একটি আধাসামরিক বাহিনীর সদর দপ্তর কি বিশ্ববিদ্যালয় আর আবাসিক এলাকার মাঝে থাকা খুব জরুরি?

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ২৭/০২/২০০৯ - ৫:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
ক্যান্টনমেন্ট সরিয়ে নেয়ার সমর্থক অনেক, আমি নিজেও। কিন্তু ঐ আব্দারটি পূরণ হবার নয়। গর্দান থেকে মাথা সরে যাবে, কিন্তু রাজধান থেকে ক্যান্টনমেন্ট সরবে না। বেশি বকলে সমস্যা হতে পারে, তাই সামরিকদের আস্তানাবদলের আবদারকে কেটেছেঁটে আদ্ধেকটা করলাম। আধাসামরিকদের আস্তানা, ঐ পিলখানাটিকেই কি বাংলাদেশ রাইফেলসের সদর দপ্তর করে রাখতে হবে?

সামরিক বাহিনীর কর্তাদের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা আর তাদের গোয়েন্দাদের নজরদারির নিদারুণ ব্যর্থতার কারণে সশস্ত্র বিডিআর বিদ্রোহের ৩৩ ঘন্টায় একটি রাজধানী শহরে দু'টি ছাত্রী হল ইভ্যাকুয়েট করতে হয়েছে, পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে কয়েক পর্যায়ের, আটাশ বর্গকিলোমিটার এলাকার নগরবাসীকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে, আর সেই আধাসামরিকদের দমন করার জন্যে পুরোসামরিকদের ট্যাঙ্ক নিয়ে রওনা দিতে হয়েছে সেই সাভার থেকে। আমরা বুঝতে পারলাম, ক্যান্টনমেন্ট আসলে সাভারে হলেও চলে।

সশস্ত্র আধাসামরিকরা এর আগে এই রাজধানী শহরে কী কাজে লেগেছে আর ভবিষ্যতে কী কাজে লাগবে, তার হিসেব নিশ্চয়ই শাসক ও নীতিনির্ধারকদের কাছে আছে, কিন্তু এই শহরের এক প্রকান্ড একটি জায়গা যে তাঁরা জুড়ে বিরাজ করেন, সেটি কি খুব জরুরি?

পিলখানাপিলখানা

পিল ওরফে হাতি পোষার সাধ্য আমাদের নেই ঠিকই, কিন্তু হাতি পোষার নবাবী মেজাজটা আমাদের ঠিকই আছে। কত রকমের শ্বেতহস্তীই তো আমরা পুষি। তারপরও আমি শুধু জ্যামজর্জরিত ঢাকার একজন সাময়িক দূরবর্তী বাসিন্দা হিসেবে হুজুর বাহাদুরদের কাছে করুণ ফকিরি ছোটলোকি আরজ গুজার করি, আপনাদের আধাসামরিকদের শহরের বাইরে নিয়ে যান। ছাত্র-জনগণ পিটাতে হলে দাঙ্গা পুলিশ আছে। ড্যামরা বা বরাবো নিয়ে যান আধাসামরিকদের। বিদ্রোহ ঘন ঘন দমনের প্রয়োজন দেখা দিলে সাভার ক্যান্টনমেন্ট আর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাঝামাঝি রাখুন তেনাদের। প্রয়োজনে তাঁরা ট্রাকে চড়ে ওখান থেকে এসে ছাত্র-জনগণ পিটিয়ে যাবেন। পিলখানাটিকে একটি পার্কে রূপান্তরিত করা হোক, ভেতরের রাস্তা দিয়ে জ্যামগ্রস্ত মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডিবাসী শহরের দক্ষিণদিকে খানিকটা হলেও যাতায়াত করতে পারবে। তাদের হাতি পোষার জন্যে এমনিতেই এক কাচ্চা টাকা বেরিয়ে যায়, জ্যাম বাবদ কিছু তো বাঁচবে? আর জানের ভয় মালের ভয় হয়তো কিছুটা হলেও কমবে।

