিত যে, নিরপরাধ সাধারন মানুষ সংগঠিত থাকেনা, অপরাধীদের মতো । নিরপঅরাধ মানুষ ও ক্রমশঃ অপরাধী হয়ে উঠতে উত্তসাহী , যখন তার সামনে উদাহরন স্থির হয়ে থাকে । রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত সবচেয়ে চরম অপরাধের ও যখন শাস্তি হয়না, রাস্তায় থু থু ছিটানোর মতো নাগরিক অপরাধে কি আসে যায়?

*****
পাঠক বিভ্রান্ত হবেননা । উপরের ছবি কোনো ইসলামী ব্যাক্তিত্বের নয়, দুই যুদ্বাপরাধীর ।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।