বন্দী জঙ্গিদের কি কারাগারে আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়?

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ২৬/১২/২০০৯ - ১২:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পঞ্চ রোমাঞ্চ, নাকি ছায়া অরণ্য? সেবা প্রকাশনীর এই দুই গল্প সংকলনের একটায় একটা সেইরম দুর্ধর্ষ গল্প আছে কাজী আনোয়ার হোসেনের অনুবাদে, নাম "ওস্তাদ"। প্রচুর বইয়ে কাজী সাহেবের নামাঙ্কিত থাকলেও অনুবাদের কাজগুলি সেবা প্রকাশনীর অনুবাদকেরা করতেন বলে শুনেছি, তাই নিশ্চিত নই, গল্পটির কতখানি কার করা।

মূল গল্পটা আমি পড়িনি, কিন্তু এই গল্পটার মতো সরস থ্রিলার জীবনে কমই পড়েছি। এক মৌলানা চরিত্র থাকেন গল্পে, যিনি জেলখানায় ইমামতির সুবাদে নানা কয়েদীর কাছ থেকে ভয়াবহ সব প্যাঁচ পয়জার শিখে শিখে পোক্ত হয়ে ওঠেন। গল্পে উল্লেখিত দু'টি কৌশলের নাম এখনো মনে আছে, "ঘাইনাজারি" আর "আম্বিরা", এবং আম্বিরা > ঘাইনাজারি।

এ কথা উল্লেখ করছি যা বলার জন্যে, তা হচ্ছে কারাগারেও শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে।

জেলখানা একটা বিরাট সিস্টেম। কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে লোকে আসে যায়। যারা লম্বা সময়ের জন্যে ঢোকে, তারা নানারকম কবীরা গুনা করেই ঢোকে। অর্থাৎ খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, রাষ্ট্রদ্রোহ প্রভৃতি বড়সড় অপরাধ। এই অপরাধীদের জেলের ভেতরে ঠিক কীভাবে রাখা হয়, আমার জানা নেই।

যারা উগ্র, সশস্ত্র মৌলবাদী রাজনীতির অনুসারী, এবং কোনো গুরুতর অপরাধ ঘটিয়ে কারাগারে ঢোকে, তারাও লম্বা সময়ের জন্যেই সাজা পায় বলে জানি। এই সময়টুকু তারা তাদের সঙ্গী কারাবন্দীদের এই উগ্র মৌলবাদী রাজনীতিতে দীক্ষিত করার সুযোগ পায় কি না, এটাই আমার জিজ্ঞাসা। সেই সুযোগ যদি তারা পেয়ে থাকে, তাহলে অনির্দিষ্ট সময় পর কারাগার থেকে মুক্তি পাবে আরো অনেকে, যারা কারাগারে এই উগ্রপন্থার ব্যাপারে মগজধোলাই পেয়ে এসেছে। কারাগারের কঠিন পরিবেশ এদের অনেক বেশি ঘাতসহ এবং কঠোর করে তোলে, কাজেই ধরে নেয়া যেতে পারে, কারাগারে দীক্ষিত জঙ্গিরা কারাগারের বাইরে দীক্ষিত জঙ্গিদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ হবে উগ্র সন্ত্রাসে। এটা অনেকটা ব্যাকটিরিয়ার বংশবৃদ্ধির মতোই হবে, যেখানে পরবর্তী জেনারেশন আরো বিধ্বংসী হবে।

আমাদের কারাগারগুলোতে যেসব জঙ্গিরা ঢোকে, তাদের আলাদা রাখার কোনো ব্যবস্থা কারাগারগুলোতে আছে কি? বা এ সম্পর্কে কারা কর্তৃপক্ষ কি আমার মতোই ধারণা বা সতর্কতা পোষণ করেন?