২.
তানিয়াপার কয়েকজন আত্মীয় ছিলেন দরবার হলে। তাঁদের মধ্যে একজনের লাশ ভেসে এসেছে, বাকিদের কোন খবর নেই, সম্ভবত তাঁরা আর বেঁচে নেই। এই মহাশোকে শুধু অসহায় সমবেদনা জানাই দূরে বসে। পরিজনের মৃত্যুতে কোন সান্ত্বনা হয় না, শুধু চুপ করে পাশে বসে থাকা যায়। তানিয়াপার পাশে বসে থাকা সচলদের মধ্যে আমিও একজন, শুধু এটুকুই জানাই।


মন্তব্য

অমিত এর ছবি

ঠিক এই ব্যাপারটা নিয়েই ভাবছিলাম। আমি শুধু পিলখানা না, ক্যান্টনমেন্টও উঠিয়ে দেয়ার পক্ষে যেখানে এত কাছে সাভারে একটা ক্যান্টনমেন্ট আছে। যদি নিতান্তই প্রয়োজন পড়ে, অফিসারদের ফ্যামিলি থাকার জন্য আলাদা কোয়ার্টার থাকতে পারে। কিন্তু এত বড় একটা জায়গার এরকম ইনএফিসিয়েন্ট ব্যবহার দুঃখজনক, যেখানে ঢাকায় জায়গা একেবারেই নেই।

অমিত এর ছবি

গুগল ম্যাপটা খেয়াল করলে দেখা যাবে সাত মসজিদ রোড থেকে একটি রাস্তা বিডিআর এর মধ্যে দিয়ে সোজা এসে ফজলুর রহমান খান হল ( এটা কি গুগলম্যাপে ভুল ট্যাগিং করা হয়েছে ? আমার যতদূর মনে পড়ে এফ আর খান হল ছিল মহসিন হল এর পাশে) - এর পাশে দিয়ে নিলক্ষেত রোড এর সংগে মিশেছে। একবার প্ল্যান করা হয়েছিল এই রাস্তাটা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এতে মিরপুর রোডের উপর চাপ অনেকখানি কমে যেত। বিডিআর কর্তৃপক্ষ(!!!) সেটাতে রাজি হয় নি। বরং সাত মসজিদ রোডের বিশাল চওড়া রাস্তা বিডিআর এর ভিতর কন্টিনিউ করা আটকাতে দুইটা রাস্তা যেখানে মিশে, সেখানটাতে রাইফেলস স্কয়ার বাসানো হয়।

কবি এর ছবি

তুলতে হলে , সবার আগে মিরপুর গুলশানের মাঝের ক্যান্টন্মেন্ট তোলা দরকার।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আর্মির ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের এক মেজর বন্ধুকে বলেছিলাম একথা অনেক আগে। সে বলেছিলো ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সরাতে যে খরচ হবে, তা দিয়ে পুরো ঢাকায় দোতলা রাস্তা বানায়া দিতে পারবে তারা।

আর এই দেশে মদ খাওয়ারে বৈধতাও হয়তো দেওয়ার সাহস করতে পারবে কোনো না কোনো সরকার, কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট উঠায়া দেওয়ার কথা বলারই সাহস হবে না সম্ভবত কারো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রানা মেহের এর ছবি

তানিয়া

এই শোকের কোন শান্তনা হয়না।
শুধু পাশে থাকা যায়। পাশে আছি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তানিয়া এর ছবি

রানা আপনার মেইল খুজে না পেয়ে ফেসবুকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছি। আসলে ব্লগে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। অনেক ভালো থাকুন আমিও পাশেই আছি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

প্রয়োজনে তাঁরা ট্রাকে চড়ে ওখান থেকে এসে ছাত্র-জনগণ পিটিয়ে যাবেন।

হো হো হো

পিলখানাটিকে একটি পার্কে রূপান্তরিত করা হোক

এখনকার খোঁজ জানি না। তবে এই দেশে যখন অতোটা বাণিজ্যিকভাবে গোলাপের বাজার তৈরি হয় নাই। তখন সেই নব্বই দশকে আমরা জানতাম ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় সাইজের আর সবচেয়ে সুন্দর গোলাপ পাওয়া যায় বিডিআর সদর দপ্তরে। পিলখানার আর মিরপুরের বাংলাদেশ জার্মান টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের গোলাপ ছিলো সবচেয়ে বিখ্যাত। প্রেমিকেরা প্রেমিকারে ওয়াও সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কষ্ট করে খুঁজে খুঁজে এসব জায়গা থেকে গোলাপ কিনতেন।
সেখানে কেবল গোলাপের চাষই হোক, হত্যার আর অস্ত্রের চাষ বন্ধ হোক।

