শহরের ছবি

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ১০/০৮/২০০৭ - ৯:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিগন্ত বিস্মরণ বা হরাইজন অ্যামনেশিয়া বলে একটি শব্দ মুদ্রণ করেছেন আমার প্রিয় লেখক জ্যারেড ডায়মন্ড। কোন জায়গায় কেউ যখন বাস করে, তখন তার চারপাশে খুব ধীরগতির পরিবর্তনগুলোর সাথে সে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। ফলে অনেক বছর পর তার দিগন্তরেখা পাল্টে গেলেও সে সহসা তা টের পায় না। হয়তো দূরে কোন একটা গাছ ছিলো দিগন্তরেখায়, হয়তো ছিলো একটা বা দু'টো বাড়ি, সেখানে হয়তো আজ সারি সারি দালান। কিন্তু যে অনেক বছর পর সে জায়গায় ফিরে আসবে, তার স্মৃতিতে থাকবে অতীতের দিগন্তরেখা। ফলে এই পরিবর্তিত দিগন্ত তার চোখে ঠেকবে। এই তুলনামূলক বিস্মরণকেই ডায়মন্ড দিগন্ত বিস্মরণ বলেছেন।

ঢাকা শহর (বা দেশের যে কোন শহর) এতো বিস্ময়কর দ্রুত গতিতে পাল্টে যাচ্ছে যে বাসিন্দারাই অবাক হয়ে যাচ্ছেন। দিগন্ত বিস্মরণের সুযোগ পাচ্ছেন না কেউ। আজ হয়তো ছিলো একটা ঝিল, মাস দুয়েক পরে সেখানেই নির্মাণাধীন বহুতল ভবন। আজ হয়তো ছিলো বাইশ তলা দালান, মাসখানেক পর সেখানে ছয়তালা টিকে আছে শুধু। ওদিকে চাটগাঁ আর সিলেটে পাহাড় কাটা পড়ছে, সবুজ মুছে যাচ্ছে বগুড়ায়, রাজশাহীতে হয়তো ভেঙে ফেলা হচ্ছে পুরনো দালান, শহর বাড়ছে, পাল্টাচ্ছে দাবানলের মতো।

এই শহরগুলোর পুরনো ছবি সংগ্রহ করলে কেমন হয়? তারা কেমন ছিলো বহুবছর আগে? '৬০, '৭০, '৮০, '৯০ এর দশকে?

আমাদের সবার কাছেই কিছু না কিছু ছবি আছে পারিবারিক সংগ্রহে। শহরের দৃশ্যপট। এ ছবিগুলো সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে। অতীতের এক একটা টুকরো জোড়া লাগিয়ে আমরা হয়তো ভবিষ্যতে সন্ততিকে দেখাতে পারবো, কেমন সবুজ ছিলো নীলক্ষেতের মোড়, কেমন নির্জন ছিলো পাহাড়তলির চারপাশ, পাঠানটুলার গলিটা কেমন ঝিমিয়ে পড়তো দুপুরে ...।

আপনাদের পরামর্শ জানান।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

এনাম ভাইয়ের সৌজন্যে আশির দশকের মধ্যভাগের ঢাকা


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

হাসিব এর ছবি

উচা বিল্ডিং একটাও ছিলো না তখন ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভাল হয় খুব।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হিমু এর ছবি

সুমন আর বদ্দাকে এমএসএনে পেলে ভালো হতো।

সুমন, এ ধরনের গ্যালারিকে একটা প্রজেক্ট হিসেবে নিলে কেমন হয়? আমরা কিন্তু চাইলে ফ্লিকারের রিসোর্স-ও ব্যবহার করতে পারি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দ্রোহী এর ছবি

অসাধারণ একটা আইডিয়া!!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমি আইডিয়ার সঙ্গে সহমত পোশন করলাম। আমাদের উত্তরপ্রজন্মের জন্য তো কিছুই রেখে যেতে পারবো না এক স্মৃতি ছাড়া। সেটাই নাহয় থাকুক তাদের জন্য সচলায়তনের পাতায় ভর করে।

ছোট বেলায় যখন ধানমন্ডির ছবি দেখতাম। বিঘার বিঘা চাষীজমি, উত্তরার বিকাশ তো চোখের সামনেই হলো বলতে গেলে। একদম কচিকাঁচা বেলায় যখন আগারগাঁও তালতলা থাকতাম আমরা, চোখের সামনে কেবল বড় বড় মাঠ গুলো এখনো চোখে ভাসে। সেই আগারগাঁও এখন বিশাল হাউজিং সোসাইটির আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে।

ঢাকা বাড়ছে, উত্তরা বেড়ে গিয়ে ঢাকার পরিধি এখন টিলাময় লালমেটে গাজীপুরের কিঞ্চিৎ অংশ দখল করে নিচ্ছে। আমার জন্মস্থান নরসিংদী ও বদলে গেছে। আমার বিচরণক্ষেত্র মাধবদী এলাকাটাও গত দশ-বারো বছরে বিকট ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। উঁচু দালান, বিভিন্ন টেক্সটাইল ফেক্টরী, আর রাস্তার বিস্তারে পুরোনো খোলামেলা সেই পরিবেশটাকেই মনে করতে পারি না আর। স্কুল থেকে ফেরার সময় শর্টকাট পথ নিতাম যে আমি, মাধবদীর প্রতিটা বাঁক যার নখদর্পণে ছিলো সেই আমি ই আমার এলাকায় রাস্তা হারিয়ে ফেলে কোন এক দোকানদারকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হয়েছি, আমার বাড়ির রাস্তাটায় উঠবো কি করে!

