সাক্ষাৎকারঃ রিচার্ড ডকিন্স

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/১০/২০০৭ - ৫:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দ্য সেলফিশ জিন দিয়ে রিচার্ড ডকিন্সের পাঠ শুরু করেছিলাম। টিঙটিঙে একটা বইয়ের ভেতর এতখানি বিস্ময় অপেক্ষা করছিলো আমার পাতা উল্টে যাবার জন্যে, বুঝিনি। ডকিন্স খুব মৃদু কণ্ঠে যেন বিরাট এক গর্জন করে গেলেন আমার মনের ভেতর। বিবর্তনের অসংখ্য প্রশ্নময় পৃথিবীতে আমি শিশুর মতো টলমল করে প্রবেশ করলাম।

ডকিন্সের পরবর্তী যে বইটি আমার টানা কয়েক সপ্তাহের সঙ্গী, সেটি তাঁর ম্যাগনাম ওপাস, দ্য অ্যানসেস্টর'স টেল। ক্যান্টারবেরি টেলস এর আদলে সেখানে বিবর্তনের পথে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতি, প্রত্যেকেরই একটি করে গল্প আছে বলার। চলার পথে এক এক করে সে যাত্রায় যোগ দিতে থাকে পূর্বপুরুষেরা, কাহিনী বাড়তে থাকে, যোগ হতে থাকে অসংখ্য প্রশ্ন, যোগ হতে থাকে উত্তর, ইঙ্গিত, চিন্তার খোরাক। ডকিন্সের এই বইটি পড়ে আমি প্রবল আলোড়িত হয়েছিলাম, মনে হয়েছিলো, বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে এমন একজন লেখকের খুব প্রয়োজন ছিলো। বিশ্বের ষষ্ঠ ভাষা হয়েও বাংলায় বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থের সংখ্যা অঙ্গুলিমেয়, পাঠকের অভাবে বাংলা ভাষা যেন শুধু বাতাসে ভাসে, হরফে ফোটে না।

রিচার্ড ডকিন্সের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ দ্য গড ডিলিউশন, যেখানে তিনি সামগ্রিকভাবে ধর্মকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন নানাভাবে। বইটা এখনো পড়া হয়নি, হুট করে আমার পাঠের পরিধি অনেক কমে গেছে প্রবাসী হয়ে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য ডকিন্সের কিছু সাক্ষাৎকার খুঁজে বার করলাম ইউটিউব থেকে। আগ্রহীরা দেখতে পারেন।

সাথে আরো আছে জোনাথন মিলারের নেয়া রিচার্ড ডকিন্সের সাক্ষাৎকার।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

দ্য সেলফিশ জিন পড়েছিলাম বেশ অনেকদিন আগে। লেখার মতোই ব্যাটা দেখতে বেশ সুন্দরও..... হাসি


কি মাঝি? ডরাইলা?

হিমু এর ছবি

আরো যোগ করছি বিবিসি হার্ডটকে ডকিন্সের সাক্ষাৎকার।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

সাথে সিএনএন এর একটি সাক্ষাৎকার।


হাঁটুপানির জলদস্যু

বন্যা এর ছবি

ডকিন্সের লেখা পড়েই মনে হয় প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম যে বিজ্ঞানের লেখা মানেই খটমটে কঠিন কঠিন কথা নয়, এ লেখাগুলোও যে কত কাব্যিক হতে পারে তা তার লেখা পড়লে বোঝা যায়। কার্ল সেগানের পরে ডকিন্সই বোধ হয় একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি এত পপুলার সাইন্সের লেখা লিখছেন আর বিবর্তন এর কথা ধরলে তিনিই বোধ হয় একমাত্র। অনেকেই তাকে এখন এই শতাব্দীর 'ডারউইন' বলেন। সারা পৃথিবী জুড়ে এখন যখন রক্ষণশীল ধর্মীয় মৌলবাদের জয়জয়কার তখন ডারউইনের লেখাগুলো পড়লে মনটাই ভালো হয়ে যায়। উনি ইউরোপে জন্মেছেন বলেও বোধ হয় আরও আ্যক্টিভলি কাজ করতে পারছেন। আমেরিকায় তো মৌলবাদীদের প্রতাপে বিবর্তনের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, স্কুলের পাঠ্যসুচি থেকে বিবর্তন বাদ দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তারা এখন। আমাদের দেশেও তো ইন্টারমিডিয়েটের বই থেকে বিবর্তন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হিমু এর ছবি

জ্যারেড ডায়মন্ডের খুবই ভক্ত আমি। ডায়মন্ডের লেখাও ডকিন্সের মতোই রংদার। বায়োজিওগ্রাফি নিয়ে তাঁর লেখা এক কথায় শ্বাসরুদ্ধকর।

আপনাদের কারো কাছে কি জোনাথান কিংডনের "লোওলি অরিজিনস" বইটা আছে? একটা দুর্দান্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মাথা ঘামানো হয়েছে বইটাতে, কখন কেন কিভাবে মানুষের পূর্বপুরুষ পেছনের "পা" এর ওপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। এটা নিয়ে অনুবাদের কাজ এগিয়ে যেতে পারে কি?