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

serious issue... আশা করি এই ব্যপারটা কতৃপক্ষের মাথায় ছিলো এবং তারা যথোপোযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
যতদুর মনে পড়ে খবরের রিপোর্টে দেখেছিলাম, শীর্ষ জঙ্গীদের শুরুর দিকে আলাদা রাখা হয়েছিল। তবে সেটা আব্দুর রহমানকে ধরার আগের কথা। পরের খবর জানা নেই।
---- মনজুর এলাহী ----

দুর্দান্ত এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফের একটা লেখায় পড়েছিলাম যে তথাকথিত সর্বহারার দন্ডপ্রাপ্তদের সাধারন অপরাধীদের সাথেই রাখা হয়।
---
আমি শুনেছি আল বদর আর আল শামস - এই দুটি দলে শুধু জেল খাটা আসামীদের নেতৃত্ব দেয়া হত।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

দারুন একট‍া পয়েন্টে বের করেছেন। জঙ্গীদের ‌আলাদা রাখার ব্যবস্থা আছে বলে শুনিনি। যতটুকু শুনেছি তাদেরকে যথেষ্ট সমীহ ও যত্নের সাথে রাখা হয়। সাগরেদ জোটানোর ভালো জায়গা জেলখানা। ফিসফিস বক্তৃতা লালদীঘির বক্তৃতার চেয়ে অনেক বেশী জ্বালাময়ী ও বিধ্বংসী।
ব্যাপারটা সরকারের কানে তোলার বন্দোবস্ত করা যায়?

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

শেখ নজরুল এর ছবি

ইউএন কোড অনুসারে একজন বন্দীর জন্য স্থান নির্ধারণ করা আছে ৩২ বর্গফুট। বাংলাদেশের বন্দীরা পাচ্ছে মাত্র ১ বর্গফুট। আলাদা রাখবে কি করে?

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

অতিথি লেখক এর ছবি

চিন্তার বিষয় । মন খারাপ

কারাগারের কঠিন পরিবেশ এদের অনেক বেশি ঘাতসহ এবং কঠোর করে তোলে, কাজেই ধরে নেয়া যেতে পারে, কারাগারে দীক্ষিত জঙ্গিরা কারাগারের বাইরে দীক্ষিত জঙ্গিদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ হবে উগ্র সন্ত্রাসে।

নীড় সন্ধানী বলেছেন

ফিসফিস বক্তৃতা লালদীঘির বক্তৃতার চেয়ে অনেক বেশী জ্বালাময়ী ও বিধ্বংসী।

এবং সেখানে একাগ্র হবার সুযোগ ও বেশি। কারণ অন্য বিষয় গুলো মাথায় থাকে না ।
অন্য সাধারণ কয়েদিদের কাছে জঙ্গীরা হয়ত হিরোর মর্যাদা পায়। কারণ তারা পার্থিব কারণে অপরাধ করে নি!

যেই কয়টা আছে ঐ গুলা নিয়েই বিপদ!
তার উপর যদি বাড়ে! তাইলে তো...

বোহেমিয়ান

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- প্রবলেমটা হলো, স্থান সাকুল্যে। কারা কর্তৃপক্ষ যদি চায়ও প্রতিটা বন্দীকে নিজস্ব 'স্পেস' দিতে, কেবলমাত্র স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণেই বন্দীদের প্রায় ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকতে হয় কারাগার গুলোতে। এইটা খবরের কাগজ মারফত জানা।

'ট্রেইটর' দেখছোস? ক্যান জানি ঐ সিনেমাটার কথা মনে পড়লো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

দ্রোহী এর ছবি

গতকাল প্রথম আলোতে পড়লাম মাদক সরবরাহের অপরাধে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারের বিভিন্ন স্তরের ১৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শর্ষের মধ্যেই ভূত ঢুকে বসে আছে। আর জঙ্গিদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখার মতো জায়গা কোথায়?

সিরাত এর ছবি

হিমু ভাই অতি দারুণ একটা টপিক নিয়া লিখসেন। আয়মান-আল-জাওয়াহরি মার্কা কেস হবে এদের আলাদা না করলে। মিশরে কুতবি মুসলিম ব্রাদারহুড, বা জর্দানে মাকদিসী - সবই ছড়াইসে এমনে। মন খারাপ

হিমু এর ছবি
আয়নামতি এর ছবি

পাঁচ বছর পর লিংক বদলে গেছে মনে হলো। বর্তমানের খবর দেখাচ্ছে। যে ইস্যুটা নিয়ে পোস্ট, সেটা নিয়ে লোমহর্ষক অপরাধবৃত্তির (ক্রাইম থ্রিলার) গল্প হতে পারে হিমুভাই। লিখবেন নাকি?

ব্যঙের ছাতা এর ছবি

সেবার এই বইদুটি পড়া হয়নি।

কালের কন্ঠের রিপোর্টটি আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি উদ্ভবের ইঙ্গিত করছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।