'ধর্মানুভূতির উপকথা' || ধর্মের ষাড় কিংবা এঁড়ে ও বকনাবাছুরগনের সম্মানে

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: সোম, ২১/০৫/২০০৭ - ৮:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষের ধর্মানুভূতিগুলো অভিন্ন নয়,যেহেতু ধর্ম একটি নয়, অজস্র ধর্মবিশ্বাসে পৃথিবী বিব্রত বিক্ষত।

একেক ধর্মের মানুষের ধর্মানুভূতি একেকরকম,আবার একই ধর্মের ভেতরে রয়েছে বহু উপগোত্র, এবং বিভিন্ন উপগোত্রের ধর্মানুভূতি বিভিন্ন । প্রতিটি ধর্মেই দেখা যায় সাধারন বিশ্বাসীরা ধর্মের মুলকথাগুলো ঠিকমতো জানেনা,তারা ধর্মে স্নগযোজিত করে নানা নতুন বিশ্বাস,যেগুলোর সাথে ধর্মের মুল বিশ্বাসগুলোর সম্পর্ক নেই।
অজস্র ব্যাপার জড়ো হয়ে মানুষের মনে সৃষ্টি হয় একধরনের যুক্তিরহিতবোধ যাকে বলা হয় ধর্মানুভূতি ।

এই ধর্মানুভূতিতেই আহত হয়,এর গায়েই সাধারনত আঘাত লাগে । ধর্মানুভূতিতে যে আঘাত লেগেছে,তা যে আহত হয়েছে,তা বোঝার ও পরিমাপ করার কোনো উপায় নেই। অযৌক্তিক ব্যাপারকে যুক্তির সাহায্যে পরিমাপ করা যায়না।
বিভিন্ন সমাজ ও রাষ্ট্র এখন যেভাবে চলছে তাতে প্রতিটি ধার্মিকের ধর্মানুভূতি প্রতি মুহুর্তে আহত হতে পারে এবং হচ্ছে ।পৃথিবীতে সম্ভবত এখন বিশুদ্ধ ধার্মিক নেই,থাকলে তাদের ধর্মানুভূতি খুবই আহত হত।

যেমন, মন্দির দেখে আহত হতে পারে একজন ধার্মিক মুসলমানের ধর্মানুভূতি, কেননা তার বিশ্বাসের জগতে মন্দির থাকতে পারেনা; আবার মসজিদ দেখে আহত হতে পারে একজন ধার্মিক হিন্দুর ধর্মানুভূতি,কেননা তার বিশ্বাসে মসজিদ অবানচিত । একজন মমিন মুসলমান যদি দাবী করে যে মন্দির দেখে তার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে,তাই মন্দিরটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে,তখন রাষ্ট্র কি করবে; একজন বিশুদ্ধ হিন্দু যদি দাবী করে যে মসজিদ দেখে তার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে,তখন কি করবে রাষ্ট্র? খাঁটি/মমিন/বিশুদ্ধ ধার্মিকের কোমল অনুভূতি আহত হতে পারে প্রতি মুহুর্তেই; টেলিভিষন,সিনেমা,বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের,সংসদে নারীদের দেখে আহত হতে পারে ধর্মানুভূতি , এবং সে এসব নিষিদ্ধ করার জন্য আবেদন জানাতে পারে ।

পৃথিবী ও গ্রহগুলো ঘোরে সুর্যকে কেন্দ্র করে,মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে 'বিগব্যাং' বা মহাগর্জনের ফলে,সেটি হঠাৎ সৃষ্টি হয়নি,হয়েছে আজ থেকে একহাজার থেকে দুহাজার কোটি বছর আগে,তারপর থেকে সম্প্রসারিত হয়ে চলছে,সূর্য আর গ্রহগুলো উদ্ভূত হয়েছে সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে,মানুষ স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে আসেনি,বিবর্তনের ফলে বিকশিত হয়েছে বিশ থেকে চল্লিশ লক্ষবছর আগে,পাহাড়্গুলো পেরেক নয় ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক সত্য বিদ্যালয়ে পড়ানো হয়;- এগুলোতে প্রচন্ডভাবে আহত হতে পারে ধার্মিকদের ধর্মানুভূতি ,তারা এগুলো নিষিদ্ধ করার জন্য দাবী জানাতে পারে ।

তখন রাষ্ট্র কি করবে? রাষ্ট্র কি নিষিদ্ধ করবে বিজ্ঞান?

***হুমায়ূন আজাদের একটি প্রবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।