এইসব 'ঘাড়ত্যাড়ামী' ও সামহোয়ারইনে মিথস্ক্রিয়া

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: সোম, ০৪/০৬/২০০৭ - ৮:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তখন আমরা কজন বছর একুশের বিপর্যস্ত তরুন । বিপর্যস্ততা আমাদের বোধ ও বুনন নিয়ে । সহজে মুক্তি খুঁজে যারা, সেই বন্ধুদের কেউ কেউ মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে গেছে । আমরা ও অভিজ্ঞতা নেই কিন্তু মুক্তি পাইনা, এই সব ঠিক আপনে মনে হয়না, ভেতরে অন্য কেউ মন্ত্রনা দেয় অন্য কিছু করার ।

আমরা ক'জন সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু করি ছোটগল্পের কাগজ 'সহবাস' । জড়িত সকলে তখন পুরোদমে বেকার । বাপের ও পয়সা নেই দেদার । সেই ৯৭ সালে একফর্মার কাগজ বের করতেই খরচ চারহাজার টাকা!
টাকা তুলে ফেলা যায়, জটিল কোনো সমস্যা নয় । নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো এই তরুনের দলকে শহর সিলেটের লোকজন মোটামোটি 'ভালো' বলেই জানে । দু চারজন ব্যাবসায়ীর কাছে বিজ্ঞাপনের জন্য গেলেই খরচ উঠে আসে,এমনকি দু চার প্যাকেট বেন্সনহেজেজ এর দাম ও বের করে ফেলা যায় ।
তবু আমরা 'ঘাড় ত্যাড়ামী' করি । নিজেদের টাকা নেই, তবু আমরা বিজ্ঞাপন নেবোনা । ছোটগল্পের কাগজের পেছনে নারকেল তেলের কিংবা ব্রিটিশ টোব্যাকোর বিজ্ঞাপন নেবোনা আমরা ।
এই 'ঘাড়ত্যাড়ামী' বহাল রাখতে গিয়ে বদ্ধ বেকার আসিফ মনি রিক্সা ভাড়ার টাকা বাঁচায়, পুরান লেন থেকে শিবগঞ্জ হেঁটে হেঁটে আসে(মনি এখন বিদেশী জাহাজ কোম্পানীর বড়কর্তা, ডলারে বেতন গুনে), সিগারেটখোর বন্ধুরা গোল্ডলিফ এর বদলে বিড়ি কেনে (বিশ্বাস হয়?), একজন তার প্রেমিকার কাছ থেকে জন্মদিনের উপহারের বদলে কাগজ কেনার টাকা নেয়!

শুভাকাংখীরা ভুঁরু কোঁচকান--' এরকম কতদিন? বিজ্ঞাপন না নিয়ে কতোদিন চালাবে হে?
আমরা ঘাড়ত্যাঁড়া রা হাসি-- 'যতোদিন পারি । বেঁচে থাকার জন্য লেখালেখি করা তো আবশ্যক নয় । যেদিন পারবোনা সেদিন আর করবোনা । তবে করবো যতদিন, ততোদিন আপোষ নয়, এক বিন্দু ও'

-------------------------------------------------------------

জনপদ শ্বাপদসংকুল হলে একদল শ্বাপদ খেদানোর জন্য অস্ত্র হাতে নেন। যে কোনো অস্ত্র হাতেই যারা শ্বাপদ খেদাতে এগিয়ে আসেন, সাহসী তারা ।
কিন্তু জনপদের অভিভাবক যদি নিজেই শ্বাপদের কাছে সবকিছু নিলাম করে দেন তাহলে? তাহলে ও ঘাড়ত্যাঁড়া কেউ কেউ শ্বাপদ ও শ্বাপদের পৃষ্ঠপোষকদের মোকাবেলা করেন ।

আরেকদল সাহসী মানুষ-শ্বাপদ সংকুল জনপদ ছেড়ে চলে যায় । ভয়ে নয় ঘৃনায় । তারা নতুন অন্য কোথাও যায়, আবাদ করে, স্বপনের বীজ বুনে, নিজেদের মতো করে গড়ে তুলে নিরাপদ জনপদ যেখানে শ্বাপদের প্রবেশাধিকার নেই ।

*** এই সব বিনাশ ও বিন্যাসের গল্প এইভাবে চলতেই থাকে,যতোদিন না মানুষ ফুরিয়ে যায় ।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।