আমি, আমরা যে খোলামেলা অ-যান্ত্রিক পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে উঠেছি সেটাতো কল্পনাও করা যায় না আরও দশ বছর পর। তখন আমাদের এই স্মৃতিগুলো কিংবা তোলা ছবিগুলোই রূপকথা হয়ে কানে বাজবে সন্ততিদের।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

হিমু এর ছবি

ছবি সংগ্রহের জন্য পরিচিত সবাইকে জানানো যেতে পারে। পুরনো ছবি স্ক্যান করতে হবে যত্ন করে। পরে সে ছবি হালকাপাতলা সম্পাদনা করে রাখা যেতে পারে ফ্লিকারে।

সচলায়তনে গ্যালারি নিয়ে কাজ করছে সুমন। ওখানে সহজেই লিঙ্কের মাধ্যমে দেখানো যেতে পারে ছবিগুলো, কালক্রমানুসারে।

এ উদ্যোগ কিন্তু সচল-অসচল যে কেউ ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রতিটি ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে।

আরো পরামর্শ দিন সবাই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জিকো এর ছবি

১.
প্রতিদিন ঢাকা শহর - প্রিয় ফটোব্লগ। অবসরপ্রাপ্ত পুরকৌশলী এরশাদ আহমেদ তারঁ ব্লগে জড়ো করছেন চলমান ঢাকা শহরকে। গত বছর থেকে।

আর তথ্য ক্রসচেকের জন্য প্রিয় রেফারেন্স বই 'ঢাকা : স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী'। মুনতাসীর মামুন-এর লেখা। অনন্যা প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে। ছবিও আছে বেশ। বইটি কপিরাইটের আওতাধীন, নয়তো এর ডিজিটাল সংস্করণের উদ্যোগ নেয়া যেত।

২.
আমার একটা আইডিয়া ছিল। ছিল মানে স্পৃহার অভাবে মরে ভূত। সেটা ভিডিও ডকুমেন্টারি বানানোর। থিম : 'সিনেমায় ঢাকা'। সত্তর-আশি-নব্বুই দশকে নির্মিত বাংলাদেশের পুরনো সিনেমায় আগেকার ঢাকা শহর পাওয়া যাবে। যেসব আউটডোর দৃশ্যে ঢাকা আছে, সেগুলো আলাদা করে ডকুমেন্টারিটা বানানো হবে। এবং সেটা ডিজুস-চ্যাংড়াদের উপযোগী করে।

স্পৃহা মরে যাওয়ার অন্যতম কারণ, ঢাকায় ফিল্ম আর্কাইভ-এর করুণ দশা। এ ধরনের ডকুমেন্টারি-গবেষণার প্রতিকূল।

হ্যাঁ, ফুটেজ বিশ্লেষণে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে, নয়তো কার্জন হল রূপান্তর হবে হাইকোর্টে। অথবা এফডিসির ভেতরের পার্ক হয়ে যাবে রমনা উদ্যান!

দালানঠাসা ঢাকার কথাই বলে গেলাম শুধু। অন্য শহর, ভিন্ন পরামর্শ, চলুক।

_____________________________
জিকোবাজি | ফটো গ্যালারি | ইমেইল

বিপ্লব রহমান এর ছবি

চমতকার আইডিয়া। আপনি নগর ভবনের সাহায্য নিতে পারেন। ওদের সংগ্রহে ঢাকার কিছু পুরনোা ছবি ও স্কেচ আছে।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অমিত এর ছবি

ঢাকার জন্য, ঢাকাকে নিয়ে যেকোন ব্যাপারে আমি আছি। "ঢাকা-স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী'বইটা প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়া হয়। ঐখানে ৬০-৭০-৮০র দশকের ঢাকার একটা বার্ডস আই ভিউ দেওয়া আছে, দেখতে মজাই লাগে।

অতিথি এর ছবি

এ উদ্যোগ কিন্তু সচল-অসচল যে কেউ ভূমিকা রাখতে পারেন।

চমতকার আইডিয়া ।
হতভাগ্য অচলগণ কিভাবে অংশগ্রহণ করবে?

হিমু এর ছবি

প্রিয় অতিথি, মন্তব্যের অঙ্গণ আপনার জন্য উন্মুক্ত আছে :)।

আপনার কাছে কোন পুরনো ছবি থাকলে ফ্লিকারে আপলোড করে আমাদের লিঙ্কটা দিন, সাথে জানান যে এ প্রকল্পে আপনি ছবিটি যোগ করতে আগ্রহী। তাহলেই তো হলো।

মন্তব্যের ঘরে আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করছি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।