হাঁটুপানির জলদস্যু

বন্যা এর ছবি

ক'দিন আগে জ্যারেড ডায়মন্ডের 'কোল্যাপ্স'পড়ে আমিও মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু, ডকিন্সের লেখার ধারে কাছেও মনে হয় না। তবে
কিংডনের বই পড়া হয়নি। বিবর্তন নিয়ে লেখার সময় আরও অন্যান্য বেশ কিছু বই পড়েছিলাম মানুষের বিবর্তনের উপর, এটা নিয়ে একটা অধ্যায়ও লিখেছিলাম। অনুবাদ করার জন্য কয়েকজনকে পেলে পরে বই বাছাই এর কাজে হাত দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন প্রকাশকই ডকিন্সের উপর বই প্রকাশ করতে চেয়েছেন, সরাসরি কোন বই অনুবাদ না করে একটা বইয়ের ভাবানুবাদের মাধ্যমে ডকিন্সকে তুলে ধরলে কেমন হয়। আমার কাছে প্রায়ই মনে হয়, ডকিন্সের লেখা সবকিছু আমাদের দেশের পাঠকদের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পেরে, এমনিতেই তো সে এত প্যাচায় প্যাচায় লম্বা লেখা লেখে।

হিমু এর ছবি

ডকিন্সের লেখায় একটা "জোশ" আছে, কিন্তু জ্যারেড ডায়মন্ডের লেখার ধাঁচটাই আঁটোসাটো, কম কথায় অনেক কিছু বলে দেন, আর কোন একটা চমকপ্রদ বিষয় উপস্থাপনের টাইমিংটা দারুণ জানেন। "গানস, জার্মস অ্যান্ড স্টীল পড়েছেন" কি?


হাঁটুপানির জলদস্যু

অভিজিৎ এর ছবি

রিচার্ড ডকিন্সকে নিয়ে কেউ পোস্ট দিলে আমার বরাবরই খুব ভাল লাগে। উনি এমন একজন লেখক যার সবগুলো বই, সব গুলো প্রবন্ধ আমি পড়ার চেষ্টা করি। ডকিন্স না থাকলে আমার বিবর্তনবিদ্যার পাঠ এত আনন্দদায়ক হত না কখনোই। সত্যই বাংলাভাষায় একজন যদি ডকিন্স থাকত! হিমু ঠিকই বলেছেন, “বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে এমন একজন লেখকের খুব প্রয়োজন ছিলো। বিশ্বের ষষ্ঠ ভাষা হয়েও বাংলায় বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থের সংখ্যা অঙ্গুলিমেয়, পাঠকের অভাবে বাংলা ভাষা যেন শুধু বাতাসে ভাসে, হরফে ফোটে না”।

তারপরেও বলব, খুব ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও কিছু কাজ হচ্ছে। রিচার্ড ডকিন্সের ‘গড ডিলুশন’ বইটার একটি অধ্যায় (গভীরভাবে ধর্মীয় অবিশ্বাসী) তার অনুমতি নিয়ে আমরা বাংলা করেছিলাম। লেখাটি পরে মুক্তান্বেষা নামে একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। দিগন্ত নামে আমাদের একজন সদস্য (উনি বোধ হয় এখানেও ব্লগ করেন) ডকিন্সের আরেকটি অধ্যায় ( ধর্মের উৎস সন্ধানে ) বাংলা করেছে। ডকিন্সের আরো বইপত্র অনুবাদের ইচ্ছে আছে, কিন্তু লোকবলের আভাবে পারা যাচ্ছে না। এন্সেস্টর টেল নিঃসন্দেহে তালিকার প্রথম দিকেই আছে।

২০০৫ এ আমরা প্রথমবারের মত 'ডারউইন ডে' পালন করি। ভালই সারা পেয়েছিলাম।

এ ছাড়াও বাংলাদেশে 'প্রাণের উন্মেষ এবং বিবর্তন' নামে একটা সেমিনারের আয়োজন করেছিলাম শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের সাথে মিলে। বেশ প্রসংশিত হয়েছিল সেমিনারটি। আরো কিছু টুকিটাকি কাজ করেছি, পত্র-পত্রিকায় লেখালিখি করেছি বিজ্ঞান এবং বিবর্তন নিয়ে, সুযোগ পেলে আরেকদিন বলা যাবে। বাংলাদেশে সায়েন্স ওয়ার্ল্ড সহ অনেক পত্র-পত্রিকায় বিবর্তন নিয়ে ভাল-ই লেখালিখি হচ্ছে। এই ধরনের উদ্যোগ আরো বেশি বেশি করে দরকার।

ডকিন্সের উপরে পোস্ট দেখে একটু বেশি ইমোশোনাল হইয়া পড়ছিলাম। বেশি বক বক করে থাকলে মাফ করে দিয়েন।

==============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

হিমু এর ছবি

অ্যানসেস্টরস' টেল যদি অনুবাদ করতে চান, তাহলে আইনগত ঝামেলাটা আগে সেরে নেয়া ভালো। আর এটা একটা বিশাআআআআল প্রকল্প হবে, গুছিয়ে করতে গেলে বেশ ভালো হ্যাপা।

ডকিন্সের সাথে খাতির থাকলে কথা বলে দেখুন, সচলে একটা ধারাবাহিক সম্মিলিত প্রকল্প খোলা যায় অ্যানসেস্টরস' টেল এর ওপর। বাংলায় বিবর্তনজ্ঞানের প্রসার নিয়ে তিনি উৎসাহী হবেন হয়তো চোখ টিপি


হাঁটুপানির জলদস্যু

দিগন্ত এর ছবি

ডকিন্সের ব্যাপারে অভিজিতদার মত আমিও কিছুটা ইমোশনাল হয়ে পড়ি। ওনার বই যারা পড়েছে, তাদেরকেও আমি বলব পারলে আরেকবার এই সাক্ষাত্‌কার গুলোর ভিডিও দেখতে। বক্তব্যের বিষয়বস্তুর সাথে সাথে উপস্থাপনার দৃঢ়তার জন্যও আমার এগুলো দেখতে ভালো লাগে ...
আমার কাছে ডকিন্সের লেখা সবচেয়ে প্রিয় বই সেলফিশ জিন। ইচ্ছা আছে বইটার কয়েকটা চ্যাপ্টার অন্তত বাংলায় অনুবাদ করব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।