প্যান্ট পরা কি খারাপ?

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: সোম, ০৯/০৭/২০১২ - ৬:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভোরবেলা প্রায়ই দেখা হয় আঙ্কেলটার সঙ্গে। আমি তল্লাবাগ থেকে ইন্দিরা রোড হয়ে বেরিয়ে সংসদভবনকে ঘিরে দুটো চক্কর দিয়ে বাসায় চলে আসি। আঙ্কেলকে দেখি হাতে একটা ছড়ি নিয়ে উদাস বদনে হাঁটাহাঁটি করেন। ভোরের বাতাসে মাঝেমধ্যে পতাকার মতো পতপত করে ওড়ে তাঁর ধুতি। তিনি নির্বিকার। নিষ্কম্পচিত্ত।

লেখক মানুষ তিনি, তাই একদিন খুব তমিজের সাথে সালাম দিয়ে তার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলি, আঙ্কেল আপনার ভয় লাগে না?

আঙ্কেল প্রসন্ন মুখে আমাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলেন, আমার কী ভয় রে ব্যাটা? আমার হারানোর কী আছে?

কৃষ্ণচূড়া গাছের সারি বাটপার বাতাসে শাখা দুলিয়ে বলে, ন্যাংটার নাই বাটপারের ভয়।

আমি ট্র্যাক স্যুট পরে ঘামতে ঘামতে আবার সালাম দিয়ে এগিয়ে যাই।

মাঝেমধ্যে দেখি তিনি বাদাম কিনে খাচ্ছেন। কখনোসখনো আমড়া। এদিকেএক ঘোলওয়ালাও মাঝে মাঝে আসে, তখন তিনি ঘোলও খান।

একদিন সালাম দিয়ে বললাম, আঙ্কেল, ঘোল খাওয়া কি ভালো?

তিনি হাসিমুখে বললেন, অবশ্যই। তবে এখন আর ঘোলের সেই স্বর্ণযুগ নেই। বাংলায় ঘোল জনপ্রিয় ছিলো লর্ড কার্জনের আমলে। বাঙালি পদে পদে ঘোল খেয়েছে তখন। উঠতে বসতে। বাংলায় তখন ঘোলের জনপ্রিয়তা আরেকটু কম হলে এখন আমরা আসামের ওপর ছড়ি ঘোরাতাম। নেপাল ভূটান চীনের সাথে সরাসরি সীমান্ত থাকতো। মনমোহন সিংকে পাগড়িতে দুটো এক্সট্রা প্যাঁচ দিতে হতো বাংলাদেশের সঙ্গে মস্তানি করার আগে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কারণে তা আর হয়ে উঠলো না।

কিছুই বুঝি না, কিন্তু ভালো লাগে। আমিও এক গ্লাস ঘোল কিনে খাই। জ্ঞানী মানুষদের সঙ্গ কার না ভালো লাগে?

কিন্তু মাঝখানে কয়েক দিন তাঁকে আর দেখি না আশপাশটায়। প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো প্রাতভ্রমণ শেষ করে বাড়ি চলে গেছেন আগে আগে, কিন্তু বেশ কয়েকদিন দেখতে না পেয়ে একটু আশঙ্কা হয়। জ্ঞানীগুণীরা টপাটপ মরে যাচ্ছেন।

তবে বাড়ি ফিরে খবরের কাগজ খুলে দেখি মাঝপাতায় বিরাট এক কলাম লিখেছেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পুরোটা পড়ি। কিছুই বুঝি না অবশ্য। ভারি ভারি জ্ঞানের কথা লেখা।

এরকম বেশ কিছুদিন কাটে। তাঁকে আর সংসদ ভবন এলাকায় হাঁটতে দেখি না। কিন্তু কাগজে ঠিকই লেখা ছাপা হয়।

অবশেষে আজ ভোরে তাঁর দেখা পাই।

প্রথমটায় চিনতে পারিনি।

আমি প্রায় চেঁচিয়ে সালাম দিয়ে ছুটে যাই তাঁর পাশে। আঙ্কেল, কেমন আছেন আপনি? এতদিন কোথায় ছিলেন?

তিনি একটু বিষণ্ণবদনে বলেন, কোথায় আবার থাকবো? কেন?

