যাপিত জীবন -০৯ : : আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ ও অন্যান্য

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: শুক্র, ২৭/০৩/২০০৯ - ১০:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[১]বহু দিন পর মাঠে গিয়ে খেলা দেখলাম , আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ । আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই অন্য ধরনের উত্তেজনা , স্নায়ুচাপ ।স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে । ঐ সময় খেলাধূলা নিয়ে খুবই বাড়াবাড়ি করতাম। সকাল বিকাল নিয়ম করে ব্যাট আর ফুটবল নিয়ে দৌড়াতাম । রাতে ঠিক আটটা বিশ মিনিটে টিভি অন করতাম , কতগুলো শোক সংবাদ পরিবেশনের পর বিটিভি ঐ সময়ই খেলার খবর প্রচার করত । তখন যমুনা সেতু হয়নি । উত্তরবঙ্গে দিনের পত্রিকা পাওয়া যেত প্রায় বিকেলের দিকে । কখন পেপার আসে অপেক্ষায় থাকতাম । পেপার পেলেই ব্যস, খেলার খবরগুলো একপাশ থেকে গেলা শুরু করতাম । বাসায় কত যে কথা শুনেছি এই খেলা আর পেপার পড়া নিয়ে নিয়ে । আহ ! কি দিন ছিল সেসব । আবাহনী হারলে কতবার মনে হত , ধুর , এরা হারলে আর জিতলেই কি ? এরা কি আর টাকা-পয়সা দেবে আমারে? কিন্তু আবাহনীর ম্যাচ(সেটা ক্রিকেট, ফুটবল , হকি অথবা আর যে কোন খেলাই হোক) থাকলেই সেদিন চরম উৎকন্ঠার মধ্যে যেত । রাত আটটা বিশে যখন দেখতাম আবাহনী জিতেছে তখন নিজেকে অনেক ভারমুক্ত মনে হত । আমি অবাক হয়ে এখন ভাবি , ঐ কম বয়সে মফস্বল শহরের এক কিশোর কিভাবে একটা দলের প্রতি এতটা অন্ধ সমর্থন করতে শিখেছিল বস্তুত সে যখন "আবাহনী" শব্দটা পত্রিকা আর টিভি ছাড়া আর কোথাও শোনে নি।

অনেকদিন হল খেলাধূলার সাপোর্ট নিয়ে খুব বাজে অবস্থার মধ্যে আছি । প্রিমিয়ার লীগে চেলসীর কেরোসিন অবস্থা , লিভারপুলের সাথে চ্যাম্পিয়নস লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে যে কত গোলে হারে সেই চিন্তায় আছি । আন্তর্জাতিক ফুটবলে আরেক পছন্দের দল আর্জেন্টনার অবস্থা তো বরাবরই খারাপ , হয়ত এ জীবনেই দেখব না যে আর্জেন্টিনা বড় কোন কাপ পেয়েছে। দেশে পছন্দের দল আবাহনী ভালই খেলছিল এ বছর , বি-লীগের ট্রফিটা ঘরে আসছে কিন্তু আজকে সুপার কাপেও আবার তারা হারল ।

আবাহনী-মোহামেডানের ফাইনাল ম্যাচটা "কোটি টাকার ফাইনাল" হিসেবে যেরকম জমার কথা ছিল সেরকম জমেনি । এক নম্বর কথা দেশী রেফারী না থাকায় ভুলভাল ডিসিশন হয়নি , আর এই ভুলভাল জিনিস না থাকায় দুই গ্যালারীর দর্শকরা যে ক্ষেপে গিয়ে একটু হইচই করবে এমনটা করতে পারে নি , খেলাও সেজন্য দু-চার মিনিট বন্ধ থাকেনি । আর কে না জানে সব না থাকলে ঠিক আবাহনী-মোহামেডান খেলাটা "জমে" না ! মোহামেডানের বিদেশী খেলোয়াড় গুডউইন খেলার শুরুর দিকেই গোল করার পর দুদলই কিছুটা বিচ্ছিন্ন খেলা খেলেছে পুরো প্রথমার্ধ যদিও তাতে মোহামেডানের আধিপত্য কিছুটা বেশি ছিল । দ্বিতীয়ার্ধে মোহামেডান কোন রিস্ক নেয় নি , ডিফেন্সিফ আর কাউন্টার অ্যাটাকনির্ভর ফুটবল খেলেছে। আবাহনী সুযোগ পেয়েছে বেশ কয়েকটা । এসময় মোহামেডানের গোলরক্ষক আমিনুল দুটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন , একজন ডিফেন্ডার গোলমুখে আসা বলকে কোন রকমে হেড করে বাঁচিয়ে দিয়েছেন দলকে । সেকেন্ড হাফে এক সময় মনেই হচ্ছিল যে কোন সময় গোল খেয়ে যাবে মোহামেডান ।শেষ পর্যন্ত তা হয় নি । মোহামেডানের ডিফেন্স শেষদিকে খুব ভাল ট্যাকল দিয়েছে । আসলে দিনটা মোহামেডানেরই ছিল , ফুটবল এমনই , ভাল খেলে লাভ নেই , গোল করাটাই মুখ্য । মোহামেডানকে অভিনন্দন ।