তানিয়াপার কয়েকজন আত্মীয় ছিলেন দরবার। তাঁদের মধ্যে একজনের লাশ ভেসে এসেছে, বাকিদের কোন খবর নেই, সম্ভবত তাঁরা আর বেঁচে নেই

মন খারাপ
কিছুই বলতে পারলাম না আর...

তানিয়াপার পাশে বসে থাকা সচলদের মধ্যে আমিও একজন, শুধু এটুকুই জানাই।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মুজিব মেহদী এর ছবি

একমত। শহরের ভিতর থেকে এগুলো সরিয়ে সড়কপথে এক ঘন্টার দূরত্বে নিয়ে যাওয়া উচিত।
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

রায়হান আবীর এর ছবি

... তানিয়া আপা, আপনার পাশেই বসে আছি ...

=============================

তানিয়া এর ছবি

রায়হান আপনাকে ও একই কারনে ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়েছি । আমিও বসে আছি পাশেই

শামীম এর ছবি

একটা সামরিক স্থাপনার চারপাশে বাউন্ডারীর বাইরে যেন যথেষ্ট (১০০/৫০ মিটার হতে পারে) ফাঁকা জায়গা থাকে (বাগান/গাছপালা) এবং বাইরে দিয়ে দুইটা রিং রোড থাকে সেটাও নিশ্চিত করা দরকার। (ছোটো-খাটো ইমার্জেন্সিতে নিকটবর্তী রিংরোডটি সাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে)

বদরুন্নেসা / ফজলে রাব্বী হলের সামনে দিয়ে সোজা গিয়ে জেলখানার (?) পেটের ভেতর দিয়ে ঐপাশে যাওয়ার একটা চমৎকার রাস্তা করা হয়েছিল। আগে অনেক ঘুরে চকবাজারের বিখ্যাত ইফতারী আনতে যাওয়া লাগতো।

কম খরচে গ্রহনযোগ্য সমাধান মনে হয় যেটা: বনানী ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে ঐরকম রাস্তা করে দিলে পারে (মীরপুর--গুলশান/বনানী; পিলখানার ভেতর দিয়ে)। রাস্তার দুইপাশে অন্তত ১০/১২ ফুট উঁচু এবং যথেষ্ট পুরু দেয়াল এবং কিছু দুরে দুরে গার্ডপোস্ট দেয়া থাকবে যেন নিরাপত্তা বা প্রাইভেসী লঙ্ঘিত না হয়। ক্যান্টনমেন্টের নিজস্ব রাস্তাগুলো ঐ রাস্তার উপরে সেতুর মত করে (ফ্লাই-ওভার/ উড়াল রাস্তা) এদিক ওদিক যোগ করবে। এ ধরণের রাস্তাগুলোতে দোতালা বাস চলতে পারবে না ... এমন নীতিমালা করা যেতে পারে।

পাশাপাশি যানযট কমাতে শহরের মাঝে অবস্থিত স্থাপনাগুলোর চারপাশে রিং রোড করা যেতে পারে ......একই স্টাইলে করা পুরাতন এয়ারপোর্টের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আগারগাঁও সংযোগকারী রাস্তাটি বেশ কার্যকর হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

ক্যান্টমেন্ট উঠানো যাবে না ... তাহলে কিছুদিন পরেই ছলে বলে কৌশলে প্রভাবশালী মন্ত্রী বা ব্যবসায়ী ঐ জায়গা জুড়ে ইটপাথরের জঙ্গল বানাবে ... ... ক্যান্টনমেন্টের উছিলায় যে কয়টা গাছপালা আছে তা-ও থাকবে না। (সচল তানভীর ভাইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

তানিয়া এর ছবি

হিমু ভাই আমার ... কিছুই বলতে পারছিনা আর ......

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।