আমি বলি, আপনাকে তো দেখিনি হপ্তা তিনেক।

তিনি গোমড়ামুখে বললেন, আমি তো রোজই আসি।

আমি তখন বুঝতে পারি ব্যাপারটা। বলি, আপনি প্যান্ট পরেছেন দেখে আপনাকে চিনতে পারিনি মনে হয়।

তিনি বললেন, ও হ্যাঁ, হুমমম, হ্যাঁ, হতে পারে।

আমি বললাম, আঙ্কেল ধুতি ছেড়ে প্যান্ট পরা শুরু করলেন যে? গরম লাগে না?

তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, হ্যাঁ, ধুতি পরা ছেড়ে দিতে হলো।

আমি বললাম, কেন আঙ্কেল, আপনি প্যান্ট পরেন কেন?

তিনি হঠাৎ খুব দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, যতসব বিটকেল লোকজন, গান্ধীজির নামে কীসব আজেবাজে বই লেখা শুরু করেছে, দেখোনি? তিনি নাকি কচি কচি মেয়েদের সাথে নেংটোপুটুস হয়ে ঘুমাতেন, কালেনবাখ নামে এক ব্যাটাছেলের সাথে প্রেম করতেন, পড়োনি এসব?

আমি বললাম, গান্ধীজি কে? তার সাথে আপনার প্যান্টের কী সম্পর্ক?

তিনি আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হঠাৎ প্রসন্ন হেসে বললেন, প্যান্ট পরা কি খারাপ?


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ঘটনা কী?

সজল এর ছবি

Thrill of the chaste: The truth about Gandhi's sex life

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধন্যবাদ।

আনন্দ এর ছবি

সৈয়দ আবুল মকসুদের নোয়াখালীতে গান্ধী বিষয়ক লেখাতেও এর উল্লেখ আছে। সেখানে এক দলীয় কর্মী এর প্রতিবাদে দলত্যাগ করেছিলেন। পদত্যাগপত্রে তিনি এই ঘুমানোর কাহিনী কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

রু  এর ছবি

আঙ্কেলকে হাপ্প্যান্ট পরায়েন না প্লিজ, যদিও হিসাব মতে আঙ্কেলের ধুতি হাটু পর্যন্ত হওয়ার কথা।

বাপ্পীহায়াত এর ছবি

হিম্ভাই, এই গল্পটা আবুল মকছুদ সাহেব'কে উৎসর্গ করবেন প্লীজ? দেঁতো হাসি

আইলসা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গান্ধীর কাহিনী পরান আমি মতিকন্ঠের অপেক্ষা ছিলাম। তার আগে আপনেই দিয়া দিলেন। মকসুদ আংকেল কার সাথে ঘুমায় খোজ নেয়া উচিৎ।

অরফিয়াস এর ছবি

হুমম, কদিন ধরে ঘটনাটা দেখছি!! সত্যতা কতটুকু? এদিকে আবার প্রোপাগান্ডা স্পেশালিস্টরা তো কাছা বেঁধে নেমে গেছে দেখলাম !!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নিটোল এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

স্যাম এর ছবি

চলুক দেঁতো হাসি

অমি_বন্যা এর ছবি

ধুতি ছেড়ে প্যান্ট চিন্তিত । ভালো হইছে হিমু ভাই ।

দ্রোহী এর ছবি

আমার কষ্ট হয় গান্ধীর প্রেমিকাদের কথা ভেবে! ছাগলের দুধ খেয়ে দাঁত না মাজার কারণে গান্ধীজির মুখের দুর্গন্ধের কথা ছিল সর্বজনবিদিত। একবার ভেবে দ্যাখেন গান্ধীর প্রেমিকারা কত কষ্ট সহ্য করতেন।

বাংলার গান্ধী আবুল বোকচোদ পুরা চিপায় পড়ে গেছে।

সাইদ এর ছবি

বাংলার গান্ধী আবুল বোকচোদ

নামটা পছন্দ হইছে ভাই গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আশরাফুল কবীর এর ছবি

#অনেক সুন্দর লিখেছেন- ভাল থাকুন বাঘের বাচ্চা

কাজি মামুন এর ছবি

গল্পটি ভাল লেগেছে! ভোল পাল্টানো লোকদের স্বরূপ উন্মোচনের জন্য লেখককে ধন্যবাদ!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আদতে, প্যান্ট পরা কি খারাপ ?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপ্নে কিসের তৈয়ারি? জানতে মঞ্চায়, গুরু গুরু উত্তম জাঝা!
tusqit

কড়িকাঠুরে এর ছবি

দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।