ছবিতে ক্লীক করে ছবি বড় আকারে দেখতে পারেন

টিকিট কাউন্টারে ব্যাপক ভীড়
ভিআইপি গ্যালারীর এই অবস্থা!
বাঙালির কান্ড!গ্যালারী থেকে ভিআইপিতে পার হচ্ছে
ব্রাদার্স-চট্রগ্রাম মোহামেডানের তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচ পরিপূর্ণ গ্যালারী


আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ চলছে

[২]চারতলায় থাকি । রুমের সামনেই আমগাছ । হাত বাড়ালেই আম পাওয়া যায়। অনেক আম ধরছে এবার । কাঁচা আমের আমি আবার বিশেষ ভক্ত । অনেকদিন ধরে ছোট-ছোট আমগুলোকে দেখছি আর ভাবছি " আর কতদিন?" ।

খবর পাওয়া গেছে কতিপয় উগ্রবাদি আম খেকো লোকজন পাশের ফ্লোর থেকে এসে আম খেয়ে যাচ্ছে । উইং এর পোলাপান ব্যাপক ক্ষ্যাপা , আশু সমাধানে তারা পৌছাতে চায় । তারা আমগাছে কতিপয় পোস্টার লাগিয়েছে। ক্ষ্যাপা লোকজন , আনসেন্সরড কথা বলে অভ্যস্ত , তাদের কিছু শব্দ মডারেশন করা হয়েছে ।

হাত বাড়ালেই আম গাছের গায়ে পোস্টার ও সতর্কবাণী

[৩] কাল থেকে নতুন টার্মের ক্লাস শুরু হচ্ছে । প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ টার্ম এটা । খারাপই লাগছে । আর কখনও এখানে নতুন টার্মের ক্লাস শুরু হবে বলে মেজাজ খারাপ হবে না । মাসখানেক পরীক্ষার বন্ধে প্রবলভাবে সকাল,দুপুর,বিকাল ঘুমানোর পর একদিন যখন হঠাৎ নতুন টার্ম শুরুর আগের দিন এসে পড়বে তখন মেজাজ খারাপ করে আর বলা হবে না "ধুর , ক্লাস ভাল্লাগেনা " । জীবন এরকমই ।


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

ইমরুলকে অভিনন্দন, এই ম্যাচটা মাঠে গিয়ে দেখেছেন। আর ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা। তাজা তাজা সব ছবি!

ইমরুল কায়েস এর ছবি

ধন্যবাদ ।
......................................................
পতিত হাওয়া

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সহীহ ইমরুলনামা.. ভালো লাগলো। ব্লগের মজাটাই এখানে, সবকিছু্র একটা স্বপ্রতিভ বর্ণনা পাওয়া যায়।

ছবির মধ্যে আম ছেঁড়া নিয়ে যেটা সেটা সত্যিই ব্যতিক্রমধর্মী!

রায়হান আবীর এর ছবি

কেন যে মানুষ প্যাথেটিক চেলসি সাপোর্ট করে সেইটা আমার মাথাতেই আসে না শয়তানী হাসি

ইমরুল কায়েস এর ছবি

আমার মনে হয় যারা চেলসি সাপোর্ট করে এরা প্রত্যেকেই প্যাথেটিক , এর লিগাই এরা আমার মত চেলসির সাপোর্টার ।
......................................................
পতিত হাওয়া

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

আবাহনীর পরাজয়ে দূ:খিত। কিন্তু এরা এখন আর কেউ খেলতে পারেনা।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

অতিথি লেখক এর ছবি

মাঠে গিয়ে খেলা দেখার আনন্দ অন্যরকম। তবে আপনি বাঙালির আর এক কান্ড ছবিতে দিতে পারতেন আর তা হচ্ছে, যেখানে সেখানে - (মাইনাস) করে গ্যালারী ভাসানো। বিরক্তিকর পরিবেশ! অ্যাঁ
চলুক

তাহসিন গালিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।