দ্য ব্ল্যাক বুক

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ০৪/১০/২০০৮ - ৪:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ওরহান পামুকের এই বইটি আমার প্রিয় অর্ধসমাপ্ত উপন্যাসগুলির একটি। সমাপ্ত করার পরেও একই মুগ্ধতাবোধ থাকবে কি না জানি না। হয়তো অসমাপ্তির অপূর্ণতাবোধই মুগ্ধতার ছদ্মবেশে আমার মনে ধূলোর মতো জমে আছে।

আমি নিজেকেই প্রশ্ন করতে পারি, অর্ধসমাপ্ত একটি উপন্যাস সম্পর্কে কোন কিছু লেখার ঔচিত্য নিয়ে। হয়তো আমি যতটুকু পড়েছি, তার পর থেকে শেষটুকু পর্যন্ত উপন্যাসটি পুরোদস্তর অশ্ববিষ্ঠা, হয়তো আমি যতটুকু পথ পেরিয়েছি ঠিক ততটুকুই শেফালি-আবৃত ছিলো। কে জানে?

আমার ভাবনাটুকু তাই উপন্যাসের পঠিতাংশটি নিয়েই, যতটুকু অপঠিত, তা চাঁদের উল্টোপিঠের মতোই দৃশ্যাতীত।

উপন্যাসটি একটি দম্পতিকে নিয়ে শুরু, তাদের নাম গালিপ ও রুইয়া। রুইয়া গালিপকে ছেড়ে চলে যায়, প্রায় কোন কিছু না জানিয়ে। বিস্মিত ও আহত গালিপ রুইয়াকে খুঁজতে শুরু করে স্থানে-অস্থানে।

উপন্যাসের জোড় পরিচ্ছেদগুলি সবই গালিপ ও রুইয়ার বন্ধু ও আত্মীয় কলামিস্ট চেলালের পত্রিকায় লেখা কলাম। সেখানে চেলাল ইস্তানবুল শহরের স্মৃতি ও বর্তমান নিয়ে অদ্ভূত মোহনীয় সব কলাম লেখে।

সেই কলামগুলির মধ্যে গালিপ রুইয়ার অন্তর্ধানের আভাস খুঁজে পায়। সে রহস্যভেদে বেরিয়ে পড়ে। বেজোড় পরিচ্ছেদগুলি গালিপের এই শার্লকপনার বর্ণনা, আর জোড় পরিচ্ছেদে চেলাল এঁকে চলে একটি শহরের অসংখ্য ছবি।

বইটির সেই জোড় পরিচ্ছেদগুলিই মনে দাগ কেটেছিলো খুব। এক একটি বাক্য মূর্তি হয়ে ভেসে ওঠে মনে। পামুকের আরেকটি উপন্যাস, মাই নেম ইজ রেড পড়েছি শুধু, কিন্তু অসমাপ্ত ব্ল্যাক বুক তার চেয়েও গভীর কর্ষণচিহ্ন তৈরি করেছে স্মৃতিতে।

দেশ ছেড়ে আসার আগের রাত পর্যন্ত পড়ছিলাম দ্য ব্ল্যাক বুক। এখনও তার অপঠিত, অসমাপ্ত পরিচ্ছেদগুলি আমার অবর্তমানেরই সমান্তরাল। এই অপঠনের কাতরতাই হয়তো আমার ভেতরে ভালোলাগাটুকু বাঁচিয়ে রেখেছে।


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍অজস্র অর্ধসমাপ্ত গল্পের লেখকের মুগ্ধতা তো থাকবেই অর্ধসমাপ্ত উপন্যাস নিয়ে হো হো হো

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অমিত আহমেদ এর ছবি

কমেন্ট অব দ্য ইয়ার!


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সবজান্তা এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হা হা হা হা... কমেন্টে দারুন মজা পাইলাম।
কিন্তু বইটা পড়া হয় নাই... মনে তো ধরায়া দিলেন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ভাঙ্গা মানুষ [অতিথি] এর ছবি

এ যে রহস্য কাহিনীর উল্টো! শেষটা না পড়িলে গ্রন্থ হিট; পড়িলে রস কমিয়া যায়!!!

দময়ন্তী এর ছবি

"কারাকিতাপ' সত্যিই একটি উত্কৃষ্ট বই ৷ শেষ না করলে আপনিই মিস করবেন ৷ আমার ব্যক্তিগত ধারণা "মাই নেম ইজ রেড' , "স্নো' , "ইস্তাম্বুল' আর "কারাকিতাপ' পরপর পড়লে বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয় ৷ পাশাপাশি একইসময় একটু কোয়েতজি (নাকি কোটজি?) আর গর্ডিমার পড়তে পারলে আরো ভাল ৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কি আশ্চর্য্য! বইটা আমিও অর্ধেকটাই পড়েছি, তারপর আর নিয়ে বসা হয়নি। কেন কে জানে? হয়তো তেমন ভাল লাগেনি বলেই।
বইটির মূল নাম কি "কারাকিতাপ" নাকি? "কালোকিতাব"?

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

রণদীপম বসু এর ছবি

আমি কিছুই বুঝি নাই। তবে এটুকই বুঝেছি যে পোস্ট লেখক এই পোস্টটাকেও অসমাপ্ত রেখেছেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।